[কিতাবঃ যুগ জিজ্ঞাসা, 

✍লেখকঃ অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান আল-কাদেরী]


মুহাম্মদ মিযানুর রহমান ও মাহবুব এলাহী

হালিশহর, বন্দর, চট্টগ্রাম।


 🔴প্রশ্নঃ🔴 আমরা জানি, পঞ্জেগানা নামায ও রমজানের ফরয রোযা এমন ইবাদত যা প্রত্যেক বালেগ-বালেগা নারী-পুরুষের আদায় করা অপরিহার্য বিষয়। অনেক মুসলিম নর-নারী ফরয নামায-রোযা আদায় না করে মারা যায়। সুতরাং মুসলিম মৃত ব্যক্তির কাযা/অনাদায়ী ফরয নামাযের ও ফরয রোযার বিধান কি? জানালে উপকৃত হব।


 উত্তর: পঞ্জেগানা নামায ও রমজানের ফরয রোযা এমন ইবাদত যা প্রাপ্ত বয়স্ক সকল মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয। যদি কারো জিম্মায় ফরয নামায ও ফরয রোযা অনাদায়ী থাকে এবং এমতাবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করে, অসিয়ত করে থাকলে এবং সম্পদ রেখে গেলে পরিত্যক্ত সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা গরীব-মিসকিন, অসহায় ব্যক্তিকে বিতিরের নামায সহ দৈনিক ছয় ওয়াক্ত নামায হিসাব করে প্রতি ওয়াক্তের জন্য অর্ধ ‘সা’ তথা ২ কেজি ৫০ গ্রাম পরিমাণ গম বা তার মূল্য সদকা তথা নামাযের ফিদয়া বা কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। প্রত্যেক ফরয রোযার ফিদয়া বা কাফফারাও প্রতি ওয়াক্ত নামাযের অনুরূপ। মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের এক তৃতীয়াংশ যদি নামায রোযার ফিদয়ার জন্য যথেষ্ট না হয় বা ওয়ারিশগণের পক্ষে অসম্ভব হয় তবে কমপক্ষে এক ওয়াক্ত নামায বা একটি ফরয রোযার ফিদয়া অথবা যতটুকু সম্ভব তা নির্ধারণ ও হিসেব করে ফকির-মিসকিনকে মৃত ব্যক্তির পক্ষে প্রদান করবে এবং ফকির-মিসকিন তা গ্রহণ করে ফিদয়া/কাফ্ফারা দাতাকে হেবা করবে তারপর মিসকিনকে পুনরায় দেবে- ফকির/মিসকিন তা গ্রহণ পূর্বক পুনরায় ফিদয়া/কাফ্ফারা দাতাকে হেবা করবে। এভাবে একে অপরের মধ্যে আদান-প্রদান করতে থাকবে যতক্ষণ না সব কাফ্ফারা বা ফিদয়া আদায় হয়। যেমন হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত ফিকহের কিতাব ‘দুররে মুখতারে’ উল্লেখ রয়েছে-


لومات وعليه صلواة فائتة واوصى بالكفارة يعطى لكل صلواة نصف صاع من بر كالفطرة كذا حكم الوترو الصوم وانما يعطى من ثلاث ماله ولو لم يترك مالا يستفرض وارثه نصف صاع مثلا ويدفعه للفقير ثم يدفعه الفقير للوارث ثم وثم حتى يتم- الخ-

অর্থাৎ আর মৃত ব্যক্তি যদি ধন-সম্পদ রেখে যায় এবং নামায ও রোযার কাফ্ফারা/ফিদয়া আদায়ের জন্য অসিয়ত করে তখন অলি ও ওয়ারিশের উপর একান্ত কর্তব্য মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক তৃতীয়াংশ হতে তার অনাদায়ী ফরয নামায ও রোযা সমূহের হিসাব করে বিতরসহ প্রতি ওয়াক্ত নামায ও ফরয রোযার জন্য এক ফিতরা সমতুল্য গম বা গমের মূল্য ফিদয়া মিসকিনকে সদকা করবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোন সম্পদ রেখে না যায় এবং অলি ওয়ারেছের সামর্থও না থাকে তখন এক ওয়াক্ত বা একটি রোযার ফিদয়া কর্জ নিয়ে ফকিরকে উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুসারে আদান-প্রদান করবে যেন অনাদায়ী সব ফরয নামায ও রোযার ফিদয়া/কাফ্ফারা আদায় হয়ে যায়। এবং পরওয়ার দিগার আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে ঐ ব্যক্তির মাগফিরাত-এর জন্য দু‘আ-ফরিয়াদ করবে। এটা ইসলামী শরীয়তের বিধান মৃত ব্যক্তির অনাদায়ী ফরয নামায ও রোযার কাফ্ফারা আদায়ের। এভাবে আদায় করলে এবং মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ-ফরিয়াদ করলে আশা করি তার গুনাহ আল্লাহ্ তা‘আলা মাফ করে দেবেন। যেহেতু আল্লাহ্ পরম দয়াবান, ক্ষমাশীল এবং অতিব মেহেরবান। (এটাই শুদ্ধ নিয়ম।)

[আদ্ দুররে মুখতার ইমাম আলাউদ্দীন খাসকাপি হানাফী (رحمة الله) ইত্যাদি]

 
Top