[কিতাবঃ যুগ জিজ্ঞাসা, 

✍লেখকঃ অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান আল-কাদেরী]


খায়রুন নিসা রোজী

পটিয়া, চট্টগ্রাম।


 🔴প্রশ্নঃ🔴 রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসনুন ইবাদত বা আমল সম্পর্কে জানানোর জন্য অনুরোধ রইল।


 উত্তর: ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। একজন মুসলমানের জন্য ভোরে ঘুম হতে জাগ্রত হওয়া থেকে রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ইসলামী অনুশাসন মেনে দিবারাত্র যাপন করা অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। রাতে শয়ন পূর্ব ও শয়নকালে বিভিন্ন বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ দু’আ রয়েছে। আর ইসলাম দু’আকে স্বতন্ত্র ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে। দোয়া বিপর্যন্ত হৃদয়ের আশ্রয়স্থল ও আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। রাতে বিছানায় শয়নকালে বিশেষ কিছু মাসনুন দোয়া রয়েছে। শয়নকালে দোয়া পাঠ করা সুন্নাতে নববী। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে- হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) যখন নিদ্রা যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন পাঠ করতেন ‘‘বিইস্মিকা আল্লা-হুম্মা আমু-তু ওয়া আহ্য়া।’’ [বুখারী শরীফ, আদাবুল মুফরদ- হাদীস নং ৫৯৫৩] অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ‘‘আলিফ লাম মীম তানযীল ও তাবারাকাল্লাযী বি-ইয়দিহিল মুল্ক ( তথা সূরা মুলক) না পড়া পর্যন্ত শয়ন করতেন না।

[আল্ আদাবুল মুফরাদ: হাদীস নং ১২২৪] সাহাবী হযরত আবু যুবায়র (رضي الله عنه) বলেন, উক্ত দুই সূরা ক্বোরআন শরীফের অন্যান্য সূরার তুলনায় সত্তর (৭০)গুণ বেশি ফজিলতময়। যে ব্যক্তি উক্ত দুইটি সূরা তিলাওয়াত করবে, তার জন্য সত্তরটি দরজা বুলন্দ হয় এবং এই সূরার দ্বারা তার সত্তর (৭০)টি গুনাহ্ ক্ষমা করা হয়। [আল্ আদাবুল মুফরাদ] প্রখ্যাত সাহাবী হযরত বারা ইবনে আযেব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা শয়ন করতে যাও, তখন নামাযের ন্যায় অযু করো। অতঃপর নীচের দু’আটি পড়বে। রাসূল করীম (ﷺ) শয়নের সময় প্রায় পড়তেন-

اَللَّهُمَّ اَسْلَمْتُ وَجْهِىَ اِلَيْكَ وَفَوَضْتُ اَمْرِىْ اِلَيْكَ والجاتُ ظهرى اليْكَ رغيْةً ورهبةً اِليِكَ لاملجأَ وَلا منجا منك اِلَّا اِلَيْكَ اللهُمَّ اَمَنْتُ بكتابك الذِى اَنْزَلْتَ وَبِنَبِيَّكَ الَّذِىْ أَرْسَلْتَ-

[সহীহ মুসলিম শরীফ, বাবু মা ইয়াকুলু ইনদান নাওম, ক্রমিক নং ২৭১০] নিদ্রা আসার পূর্বে এ দু’আ পাঠ করা যায়-

اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَااِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ القَيُّوْمُ وَاَتُوْبُ اِلَيْهِ-

উচ্চারণ: আস্ তাগফিরুল্লা-হাল্লাযি লা-ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হায়্যুল ক্বাইয়ুম ওয়া-আতু-বু ইলায়হি।

হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, প্রিয়নবী (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বিছানায় শয়নকালে উপরোল্লিখিত দু’আটি পাঠ করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বা মরুভূমির বালু সমপরিমাণ হয়। [তিরমিযি শরীফ] তদ্রুপ রাত্রে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরছি, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়ার বর্ণনা ও ফজিলত সহীহ বোখারী সহ হাদীসের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে।

এছাড়াও হাদীসে পাকে ঘুমানোর পূর্বে বেশ কয়েকটি সুন্নাতের কথা উল্লেখ রয়েছে যথা ক. ভালোভাবে বিছানা ঝেড়ে নেয়া, খ. ঘরের দরজা আল্লাহর নামে বন্ধ করা, গ. ঘুমানোর দু’আ পাঠ করা, ঘ. পুরুষেরা ডান কাত হয়ে শোয়া, ঙ. স্ত্রী সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু করে নেয়া, চ. সতর খোলা বা উলঙ্গ অবস্থায় না শোয়া, ছ. বিনা কারণে উপুড় হয়ে না শোয়া, জ. ঘুমানোর সময় বাতি বন্ধ করা, ঝ. দুঃস্বপ্ন দেখলে পার্শ্ব পরিবর্তন করা এবং দুঃস্বপ্ন দেখলে প্রথমে বাম দিকে তিনবার থু থু ছিটা ইত্যাদি। (এ সমস্ত আমল সমূহ সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে এবং সুনানে তিরমিযি শরীফের বিভিন্ন অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে)। সুতরাং যতটুকু সম্ভব উপরোক্ত বিষয়াদির উপর আমল করার চেষ্টা করবে। এর মধ্যে অনেক ফজিলত ও বরকত নিহিত আছে। এ সমস্ত নেক আমল বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার বিরাট সহায়ক ও ওসিলা।

 
Top