[কিতাবঃ যুগ জিজ্ঞাসা, 

✍লেখকঃ অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান আল-কাদেরী]


মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


 🔴প্রশ্নঃ🔴 সুন্নী আক্বিদায় বিশ্বাসী পীরের হাতে বায়আত হয়ে অন্য পীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে উপস্থিত হওয়া যাবে কিনা এবং ওই পীরের সবক আদায় করা যাবে কিনা- জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: সুন্নী আক্বিদায় বিশ্বাসী যোগ্য পীরের হাতে মুরীদ হয়ে স্বীয় পীরের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও অনুগত্য ঠিক রেখে অন্য সুন্নী পীরের সংস্পর্শে যাওয়া এবং ওই হক্কানী পীরের যে কোন ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নিজ পীর-মুর্শিদ যোগ্য ও কামিল হওয়া সত্ত্বেও স্বীয় পীরের জীবদ্দশায় অন্য পীরের কাছে বায়আত হওয়া বা নিজ পীরের সবক বাদ দিয়ে অন্য পীরের সবক আদায় করা পীর বা তরীকা নিয়ে খেল-তামাশা করার নামান্তর। এতে তরীকতের প্রকৃত বরকত অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ হযরত শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) তাঁর ‘আল্ ক্বাওলুল জামীল’ গ্রন্থে লিখেন-

واما بلاعذر فانّه يشبه المتلاعب ويذهب بالبركة ويصرف قلوب الشيوخ عن تَعَهِده-

অর্থাৎ (শরীয়ত ও তরীকতের কোন যৌক্তিক) কারণ ব্যতীত নিজ পীর-মুর্শিদ ব্যতীত অন্য পীরের হাতে বায়আত হওয়া খেলা-তামাশার নামান্তর। এতে বায়আতের প্রকৃত বরকত লোপ পায় এবং স্বীয় পীর মুর্শিদের রূহানী শিক্ষা-দীক্ষা বা সুনজর মুরীদের উপর থাকে না। [আল্ ক্বাওলুল জমীল] হ্যাঁ যদি পীর বাতিল মতাদর্শী হয় বা পীর হওয়ার অযোগ্য এবং ইলম-আমলের দিক দিয়ে ভণ্ড হয় তখন অবগত হওয়ার পর এরকম ভণ্ড পীর তৎক্ষণাৎ বর্জন করে হক্কানী রব্বানী সুন্নী পীর মুর্শিদের হাতে বায়আত গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। নতুবা ভণ্ড পীর মুরিদকেও জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। আর স্বীয় সুন্নী হক্কানী পীরের ইন্তিকালের পরে বরকত লাভের আশায় অন্য হক্কানী মুর্শিদের নিকট বায়আত গ্রহণে অসুবিধা নেই।

[ক্বাওলুল জামীল কৃত: শাহ্ অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রাহ. ও ফতোয়ায়ে আফ্রিকা কৃত: ইমাম আলা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা রাহ. পৃ. ৩১] সাবধান! বর্তমান ফিতনা ফ্যাসাদের যুগে ভণ্ডামী ও প্রতারণার শেষ নেই। শরীয়ত-তরীকত নিয়ে ফিতনা-ফ্যাসাদ আরো বেশী। প্রতারক ও ভণ্ডদের খপ্পর ও চক্রান্ত হতে রক্ষা পাওয়া বড়ই মুশকিল। বদ আক্বিদা মার্কা নামধারী পীর যারা নবী-অলির শান-মানে বেয়াদবী ও কটূক্তি করে এবং ফাসিক মার্কা নামধারী পীর যারা নামায-রোযার তোয়াক্কা করে না ও ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধান অনুসরণ করে না-তাদের হাতে মুরিদ হওয়ার অর্থ ইবলিস শয়তানের হাতে মুরিদ হওয়া।

আর কামিল পীরের বৈশিষ্ট্য হল আক্বিদাও সহীহ। আমল তথা নামায রোযা ও ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান পালনে নিজেও মজবুত স্বীয় মুরিদানের প্রতি ও এ বিষয়ে কড়া নির্দেশ প্রদান করেন আর স্বীয় তরীকতের সাজরা ও সিলসিলাও সহীহ। বাতিলপন্থি মাঝখানে কেউ নেই। এ ধরনের মজবুত কামিল সুন্নি পীরের হাতে মুরিদ হওয়া সুন্নাত ও নেজাতের উসিলা আর ভণ্ড পীরের হাতে মুরিদ হওয়া হারাম।

 
Top