প্রশ্নোত্তর: নবী করীমের সঠিক ওফাত দিবস কত তারিখে?


🔴প্রশ্নঃ🔴 আমাদের এলাকায় খতিব সাহেব বয়ান করেছেন যে, ‘আমাদের নবীর ওফাত দিবস রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখ, যেটি তিনি চার বছর গবেষণা করে নিশ্চিত হয়েছেন। এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানালে উপকৃত হব।


উত্তর: প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী চন্দ্র মাসের ১২ রবিউল আউয়াল আমাদের আক্বা ও মাওলা হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এ ধরাধামে পবিত্র মক্কা মুর্কারামায় শুভাগমন করেছেন। এটাকে ইমাম ইবনে হিশাম (رحمة الله) সহ অনেক প্রখ্যাত ইসলামী মনীষীগণ ‘কাওলে মাশহুর’ বা প্রসিদ্ধ অভিমত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন মুহাম্মদ বিন ইসহাক হতে বর্ণিত- তিনি বলেন,

عن محمد بن اسحاق قال ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم لاِثْنتى عَشَرَةَ لَيْلَةً مَضَت مِنْ شَهْرِ ربيع الأول-(رواه البيهقى)

অর্থাৎ- হযরত মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (رحمة الله) বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) হস্তীর বছর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্ম গ্রহণ তথা শুভাগমন করেছেন।

[ইমাম বায়হাকী তাঁর দালায়েলুন্নবূয়ত: ১ম খন্ডের ৭৭ পৃষ্ঠায়, মুস্তাদরাকে হাকেম: ২য় খন্ড, ১৩৫ পৃষ্ঠা] وعن سعيد بن المسيب ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان ذالك اليوم لمضى اثنى عشرة ليلة مصت من شهر ربيع الأول-

অর্থাৎ- বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত সাঈদ ইবনে মুছায়্যিব (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর প্রিয় রাসূলের শুভাগমনের দিনটি ছিল রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ।

[সিরাতে হালভীয়া কৃত আল্লামা নুরুদ্দীন হালভী: ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৪] অপর বর্ণনায় দেখা যায়-

عن جابر و ابن عباس انهما قالا وُلدَ رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول – – – – وفيه مات-

অর্থাৎ- প্রখ্যাত সাহাবী হযরত যাবের এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হস্তীর সনে রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ শুভাগমন করেছেন দিনটি ছিল সোমবার, এ দিনেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন।

[আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া কৃত- হাফিজ ইবনে কাছির রাহ.: ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৮, সিরাত হলভিয়া: ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৫] হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাব্বান ইবনে আহমদ ইবনে হাব্বান তামিমী (رحمة الله) (ওফাত ৩৫৪ হিজরী) তদীয় কিতাবে রাসূল (ﷺ)-এর জন্ম প্রসঙ্গে বলেন-

و كان مولد المصطفى صلى الله عليه وسلم بمكة عام الفيل وذالك يوم الاثنين لاثنتى عشرة ليلة مضت من شهر ربيع الاول-

অর্থাৎ- প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) মক্কায় হস্তীর বছরে শুভাগমন গ্রহণ করেন দিনটি ছিল সোমবার এবং রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ।

[মাশাহিরিল উলামাইল আমছার: ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২১] এ ব্যাপারে হাফিজুল হাদীস আল্লামা ইবনে কাছির (رحمة الله) বলেছেন- و هذا هو المشهور عند الجمهون- অর্থাৎ- ১২ রবিউল আউয়াল নবীজির শুভাগমন এটা জমহুর তথা অধিকাংশের কাছে সু-পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য।

[আল বেদায়া ওয়ান নেহায়অ: ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৮] সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ইমাম আহমদ কাস্তালানী (رحمة الله) বলেন-

والمشهور أنه ولد يوم الاثنين ثانى عشر ربيع الاول وهو قول ابن اسحاق وغيره-

অর্থাৎ- প্রসিদ্ধ অভিমত হল, আল্লাহর নবী রাসূলে আকরাম (ﷺ) রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার ১২ তারিখ ধরাবুকে শুভাগমন করেছেন। এটা ইবনে ইসহাক সহ অন্যান্যের অভিমত।

[মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া কৃত ইমাম কাস্তালানী: ১ম খন্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা] সুতরাং ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে সোমবার আল্লাহর প্রিয়নবী (ﷺ) পৃথিবীতে শুভাগমন করেছেন এবং ঐ দিনেই ওফাত বরণ করেছেন। এটাই অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণের প্রসিদ্ধ অভিমত। তবে প্রিয়নবীর শুভাগমন-ওফাতকালের সময় ও তারিখ নিয়ে ভিন্ন বক্তব্যও রয়েছে। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ অভিমত কেই প্রাধান্য দেয়া হয়।

এ বিষয়ে ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা শাহ্ আহমদ রেযা আ’লা হযরত (رحمة الله) এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, প্রিয়নবী (ﷺ)-এর শুভাগমনের তারিখ সম্পর্কে সাতটি অভিমত রয়েছে। রবিউল আউয়াল শরীফের দুই, আট, দশ, বার, সতের, আঠার ও বাইশ তারিখ। কিন্তু সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মত হল বার রবিউল আউয়াল শরীফ। শেখ মুহাক্কিক শাহ্ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله), আল্লামা কাস্তালানী (رحمة الله) ও ইমাম জোরকানী (رحمة الله), ইমাম মাগাজী, ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসহাক সহ অনেকেই ১২ রবিউল আউয়ালের মতকে প্রসিদ্ধ এবং এটার উপর আমল করেছেন। [মাদারেজুন্নবূয়ত ইত্যাদি]

 
Top