[কিতাবঃ যুগ জিজ্ঞাসা, 

✍লেখকঃ অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান আল-কাদেরী]

মুহাম্মদ খোরশেদ আলম

(দুবাই প্রাবাসী) গহিরা, রাউজান, চট্টগ্রাম।


 🔴প্রশ্নঃ🔴 আহলে বায়ত করা? নবীজির বংশধর আর আহলে বায়ত কি এক? ক্বোরআন ও হাদিসের আলোকে জানালে উপকৃত হবো।


 উত্তর: হ্যাঁ- প্রিয়নবী আক্বা ও মাওলা হুযূর পাক (ﷺ)-এর পবিত্র বংশধর ও আহলে বায়তে রাসূল (ﷺ) একই। এটা অধিকাংশ ইমামগণের অভিমত। আহলে বায়তে বলতে প্রিয়নবী হুযূর পুরনূর (ﷺ)-এর প্রিয়ভাজন তথা নিকটাত্মীয়গণকে বুঝানো হয়। নবীয়ে দোজাঁহা রাহমাতুল্লিল আলামীনের নিকটাত্মীয় প্রসঙ্গে পবিত্র ক্বোরআনুল হাকীমে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

قُل لااسئلكم عليه اجرا الّا المودَّة فى القربٰى-

অর্থাৎ- (হে নবী) আপনি বলে দিন যে, আমি (রাসূল) তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাইনা, আমার বংশধরগণের ও নিকটাত্মীয়দের ভালোবাসা ব্যতীত।

[আল্ ক্বোরআন: সূরা শু’রা, আয়াত ২৩] প্রিয়নবী ইমামুল মুরসালিন রাসূলে আকরাম (ﷺ)-এর নিকটাত্মীয় প্রসঙ্গে এই আয়াতে পাক নাজিল হলে সাহাবীদের অন্তরে এ প্রসঙ্গে জানতে প্রবল ইচ্ছা জাগে। ফলে সাহাবায়ে কেরাম হুযূর পুরনূর রাহমাতুল্লিল আলামীনের দরবারে আরয করে জানতে চাইলেন- হে আল্লাহ্র রাসূল আপনার নিকটাত্মীয় কারা? এর জবাবে প্রিয়নবী সরওকারে কায়েনাত (ﷺ) এরশাদ করেন- (আহলে বায়ত হলেন) হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এবং তাদের উভয়ের বংশধর তথা আউলাদ। আহলে বাইতের পরিচয় প্রদানে বহু হাদিস শরীফ রয়েছে। যেমন-

عن اُمِّ سَلْمَةَ رضى الله عنها انَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم جَمَعَ فاطمة وَحسَنًا وحيسنًا رضى الله تعالى عنهم ثُمَّ اَدْخَلَهُمْ تَحْتَ ثوبه- ثُمَّ قَالَ اللُهُّمَّ هَؤُلَاءِ اَهْلُ بَيْتِىْ- (طبرانى)

অর্থাৎ- হযরত উম্মে সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত, একদিন নবী করীম (ﷺ) হযরত ফাতিমা, হযরত ইমাম হাসান-হোসাইন (رضي الله عنه)কে একত্রিত করেছেন এবং তাদেরকে একটি কাপড়ে আবৃত করে নিলেন। অতঃপর বললেন- হে আল্লাহ্ এরা আমার আহলে বায়ত।

[তাবারানী: আল্ মুজামুল কবির, হাদীস- ২৬৬৩] অপর হাদীসে উল্লেখ আছে-

عن سعدبن ابى وقاص رضى الله عنه قال لمَّا اَنزل الله هذه الاية تعالو ندع ابناءنا وابناءكم ونساءنا ونساءكم الاية- دعا رسول الله صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا وفَاطمةَ وَحسنًا وحُسينًا فقال اللهُمَّ هَؤُلاءِ اَهْلِىْ- (رواه مسلم)

অর্থাৎ- হযরত সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) বলেন, যখন ‘মুবাহালা (একে অপরকে অভিসম্পাৎ করা) এর আয়াত ‘‘আপনি বলে দিন, এসো! আমরা আমাদের সন্তানদের ডাকছি, আর তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে ডাক।’’ তখন নবী করীম (ﷺ) আলী, ফাতিমা, হাসান-হেসাইন (رضي الله عنه)কে ডাকলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ্ এরা আমার পরিবারবর্গ তথা আহলে বায়ত।

এভাবে অসংখ্য হাদীসে পাকে আহলে বায়তে রাসূল (ﷺ)-এর পরিচয় বর্ণনা রয়েছে। যাদের পবিত্রতার ব্যাপারে ক্বোরআনে পাকে বর্ণিত রয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে একই ভাবে একটি হাদীসে পাকেও বর্ণনা পাওয়া যায়-

عن ابى سعيد الخدرى رضى الله عنه فى قوله اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهَبُ عَنْكُمْ الرجس اَهْلَ البيتِ ويطهركم تطهيرًا- قال نزلت فى خمسةٍ فِى رَسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَعَلِىُّ وفَاطمةَ والحسنُ والْحسينُ- (طبرانى)

অর্থাৎ- হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) আল্লাহর বাণী ‘হে নবী পরিবার! নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পাক-পবিত্র করতে।

[সূরা আহযাব] এ সম্পর্কে বলেন আয়তটি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ), হযরত আলী, ফাতিমা, হাসান-হোসাইন (رضي الله عنه) এই পাঁচ মনীষী সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।

[তাবরানী আল্ মু’জামুস্ সগীর, হাদীস নং ৩২৫] প্রতীয়মান হলো যে, আহলে বায়ত হলেন, শেরে খোদা হযরত আলী, হযরত মা-ফাতিমা, হযরত ইমাম হাসান-হোসাইন (رضي الله عنه) ও তাঁদের সন্তানগণ। তাই আহলে বায়ত তথা নবী বংশধরদের ভালবাসা, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, অন্তরে ভক্তি শ্রদ্ধা রাখা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। কোন কোন তাফসীর ও হাদীস বিশারদ প্রিয়নবীর বিবিগণকেও আহলে বায়তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

 
Top