প্রশ্ন ১:-
আমরা শুনেছি,হানাফী মাজহাবের অনেক সিদ্ধান্ত ইমাম
আবু হানীফা (রাহ.) এর মত থেকে কিছু কিছু ভিন্ন রয়েছে । এর কিছু উদাহরণ জানাতে পারবেন কি?
জাযাকাল্লাহু খাইরান,
মোঃ গুলশানুর রহমান

জবাব :-

আপনার জানা কথাটি সঠিক।এখানে একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন ""ইমামে আজম তাবেয়ী ছিলেন তখন কোন পরিস্থিতিতে কোন মাসআলা দিয়েছিলেন আর ওনার মাযহাবের ইমামগন কেউ কোন যুগে কোন পরিস্থিতিতে পরে ফতোয়া দিয়েছিলেন তা অবশ্যই বিবেচনার বিষয় তাই কাউকে হুট করে ভুল বলে দিতে পারবেন না এটা কোকামী ছাড়া আর কিছু হবে না।""

ফিক্বহে হানাফীর অনেক মাসআলায় ইমাম আবু হানীফার সাগরীদ ইমাম আবু ইউসুফ রহ., ইমাম মুহাম্মদ রহ. এবং ইমাম যুফার বা অন্যান্যদের মতের
উপরও ফাতওয়ার অনেক নজীর রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উপমা উপস্থাপন করা হল ।ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর মতের উপর ফতোয়ার উপমা:-

১. ইমাম আবু হানীফা রহ. এবং মুহাম্মদ রহ. এর মতে এক বিচারক যখন ফায়সার জন্য অন্য
বিচারকের কাছে পত্র লিখে। তখন উক্ত পত্রে কি লিখা আছে তা পত্র বাহককে পড়ে শুনিয়ে তারপর তার সামনে সিলমহর মেরে হস্তান্তর করতে হবে। নতুবা এই
পত্রটি বিচার কার্য সমাধার জন্য
কার্যকরী হবেনা।

পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফার ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর মতে কেবল
পত্র লিখে তা বাহককে না জানিয়েও তা অন্য বিচারকের
কাছে প্রেরণ করলে এ দ্বারা বিচার কার্য পরিচালনা করা যাবে। এই
মতের উপরই ফতোয়া। সুতরাং এখানে ইমাম আবু হানীফা রহ. ও মুহাম্মদ রহ. এর মত আমলযোগ্য নয়। (হেদায়া-৩/১২৩-১২৪)
এখানে স্থান কাল পাত্র বিশেষে ২জনের ফতোয়াই কাজে লাগতে পারে।

২. যখন কোন বোকা টাইপের স্বাক্ষ্য কাযীর মজলিসে স্বাক্ষ্য দিতে হাজির হয় তখন স্বাক্ষিকে বিচারক
স্বাক্ষ্যের পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে পারবেনা। এটা জায়েজ নয় ইমাম আবু হানীফা রহ. ও মুহাম্মদ রহ.
এর মতে।

কিন্তু ইমাম আবু
ইউসুফ রহ. এর মতে অবুঝ
ব্যক্তিকে শিখিয়ে দেয়া কেবল
জায়েজই নয় উত্তমও। এই মতের উপরই ফতোয়া । (ফাতওয়ায়ে শামী-৮/৫৩)

ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর মতের উপর ফাতওয়ার
উপমা
১. মিরাস তথা ত্যাজ্য সম্পত্তি বন্টনের প্রায় সকল মাসআলায় ইমাম মুহাম্মদ রহ এর বক্তব্যের
উপর ফতোয়া।

২. ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতে ওযুর পানি নাপাক। তাই এটি গায়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে। আর ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন- অযুর পানি পাক। তবে এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন
করা যাবেনা । ফাতওয়া এই
মতের উপর। ইমাম যুফার রহ. এর মতের উপর ফাতওয়ার উপমা

১. যে অসুস্থ্য ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়তে পারেনা সে ব্যক্তি যেভাবে ইচ্ছে বসে নামায পড়তে পারবে ইমাম আবু হানীফা রহ. এবং আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ রহ. এর মতে। কিন্তু ইমাম যুফার রহ. এর মতে তাশাহুদের সুরতে বসে নামায পড়তে হবে। ফাতওয়া এই
মতের উপর। (ফাতওয়ায়ে শামী-২/৫৬৫)

২. তিন ইমামের মতে বাড়ির আঙ্গিনা দেখার দ্বারা ক্রয় করার সময়ের দেখার হক সাকিত হয়ে যায়। কিন্তু ইমাম যুফার রহ. এর
মতে বাড়ির আঙ্গিনা দেখার দ্বারা ভিতরাংশ দেখার হক সাকিত হয়না। এই মতে উপরই ফিক্বহে হানাফীর ফাতওয়া। (ফাতওয়ায়ে শামী-৭/১৫৮)

এরকম অসংখ উদাহরণ রয়েছে যেখানে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর বক্তব্যের
উপর ফাতওয়া নয়। বিস্তারিত জানতে দেখুন- মুফতী সালমান
মানসুরপুরী দাঃ বাঃ এর লিখা “ফাতওয়া নাওয়িসী কি রাহনুমা উসূল”।



 
Top