১২ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী  (ﷺ)

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম    ৫৭০   খ্রিস্টাব্দে    ১২ই    রবিউল    আউয়াল  রোজ সোমবার সোবহে  সাদিকের  সময়   এ পৃথিবীতে  আগমন        করেছেন।     ইহাই     প্রসিদ্ধ       ও     গ্রহণযোগ্য অভিমত।  অথচ  হামিদী    সাহেব  ইহা  মানতে  নারাজ। তিনি       বলেছেন        রাসূলেপাক        সাল্লাল্লাহু       আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগমন  ১২ই রবিউল  আউয়াল  ছিল না।    বরং   ৮ই   রবিউল   আউয়াল   ছিল।    যেমন    তিনি লিখেছেন-

‘চন্দ্র বছরের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী    হিসাব  করে   দেখুন আজ    থেকে    ১৪৩১    হি:    সন    পূর্বের    ১২ই    রবিউল  আউয়াল  কখনো  সোমবার  হয়  না  বরং  শুক্রবার  হয়।  তাই    বিশুদ্ধ      ঐতিহাসিকগণের    সিদ্ধান্ত    ৮ই    রবিউল আউয়াল  ছিল    রাসূল   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তারিখ। ’

অন্য জায়গায় লিখেছেন-

‘মিলাদুন্নবীর আলোচনার   জন্য  ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ  নির্দিষ্ট  করা  এবং  রাস্তায়  রাস্তায়  মিছিল  বাহির  করা  বিদআত।  কারণ   ইহার    কোন  প্রমাণ    কোরআন হাদিসে নেই। ’

আমি     বলব,   ইহা   একটি   ঐতিহাসিক   ব্যাপার।   তাই তারিখ নিয়ে  ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতানৈক্য থাকাটা   স্বাভাবিক।      তবে      অধিকাংশ      ঐতিহাসিকদের      মত  অনুযায়ী    রাসূলেপাক  সাল্লাল্লাহু   আলাইহি   ওয়াসাল্লাম এর বেলাদতশরীফ ১২ই রবিউল আউয়ালেই হয়েছিল। কিন্তু  হামিদী  সাহেব   যে  ভাবে  চ্যালেঞ্জ  করে   বললেন হিসেব করে দেখার জন্য ইহা তার গলাবাজি বৈ কিছুই নয়।

এবার  আসুন  ঐতিহাসিকদের সীরাত গ্রন্থ থেকে  দেখা যাক  নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি    ওয়াসাল্লাম   এর বেলাদত শরীফ কোন তারিখে হয়েছিল।

ইবনে  হিশাম   কর্তৃক  রচিত  জগৎবিখ্যাত  সীরাত    গ্রন্থ السيرة النبوية কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-

قال ابن اسحاق ولد رسول الله  صلى  الله عليه   وسلم يوم الاثنين لاثنتى عشرة ليلة خلت من شهر ربيع الاول عام الفيل-

ইবনে ইসহাক বলেছেন রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হস্তি    বর্ষে  রবিউল   আউয়াল   মাসের  ১২ই তারিখ  সোমবার  দিনে  জন্মগ্রহণ  করেছেন।  (সীরাতে  ইবনে হিশাম)

আল্লামা  ইবনে  কাছির   তাঁর     বেদায়া   ও  নেহায়া  গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-

عن  عفان  عن   سعيد   بن   مينا   عن  جابر  وابن  عباس انهما قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى  عشر  من   شهر ربيع  الاول  وفيه بعث وفيه   هاجر   وفيه   مات    وهذا   هو     المشهور-     (البداية والنهاية)

অর্থ:     হযরত    আফফান    থেকে    বর্ণিত-   তিনি   হযরত সায়ীদ ইবনে মীনা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত জাবের   রাদিয়াল্লাহু   আনহু   ও   হযরত   ইবনে   আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা  করেছেন। তাঁরা  উভয়ে বলেন-   নবী   করিম    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়াসাল্লাম   হস্তিবাহিনী বর্ষে  সোমবার দিনে ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে      জন্মগ্রহণ      করেছেন।      এই      দিনেই      তিনি  নবুয়তের  দায়িত্ব পেয়েছেন, এই দিনেই তিনি হিজরত করেছেন  এবং   এই  দিনেই  তিনি    ওফাত   পেয়েছেন। ইবনে কাছির বলেন- ইহাই প্রসিদ্ধ ও মশহুর অভিমত। (নূরনবী)

অতএব   এ ব্যাপারে ঐকমত্য  হয়েছে  যে, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১২ই  রবিউল  আউয়াল রোজ  সোমবার এই ধরনীতে আগমন করেছেন। অথচ হামিদী     সাহেব     বললেন-     মিলাদুন্নবীর     জন্য     ১২ই  রবিউল আউয়াল তারিখ নির্দিষ্ট করা বিদআত।

আমি বলতে  চাই ১২ই রবিউল আউয়াল  তারিখ  নিয়ে  যদি   আপনাদের  এ    সমস্যা  তাহলে  আপনাদের  কথা অনুযায়ী ৮ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করুন। তাহলে তো আর কোন সমস্যা থাকে না।

আসল কথা হলো ৮ তারিখ বা ১২ তারিখ  কোন বিষয় নয়।   বিষয়     হচ্ছে   মিলাদশরীফ  পড়া   বা  মিলাদুন্নবী পালন  করা   নিয়ে।  তারিখ  সংক্রান্ত  গোলকধাধাঁ   দিয়ে শুধুমাত্র সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে ধোকা দেয়া হচ্ছে। তাইতো   হামিদী      সাহেব   মিলাদশরীফ   পাঠ     করাকে জোর     গলায়     হিন্দু     ব্রা‏হ্মণের     মন্ত্র     পড়ার     সাদৃশ্য  বলেছেন।
 
Top