ওলী আল্লাহ পর্ব২

Courtesy : Abu Ayub Al Quadry

এই পর্বের বিষয় হলো কুরান ও হাদীসের আলোকে আল্লাহর ওলীদের কারামতের ঘটনা।কিছু নিন্দুক আছে যারা আউলীয়া কিরামের কারমত নিয়ে উপহাস করে।তাদের নিকট আউলীয়া কিরামদের কারামতের আলোচনা করলে তাদের পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।আসুন তাদেরকে কুরানও হাদীসের আলোকে জবাব দিয়ে বুঝিয়ে দি কারামাতে আওলিয়া আল্লাহ হক ।কিন্তু তার আগে কারামাত অর্থ কি তা জেনে নি।
আরবী টু আরবী লুগাত বা অভিধান আলমআআনি থেকে কারামাতে সংঙ্ঘা দেওয়া হলো...
كرامات:- كرامة বহু বচন এর
كرامة: الأَمرُ الخالق للعادةِ غيرُ المقرون بالتحدّي ودعوى النبوة ، يُظهره الله على أَيدي أَوليائه
খালিকের অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমে সাধরনের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয় এমন অলৌকিক শক্তি যা নবুয়াতি আহব্বান বা ডাকে ও দুয়ার বর্কতে আল্লাহ তার আওলিয়াদের দানকৃত শক্তির মাধ্যমে জাহির করে...

প্রথম কারামত ঃ|
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا ۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا ۖ قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ :
অতঃপর তাঁর পালনকর্তা তাঁকে উত্তম ভাবে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাঁকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন-অত্যন্ত সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তাঁকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পন করলেন। যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কছে আসতেন তখনই কিছু খাবার দেখতে পেতেন। জিজ্ঞেস করতেন “মারইয়াম! কোথা থেকে এসব তোমার কাছে এলো?” তিনি বলতেন, “এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।”
{সূরা আলে ইমরান-৩৭}
كلما دخل عليها زكريا المحراب وجد عندها رزقا قال مجاهد وعكرمة وسعيد بن جبير وأبو الشعثاء وإبراهيم النخعي والضحاك وقتادة والربيع بن أنس وعطية العوفي والسدي: يعني وجد عندها فاكهة الصيف في الشتاء وفاكهة الشتاء في الصيف وعن مجاهد "وجد عندها رزقا" أي علما أو قال: صحفا فيها علم رواه ابن أبي حاتم والأول أصح وفيه دلالة على كرامات الأولياء
অর্থাৎ যাকারিয়া আলাইহিস সালাম যখনই মেহরাবে তার নিকট যেতেন তখনই তার নিকট রিজিক দেখতে পেতেন।মুজাহিদ, ইকরামা সাইদ বিন যুবাইর আবু শাসা, ইব্রাহিম নাখই, যিহাক, কাতাদাহ বর্ননাকারী ইবনে আনাস আতিয়াতুল আউফি ও সাদী বলেন.... হজরতে যাকারিয়া তার নিকট গ্রীষ্মকালে শীতকালীন
ফল শীতকালে গ্রীষ্মকালীন ফল দেখতে পেতেন।ইহার অর্থ তিনি ইল্ম পেলেন। অথবা (মুজাহিদ) বলেছেন, পেলেন কোন কিতাব যাহা ইল্মে পূর্ন, ইবনে হাতিম বলেন তবে প্রথম কথাটি বেশী সহী কারণ উহার দ্বারা আউলীয়া আল্লাহদের কারামত দালালাত বা প্রমান করে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর,সুরা -আলে ইমরান,আয়াত-৩৭
এইবার আসুন আলোচনার দিকে,.. হজরতে মারিয়ামের মেহরাব তথা আস্তানায় আল্লাহর পক্ষ থেকে কারামত স্বরুপ বে মরসুম ফল হাজির হত। এর থেকে বোঝা যায় আল্লাহর ওলীদের কাছে গাইব থেকে রিজিক এসে থাকে অথবা তারা সাহায্য পেয়ে থাকেন।
|কারামত নং-২|
قَالَ الَّذِىْ عِنْدَهٗ عِلْمٌ مِّنَ الْـكِتٰبِ اَنَا اٰتِيْكَ بِهٖ قَبْلَ اَنْ يَّرْتَدَّ اِلَيْكَ طَرْفُكَ‌ؕ فَلَمَّا رَاٰهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهٗ قَالَ هٰذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّىْ‌ۖ لِيَبْلُوَنِىْٓ ءَاَشْكُرُ اَمْ اَكْفُرُ‌ؕ وَمَنْ شَكَرَ فَاِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهٖۚ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ رَبِّىْ غَنِىٌّ كَرِيْمٌ
যার কাছে কিতাবের (তাওরাতের) জ্ঞান ছিল সে বলল- ‘আপনার দৃষ্টি আপনার দিকে ফিরে আসার পূর্বেই আমি তা আপনার কাছে এনে দেব।’ সুলাইমান যখন তা তার সামনে রক্ষিত দেখতে পেল তখন সে বলল- ‘এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, আমাকে পরীক্ষা করার জন্য- আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞ হই। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নিজের কল্যাণেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে অকৃতজ্ঞ হয় (সে জেনে রাখুক), নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ।’
সুরা নামাল,আয়াত-৪০
"
وقوله "أنا آتيك به قبل أن يرتد إليك طرفك" أي ارفع بصرك وانظر مد بصرك مما تقدر عليه فإنك لا يكل بصرك إلا وهو حاضر عندك وقال وهب ابن منبه أمدد بصرك فلا يبلغ مداه حتى آتيك به فذكروا أنه أمره أن ينظر نحو اليمن التي فيها هذا العرش المطلوب ثم قام فتوضأ ودعا الله تعالى قال مجاهد قال يا ذا الجلال والإكرام وقال الزهري قال: يا إلهنا وإله كل شيء إلها واحدا لا إله إلا أنت ائتني بعرشها قال فمثل بين يديه قال مجاهد وسعيد بن جبير ومحمد بن إسحاق وزهير بن محمد وغيرهم لما دعا الله تعالى وسأله أن يأتيه بعرش بلقيس وكان في اليمن وسليمان عليه السلام ببيت المقدس غاب السرير وغاص في الأرض ثم نبع من بين يدي سليمان وقال عبد الرحمن بن زيد بن أسلم لم يشعر سليمان إلا وعرشها يحمل بين يديه
তিনি বললেন, আপনার (হজরতে সুলাইমা)দৃষ্টি আপনার দিকে ফিরে আসার পূর্বেই আমি তা আপনার কাছে এনে দেবো অর্থাৎ আপানার চোখ তুলুন যতদুর সম্ভব দেখুন,চোখের পলক ফিরে আসার পূর্বে সিংহাসন আপনার নিকট উপস্থিত করে দেবো। এবং ওয়াহাব ইবনে মানবাহ বলেন আপনি আপনার চক্ষুকে প্রসারিত করলেন আর যার কোন সীমা ছিলোনা। অতঃপর তিনি বললেন আপনার নিকট নিয়ে আসবো। এবং তিনি তাকে আদেশ করলেন এবং ইয়ামানের দৃষ্টিপাত করলেন। যেখানকার সিংহাসন উনার দরকার। সেই দিকে লোকটি দাঁড়িয়ে ওয়াযু করলেন এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন। মুজাহিদ বলেন, তিনি এই দোয়া করলেন.... يا ذا الجلال والإكرام। জোহরী বলেন.. يا إلهنا وإله كل شيء إلها واحدا لا إله إلا أنت ائتني بعرشها... এই দোয়া করলেন। মুজাহিদ, সাইদ বিন যুবাইর,মুহাম্মাদ বিন ইশাখ, জোহরিন বিন মুহাম্মাদ ও আরো অন্যান্যরা বলেন আল্লাহর নিকট তিনি দোয়া করলেন যে তিনি যেন ইয়ামান থেকে বিল্কিশের সিংহাসন বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌছে দিতে পারেন।তারপর সিংহাসন অদৃশ্য হলো। তিনি জমিনে ডুব দিলেন অতঃপর কিছুক্ষনের মধ্যেই তা হজরতে সুলাইমানের সামনে উদ্ভাসিত হলো। আব্দুর রহমান বিন যাইদ বিন আসলাম বলেন, সিংহাসন সুলাইমান আলাইহিস সালামের সামনে উপস্থিত করা হলো কিন্তু তিনি টেরই পেলেন না।
তাফসীরে ইবনে কাসীর,সুরা-নামাল,আয়াত-৪০
এইবার আলোচনার দিকে আসা যাক... . ....যিনি বিলকিশের সিংহাসন এনে দিয়েছিলেন তিনি কি কোন জিন ছিলেন? না হজরতে সুলাইমান আলাইহিসসালামের উম্মতের মধ্যে একজন ওলী ছিলেন? কারন অনেকে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় বিলকিশের সিংহাসন চোকের পলকে হজরতে সুলাইমান আলাইহিসসালামের সামনে হাযির হয়েছিল তা কোন আল্লাহর ওলীর কারমত নয় বরং জ্বীনের মাধ্যমে উক্ত কার্য সংঘটিত হয়েছিলো। বিলকিশের সিংহাসন মাটিতে ডুব দিয়ে যিনি চোখের পলকে ইয়ামান থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসে সুলাইমান আলাইহিস সালামের সামনে হাজির করছিলেন, সে কোন জ্বীন ছিলো না একজন আল্লাহর নেক বান্দা বা আল্লাহর ওলী ছিলেন।তার জন্য নিচে তার দলিল
قال الذي عنده علم من الكتاب" قال ابن عباس وهو آصف كاتب سليمان وكذا روى محمد بن إسحاق عن يزيد بن رومان أنه آصف بن برخياء وكان صديقا يعلم الاسم الأعظم وقال قتادة كان مؤمنا من الإنس واسمه آصف وكذا قال أبو صالح والضحاك وقتادة إنه كان من الإنس زاد قتادة من بني إسرائيل
ইবনে আব্বাস বলেন, সে ব্যক্তি ছিলো আসিফ, তিনি ছিলেন হজরতে সুলাইমানের কাতিব,এবং যেমন মুহাম্মাদ ইবনে ইশাখ হজরতে ইয়াজিদ বিন রুমান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আসিফ ইবনে বারখিয়া ছিলেন এবং তিনি একজন বিশিষ্ট ওলী ছিলেন। যিনি ইশমে আযাম জানতেন।কাতাদা বলেন, তিনি ইন্সানদের মধ্যে থেকে একজন আল্লাহর মোমিন বান্দা (কামিল মোমিন)ছিলেন। তার নাম ছিলো আসিফ। এবং যেমন আবু স্বালেহ, দাহহাক এবং কাতাদাহ বলেন, তিনি একজন মানুষ ছিলেন। কাতাদা বলেন তিনি বানিইসরাঈলের মধ্যে (একজন মানুষ) ছিলেন।
তাফসীরে ইবনে কাসীর,সুরা-নামাল,আয়াত-৪০
এইবার যদি এক বানিইসরাঈলের কওমের মধ্যে হজরতে সুলাইমানের উম্মতের মধ্যে থেকে এক ওলীর যদি এত ক্ষমতা থেকে থাকে যে চোখের পলকে এক দেশ থেকে তাও মাটিতে ডুব মেরে সিংহাসন এনে দিতে পারেন।তাহলে শ্রেষ্ট নবীর শ্রেষ্ট উম্মতের মদ্ধে আওলীয়াগনকে আল্লাহ তাআলা তারদের শ্রেষ্টত্বের সঙ্গে সঙ্গে কত ক্ষমতা দান করেছেন...? তাহলে এই ধরণের কারামত উম্মাতে মুহাম্মাদীর মধ্যে কোন ওলীর ব্যাপারে আলোচনা করলে নিন্দুকেরা নিন্দা ও উপহাস করে গল্প গুজব বলে উড়িয়ে দেয় কেন? তাহলে বোঝা গেলো নিন্দুকেরা যতই নিন্দা ও উপহাস করুক কুরানের আলোকে প্রমাণিত আউলীয়া আল্লাহর কারামত যে হক তা তাদের জবাব দিয়ে দেয়।

|কারমত নং-৩|
وَضَرَبَ اللّٰهُ مَثَلًا لِّـلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا امْرَاَتَ فِرْعَوْنَ‌ۘ اِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِىْ عِنْدَكَ بَيْتًا فِى الْجَـنَّةِ وَنَجِّنِىْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهٖ وَنَجِّنِىْ مِنَ الْقَوْمِ الظّٰلِمِيْنَۙ
আর যারা ঈমান আনে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ ফেরাউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন। সে প্রার্থনা করেছিল, ‘‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার জন্য তোমার নিকট জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দাও আর আমাকে তুমি ফেরাউন ও তার (অন্যায়) কার্যকলাপ থেকে রক্ষা কর, উদ্ধার কর আমাকে যালিম সম্প্রদায় থেকে।’’
সুরা-তাহরীম,আয়াত-১১
وقال ابن جرير ثنا إسماعيل بن حفص الأيلي ثنا محمد بن جعفر عن سليمان التيمي عن أبي عثمان النهدي عن سليمان قال كانت امرأة فرعون تعذب في الشمس فإذا انصرف عنها أظلتها الملائكة بأجنحتها وكانت ترى بيتها في الجنة
ইবনে জারির হইতে বর্ণিত.. সুলাইমান বলেন ফিরৌন তার স্ত্রীকে উত্তপ্ত রোদে ফেলে রাখার শাস্তির আদেশ দিতো। সাস্তি প্রদান করে চলে গেলে মালাইকারা তাকে ডানা দ্বারা ছায়া প্রদান করত। এবং তিনি জান্নাতে নিজের ঘর দেখতে পেতেন।
তাফসীরে ইবনে কাসীর,সুরা-তাহরীম, আয়াত-১১
সুবহানাল্লাহ এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায় আল্লাহ তার ওলীদের দুরদৃষ্টি দান করেন যার মাধ্যমে তারা দুনিয়া থেকে জান্নাতে নিজের ঘর পর্যন্ত দেখতে পারেন। আউলীয়া কিরামের কারামাত হিসাবে দুরদৃষ্টির নমুনা উক্ত ঘটনা থেকে পাওয়া যায়।

কারামত-৪ আল্লাহর ওলীদের যে আল্লাহ সত্যিই কি অসম্ভব দুরদৃষ্টির দান করে থাকেন এবং তারা যে দূর থেকে সাহায্য করতে পারেন তা নিচের হাদীস থেকে বোঝা যায়।
وقال عبد الله ابن وهب : عن يحيى بن أيوب ، عن ابن عجلان ، عن نافع ، عن ابن عمر : إن عمر وجه جيشا وأمر عليهم رجلا يدعى سارية فبينما عمر يخطب يوما جعل ينادي: يا سارية الجبل - ثلاثا، ثم قدم رسول الجيش فسأله عمر، فقال: يا أمير المؤمنين! لقينا عدونا فهزمنا، فبينا نحن كذلك إذ سمعنا صوتا ينادي: يا سارية الجبل - ثلاثا، فأسندنا ظهورنا إلى الجبل فهزمهم الله، فقيل لعمر: إنك كنت تصيح بذلك .(ابن الأعرابي في كرامات الأولياء والديرعاقولي في فوائده وأبو عبد الرحمن السلمي في الأربعين وأبو نعيم عق معا في الدلائل واللالكائي في السنة، كر، قال الحافظ ابن حجر في الإصابة: إسناده حسن ).
হজরতে ইবনে উমার বর্ননা করেন উমার (রাআঃ) একদা সৈনবাহিনী প্রেরন করলেন এবং একজনকে তার আমীর নিযুক্ত করলেন... যাকে ডাকা হত সারিয়া নামে... অতঃপর একদিন হজরতে উমার মসজিদে নাবাবীতে জুমুআর খুতবা প্রদান কালে ( ﻳﺎ ﺳﺎﺭﻳﺔ، ﺍﻟﺠﺒﻞَ ) ‘‘হে সারিয়া, পাহাড়, হে সারিয়া পাহাড়, হে সারিয়া পাহাড় এইভাবে তিনবার উচ্চস্বরে বলে উঠেন: ।’’যখন সেই সৈনবাহিনীর এক বার্তা বাহক এসে জিজ্ঞাসা করলো হে আমিরুল মোমিনিন!! আমরা সত্রুর সম্মোক্ষিন হলাম , যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার এবং উপক্রম হয়েছিলো কিন্তু হটাত একটা উচ্চস্বর শুনতে পেলাম ইয়া সারিয়া "তিনবার"এবং সেই কারনে আল্লাহ শত্রুকে পরাস্ত করেছে। তিনি হজরতে উমারকে জিজ্ঞাসা করলেন। আপনি কি উচ্চস্বরে আওয়াজ দিচ্ছিলেন।
ইমাম মুত্তাকি আল হিন্দি বলেন
قال الحافظ ابن حجر في الإصابة: إسناده حسن
হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানী আল ইসাবাহতে লেখেন.. ইহার সনদ হাসান
কাঞ্জুল উম্মাল,খন্ড-১২ হাদীস নং-৩৫৭৮৮
ইমাম ইবনে হাজার আস্কালানী,আল ইসাবা,খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪
ইবনে কাসীর, আল বিদায়াহ ওয়াল নিহায়া, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-১৩১ তিনি বলেন هذا إسناد جيد حسن ইহার সনদ জাইয়াদ হাসান
কারমত নং-৫ উশ্মান ইবনে আফফান যুননুরাইন রাদিআল্লাহু আনহুর কারামতঃ
وعن أنس بن مالك رضي الله عنه قال دخلت على عثمان رضي الله عنه وكنت قد لقيت امرأة في طريقي فنظرت إليها شزرا وتأملت محاسنها فقال عثمان رضي الله عنه لما دخلت يدخل علي أحدكم وأثر الزنا ظاهر على عينيه أما علمت أن زنا العينين النظر لتتوبن أولأعزرنك فقلت أوحي بعد النبي فقال لا ولكن بصيرة وبرهان وفراسة صادقة
হজরতে আনাস হইতে বর্নিত, তিনি বলেন আমি উমার রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট এলাম। পথের মাঝখানে এক নারীর সাথে সাক্ষাত হলো। আমি তাকে আড় দৃষ্টিতে তাকালাম। তার সৌন্দর্য ভালোকরে নিরীক্ষন করলাম। এরপর হজরতে উস্মানের নিকট উপস্থিত হলাম। অতঃপর হজরতে উশমান বললেন, তোমাদের কেউ কেউ আমার নিকট এমন অবস্থায় আসে যে তার চোখে -মুখে যিনার চিহ্ন থাকে। তোমার কি জানা নেই কু দৃষ্টিতে তাকানো চোখের যিনা ?তুমি তওবা কর নৈলে তোমাকে সাযা দেবো। আমি (হজরতে আনাস) জিজ্ঞাসা করলাম, রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরেও ওহী অবতীর্ণ হয়? উত্তর দিলেন না। কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদর্শীতার মাধ্যমে জানা যায়..।
ইমাম গাযালী, ইহয়াউ উলুমিদ্দীন-খন্ড-৩,পৃষ্ঠা-২৭
তাফসীরে নিসাবুরী, পৃষ্ঠা-১৭৪
ইমাম ফাখরুদ্দিন রাযি,তাফসীরে কাবীর,পৃষ্ঠা-৪৪১
ইবনে কাইয়াম যৌযি,কিতাবুর রুহ, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৪৮২,দারুল কিতাব আরাবিয়া,
ইবনে কাইয়াম যোউযি,কিতাব-আল তুরকুল হাকমিয়াহ,পৃষ্ঠা-৬২
ইমাম মানাওয়ী, ফাইযুল কাদীর,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-১৪১
আব্দুল ওয়াহাব সুবকি, আত তাবকাত,পৃষ্ঠা-৩৬
ইমাম মুল্লা আলী কারী,মুস্নাদে আবু হানিফা, খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৫৬১
তাফসীরে কুরতবী,খন্ড-১২,পৃষ্ঠা-২৭২
এখানে দেখতে পারেন যে হজরতে উসমান যিন্নুরাইনের কারামতের এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর আউলীয়াগন চেহারা দেখে তার গুনাহের খবর কিংবা মনের খবর বলে দিতে পারেন।কেনই বা তাদের এইরুপ ক্ষমতা বা কিভাবে তাদের অন্তর্দৃষ্টির কাজ করে , তা জানার জন্য প্রথমে একটি আয়াতে করিমা পেশ করবো তার তাফসীর হিসাবে হাদীসে পাক।
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِينَ
নিশ্চয় এতে অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্নের (ব্যক্তির)জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
সুরা-হিজর,আয়াত -৭৫
এইবার আসুন উক্ত আয়াতের তাফসীর হিসাবে একটি হাদীস লক্ষ করি যাতে বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যায়।
নিচে হাদীসঃ
حدثنا محمد بن إسمعيل حدثنا أحمد بن أبي الطيب حدثنا مصعب بن سلام عن عمرو بن قيس عن عطية عن أبي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتقوا فراسة المؤمن فإنه ينظر بنور الله ثم قرأ إن في ذلك لآيات للمتوسمين
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাআঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুমিনের দূরদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টি হইতে সাবাধান থাক কারণ সে আল্লাহ্ তা'আলার নূরের সাহায্যে দেখে। তারপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেনঃ “....নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে অন্তর্দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য"।
(সূরাঃ আল-হিজর— ৭৫)।
সুনানে তিরমিযি,কিতাবুত তাফসীরে কুরান,হাদীস নং-৩১২৭
ইমাম তাবরানী,মাআজুমুল আউসাত,হাদীস নং-৭৮৩৯
তাফসীরে কুরতুবী,সুরা- হিজর,আয়াত-৭৫,পৃষ্ঠা-১২১
তাফসীরে ইবনে কাসীর, সুরা -হিজর,আয়াত-৭৫,পৃষ্ঠা-৫৪৭
তাফসীরে, তাবরী,সুরা-হিজর,আয়াত-৭৫,পৃষ্ঠা-১২০
তাফসীরে রুহুল মাআনি,সুরা হিজর, আয়াত-৭৫
সওকানি, ফাতহুল কাদীর,সুরা -হিজর,আয়াত-৭৫ পৃষ্ঠা-৭৬৭
এইবার বিষয়টা বোঝা গেলো আল্লাহর ওলীগন কিভাবে মনের খবর বলে দেন। বা দুরের কোন ঘটনা অবলোকন করতে পারেন কারণ তখন তারা আল্লাহর নুর দ্বারা সাহায্য প্রাপ্ত হন।
কারামত নং-৬
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺳَﻌِﻴﺪُ ﺑْﻦُ ﺗَﻠِﻴﺪٍ ﺍﻟﺮُّﻋَﻴْﻨِﻲُّ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﻭَﻫْﺐٍ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﺟَﺮِﻳﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺎﺯِﻡٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﻳُّﻮﺏَ، ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ـ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ـ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ " ﻟَﻢْ ﻳَﻜْﺬِﺏْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﺇِﻻَّ ﺛَﻼَﺛًﺎ ."ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻣَﺤْﺒُﻮﺏٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﻤَّﺎﺩُ ﺑْﻦُ ﺯَﻳْﺪٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﻳُّﻮﺏَ، ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ـ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ـ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜْﺬِﺏْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ـ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ـ ﺇِﻻَّ ﺛَﻼَﺙَ ﻛَﺬَﺑَﺎﺕٍ ﺛِﻨْﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻨْﻬُﻦَّ ﻓِﻲ ﺫَﺍﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ، ﻗَﻮْﻟُﻪُ } ﺇِﻧِّﻲ ﺳَﻘِﻴﻢٌ { ﻭَﻗَﻮْﻟُﻪُ } ﺑَﻞْ ﻓَﻌَﻠَﻪُ ﻛَﺒِﻴﺮُﻫُﻢْ ﻫَﺬَﺍ { ، ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺑَﻴْﻨَﺎ ﻫُﻮَ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻭَﺳَﺎﺭَﺓُ ﺇِﺫْ ﺃَﺗَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﺒَّﺎﺭٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠَﺒَﺎﺑِﺮَﺓِ ﻓَﻘِﻴﻞَ ﻟَﻪُ ﺇِﻥَّ ﻫَﺎ ﻫُﻨَﺎ ﺭَﺟُﻼً ﻣَﻌَﻪُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻣِﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ، ﻓَﺄَﺭْﺳَﻞَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ، ﻓَﺴَﺄَﻟَﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﻫَﺬِﻩِ ﻗَﺎﻝَ ﺃُﺧْﺘِﻲ، ﻓَﺄَﺗَﻰ ﺳَﺎﺭَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺳَﺎﺭَﺓُ، ﻟَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﺟْﻪِ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ﻏَﻴْﺮِﻱ ﻭَﻏَﻴْﺮُﻙِ، ﻭَﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺳَﺄَﻟَﻨِﻲ، ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮْﺗُﻪُ ﺃَﻧَّﻚِ ﺃُﺧْﺘِﻲ ﻓَﻼَ ﺗُﻜَﺬِّﺑِﻴﻨِﻲ . ﻓَﺄَﺭْﺳَﻞَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺩَﺧَﻠَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺫَﻫَﺐَ ﻳَﺘَﻨَﺎﻭَﻟُﻬَﺎ ﺑِﻴَﺪِﻩِ، ﻓَﺄُﺧِﺬَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﺩْﻋِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟِﻲ ﻭَﻻَ ﺃَﺿُﺮُّﻙِ . ﻓَﺪَﻋَﺖِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺄُﻃْﻠِﻖَ، ﺛُﻢَّ ﺗَﻨَﺎﻭَﻟَﻬَﺎ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔَ، ﻓَﺄُﺧِﺬَ ﻣِﺜْﻠَﻬَﺎ ﺃَﻭْ ﺃَﺷَﺪَّ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﺩْﻋِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟِﻲ ﻭَﻻَ ﺃَﺿُﺮُّﻙِ . ﻓَﺪَﻋَﺖْ ﻓَﺄُﻃْﻠِﻖَ . ﻓَﺪَﻋَﺎ ﺑَﻌْﺾَ ﺣَﺠَﺒَﺘِﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻟَﻢْ ﺗَﺄْﺗُﻮﻧِﻲ ﺑِﺈِﻧْﺴَﺎﻥٍ، ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺗَﻴْﺘُﻤُﻮﻧِﻲ ﺑِﺸَﻴْﻄَﺎﻥٍ . ﻓَﺄَﺧْﺪَﻣَﻬَﺎ ﻫَﺎﺟَﺮَ ﻓَﺄَﺗَﺘْﻪُ، ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﺎﺋِﻢٌ ﻳُﺼَﻠِّﻲ، ﻓَﺄَﻭْﻣَﺄَ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻣَﻬْﻴَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺭَﺩَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻛَﻴْﺪَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِ ـ ﺃَﻭِ ﺍﻟْﻔَﺎﺟِﺮِ ـ ﻓِﻲ ﻧَﺤْﺮِﻩِ، ﻭَﺃَﺧْﺪَﻡَ ﻫَﺎﺟَﺮَ . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺗِﻠْﻚَ ﺃُﻣُّﻜُﻢْ ﻳَﺎ ﺑَﻨِﻲ ﻣَﺎﺀِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ
আবূ হুরাইরা (রাআঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনবার ব্যতিত কখনও কথাকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলেন নি...তন্মধ্যে দু’বার ছিল আল্লাহ প্রসঙ্গে। তার উক্তি "আমি অসুস এবং তাঁর আবার এক উক্তি "বরং এ কাজ করেছে, এই তো তাদের বড়টি।বর্ণনাকারী বলেন, একদা তিনি (ইব্রাহীম আলাইহিস সালামএবং তাঁর স্ত্রী) সারা অত্যাচারী শাসকগণের কোন এক শাসকের এলাকায় এসে পৌঁছলেন... (মিশরে অবস্থিত) তখন তাকে সংবাদ দেওয়া হল যে, এ এলাকায় একজন লোক এসেছে। তার সাথে একজন সর্বাপেক্ষা সুন্দরী মহিলা রয়েছে। তখন সে তাঁর (ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের ) নিকট লোক পাঠাল... সে তাঁকে মহিলাটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, এ মহিলাটি কে? তিনি উত্তর দিলেন,আমার বোন....তারপর তিনি সবার কাছে আসলেন এবং বললেন, হে সারা, তুমি আর আমি ছাড়া পৃথিবীর উপর আর কোন মু’মিন নেই... (কারনন প্রত্যেক মোমিন নারী পুরুষএকপরের ইমানের দিক থেকে ভাই বোন) এই লোকটি আমাকে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল... তখন আমি তাকে জানিয়েছি যে, তুমি আমার বোন। কাজেই তুমি আমাকে মিথ্যাবাদী করোনা, অতঃপর সে (রাজা) সারাকে আনার জন্য লোক পাঠালো..তিনি (সারা) যখন তার কাছে প্রবেশ করলেন এবং রাজা তাঁর দিকে হাত বাড়ালো তখনই সে (আল্লাহর গযবে) পাকড়াও হল। তখন অত্যাচারী রাজা সারাকে বলল, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না....তখন সারা আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন...ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল... এরপর দ্বিতীয়বার তাকে ধরতে চাইলো.. এইবার সে আগের মত বা তার চেয়ে কঠিনভাবে (আল্লাহর গযবে) পাকড়াও হল...এবারও সে বলল, আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু’আ কর... আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না... আবারও তিনি দু’আ করলেন ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল...তারপর রাজা তার কোন এক দারোয়ানকে ডাকল...সে তাকে বলল, তুমি তো আমার কাছে কোন মানুষ আননি... বরং এনেছ এক শয়তান..তারপর রাজা সারার খিদমতের দমতের জন্য হাযেরাকে দান করল। এরপর তিনি (সারা) তাঁর (ইব্রাহীম আলাইহিসসালামের) কাছে এলেন এবং,তিনি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন...যখন তিনি হাত দ্বারা ইশারা করে সারাকে বললেন, কি ঘটেছে...? তখন সারা বললেন, আল্লাহ কাফিরের চক্রান্ত তারই বক্ষে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর সে হাযেরাকে আমার খেদমতের জন্য দান করেছে... আবূ হুরাইরা (রাআঃ) বলেন, হে আকাশের পানির সন্তানগণ!...ইনিই (হজরতে হাযরা)তোমাদের আদি মাতা।
সহী বুখারী,কিতাবুল আহাদিসুল আম্বিয়া,হাদীস নং-৩১২০
আলোচনা ঃ উদ্ধৃত ঘটনায় যে বাদশাহর কথা উল্লেখ আছে সে একজন জালিম বাদশাহ ছিলো। এইবার এখানে একটা চিন্তার বিষয় হলো, হজরতে ইবরাহিম বাদশাহ জালিম জানা সত্তেও হজরতে সারাকে তার নিকট একা পাঠিয়ে দিলেন। তার একটাই কারণ হতে পারে, সেটা হলো তিনি জানতেন উনার স্ত্রী আল্লাহর নেক বান্দি অর্থাৎ আল্লাহর ওলী ছিলেন। তাই আল্লাহর ওলী তার ইজ্জতের উপর হামলা করা মানে আল্লাহর গজব টেনে আনা। নৈলে নিজের স্ত্রীকে ওরকম একজন জালিম বাদশাহর নিকট একা যেতে দেওয়ার কারণ বা যৌক্তিকতা খুজে পাওয়া যায় না। যাই হোক যখন সেই জালিম বাদশাহ হজরতে শারাহর ইজ্জতের উপর হামলা করার চেষ্টা করলো তখন সেই বাদশাহর উপর আল্লাহর গজব নাজিল হলো। কিন্তু হজরতে সারার কারামত ও আল্লাহর নিকট তার মাকবুলিয়াত এমনই যে মুহুর্তের মধ্যে সেই জালিম বাদশাহ গজব থেকে ত্রান পেয়ে গেলো। এইভাবে হজরতে সারার কারামাত তিন তিনবার জাহির হলো। সেই কারণে সে যতবার তার অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে যতবার আযাবে পড়লো ততবার হজরতে সারার দোয়ায় মুহুর্তের মধ্যে মুক্তি পেয়ে গেলো।যাই হোক উক্ত ঘটণা থেকে আর একটা শিক্ষা পেলাম আল্লাহর ওলীর কারমতকে যাদু বা শয়তানি কাজ বলা জালিম ও কাফীরদের কাজ।এইবার এইধরণের যারা উক্তি করে তারাও জালিম ও কাফীরদের অন্তর্গত।
কারামাত নং-৭
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺴْﻠِﻢُ ﺑْﻦُ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺟَﺮِﻳﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺎﺯِﻡٍ، ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺑْﻦِ ﺳِﻴﺮِﻳﻦَ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﻟَﻢْ ﻳَﺘَﻜَﻠَّﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﻬْﺪِ ﺇِﻻَّ ﺛَﻼَﺛَﺔٌ ﻋِﻴﺴَﻰ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪُ ﺟُﺮَﻳْﺞٌ، ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ، ﻓَﺠَﺎﺀَﺗْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ ﻓَﺪَﻋَﺘْﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃُﺟِﻴﺒُﻬَﺎ ﺃَﻭْ ﺃُﺻَﻠِّﻲ . ﻓَﻘَﺎﻟَﺖِ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻻَ ﺗُﻤِﺘْﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﺮِﻳَﻪُ ﻭُﺟُﻮﻩَ ﺍﻟْﻤُﻮﻣِﺴَﺎﺕِ . ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺟُﺮَﻳْﺞٌ ﻓِﻲ ﺻَﻮْﻣَﻌَﺘِﻪِ، ﻓَﺘَﻌَﺮَّﺿَﺖْ ﻟَﻪُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﻭَﻛَﻠَّﻤَﺘْﻪُ ﻓَﺄَﺑَﻰ، ﻓَﺄَﺗَﺖْ ﺭَﺍﻋِﻴًﺎ، ﻓَﺄَﻣْﻜَﻨَﺘْﻪُ ﻣِﻦْ ﻧَﻔْﺴِﻬَﺎ ﻓَﻮَﻟَﺪَﺕْ ﻏُﻼَﻣًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻣِﻦْ ﺟُﺮَﻳْﺞٍ . ﻓَﺄَﺗَﻮْﻩُ ﻓَﻜَﺴَﺮُﻭﺍ ﺻَﻮْﻣَﻌَﺘَﻪُ، ﻭَﺃَﻧْﺰَﻟُﻮﻩُ ﻭَﺳَﺒُّﻮﻩُ، ﻓَﺘَﻮَﺿَّﺄَ ﻭَﺻَﻠَّﻰ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟْﻐُﻼَﻡَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﺃَﺑُﻮﻙَ ﻳَﺎ ﻏُﻼَﻡُ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺍﻋِﻲ . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻧَﺒْﻨِﻲ ﺻَﻮْﻣَﻌَﺘَﻚَ ﻣِﻦْ ﺫَﻫَﺐٍ . ﻗَﺎﻝَ ﻻَ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﻃِﻴﻦ
ٍ .

আবূ হুরায়রা (রাআঃ) থেকে বর্ণিত... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন জন শিশু ব্যতিত আর কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি... বনী ইসরাঈলে এক ব্যাক্তি ছিলো যাকে ‘জুরাইজ’ বলে ডাকা হতো... একদা ইবাদাতে রত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল... সে ভাবল আমি কি তার ডাকে সাড়া দেব, না কি সালাত আদায় করতে থাকব...(জবাব না পেয়ে) অতপঃর তার মা বলল, ইয়া আল্লাহ! ব্যভিচারিণীর চেহারা না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না.... জুরাইজ তার ইবাদাত খানায় থাকত...একবার তার কাছে একটি মহিলা আসল... সে (অসৎ উদ্দেশ্যে ) তার সাথে কথা বলল.... কিন্তু জুরাইজ তা অস্বীকার করল। তারপর মহিলাটি একজন রাখালের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনের বাসনা পূরণ করল... পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল...তাকে জিজ্ঞাসা করা হল...এটি কার থেকে? স্ত্রী লোকটি বলল, জুরাইজ থেকে... লোকেরা তার কাছে আসল এবং তার ইবাদাত খানা ভেঙ্গে দিল...আর তাকে নীচে নামিয়ে আনল ও তাকে গালি গালাজ করল....তখন জুরাইজ উযূ সেরে ইবাদাত করল.. এরপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল। হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল সেই রাখাল। তারা (বনী ইসরাঈলের লোকেরা) বলল, আমরা আপনার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি। সে বলল, না... বরং মাটি দিয়ে(করো).....
সহী বুখারী, কিতাবুল-আহাদিসে আম্বিয়া,হাদীস নং-৩১৯৪
এইবার আসুন আলোচনায় আসি..... যদি বানি ইসরাঈলের নেক বান্দার বা আল্লাহর ওলীর কারামত এমন যে আল্লাহর দানপ্রাপ্ত ক্ষমতায় যখন সেই নবজাত শিশু কে নির্দেশ দিলেন, তখন সেই নবজাত শিশু কথা বলে উঠে।অতএব বোঝা যায় আমাদের সামনে আল্লাহর ওলীদের মাধ্যমে শিশু বলে ওঠা ঘটনা আমরা বিভিন্নভাব ওয়াজ মহফিল কিংবা আউলীয়াদের কারামত সম্পর্কিত কিতাবে পড়ে থাকি তা অবাক হওয়ার বিষয় নয় তা উক্ত হাদীসের মাধ্যমে বোঝা যায়।

 
Top