কোন রাত সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত নাকি ক্বদরের রাত?

👉 হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২২৯- ৩২১ হিজরী) তিনি বলেছেন,

ونقل الطحاوي عليه الرحمة في حواشي المختار عن بعض الشافعية أن أفضل الليالي ليلة مولده عليه الصلاة والسلام ثم ليلة القدر ثم ليلة الإسراء والمعراج ثم ليلة عرفة ثم ليلة الجمعة ثم ليلة النصف من شعبان ثم ليلة العيد

অর্থ: রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছেঃ
- পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত,
- অতঃপর লাইলাতুল কদরের রাত,
- অতঃপর মিরাজ শরীফের রাত,
- অতঃপর আরাফার রাত,
- অতঃপর জুমুয়ার রাত,
- অতঃপর ১৫ শাবানের রাত,
- অতঃপর ঈদের রাত।”
[তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৯/ ১৯৪, সূরা ক্বদরের তাফসীরে]

👉 ইমাম ইউসূফ নাবহানী (রহঃ) উল্লেখ করেন,
বিশ্ব বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা তাহাবী (রহঃ) ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এর কওল নকল করে বলেন,
“নিশ্চয়ই ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম রাত হলােঃ
১) রাসূল (ﷺ) এর জন্মদিনের রাত্র অর্থাৎ মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্র (১২ই রবিউল আউয়াল)
২) তারপর হলাে শবে-ই-কদরের রাত্র।
৩) তারপর হলাে মিরাজের রাত্র (২৭ শে রযব)
৪) তারপর উত্তম রাত্র হলাে লাইলাতুল আরাফা (৯ই জিলহজ্জ)
৫) তারপর হলাে জুমার রাত্র
৬) তারপর হলাে ১৫ই শাবানের রাত্র (শবে বরাত) এবং
৭) তারপর দুই ঈদের রাত্র।
[শায়খ ইউসুফ নাবহানীঃ জাওয়াহিরুল বিহারঃ ৩/৪২৬ পৃ]

👉 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ) [১১৯৮-১২৫২ হিঃ] বর্ননা করেন,

أَنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِي لَيْلَةُ مَوْلِدِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيدِ
অর্থ: রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছেঃ
- পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত,
- অতঃপর লাইলাতুল কদরের রাত,
- অতঃপর মিরাজ শরীফের রাত,
- অতঃপর আরাফার রাত,
- অতঃপর জুমুয়ার রাত,
- অতঃপর ১৫ শাবানের রাত,
- অতঃপর ঈদের রাত।”
[ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ) : রদ্দুল মুহতার আলা আল দুররুল মুখতার (হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব) : ৮/২৮৫ (শামেলা) , পুরাতন ছাপা ৫০৫ পৃষ্ঠা]

👉 ইমাম শিহাবউদ্দীন কাসতলানী (রহঃ)  বলেন :

احدها ان ليلة  المولود ليلة ظهو ره صلى الله عليه وسلم وليلة القدر معطاة له وما شرف بظهور ذات المشرف من اجله اشرف مما شرف بسبب ما اعطيه ولا نزاع فى ذلك فكانت ليلة المولودبهذا الاعتبار افضل০
الثانى ان ليلة القدر شرفت بنزول الملائكة فيها وليلة المولود شرفت بظهوره صلى الله عليه وسلم فيها  ومن شرفت به ليلة المولود افضل ممن شرفت بهم ليلة القدر  على الاصح المرتضى فتكون ليلة المولود افضل০
الثالث ان ليلة القدر وقع التفضل فيها على امة محمد صلى الله عليه وسلم وليلة المولود الشريف وقع التفضل فيها على سائر الموجودات فهو الذى بعثه الله عز وجل رحمة للعالمين فعمت به النعمة على جميع الخلائق০

”রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেলাদত তথা এ ধরণীতে শুভাগমন রাতে হয়েছে বলা হলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে দুটো রাতের মধ্যে কোনটি বেশি মর্যাদাসম্পন্ন - কদরের রাত (যা’তে কুরআন অবতীর্ণ হয়), নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ধরাধামে শুভাগমনের রাত?
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেলাদতের রাত এ ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতর ৩টি কারণে তা হলঃ

১) নবী করীম (ﷺ) এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন মওলিদের রাতে, অথচ কদরের রাত (পরবর্তীকালে) তাঁকে মন্ঞ্জুর করা হয়। অতএব, মহানবী (ﷺ)-এর আবির্ভাব, তাঁকে যা মন্ঞ্জুর করা হয়েছে তার চেয়েও শ্রেয়তর। তাই মওলিদের রাত অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন।

২) কদরের রাত যদি ফেরেশতাদের অবতীর্ণ হবার কারণে মর্যাদাসম্পন্ন হয়, তাহলে মওলিদের রাত মহানবী (ﷺ) এ ধরণীতে প্রেরিত হবার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, আর তাই মওলিদের রাতও শ্রেষ্ঠতর।

৩) কদরের রাতের বদৌলতে উম্মতে মোহাম্মদীকে বিশিষ্টতা দেয়া হয়েছে; অথচ মওলিদের রাতের মাধ্যমে সকল সৃষ্টিকে ফযিলাহ দেয়া হয়েছে। কেননা, মহানবী (ﷺ)-কে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে রহমত করে পাঠানো হয়েছে (আল-কুরআন ২১:১০৭)। অতএব, এই রহমত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্যে সার্বিক।”
★ ইমাম কুস্তালানী : ‘আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা,
★ ইমাম যুরকানী মালেকী : শরহে মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা।

👉 উস্তাদুল মুহাদ্দিসিন ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেন,

اذا قلنا انه ولد ليلا فتلك الليلة افضل من ليلة القدر بلاشبهة لان ليلة المولودة ليلة ظهوره صلى الله عليه وسلم وليلة القدر معطاةله০

অর্থাৎ মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্রি শবে কদর হতে যে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ মাত্র নেই। কেননা মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত হল আল্লাহর হাবিব (ﷺ) এর দুনিয়াতে আবির্ভূত হওয়ার রাত্রি আর শবে ক্বদর হুজুর (ﷺ) কে আল্লাহ তা’য়ালা দান করেছেন।
★ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মাসাবাতা বিস সুন্নাহঃ ৭৭/৭৮ পৃষ্ঠা।


 
Top