হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র মাধ্যমে হযরত উমর (رضي الله عنه)'র তাওয়াসসুল
মূল: ড: জি, এফ, হাদ্দাদ
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দিন হোসেন
আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়েত বিন মূসা


সহীহ্ আল্ বুখারী নামের হাদীসের গ্রন্থে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে খলীফা উমর (رضي الله عنه)' আমাদের মহানবী (ﷺ)-এর রওযা পাকে মুসলিম উম্মাহর পক্ষে বৃষ্টি প্রার্থনা না করে বরং তাঁরই চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র মাধ্যমে (তাওয়াসসুল) আল্লাহর দরবারে বৃষ্টি প্রার্থনা করেছিলেন। খলীফা দোয়ার মধ্যে বলেন যে তাঁরা ইতিপূর্বে বিশ্বনবী (ﷺ)-এর মধ্যস্থতায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন, কিন্তু এখন তাঁর চাচার অসিলায় তা চাইছেন। এই বিশুদ্ধ বর্ণনাটি  হানাফী উলামায়ে কেরাম কীভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন, তা আমরা এখন জানতে চেষ্টা করবো।
এই বিষয়টি ও এতদসংক্রান্ত প্রশ্ন সাপেক্ষ যুক্তিগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়ার আগে কিছু প্রাথমিক মন্তব্য এখানে লিপিবদ্ধ করা প্রাসঙ্গিক হবে।

প্রথমতঃ 
হযরত উমর (رضي الله عنه)' হযরত আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিব (رضي الله عنه)'র তাওয়াসসুল করেছিলেন, তাঁর পুত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)'র তাওয়াসসুল করেন নি। কিছু দিন আগে ‘হাম্বলী ফোরামে’ এ ব্যাপারে যা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়।

❏ হাদিস 1 :

দ্বিতীয়তঃ 
খলীফা উমর (رضي الله عنه)'র বক্তব্য ছিল নিম্নরূপ:
أَنَّ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ المُطَّلِبِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا ، قَالَ: فَيُسْقَوْنَ.
– “হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে প্রার্থনা করার সময় মহানবী (ﷺ)কে অসিলা (মাধ্যম) হিসেবে পেশ করতাম, আর আপনি বৃষ্টি দিতেন; এখন আমরা তাঁর চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'-কে অসিলা হিসেবে পেশ করছি, অতএব অনুগ্রহ করে বৃষ্টি দিন।”[১]
[১].বুখারী : আস সহীহ, বাবু সুওয়ালিন নাসি ইমামিল ইসতিসকা, ২:২৭, হাদীস নং ১০১০।
ক.  বাগাবী : শরহুস সুন্নাহ, বাবুল ইসতিসকা লি আহলিস সালাহ, ৪:৪০৯ হাদীস নং ১১৬৫।
খ. বায়হাকী : দালায়িলুন নবুওয়াত, ৬:১৪৮।

● এই বর্ণনাটি হযরত আনাস (رضي الله عنه)' হতে আল্ বুখারী (رحمة الله) তাঁর সহীহ্ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।

● ইমাম আল্ মালেকী (رحمة الله) বলেন, “যে ব্যক্তি এই বর্ণনা থেকে এ কথা বুঝে নেয় যে, হযরত উমর (رضي الله عنه)' হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'-কে অসিলা করেছেন এবং বিশ্বনবী (ﷺ)কে করেন নি, কেননা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)' জীবিত এবং মহানবী (ﷺ) ‘মৃত’, তবে ওই ব্যক্তির উপলব্ধি ক্ষমতা-ই মৃত।”

❏ হাদিস 2-4 :

ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله) নিজ ‘তারিখে খুলাফা’ (বৈরুত ১৯৯২, আহমদ ফারেস সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৪০) গ্রন্থে এই ঘটনার পটভূমি বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন:
وَفِيْ سَنَةِ سَبْعِ عَشَرَةَ زَادَ عُمَرُ فِيْ المَسْجِدِ النَّبْوِّيِ، وَفِيْهَا كَانَ الْقَحَطُ بِالْحِجَازِ، وَسُمِّيَ عَامُ الرَّمَادَةِ وَاسْتَقَىَ عُمَرُ لِلْنَّاسِ بِالْعَبَّاسِ. أَخْرَجَ ابْنُ سَعَدٍ، عَنْ نَيَارِ الأَسْلَمِيُّ: أَنَّ عُمَرَ لمَاَّ خَرَجَ يَسْتَسْقَي خَرَجَ وَعَلَيْهِ بَرْدُ الرَّسُوْلِ صَلَّىَ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَأَخْرَجَ عَنْ اِبْنِ عَوْنٍ قَالَ: أَخَذَ عُمَرُ بِيَدِ الْعَبَّاس ِثُمَّ رَفَعَهَا، وَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِ نَّبِيِّكَ أَنْ تَذْهَبَ عَنَّا المْحَلَ، وَأَنْ تَسْقِيْنَا الغَيْثَ، فَلَمْ يَبْرِحُوْا حَتَّى سَقُوا، فَأطَبَقَتِ السَّمَاءُ عَلَيْهِمْ أَيَّامًا.
– “১৭ হিজরী সালে হযরত উমর (رضي الله عنه)' মসজিদে নব্বী সম্প্রসারণ করেন। ওই বছর হেজায অঞ্চলে খরা দেখা দেয়। সালটিকে ‘অঙ্গারের বছর’ আখ্যা দেয়া হয় (আম আল্ রামাদা)। 
হযরত উমর (رضي الله عنه)' মানুষের উপকারে বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনার সময় হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র অসিলা গ্রহণ করেন।  
হযরত ইবনে সা’দ (رحمة الله) (সাহাবী) হযরত নিয়্যার আল্ আসলামী (رضي الله عنه)' থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত উমর (رضي الله عنه)' যখন বৃষ্টির জন্যে খোদার দরবারে প্রার্থনা করতে বেরিয়ে আসেন, ওই সময় তিনি মহানবী (ﷺ)-এর জুব্বা (বুরদ্) মোবারক পরেছিলেন। 
হযরত ইবনে আওন (رضي الله عنه)' বর্ণনা করেছেন যে, খলীফা উমর (رضي الله عنه)' হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'মা-এর হস্ত মোবারক ওপরে তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘হে আল্লাহ্!  আমরা মহানবী (ﷺ)-এর সম্মানিত চাচার মধ্যস্থতায় (অসিলায়) আপনার দরবারে প্রার্থনা করছি যাতে আপনি এই খরা আমাদের কাছ থেকে দূর করে দেন এবং বৃষ্টি মঞ্জুর করেন।”[২]
[২]. সুয়ূতি : তারিখুল খুলাফা, আল খলিফাতুস সানি উমর ইবনুল খাত্তাব, ১:১০৬।

এ ঘটনায় নিচের বিষয়গুলো পরিস্ফুট হয়:

(১)➡ এই বর্ণনায় এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে হযরত উমর (رضي الله عنه)'র যমানায় কখনোই বিশ্বনবী (ﷺ)-এর তাওয়াসসুল করা হয় নি। ওই ধরনের অভিমত কেউ নিয়ে থাকলে তা মনগড়া এবং সুস্পষ্ট দলিলের ওপর ভিত্তিশীল নয়।

(২)➡ পক্ষান্তরে, হযরত উমর (رضي الله عنه)' ওই সময়ই হযরত রাসূলে পাক (ﷺ)-এর তাওয়াসসুল করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যখন তিনি বৃষ্টির জন্যে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জুব্বা মোবারক পরে বেরিয়ে এসেছিলেন, যা হযরত ইবনে সা’দ বর্ণনা করেছেন। সহীহ্ মুসলিম শরীফ গ্রন্থে হযরত আসমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন যে তিনি তাঁর বোন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে মহানবী (ﷺ)-এর আলখেল্লাটি পেয়েছিলেন এবং তাঁরা সেটি দ্বারা মানুষের রোগ নিরাময় করার উপায় খুঁজতেন।
(৩)➡ হুজুর পূর নূর (ﷺ)-এর চাচার মধ্যস্থতা পরিস্ফুট করে যে তাওয়াসসুল মূলতঃ মহানবী (ﷺ)-এরই! কেননা, হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র গুরুত্ব কেবল মহানবী (ﷺ)-এর সাথে তাঁর (রক্তের) সম্পর্কের কারণেই হয়েছেঃ-

❏ হাদিস 5 : 

যা হযরত উমর (رضي الله عنه)'র ভাষায় নিম্নরূপ:
“আপনার নবী (ﷺ)-এর চাচা” (আল্ বুখারীতে উদ্ধৃত)। 
আল্ লালিকার সংস্করণে তা এভাবে উদ্ধৃত “আপনার নবী (ﷺ)-এর সাথে সম্পর্কে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র মর্যাদা”। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)' এ উপলক্ষে বলেন,

وَقَدْ بَيَّنَ الزُّبَيْرُ بْنُ بَكَّارٍ فِي الْأَنْسَابِ صِفَةَ مَا دَعَا بِهِ الْعَبَّاسُ فِي هَذِهِ الْوَاقِعَةِ وَالْوَقْتَ الَّذِي وَقَعَ فِيهِ ذَلِكَ فَأَخْرَجَ بِإِسْنَادٍ لَهُ أَنَّ الْعَبَّاسَ لَمَّا اسْتَسْقَى بِهِ عُمَرُ قَالَ اللَّهُمَّ إِنَّهُ لَمْ يَنْزِلْ بَلَاءٌ إِلَّا بِذَنْبٍ وَلَمْ يُكْشَفْ إِلَّا بِتَوْبَةٍ وَقَدْ تَوَجَّهَ الْقَوْمُ بِي إِلَيْكَ لِمَكَانِي مِنْ نَبِيِّكَ وَهَذِهِ أَيْدِينَا إِلَيْكَ بِالذُّنُوبِ وَنَوَاصِينَا إِلَيْكَ بِالتَّوْبَةِ فَاسْقِنَا الْغَيْثَ فَأَرْخَتِ السَّمَاءُ مِثْلَ الْجِبَالِ حَتَّى أَخْصَبَتِ الْأَرْضَ وَعَاشَ النَّاسُ وَأَخْرَجَ أَيْضًا مِنْ طَرِيقِ دَاوُدَ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنِ بن عُمَرَ قَالَ اسْتَسْقَى عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عَامَ الرَّمَادَةِ بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَذَكَرَ الْحَدِيثَ وَفِيهِ فَخَطَبَ النَّاسَ عُمَرُ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرَى لِلْعَبَّاسِ مَا يَرَى الْوَلَدُ لِلْوَالِدِ فَاقْتَدُوا أَيُّهَا النَّاسُ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عَمِّهِ الْعَبَّاسِ وَاتَّخِذُوهُ وَسِيلَةً إِلَى اللَّهِ وَفِيهِ فَمَا بَرِحُوا حَتَّى سَقَاهُمُ اللَّهُ.

-“হে আল্লাহ্! কোনো শাস্তি-ই পাপ ছাড়া অবতীর্ণ হয় না, আর তা তওবা (অনুতপ্ত হওয়া) ছাড়া মোচন-ও হয় না। মানুষেরা আপনার নবী (ﷺ)-এর সাথে আমার সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত আমার মর্যাদার ওয়াস্তে আপনার করুণাপ্রার্থী। আর এই হলো আমাদের হাত যা আপনার দরবারের দিকে তোলা; যদিও আমাদের অনেক পাপ, তবুও আমাদের কপালের উপরিবর্তী কেশগুচ্ছ অনুতপ্ত; অতএব, আমাদের বৃষ্টি দান করুন এবং আপনার নবী (ﷺ)কে তাঁর চাচার সত্তায় অম্লান রাখুন।” অতঃপর আকাশ থেকে রশির মতো মোটা (অর্থাৎ ভারী) বর্ষণ আরম্ভ হলো এবং মানুষেরা হযরত আব্বাসের (رضي الله عنه)' কাছে এসে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “আপনাকে মোবারকবাদ (অভিনন্দন), মক্কা ও মদীনা (হারামাইন শরীফাইন)-এর সেচকারী।” হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه)' এমতাবস্থায় বলেন, “তিনি হলেন আল্লাহর কাছে মধ্যস্থতাকারী এবং নৈকট্যের মকাম (স্থান)।” 

এ বর্ণনাটি আল্ আনসাব পুস্তকে আল্ যুবায়ের ইবনে বক্কর (رحمة الله) থেকে উদ্ধৃত করেছেন। [৩]
[৩] ইবন হাজর আসকালানী : ফাতহুল বারী শরহু বুখারী, ২:৪৯৭।

অতএব, তাওয়াসসুল মুলতঃ মহানবী (ﷺ)-এর মধ্যস্থতায়ই হয়েছে।

❏ হাদিস 6 :

কেননা আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণকারী মানুষের জন্যে তিনি-ই হলেন চূড়ান্ত অসিলা, যা তিনি স্বয়ং জনৈক অন্ধ সাহাবীকে শিখিয়েছিলেন-
يَا مُحَمَّدُ ، إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي
“বলো, ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ)! ইন্নী আতাওয়াজ্জাহু বিকা ইলা রাব্বী – অর্থাৎ, হে রাসূল! আমি আপনার মধ্যস্থতায় আল্লাহর দিকে ফিরলাম।” [৪]
[৪] আহমদ : আল মুসনাদ, ৪:১৩৮, হাদীস নং ১৭২৭৯।
ক. নাসায়ী : আস সুনানুল কুবরা, ৯:২৪৪ হাদীস নং ১০৪২০।
খ. ইবনে খুযামা : আস সহীহ, ২:২২৫ হাদীস নং ১২১৯।
গ. তিরমিযী : আস সুনান, ১৩:১২৪ হাদীস নং ৩৯২৭।

আর অনেক সাহাবী থেকেই এ মর্মে স্পষ্ট বিবরণ বিদ্যমান যার কয়েকটি নিচে দেয়া হলো:

❏ হাদিস 7 :

(ক) এক বেদুঈন আরব আমাদের মহানবী (ﷺ)কে বলেন,

جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ لَقَدْ أَتَيْنَاكَ وَمَا لَنَا بَعِيرٌ يُيَطُّ وَلَا صَبِيٌّ يَصِيحُ، وأنشده.
أَتَيْنَاكَ وَالْعَذْرَاءُ يَدْمَى لَبَانُهَا … وَقَدْ شُغِلَتْ أُمُّ الصَّبِيِّ عَنِ الطِّفْلِ
وَأَلْقَى بِكَفَّيْهِ الصَّبِيُّ اسْتِكَانَةً … مِنَ الْجُوعِ ضَعْفًا مَا يُمَرُّ وَلَا يُخْلِي
وَلَا شَيْءَ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ عِنْدَنَا … سِوَى الْحَنْظَلِ الْعَامِيِّ وَالْعِلْهِزِ الْفَسْلِ
وَلَيْسَ لَنَا إِلَّا إِلَيْكَ فِرَارُنَا … وَأَيْنَ فِرَارُ النَّاسِ إِلَّا إِلَى الرُّسْلِ
فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجُرُّ رِدَاءَهُ حَتَّى صَعِدَ الْمِنْبَرَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، فَقَالَ: اللهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا مَرِيعًا غَدَقًا، طَبَقًا عَاجِلًا غَيْرَ رَائِثٍ، نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ تَمْلَأُ بِهِ الضَّرْعَ وَتُنْبِتُ بِهِ الزَّرْعَ وَتُحْيِي بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَكَذَلِكَ تُخْرَجُونَ، فو الله مَا رَدَّ يَدَيْهِ إِلَى نَحْرِهِ حَتَّى أَلْقَتِ السَّمَاءُ بِأَبْرَاقِهَا، وَجَاءَ أَهْلُ الْبِطَانَةِ يَعْنِجُونَ يَا رَسُولَ اللهِ! الْغَرَقَ الْغَرَقَ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ قَالَ:
اللهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا، فَانْجَابَ السَّحَابُ عَنِ الْمَدِينَةِ حَتَّى أَحْدَقَ بِهَا كَالْإِكْلِيلِ، فَضَحِكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ ثُمَّ قَالَ: لِلَّهِ دَرُّ أَبِي طَالِبٍ لَوْ كَانَ حَيًّا قَرَّتَا عَيْنَاهُ مَنْ يُنْشِدُنَا قَوْلَهُ؟ فَقَامَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ الله كأنك أردت:
وَأَبْيَضُ يُسْتَسْقَى الْغَمَامُ بِوَجْهِهِ … ثِمَالُ الْيَتَامَى عِصْمَةٌ لِلْأَرَامِلِ
يَلُوذُ بِهِ الْهُلَّالُ مِنْ آلِ هَاشِمٍ … فَهُمْ عِنْدَهُ فِي نِعْمَةٍ وَفَوَاضِلِ
كَذَبْتُمْ وبيت الله يبزي محمدا … وَلَمَّا نُقَاتِلْ دُونَهُ وَنُنَاضِلِ
وَنُسْلِمُهُ حَتَّى نُصَرَّعَ حَوْلَهُ … وَنَذْهَلُ عَنْ أَبْنَائِنَا وَالْحَلَائِلِ

-“আমরা এমন সময় আপনার শরণাপন্ন হয়েছি যখন আমাদের কুমারীদের (বুকের) দুধ শুকিয়ে গেছে, আর মায়েরা আপন শিশুর জীবনের চেয়ে নিজের জীবন সম্পর্কে বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ওই শিশু ক্ষুধায় হাত নামিয়ে স্থবির বসে আছে; কেননা এই ক্ষিদে জ্বালাময় এবং বিরামহীন। খাওয়ার মতো কিছুই আর আমাদের জনগোষ্ঠীর কাছে নেই, কেবল আছে তেতো শশা জাতীয় সবজি এবং রক্তমিশ্রিত উটের পশম। আমাদের আশ্রয় নেয়ার মতো আর কেউ নেই আপনি ছাড়া। কেননা নবী (ﷺ) ছাড়া মানুষেরা আর কোথায়ই বা আশ্রয় নেবে?”
এমতাবস্থায় মহানবী (ﷺ) উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর জুব্বা মোবারক টানতে টানতে মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতঃপর আরয করলেন: “হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি মঞ্জুর করুন।” অমনি ভারী বর্ষণ আরম্ভ হলো। এ দেখে তিনি বল্লেন, “আবু তালিব (নবীর চাচা) আজ জীবিত থাকলে এ দৃশ্য দেখে নয়ন জুড়াতেন। ওই বেদুঈন (আবু তালেব) যা বলেছেন কে আছো তা পুনরায় আবৃত্তি করবে আমাদের উদ্দেশ্যে?” এই কথা শুনে হযরত আলী (رضي الله عنه)' উঠে দাঁড়িয়ে আরয করলেন, “হে রাসূল (ﷺ) আমার মনে হয় আপনি তাঁর এই কথা বোঝাচ্ছেন, “শুভ্র সেই সত্তা যার চেহারা মোবারক দ্বারা মেঘমালা কামনা করা হয়, যিনি এতিম অনাথদের লালন-পালনকারী ও বিধবাদের রক্ষক। তাঁরই মধ্যস্থতায় হাশেম গোত্র দুর্যোগ থেকে আশ্রয় চায়; কেননা তারা তাঁরই মধ্যে খুঁজে পায় মহা অনুগ্রহ ও করুণা…..।”[৫]
[৫] 
ক. ফাতহুল বারী : শরহু বুখারী, ৫:১২৭।
খ. বায়হাকী : দালায়িলুন নবুওয়াত, ৬:১৪১।
গ. ইবনে কাছির : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৬:৯৯।

❏ হাদিস 8 :

(খ) হযরত সাওয়াদ ইবনে কারীব আল্ সাদুসী (رضي الله عنه)' কবিতার আকারে আবৃত্তি করেন-

فَمُرْنَا بِمَا يَأْتِيكَ يَا خَيْرَ مَنْ مَشَى … وَإِنْ كَانَ فِيمَا جَاءَ شَيْبُ الذَّوَائِبِ
وَكُنْ لِي شَفِيعًا يَوْمَ لَا ذِي شَفَاعَةٍ … سِوَاكَ بِمُغْنٍ عَنْ سَوَادِ بْنِ قَارِبِ
“সত্যি আপনি হলেন আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তিতে নবীদের মাঝে সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম’; মহানতম ও নির্মলতম পিতামাতার পুত্র সন্তান; অতএব, এই সাওয়াদ ইবনে কারীবের জন্যে ওই দিন সুপারিশকারী হোন, যেদিন সুপারিশকারীদের মধ্যে আপনি ছাড়া আর কারো সুপারিশই আমার জন্যে ন্যূনতম উপকারী হবে না।”
এ বক্তব্য শ্রবণে রাসূলে কারীম (ﷺ) মৃদু হাসলেন এবং বল্লেন, “সাওয়াদ! তুমি সাফল্য অর্জন করেছো।”[৬] 
[৬]
ক.আবু ইয়া’লা : ‘মু’জাম’ (পৃষ্ঠা ২৬৫), 
খ.তাবারানী : ‘আল্ কবীর’ (৭:৯৪ ৬৪৭৫), 
গ.আবু নু’য়াইম : ‘দালাইল্ আল্ নুবুওয়া’ (পৃষ্ঠা ১১৪, অধ্যায় ৬৩), 
ঘ.আল্ তায়মী : ‘দালাইল’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ১৩২), 
ঙ.আল্ হাকিম : ‘মুস্তাদ্রাক’ গ্রন্থে (৩:৭০৫), 
চ.আল্ বায়হাকী : ‘দালাইল’ (২:২৫১), 
ছ.ইবনে আব্দিল বারর : ‘ইস্তিয়াব’ (২:৬৭৫), 
জ.ইবনে কাসীরঃ ‘তাফসীর’ (৪:১৬৯) এবং ‘আল-বেদায়া’ গ্রন্থে, 
ঞ.ইবনে হাজরঃ ‘ফাত্হুল বারী’ (৭:১৮০) ও ‘ইসাবা’ (৩:২৯৯)

❏ হাদিস 9 :

(গ) হযরত হাসসান বিন সাবিত (رضي الله عنه)' পদ্যের আকারে আবৃত্তি করেন-

يَا رُكْنُ مُعْتَمِدٌ وَعِصْمَةُ لَائِذٌ … وَمَلاَذُ مُنْتَجِعٌ وَجَارٌ مُجَاوَرٌ
يَا مَنْ تُخَيّْرُهُ الإِلَهُ لِخَلْقِهِ … فَحُبَّاهُ بِالخْلَقِ الزَّكِيِ الطَّاهِرِ
أَنْتُ النَّبِيُّ وَخَيْرُ عُصْبَةِ آَدَمَ … يَا مَنْ تُجَوِّدُ كَفَيْضِ بَحْرٌ زَاخِرٌ
-“আপনার প্রতি যাঁরা আস্থা রাখেন, ওহে তাঁদের ভিত্তিস্তম্ভ, ওহে তাঁদের আশ্রয়স্থল যাঁরা আপনার মাঝে আশ্রয় খোঁজেন, আর যাঁরা  শষ্য ও বৃষ্টি খোঁজেন তাঁদের আশ্রয়দাতা, ওহে আশ্রয় অন্বেষণকারীদের প্রতিবেশী ও রক্ষাকারী, যাঁর মাঝে পূর্ণতা ও চারিত্রিক নির্মলতা সন্নিবেশ করে খোদাতা’লা তাঁর সৃষ্টিকুলের জন্যে মনোনীত করেছেন!”[৭]
[৭] 
ক.ইবনে আব্দিল বারঃ ‘আল্ ইস্তিয়াব’ (১:২৭৬) 
খ.ইবনে সাইয়্যেদ আল্ নাস্ নিজ ‘মিনাহ্ আল্ মায’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৭৩) 

(৪) হযরত উমর (رضي الله عنه)' কর্তৃক বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনার প্রেক্ষিত হিসেবে মহানবী (ﷺ)-এর সুস্পষ্ট তাওয়াসসুল আরেকটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, যা সাহাবী হযরত বেলাল ইবনে হারিস্ মুযানী (رضي الله عنه)' রেওয়ায়াত করেছেন এবং যা দু’টি ভাষ্যে পাওয়া যায়।

❏ হাদিস 10 :

(ক) ভাষ্য – ১
সাহাবী  হযরত মালেক আল দার (رضي الله عنه)' বর্ণনা করেন-

أَصَابَ النَّاسَ قَحَطٌ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، فَجَاءَ رَجُلٌ إِلَى قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ: اسْتَسْقِ اللهَ لِأُمَّتِكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ هَلَكُوا، فَأَتَاهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَنَامِ، فَقَالَ ائْتِ عُمَرَ، فَأَقْرِئْهُ السَّلَامَ، وَأَخْبِرْهُ أَنَّكُمْ مُسْقَوْنَ. وَقُلْ لَهُ: عَلَيْكَ الْكَيْسَ الْكَيْسَ. فَأَتَى الرَّجُلُ عُمَرَ، فَأَخْبَرَهُ، فَبَكَى عُمَرُ ثُمَّ قَالَ: يَا رَبُّ مَا آلُو إِلَّا مَا عَجَزْتُ عَنْهُ.
-“হযরত খলীফা উমর (رضي الله عنه)'র শাসনামলে মানুষেরা খরাপীড়িত হন। এমতাবস্থায় কেউ একজন মহানবী (ﷺ)-এর রওযা পাকে আসেন এবং আরয করেন, ‘হে নবী, আপনার উম্মতের জন্যে (আল্লাহর দরবারে) বৃষ্টি প্রার্থনা করুন, কেননা নিশ্চয় তারা নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে।’ অতঃপর বিশ্বনবী (ﷺ) এক রাতে ওই ব্যক্তির স্বপ্নে দেখা দেন এবং তাঁকে বলেন, ‘উমরের কাছে যাও এবং তাকে আমার সম্ভাষণ জানাও। তারপর তাকে বলবে যে বৃষ্টি হবে। তাকে বলবে বিচক্ষণ হতে (শাসনে)’। ওই ব্যক্তি খলীফার কাছ গিয়ে সব ঘটনা জানালেন। এতে খলীফা খুব কাঁদলেন এবং দোয়া করলেন, ‘হে প্রভু! আমি চেষ্টায় ক্রটি করি না, শুধু যা আমার ক্ষমতার বাইরে তা ছাড়া!” 
[৮] 
১.ইবনে কাসীর তার রচিত ‘আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া’ পুস্তকে (মা’আরিফ সংস্করণ ৭:৯১-৯২ এবং দার ইহইয়া আল্ তুরাস্ সংস্করণ ৭:১০৫)
২.ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)-এর ‘দালাইল আল নুবুয়্যত’ (৭:৪৭) থেকে বর্ণনাটি উদ্ধৃত করে বলেন, “ইসনাদুহু সহীহ্” (এর সনদ বিশুদ্ধ); তিনি আরও ঘোষণা করেছেন, “ইসনাদুহু জাইয়্যেদুন কাওয়ী,” অর্থাৎ, এর সনদ নির্ভরযোগ্য (জামেউল মাসানিদ, ১:২২৩)। 
৩.ইবনে আবি শায়বা (৬:৩৫২ এবং ১২:৩১-৩২) সহীহ্ সনদের সাথে এটি বর্ণনা করেছেন।
৪.ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) নিজ ফাত্হুল বারী, ইস্তিস্কা পুস্তকের তৃতীয় অধ্যায়ে (১৯৮৯ সংস্করণ, ২:৬২৯-৩০ ও ১৯৫৯ সংস্করণ ২:৮৯৫) সমর্থন করেছেন এ কথা বলে, “রাওয়া ইবনে আবি শায়বা বি ইসনাদিন সহীহ্;” তিনি নিজ রচিত আল ইসাবা পুস্তকে (৬:১৬৪ এবং ৩:৪৮৪) বলেন যে, এটি ইবনে আবি খায়তামা বর্ণনা করেছেন। 
৫.এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে আরও আছেন আল খলিলী তাঁর’ইরশাদ’ বইয়ে (১:৩১৩-১৪) এবং 
৬.ইবনে আব্দিল বারর তাঁর ‘আল্ ইস্তিয়াব’ গ্রন্থে (২:৪৬৪ এবং ৩:১১৪৯)। 
৭.আল্ আলবানী তার প্রণীত ‘তাওয়াসসুল’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ১২০) এ বর্ণনাটিকে দুর্বল প্রমাণ করতে চেয়েছে, কিন্তু তাকে শায়খ মামদুহ্ নিজ রচিত ‘রাফ’আল্ মিনারা’ গ্রন্থে (২৬২-২৭৮ পৃষ্ঠা) বিস্তারিত খণ্ডন করেছেন; ওতে ইবনে বা’য (ফাত্হুল বারীর হাশিয়া), আবু বকর জাযাইরীর ‘ওয়াজাউ ইয়ারকুদুন’, হাম্মাদ আল্ আনসারীর প্রবন্ধ ‘আল্ মাফহুম আল্ সহীহ্ লিল্ তাওয়াসসুল’ যার অপর শিরোনাম ‘তোহ্ফাত আল্ কারী ফী রাদ্দি আ’লাল গুমারী’ এবং অনুরূপ লেখনীর খণ্ডন বিধৃত হয়েছে।
৮.ইমাম ইবনে হাজর (رحمة الله) মহানবী (ﷺ)-এর রওযায় গমনকারী সাহাবীকে হযরত বেলাল ইবনে হারিস্ মুযানী (رحمة الله) বলে শনাক্ত করেন। 
৯.ইমাম বুখারী (رحمة الله) যে তাঁর সহীহ্ গ্রন্থের ইসতিসকা বাবে (অধ্যায়ে) “খরাপীড়িত হলে ইমামের প্রতি মানুষের অনুরোধ” শিরোনামে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, তার কারণগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে এই বর্ণনাকে ইমাম ইবনে হাজর গণ্য করেন।

❏ হাদিস 11 :

(খ) ভাষ্য – ২
আত্ তাবারী (رحمة الله)র ‘তারিখ’ (ইতিহাস ২:৫০৯) থেকে সংগৃহীত:

أَنَّ رَجُلًا مِنْ مُزَيْنَةَ عَامَ الرَّمَادَةِ سَأَلَهُ أَهْلُهُ أَنْ يَذْبَحَ لَهُمْ شَاةً فَقَالَ: ليس فيهن شئ. فَأَلَحُّوا عَلَيْهِ فَذَبَحَ شَاةً فَإِذَا عِظَامُهَا حُمْرٌ فَقَالَ يَا مُحَمَّدَاهُ. فَلَمَّا أَمْسَى أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلَّم يقول له: ” أبشر بالحياة، إيت عمر فأقره مِنِّي السَّلَامَ وَقُلْ لَهُ إِنَّ عَهْدِي بِكَ وَفِيَّ الْعَهْدِ شَدِيدَ الْعَقْدِ، فَالْكَيْسَ الْكَيْسَ يَا عُمَرُ “، فَجَاءَ حَتَّى أَتَى بَابَ عُمَرَ فَقَالَ لِغُلَامِهِ اسْتَأْذِنْ لِرَسُولِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
– আল্ রামাদা নামের খরার বছর যখন হযরত উমর ফারুক (ﷺ) খলীফা ছিলেন, তখন সাহাবী বিলাল ইবনে হারিস্ (رضي الله عنه)' তাঁর কোনো এক আত্মীয়ের জন্যে ভেড়া জবাই করেন। ওই সময় তিনি দেখতে পান ভেড়ার হাড়গুলো লাল হয়ে গিয়েছে, কেননা ওর মাংস শুকিয়ে হাড়ের সাথে লেগে গিয়েছিল। তিনি নেদা (আহ্বান) দিয়ে বলেন, “ইয়া মোহাম্মাদা” (ﷺ)! অতঃপর তিনি হুজুর পূর নূর (ﷺ)কে স্বপ্নে দেখতে পান, যিনি তাঁকে হযরত উমর (رضي الله عنه)'র কাছে গিয়ে আসন্ন বৃষ্টির সুসংবাদ দিতে বলেন এবং খলীফাকে জ্ঞান-প্রজ্ঞা দ্বারা শাসন করতে বলেন। এ কথা শুনে হযরত উমর (رضي الله عنه)' সকলকে সমবেত করেন এবং মহানবী (ﷺ)-এর শ্রদ্ধেয় চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'-কে সাথে নিয়ে বৃষ্টির জন্যে দোয়া করতে বেরিয়ে আসেন।

(৫) হযরত উমর (رضي الله عنه)' অতীতে হযরত রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর মধ্যস্থতা (তাওয়াসসুল) গ্রহণ করেছিলেন, যে কারণে তিনি বলেছেন, 
“আমরা ইতিপূর্বে আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)কে আপনার কাছে প্রার্থনার সময় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গ্রহণ করতাম . . . ।” অর্থাৎ, ওই সময় যখন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)'র খেলাফত আমল চলছিল এবং তাঁর খেলাফত আমলেও বিশ্বনবী (ﷺ)-এর তাওয়াসসুল হযরত উমর (رضي الله عنه)' করেছিলেন; হুজুর পূর নূর (ﷺ)-এর (প্রকাশ্য) জিন্দেগীর সময়ই কেবল তাওয়াসসুল করা হয়নি, বরং পরবর্তীকালেও তা করা হয়েছে, কেননা উক্ত দু’টি শাসনকালে, অর্থাৎ, সাড়ে আট বছরে তাঁরা আর কখনোই খরাপীড়িত না হওয়ার বিষয়টি অ-সম্ভাব্য। আল্ কাওসারী বলেন, “কিন্তু (হযরত উমরের) এই বাক্যটিকে রাসূলে আকরাম (رضي الله عنه)'র যাহেরী (প্রকাশ্য) জিন্দেগীতে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা এমনই একটি ঘাটতি যা নিরর্থক মনের ইচ্ছা থেকে নিঃসৃত, রেওয়ায়াতের মূল বিষয়ের বিকৃতি সাধনের অপচেষ্টা এবং দলিল-প্রমাণ ছাড়া কল্পনাশ্রিত ব্যাখ্যামাত্র।”

❏ হাদিস 12 :

(৬) উপরন্তু, অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম-ই হুজুর পাক (ﷺ)-এর যাহেরী জীবদ্দশার পরে তাঁর তাওয়াসসুল করেছেন যা আমাদের মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন ইমাম দারিমী (رحمة الله)-এর ‘সুনান’ গ্রন্থে, ভূমিকার ১৫ অধ্যায়ে (১:৪৩); এর শিরোনাম হলো “নবী করীম (ﷺ)-এর প্রতি তাঁর বেসালের (আল্লাহর সাথে মিলনপ্রাপ্তির) পর আল্লাহর অনুগ্রহ।” এই রেওয়ায়াতটি নির্ভরযোগ্য সনদে হযরত আউস্ ইবনে আব্দিল্লাহ্ বর্ণনা করেছেন:

حَدَّثَنَا أَبُو الْجَوْزَاءِ أَوْسُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قُحِطَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ قَحْطًا شَدِيدًا، فَشَكَوْا إِلَى عَائِشَةَ فَقَالَتْ: ” انْظُرُوا قَبْرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاجْعَلُوا مِنْهُ كِوًى إِلَى السَّمَاءِ حَتَّى لَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ سَقْفٌ. قَالَ: فَفَعَلُوا، فَمُطِرْنَا مَطَرًا حَتَّى نَبَتَ الْعُشْبُ، وَسَمِنَتِ الْإِبِلُ حَتَّى تَفَتَّقَتْ مِنَ الشَّحْمِ، فَسُمِّيَ عَامَ الْفَتْقِ.

মদীনাবাসী মানুষেরা একবার তীব্র খরাপীড়িত হয়ে হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কাছে আরয করেন। তিনি তাঁদেরকে বল্লেন, “(হায়াতুন্নবীর) পাক রওযায় যাও, আর রওযার ছাদ খুলে দাও, যাতে তাঁর এবং আকাশের মাঝখানে কিছু না থাকে।” মদীনাবাসীরা তাই করলেন। অতঃপর এমন বর্ষণ আরম্ভ হলো যে ফলে-ফসলে মাঠ-প্রান্তর ভরে উঠলো এবং উট হৃষ্টপুষ্ট হলো। এই বছরটিকে ‘প্রাচুর্যের বছর’ আখ্যা দেয়া হয়েছিল।

পাঠকবৃন্দ, এই বর্ণনার ওপর বিস্তারিত দালিলিক প্রমাণাদি পাবেন এনসাইক্লোপেডিয়া অফ ইসলামিক ডক্ট্রিন তথা 
১.ইসলামী তত্ত্বের বিশ্বকোষে (৪:৪৭-৫২)। 
২.হাদীসের বিশারদ সকল সুন্নী আলেম-ই এটিকে সহীহ্ বলেছেন যার মধ্যে সর্বশেষ জন হলেন শায়খ নাবিল ইবনে হাশিম আল্ গামরী তাঁরই রচিত ১০ খণ্ড বিশিষ্ট দারিমী শরীফের ব্যাখ্যামূলক ‘ফাত্হুল মান্নান’ (১:৫৬৪-৬৬) গ্রন্থে, যেখানে তিনি আল্ আলবানী ও তার মতো ব্যক্তিদের এই রেওয়ায়াতের প্রতি উত্থাপিত আপত্তিসমূহ খণ্ডন করেছেন।

❏ হাদিস 13 :

(৭) তাবুকের যুদ্ধের সময় হযরত উমর (رضي الله عنه)' হযরত রাসূলে করীম (ﷺ)-এর তাওয়াসসুল করেছিলেন এবং এর ফলে সরাসরি খোদায়ী অপরিমিত দানশীলতার ও মহানবী (ﷺ)-এর মহত্ত্বের ছোঁয়া পেয়েছিলেন। বর্ণিত আছে:

عَنْ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: خَفَّتْ أَزْوَادُ القَوْمِ، وَأَمْلَقُوا، فَأَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نَحْرِ إِبِلِهِمْ، فَأَذِنَ لَهُمْ، فَلَقِيَهُمْ عُمَرُ، فَأَخْبَرُوهُ فَقَالَ: مَا بَقَاؤُكُمْ بَعْدَ إِبِلِكُمْ، فَدَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا بَقَاؤُهُمْ بَعْدَ إِبِلِهِمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَادِ فِي النَّاسِ، فَيَأْتُونَ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ» ، فَبُسِطَ لِذَلِكَ نِطَعٌ، وَجَعَلُوهُ عَلَى النِّطَعِ، فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَعَا وَبَرَّكَ عَلَيْهِ، ثُمَّ دَعَاهُمْ بِأَوْعِيَتِهِمْ، فَاحْتَثَى النَّاسُ حَتَّى فَرَغُوا، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ»
– “কোনো এক সফরে যখন মানুষদের খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছিল তখন তাঁরা নিজেদের উটগুলো জবাই করার কথা ভাবতে শুরু করেন। এমতাবস্থায় হযরত উমর (رضي الله عنه)' হুজুর পূর নূর (ﷺ)-এর কাছে গিয়ে আরয করেন, ’হে রাসূলে খোদা (ﷺ)! উটগুলো ছাড়া তারা কীভাবে টিকবে?’ বিশ্বনবী (ﷺ) বল্লেন, ‘তাদের বলো অবশিষ্ট খাবারগুলো এখানে আনতে।’ এক টুকরো চামড়া বিছিয়ে দেয়া হলে তাতে মানুষদের অবশিষ্ট খাবার সামগ্রী রাখা হলো। অতঃপর মহানবী (ﷺ) দাঁড়িয়ে দোয়া করলেন এবং খাবারগুলোতে ফুঁকে দিলেন; এরপর সবাইকে ঝুলি আনতে বল্লেন। মানুষেরা ঐশী প্রাচুর্যময় সমস্ত খাবার সংগ্রহ করে নিলেন, এমন কি শেষটুকুও। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করলেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য মা’বুদ নেই এবং আমি-ই তাঁর প্রেরিত রাসূল!’

[এই হাদীসটি বোখারী ও মুসলিম হযরত সালামা ইবনে আল্ আকওয়া’ থেকে এবং মুসলিম ও ইমাম আহমদ হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)' থেকে বর্ণনা করেছেন।]

(৮) হযরত উমর (رضي الله عنه)' হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র তাওয়াসসুল করে সমাজে রাসূলে পাক (ﷺ)-এর উঁচু পারিবারিক মর্যাদা মানুষদের সামনে তুলে ধরেছেন এবং তাদেরকে নবী বংশের প্রতি সম্মান প্রদর্শন শিক্ষা দিয়েছেন, যেমনিভাবে ইমাম ইবনে হাজর (رحمة الله) হযরত আনাস্ (رضي الله عنه)' বর্ণিত আলোচ্য রেওয়ায়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: “মহানবী (ﷺ)-এর আত্মীয়স্বজন ও বযুর্গানে দ্বীনের শাফায়াত বা সুপারিশ প্রার্থনা করা একান্ত কাম্য; আর এই ঘটনা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র মাহাত্ম্য ও উচ্চ মকাম এবং হযরত উমর (رضي الله عنه)'রও মাহাত্ম্য প্রতিভাত করে, যেহেতু তিনি হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'’র প্রতি বিনয়ী হয়েছিলেন এবং তাঁর হক্ক তথা অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।”

❏ হাদিস 14 :

এটি ’আল্ শরীয়া’র ব্যাখ্যামূলক পুস্তকে আল্ আজিউররী এবং ‘ফাযাইল আল্ সাহাবী’ গ্রন্থে (২:৯৩৭ # ১৮০২) ইমাম আহমদ সমর্থন করেছেন অপর এক বর্ণনা দ্বারা, 
أَنَّ كَعْبًا الْحَبْرَ أَخَذَ بِيَدِ الْعَبَّاسِ فَقَالَ: «اخْتَبِئْهَا لِلشَّفَاعَةِ عِنْدَكَ» قَالَ: وَهَلْ لِي شَفَاعَةٌ؟ قَالَ: نَعَمْ «لَيْسَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا كَانَتْ لَهُ شَفَاعَةٌ» .
হযরত কা’আব আল্ আহবার (رضي الله عنه)' হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র হাত মোবারক নিজ হাতে নিয়ে তাঁকে বলেছিলেন, “আমি এই করমর্দন লুকিয়ে রাখবো আমার পক্ষে আপনার সুপারিশের (শাফায়াতের) জন্যে।” হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)' উত্তর দেন, “কেন, আমি কি শাফায়াত করতে পারবো (অর্থাৎ, শাফায়াতের ক্ষমতা আমার থাকবে কি না?” কা’আব উত্তর দিলেন, “বিশ্বনবী (ﷺ)-এর আহল তথা ঘরের মানুষ বা পরিবার সদস্যদের এমন কেউই হবেন না যাঁর শাফায়াতের ক্ষমতা থাকবে না!” কা’আব আল্ আহবার (رضي الله عنه)' হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه)'-কে আরও বলেন, “বনী ইসরাইল গোত্রের মানুষেরা যখনই খরাপীড়িত হতো, তখনই তারা তাদের নবী (মূসা আলাইহিস্ সালাম)-এর পরিবার সদস্যদের সুপারিশ কামনা করতো।” (২:৮১৪)

(৯) এ কথা সর্বজন জ্ঞাত যে আহলে বায়তের তথা নবী পরিবারের প্রতি হযরত উমর (رضي الله عنه)'র এক বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ ছিল, যা নিচের কয়েকটি রেওয়ায়াতে প্রতিভাত হয়: 

❏ হাদিস 15 :

(ক) আল্ শা’বী এবং আল্ হাসান থেকে ইবনে সা’দ বর্ণনা করেন যে, 
أنا عَلِيُّ بْنُ زَيْدٍ، عَنِ الْحَسَنِ،: بَقِيَ مِنْ بَيْتِ مَالِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ شَيْءٌ بَعْدَمَا قَسَمَ  بَيْنَ النَّاسِ، فَقَالَ الْعَبَّاسُ لِعُمَرَ وَلِلنَّاسِ: أَرأَيْتُمْ لَوْ كَانَ فِيكُمْ عَمُّ مُوسَى أَكُنْتُمْ تُكْرِمُونَهُ؟ قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: فَأَنَا أَحَقُّ مِنْهُ، أَنَا عَمُّ نَبِيِّكُمْ، فَكَلَّمَ عُمَرُ النَّاسَ، فَأَعْطَوْهُ الْبَقِيَّةَ الَّتِي بَقِيَتْ “الخ.
 একদিন হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র খলীফা উমর (رضي الله عنه)'-কে কোনো এক কাজে প্রয়োজন হলে তিনি তাঁকে বলেন, “আমিরুল্ মো’মেনীন! ধরুন, মূসা  আলাইহিস সালামের চাচা আপনার কাছে মুসলমান হয়ে এসেছেন। আপনি তাঁর সাথে কেমন আচরণ করবেন? হযরত উমর (رضي الله عنه)' উত্তরে বল্লেন, “আল্লাহর শপথ (কসম)! আমি তাঁর সাথে ভালো আচরণ করবো!” অতঃপর হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)' বল্লেন, “তাহলে আমি তো হলাম বিশ্বনবী (ﷺ)-এর চাচা!” হযরত উমর (رضي الله عنه)' বল্লেন, “হে আবুল ফযল (হযরত আব্বাস রা:)! আপনি কী ধারণা করেন? আল্লাহর শপথ, আপনার পিতা (আব্দুল মোত্তালিব) আমার কাছে নিশ্চয় আমার আপন পিতার চেয়েও বেশি প্রিয়!” হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)' জিজ্ঞেস করলেন, “আল্লাহর কসম?” হযরত উমর (رضي الله عنه)' উত্তর দিলেন, “আল্লাহর শপথ! কেননা, আমি জানি আব্দুল মোত্তালিব মহানবী (ﷺ)-এর কাছে আমার বাবার চেয়েও প্রিয়; তাই আমি আমার নিজস্ব পছন্দের চেয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর পছন্দকে বেশি ভালোবাসি।”

❏ হাদিস 16 :

(খ) জনৈক ব্যক্তি একবার হযরত উমর (رضي الله عنه)'র উপস্থিতিতে হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه)'র প্রতি মর্যাদাহানিকর কিছু কথা বলেছিল। এতে হযরত উমর (رضي الله عنه)' ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বলেন, 
تَعْرِفُ صَاحِبَ هَذَا الْقَبْرِ؟ هُوَ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، وَعَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، فَلَا تَذْكُرْ عَلِيًّا إِلَّا بِخَيْرٍ، فَإِنَّكَ إِنْ أَبْغَضْتَهُ ” آذَيْتَ هَذَا فِي قَبْرِهِ.
“তুমি জানো এই রওযায় কে শায়িত আছেন? উনি মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ্ ইবনে আব্দিল মোতালিব (ﷺ)! আর আলী (رضي الله عنه) হলেন আবু তালেব ইবনে আব্দিল মোত্তালিবের পুত্র। অতএব হযরত আলী (رضي الله عنه) সম্পর্কে কথা বলতে হলে ভালোভাবে বলবে, নইলে তুমি যদি তাঁর প্রতি বিদ্বেষভাব প্রকাশ করো, তবে এই রওযা পাকে যিনি শায়িত আছেন তাঁর অন্তরে তুমি আঘাত করবে।” এই রেওয়ায়াতটি নির্ভরযোগ্য সনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) তাঁর ‘ফাযাইল আল্ সাহাবা’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন (২:৬৪১ # ১০৮৯)।

❏ হাদিস 17 :

(গ) ইমাম হুসাইন ইবনে আলী এবনে আবি তালেব (رضي الله عنه)'-কে ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখে হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه)' তাঁকে বলেন, 
أَنْتَ أَحَقُّ بِالإذْنِ مِنْ عَبْدِ اللهِ بْنُ عُمَرَ. إِنَّمَا أَنْتَ فِيْ رُؤُوْسِنَا مَا تَرَىْ: اللهُ، ثُمَّ أَنْتُمْ، وَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ.
 “এ ঘরে প্রবেশ করার অনুমতির ক্ষেত্রে আপনি (আমার ছেলে) আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের (رضي الله عنه)'র চেয়েও বেশি হকদার! আপনি আমাদের কপালে (তকদীরে) যা লেখা হয়েছে তা দেখতে পান; অতএব, প্রথমে আল্লাহ্ তার পরে আপনি!” এই কথা বলার সময় হযরত উমর (رضي الله عنه)' ইমাম হোসাইনের (رضي الله عنه)'র হাত মোবারক নিজ কপালে রাখেন। রেওয়ায়াতটি বর্ণনা করেছেন ইবনে সা’দ, ইবনে রাহুইয়া এবং আল্ খতীব।

❏ হাদিস 18 :

(ঘ) হযরত জাবের (رضي الله عنه)' বলেন যে তিনি হযরত উমর (رضي الله عنه)'-কে মিম্বরে উঠে বলতে শুনেছেন, একজন তরুণীকে (হযরত আলী ও মা ফাতেমার কন্যা উম্মে কুলসুমকে) বিয়ে করার জন্যে আমাকে অপমান করো না, কেননা আমি হুজুর পূর নূর (ﷺ)কে বলতে শুনেছি – ‘শেষ বিচার দিবসে সকল উপায় বন্ধ হয়ে যাবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক কাটা পড়বে, কেবল আমারটা ছাড়া’। এটি বর্ণনা করেছেন তাবারানী। ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী (رحمة الله) বলেছেন যে এর বর্ণনাকারীরা হলেন আল্ বুখারী ও মুসলিমেরই বর্ণনাকারী।
ওই বিয়ের মাধ্যমে হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه)' রাসূলে পাক (ﷺ)-এর আহল্ বা আত্মীয় হতে অভিলাষী হয়েছিলেন, যেহেতু আহলে বায়তের অগ্রাধিকার রয়েছে মহানবী (ﷺ)-এর শাফায়াতের ক্ষেত্রে।

(১০) এই শাফায়াত কোনোক্রমেই শুধু নবী করীম (ﷺ)-এর বা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র দোয়া করা নয়, যা বাতিলপন্থীরা দাবি করছে বা আলোচ্য ঘটনার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করছে; বরং এই শাফায়াত ছিল তাঁদের যাত বা সত্তা মোবারক এবং দোয়ার মাধ্যমে, যা অসংখ্য বিবরণের মধ্য হতে নিম্নের কয়েকটিতে আক্ষরিকভাবে বলা হয়েছে:

❏ হাদিস 19 :

(ক) হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)'র ভাষ্যানুযায়ী মহানবী (ﷺ)-এর যাত মোবারকের মাধ্যমে শাফায়াত: সহীহ্ বোখারী শরীফে আব্দুল্লাহ্ ইবনে দিনার (رضي الله عنه)' বলেন,
قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ يَتَمَثَّلُ بِشِعْرِ أَبِي طَالِبٍ:  وَأَبْيَضَ يُسْتَسْقَى الغَمَامُ بِوَجْهِهِ … ثِمَالُ اليَتَامَى عِصْمَةٌ لِلْأَرَامِلِ»
 ‘আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (رضي الله عنه)'-কে আবু তালেবের কবিতা আবৃত্তি করতে শুনলাম – ‘শুভ্র সেই সত্তা যার চেহারা মোবারক দ্বারা মেঘমালা কামনা করা হয়; যিনি এতিম-অনাথদের লালন-পালনকারী ও বিধবাদের রক্ষক।’
উমর ইবনে হামযা বলেন, সেলিম তাঁর বাবা হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)'র কথা উদ্ধৃত করেন যিনি বলেন, ‘মহানবী (ﷺ) বৃষ্টির জন্যে দোয়ারত অবস্থায় তাঁর চেহারা মোবারকের দিকে তাকিয়ে থাকার সময় কবির সেই দুটো পংক্তি আমার মনে পড়ে গিয়েছিল। আর তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে আসেন নি, যতোক্ষণ না প্রতিটি ছাদ থেকে মুষলধারায় বৃষ্টিপাত হয়েছিল।’

কোনো এক বর্ণনাকারী ওই দুটি পংক্তিকে আবু তালেবের রচিত বলেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, মোহাম্মদ মোহ্সিন খান বোখারী শরীফ (৩২:৬৫)-এর নিজস্ব ব্যাখ্যায় হাদীসের বাণী পরিবর্তন করে অর্থ লিখেছেন, ‘একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি যাঁকে বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা করতে অনুরোধ করা হয়েছিল।’ এখানে ‘যাঁর চেহারা মোবারক দ্বারা মেঘমালা কামনা করা হয়’ – বাক্যটি পরিবর্তিত হয়েছে। আর এটাই হলো তাহরিফ, অর্থাৎ, আল্ কুরআনের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দলিলের বিকৃতি সাধন এবং বাক্-কসরতের মাধ্যমে ওর উদ্দেশ্যের মধ্যে বিচ্যুতি সৃষ্টি।

❏ হাদিস 20 :

(খ) হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه)'র ভাষ্যানুযায়ী হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'র যাত মোবারকের মাধ্যমে শাফায়াত প্রার্থনা: 
فَخَطَبَ عُمَرُ النَّاسَ فَقَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرَى لِلْعَبَّاسِ مَا يَرَى الْوَلَدُ لِلْوَالِدِ، وَيُعَظِّمُهُ وَيُفَخِّمُهُ فَاقْتَدُوا أَيُّهَا النَّاسُ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عَمِّهِ الْعَبَّاسِ وَاتَّخِذُوهُ وَسِيلَةً إِلَى اللَّهِ فِيمَا نَزَلَ بِكُمْ
 “ওহে মানুষেরা! রাসূলে খোদা (ﷺ) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'-কে তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার মতো বিবেচনা করতেন; তাঁকে সম্মান করতেন এবং তাঁর অধিকারকেও। অতএব, ওহে মানুষেরা, হুজুর পাক (ﷺ)-এর চাচার সত্তা মোবারকের আকৃতিতে নবী করীম (ﷺ)-এর হুকুম মান্য করো এবং হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)'-কে তোমাদের এই দুর্যোগের সময় মহাপরাক্রমশালী খোদা তা’লার দরবারে প্রার্থনাকালে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গ্রহণ করো!”

➡এই বর্ণনাটি হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه)' হতে আল্ বালাযিরী নির্ভরযোগ্য সনদে লিপিবদ্ধ করেছেন; 
➡আর দুর্বল সনদে ইবনে উমর (رضي الله عنه)' হতে বর্ণনা করেছেন। 
১.আল্ যুবায়র ইবনে বাক্কার নিজ ’আল্ ‘আনসাব’ পুস্তকে এবং 
২.ইবনে আসাকির তাঁর ‘তারিখে দিমাশক্’ গ্রন্থে (৮:৯৩২), 
৩.যা ইমাম ইবনে হাজর (رحمة الله) কর্তৃক প্রণীত ‘ফাত্হ’ পুস্তকে উদ্ধৃত হয়েছে (১৯৫৯ সংস্করণ, ২:৪৯৭)। 
৪.শায়খ মাহমুদ মামদুহ্ তাঁর ‘রাফ’আল মিনারা’ (১২০ পৃষ্ঠা) গ্রন্থে আল্ আলবানীর ‘তাওয়াসসুল’ পুস্তকে উত্থাপিত দাবির খন্ডন করেছেন এই মর্মে যে, ওই পুস্তকের ৬৭-৬৮ পৃষ্ঠায় আলোচ্য রেওয়ায়াতটিকে ‘মুদতারিব’ বা তালগোল পাকানো বলাটা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

আপত্তি:

শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ তাঁর প্রণীত আল্ বালাগ-উল-মুবীন বইয়ে লিখেছেন যে, পরলোকগত কারো শাফায়াত কামনা কিংবা অনুপস্থিত কারো তাওয়াসসুলকে খলীফা উমর (رضي الله عنه)' জায়েয মনে করেন নি।

জবাব:

এই বক্তব্য শাহ্ ওযালিউল্লাহর লিখিত ফুয়ুয-উল-হারামাইন গ্রন্থে প্রদত্ত অভিমতের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এর ব্যাখ্যায় শুধু এতটুকুই বলা যায়, শাহ্ ওয়ালিউল্লাহর অনেক বইপত্র বাতেলপন্থীদের হাতে বিকৃত হয়েছে।

❏ হাদিস 21 :

এ কথা সর্বজন জ্ঞাত যে, 
বিভিন্ন প্রাণী ও কীট-পতঙ্গ নিজেরাই বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা করে থাকে, যেভাবে নবী করীম (ﷺ)-এর পিঁপড়া সংক্রান্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছে। 
এই হাদীস্ রেওয়ায়াত করেছেন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)' হতে দারু কুতনী, তাঁর ছাত্র আল্ হাকিম ও নিম্নবর্ণিত হাদীসবেত্তাগণ: 
১.ইবনে আবি শায়বা (৬:৬২, ৭:৭১), 
২.আবু আল শায়খ তাঁর আল্ আযামা পুস্তকে (৫:১৫৭২), 
৩.তফসীরে ইবনে কাসীর (৩:৩৬০), 
৪.ইমাম ইবনে হাজর তাঁর তালাখিস্ ও আল্ হাবীর গ্রন্থ দু’টোতে (২:৯৭ # ৭১৮), 
৫.ইবনে আল্ মুলাক্কিন স্বরচিত খোলাসাতুল বদর বইয়ে (১:২৫০), 
৬.আল্ সান’আনী নিজ সুবুলুস্ সালাম গ্রন্থে (২:৮৩), 
৭.আলা শওকানী স্বরচিত নায়ল্ আল্ আওতার পুস্তকে (৪:২৭), এবং 
৮.থানভী নিজ “ইলা আল্ সুনান” বইয়ে (৪:১৯৩)।

এস্তেস্কা তথা বৃষ্টির জন্যে নামাযের সময় আমাদের প্রতি সুন্নাহের বিধান হলো গবাদি ও উট-ঘোড়া ইত্যাদি পশুগুলোকেও খোলা ময়দানে বের করে আনতে হবে। 

❏ হাদিস 22 :

কেননা, মহানবী (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “(যাকাত প্রদান থেকে বিরত) ব্যক্তিদের প্রতি বৃষ্টি মঞ্জুর করা হতো না, যদি না গবাদি পশুরা থাকতো।” 

❏ হাদিস 23 :

এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ইবনে মাজাহ্ (رحمة الله)। অন্যত্র তিনি এরশাদ ফরমান- “চরে খাওয়া গবাদি পশু না হলে তোমাদের প্রতি আক্ষরিক অর্থেই শাস্তি নেমে আসতো।” এ হাদীস্ রেওয়াযাত করেছেন আবু ইয়ালা, আল্ বাযযার এবং অন্যান্যরা।

এখন আমাদের জিজ্ঞাস্য, গবাদ পশুর মধ্যস্থতা মেনে নেয়া যায়, অথচ আমাদের প্রিয়নবী (ﷺ)-এর শাফায়াত/ তাওয়াসসুল মানা যায় না কেন? এ কেমন আচরণ?
প্রকৃত বিষয় হলো, খলীফা উমর (رضي الله عنه)' কখনোই এ কথা মনে করেন নি যে আমাদের রাসূল (ﷺ) ‘মরে’ গিয়েছেন বা অনুপস্থিত আছেন। নইলে তিনি কেন মহানবী (ﷺ) ও হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)'-কে তাঁদের রওযা পাকে নিম্নে বর্ণিত ঘটনায় সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন, যা বিশ্বাসভাজন বর্ণনাকারীদের বরাত দিয়ে রেওয়ায়াত করেছেন তাবারানী (رحمة الله)? আর কেনই বা মহানবী (ﷺ) ও হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)'র রওযার পাশে সমাহিত হওয়ার আকুতির চেয়ে তাঁর কাছে ‘অন্য কোনো কিছু এতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়’ বলেছিলেন তিনি, যা সহীহ্ বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে?

❏ হাদিস 24 :

কায়স্ ইবনে আবি হাযেম বর্ণনা করেন যে, একদিন খলীফা উমর ফারুক (رضي الله عنه)' মদীনায় অবস্থিত মসজিদে নব্বীর মিম্বরে উঠে মানুষদের উদ্দেশ্যে ফরমান: 
عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ، قَالَ: خَطَبَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ النَّاسَ ذَاتَ يَوْمٍ عَلَى مِنْبَرِ الْمَدِينَةِ، فَقَالَ فِي خِطْبَتِهِ: «إِنَّ فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ قَصْرًا لَهُ خَمْسُمَائةِ بَابٍ، عَلَى كُلِّ بَابٍ خَمْسَةُ آلَافٍ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ، لَا يَدْخُلُهُ إِلَّا نَبِيٌّ، ثُمَّ نَظَرَ إِلَى قَبْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: هَنِيئًا لَكَ يَا صَاحِبَ الْقَبْرِ، ثُمَّ قَالَ: أَوْ صِدِّيقٌ، ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَى قَبْرِ أَبِي بَكْرٍ، فَقَالَ: هَنِيئًا لَكَ يَا أَبَا بَكْرٍ، ثُمَّ قَالَ: أَوْ شَهِيدٌ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى نَفْسِهِ، فَقَالَ: وَأَنَّى لَكَ الشَّهَادَةُ يَا عُمَرُ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّ الَّذِي أَخْرَجَنِي مِنْ مَكَّةَ إِلَى هِجْرَةِ الْمَدِينَةِ لَقَادِرٌ أَنْ يَسُوقَ إِلَيَّ الشَّهَادَةَ
“নিশ্চয় আ’দন-এর বাগানে (বেহেস্তে) একটি প্রাসাদ আছে যার ৫’শটি দরজা; প্রতিটি দরজায় ৫ হাজার বেহেস্তী হুর দায়িত্বরত; কেউই ওতে প্রবেশ করতে পারবে না একজন নবী ছাড়া।” অতঃপর তিনি বিশ্বনবী (ﷺ)-এর রওযা মোবারকের দিকে ফিরে আরয করলেন, “আপনাকে অভিনন্দন, হে রওযা মোবারকে শায়িত নবী” (ﷺ)! এর পর তিনি আবার বললেন, “এবং কেউই ওতে প্রবেশ করতে পারবে না একজন সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ) ছাড়া।” এ কথা বলে তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه)'র রওযা পাকের দিকে ফিরে সম্ভাষণ জানালেন, “আপনাকে মোবারকবাদ, হে আবু বকর (رضي الله عنه)'।” অতঃপর হযরত উমর (رضي الله عنه)' ফরমালেন, “এবং কেউই ওতে প্রবেশ করতে পারবে না একজন শহীদ (ধর্মযুদ্ধে নিহত) ছাড়া।” এ কথা বলে তিনি নিজের দিকে ইশারা করলেন এবং আপনা আপনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে, “ওহে উমর, কবে তুমি শাহাদাত বরণ করলে”? অতঃপর তিনি আপনা আপনিই বললেন, “যিনি আমাকে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের জন্যে বের করে এনেছেন, তিনিই আমাকে শাহাদাত এনে দেবেন।”
১.তাবারানী (رحمة الله) নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াতকারীদের বরাত দিয়ে এ বর্ণনাটি লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর ‘আল্ আওসাত’ পুস্তকে। 
২.ইমাম ইবনে হাজর হয়তামী (رحمة الله) উদ্ধৃত করেছেন তাঁর প্রণীত ’মজমাউল জাওয়াইদ’ গ্রন্থে (৯:৫৪-৫৫)।

প্রশ্ন: আহনাফ তথা (পূর্ববর্তী) বুযুর্গ আলেম-উলামাবৃন্দ কি মনে করেন যে খলীফা উমর (رضي الله عنه)' এ বিষয়ে এজতেহাদ (গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত) প্রয়োগ করেছিলেন? 
আর আহনাফ কি তাঁর সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন এ ব্যাপারে?  অনুগ্রহ করে ব্যাখ্যা করুন।

জবাব: খলীফা উমর ফারুক (رضي الله عنه)'র এই কাজ (তাওয়াসসুল) মূলতঃ সুন্নাহ্ হিসেবে পরিগণিত। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেয়া হয় যে তা মৌলিক সুন্নাহ্ নয়, তথাপি এই মহান ধর্মে খুলাফায়ে রাশেদীনের (খলীফাবৃন্দের) ইজতেহাদও সুন্নাহের বৈধ দলিল হিসেবে গৃহীত, যার সাথে কোনো মযহাবেরই ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার নেই। বস্তুতঃ আহনাফ কখনোই খলীফার সাথে কোনো বিষয়েই দ্বিমত পোষণ করেন নি, যদিও তা মনগড়াভাবে প্রমাণ করতে অপতৎপর হয়েছে আহলে বেদআত তথা বেদআতীরা।
[ডঃ হাদ্দাদের এই লেখাটি http://www.livingislam.org
 থেকে অনূদিত হয়েছে।]
রেফারেন্স :

 
Top