অজুর বর্ণনা
✍ কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]

❏ মাসয়ালা: (৭২)
➠অজুর চার ফরযঃ 
(১) মুখ ধৌত করা। কপালের চুলের গোড়া হতে দাঁড়ি উঠার জায়গা অর্থাৎ থুথুনির নিচে পর্যন্ত আর এক কানের লতি হতে অপর কানের লতি পর্যন্ত ধৌত করা। 
(২) উভয় হাত কনু পর্যন্ত ধোয়া। 
(৩) মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাছেহ করা। 
(৪) উভয় পা উপরের গোড়ালি পর্যন্ত ধোয়া।

❏ মাসয়ালা: (৭৩)

➠অজুর মধ্যে সুন্নাত হচ্ছে-১৫টি:
(১) নিয়্যত করা, অন্তর কিংবা মুখ দ্বারা অর্থাৎ আমি ওজু করতেছি নাপাকি ও অপবিত্র দুরীভূত হওয়ার জন্য এবং নামাজ ও অপরাপর ইবাদত জায়েয হওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করার নাম হচ্ছে নিয়্যত। আস্তে আস্তে কিংবা চুপে চুপে বলাও জায়েয। 
(২)بِسْمِ اللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ وَالْحَمْدُ لِلهِ عَلٰى دِيْنِ الْاِسْلَام, اَلْاِسْلَامُ حَقٌّ وَالْكُفْرُ بَاطِلٌ اَلْاِسْلَامُ نُـوْرٌ وَالْكُفْرُ ظُلْمَةٌ- পাঠ করা। 
(৩) উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া। 
(৪) তিন বার কুলি করা। 
(৫) মিসওয়াক করা, অপারক অবস্থায় শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা মাজা। 
(৬) তিনবার নাকে পানি দেওয়া অর্থাৎ পানি দ্বারা নাক পরিস্কার করা। (৭) দাঁড়ি খেলাল করা।
(৮) উভয় হাত ও পায়ের আঙ্গুল সমূহ খেলাল করা। 
(৯) প্রত্যেক অঙ্গ তিন তিন বার করে পর পর ধোয়া। 
(১০) সমস্ত মাথা মাছেহ করা। 
(১১) তারতীব হিসাবে অজু করা অর্থাৎ প্রথমে মুখ অতঃপর উভয় হাত ইত্যাদি তারতীব ও নিয়ম হিসাবে আদায় করা। 
(১২) উভয় কান মাছেহ করা। 
(১৩) অজু করার সময় একটি অঙ্গ শুকাবার আগে আগে অন্য আরেকটি অঙ্গ ধৌত করা। অর্থাৎ পর পর ধৌত করা। 
(১৪) অঙ্গ ধৌত করার সময় ডান দিক হতে অজুর কাজ আরম্ভ করা। 
(১৫) প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে কোন অঙ্গের মধ্যে যেন চুল পরিমাণও শুকনা না থাকে।

❏ মাসয়ালা: (৭৪)

➠অজুর মুস্তাহাব ১৬টি: যথা- 
(১) কিবলার দিকে মুখ করে বসা। 
(২) ডান দিক হতে অজুর কাজ আরম্ভ করা। 
(৩) কুলি করার সময় এই দোয়া পাঠ করা 
اللهم لَقِّنِّي حُجَّتِيْ بِالْاِيْمَانان 
অর্থাৎ হে আল্লাহ! ঈমানের সাথে আমার দলিল আমাকে শেখাও। 
(৪) মিসওয়াক করার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা اللهم استطعمك من طعام الجنّة অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জান্নাতের খানা প্রার্থনা করছি। 
(৫) নাকের মধ্যে পানি দেওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করা اللهم لا تحر منى رائحة الجنة وارحنيى الجنّة অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আমার জন্য জান্নাতে সুঘ্রাণ (খোশবু) হারাম করিও না এবং আমাকে জান্নাতের সুঘ্রাণ দান করুন। 
(৬) মুখ ধোয়ার সময় পাঠ করবে
 اللهم بيض وجهي يوم تبيض وجوه أوليائك ولا تسود وجهه يوم لاسود وجوه ادأبك اللهم نور بنور معرفتك .
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আমার মুখ সাদা ধবধবে কর, যে দিন সাদা হবে তোমার নৈকট্যবানদের মুখ এবং কাল ও মলিন কর না আমার মুখ। যে দিন মলিন হবে তোমার দুশমনদের মুখ। হে আল্লাহ উজ্জ্বল্য করুন আমার মুখ তোমার মারেফতের রৌশনী ও উজ্জ্বল্য দ্বারা। 
(৭) ডান হাত ধোয়ার সময় পাঠ করবে-
 اللهم اَعْطِنِىْ كِتَابِىْ بِيَمِيْنِىْ حَاسِبْنِىْ حِسَابًا يَّسِيْرًا 
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আমার কিতাব তথা আমলনামা ডান হাতে দান করুন এবং আমার হিসাব-নিকাশ সহজতর করুন। 
(৮) বাম হাত ধোয়ার সময় বলবে-
 اللهم انّى اعوذ بك ان تعطينى كتاب بشمالى لا تجعلها مغلولة إلى عنقي .
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় কামনা করছি যে, তুমি আমার আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হতে এবং তা আমার গরদানের উপর ঝুলা হতে। 
(৯) হাতের মধ্যে আংটি থাকে সেক্ষেত্রে আংটি যদি ঢিল হয় তাহলে নেড়ে দেওয়া এবং আঙ্গুলের সাথে শক্তভাবে মিলিত হলে তা বের করা।
(১০) মাথা মাছেহ করার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা-
 اللهم غشني برحمتك فإنا نخشى عذابك, اللهم لا تجمع بين نواصينا وأقدامنا.. 
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আমাকে তোমার রহমতে ভরপুর করে দাও। আমি ভয় করছি তোমার শাস্তি হতে। হে আল্লাহ! আমার পা কপালের সাথে মিলিত কর না। 
(১১) গরদান মাছেহ করা। 
(১২) গরদান মাছেহ করার সময় পাঠ করবে-
 اللهم نجنا من مقطعات النيران وفك رقبتى من النار 
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আগুনের অগ্নিশিখা হতে আমাকে হেফাজত করুন এবং আমার গরদান দোযখ হতে পরিত্রাণ করুন। 
(১৩) পা ধৌত করার সময় পাঠ করবে; 
اللهم ثبت قدمي على الصراط يوم تزل فيه الاقدام, اللهم كما طهرتنا من الماء وطهرنا من الذنوب .
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! পুলসিরাত পাড় হওয়ার সময় আমার পা অবিচল ও স্থির রাখুন, যে দিন স্থির থাকার নয়। যেমনি ভাবে তুমি আমাদেরকে পানি দ্বারা পবিত্র করেছেন, তেমনি ভাবে পাক পবিত্র করে দাও গোনাহ্ হতে। অতঃপর ১ বার আয়াতুল কুরসি, ১ বার সূরায়ে ক্বদর (ইন্না আন্জালনা) পাঠ করা অনেক ছাওয়াব বিদ্যমান।

➠হযরত শাইখ আ’রেফ বিল্লাহ আবুল হাসান বকরী (رحمة الله) নকল করেন যে, রাসূলে করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন:

من قرأنى أثر الوضوء إنا أنزلناه فى ليلة القدر مرّةً واحدةً كان من الصديقين ومن قرأ مرتين كتيب من ديوان الشهداء ومن قرأ ثلاثًا حشره الله محشر الأنبياء أخرجه الديلمى فى مسند الفردوس.
وقال الفقيه أبو الليث روى عن رسول الله صلى الله عليه وسلّم أنه قال من قرأ انّا أنزلناه على أثر الوضوء أعطاه الله ثواب عبادة خمسين سنة صيام نهارها وقيام ليلها, ومن قرأها مرتين أعطاه الله تعالى اعطنى الخليل والكليم والرفيع الحبيب ومن قرأها ثلاثًا يفتح الله له ابواب الجنّة الثمانية فيد خلُها من أي باب يشاء بلا حساب ولا عذاب.
وقال صلّى الله عليه وسلّم قراءة انّا أنزلناه فى ليلة القدر تعدل ربع القرآن. 
(امداد الفتاح, صفحه ৮৫)


অর্থাৎ: হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন; যে ব্যক্তি অজু পরিপূর্ণ করার সাথে সাথে একবার সূরায়ে ক্বদর পাঠ করবে, সে ব্যক্তি ছিদ্দিকগণের মধ্যে পরিগণিত হবে আর যে ব্যক্তি সূরায়ে ক্বদর ২ বার পাঠ করবে শহীদগণের তালিকায় সে অন্তর্ভূক্ত হবে, আর যেই ব্যক্তি সূরায়ে ক্বদর ৩ বার পাঠ করবে আল্লাহ্পাক আম্বিয়াদের সাথে তাকে হাশর করাবেন।  

ইমাম ফকিহ আবুল লাইছ বলেন; 
➠হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন; যে ব্যক্তি ওজু শেষ করার সাথে সাথে সূরায়ে ক্বদর ১ বার পাঠ করবে আল্লাহপাক তাকে অনেক ছাওয়াব দান করবেন। সারাদিন রোজা রাখা আর সারা রাত জেগে ইবাদত তথা নামাজ পড়া এ ধরণের পঞ্চাশ বছর ইবাদতের ছাওয়াব আল্লাহপাক তাকে দান করবেন। আল্-হামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য)
➠আর যে ব্যক্তি সূরায়ে ক্বদর ২ বার পাঠ করবে আল্লাহপাক তাকে বখশিশ করবেন খলিল, কালিম, রফীঈ হযরত ইদ্রিছ (عليه السلام) ও ঈসা (عليه السلام) এবং হাবিবের সমপরিমাণ মর্যাদা ও ছাওয়াব। 
➠আর যে ব্যক্তি সূরায়ে ক্বদর ৩ বার পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা অবমুক্ত (খুলে) করে দিবেন, সে ব্যক্তি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা হিসাব-নিকাশ ও শাস্তি ব্যতিত বেহেশতে প্রবেশ করবে।

➠হাদীস শরীফে রয়েছে, যে ব্যক্তি সূরায়ে ক্বদর পাঠ করবে তার জন্য এক চতুর্থাংশ কোরআন শরীফ পাঠ করার ছাওয়াব নিহিত। সুবহানাল্লাহ! কি ধরনের ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ এবং বরকতময় সূরা।  

(১৪) অজু সমাপ্তির পর কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ শেষে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া:
اللهم اجعلنى من التوابين واجعلنى من المتطهرين واجعلنى من عبادك الصالحين. 
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত করুন এবং পাক-পবিত্রময় ব্যক্তিদের মধ্যে পরিগণিত করুন, আর নেক বান্দাদের দলভূক্ত করুন।
(১৫) প্রতিটি ফরয অঙ্গ ধোয়ার সময় কালেমায়ে শাহাদাত এবং দরূদ শরীফ পাঠ করা। 
(১৬) প্রতিটি নামাজের জন্য নতুনভাবে ওজু করা। যদিওবা ওজু থাকে। এছাড়াও অজুর আরোও অনেক মুস্তাহাব রয়েছে। এখানে সংক্ষেপে উলে­খযোগ্য মুস্তাহাব সমূহ উলে­খ করা হয়েছে।

❏ মাসয়ালা: (৭৫)

➠অজুর মধ্যে মাকরুহ হচ্ছে ১৭টি: যথা- 
(১) বাম দিক হতে অজু আরম্ভ করা। 
(২) বাম হাতে মুখে পানি লওয়া বা পানি ঢালা।
(৩) বাম হাত দ্বারা নাকে পানি নেওয়া। 
(৪) ডান হাত দ্বারা নাক পরিস্কার করা। 
(৫) মুখের মধ্যে পানি জোরে মারা। 
(৬) মুখ ধোয়ার সময় ওষ্ঠ এবং চোখ শক্ত ভাবে বন্ধ রাখা। 
(৭) অজুর পানির মধ্যে থুথু ফেলা। 
(৮) অজু করার সময় দুনিয়াবী কথা-বার্তা বলা। 
(৯) প্রতিটি অঙ্গ ৩ বারের কম ধোয়া। 
(১০) প্রতিটি অঙ্গ ৩ বারের অধিক ধোয়া। 
(১১) ২ কিংবা ৩ বার মাথা মাছেহ করা ইমাম আজমের মতে মাকরূহ। ইমাম শাফেয়ীর মতে জায়েয। 
(১২) অপবিত্র ও নাপাকময় স্থানে অজু করা। 
(১৩) ইস্তিঞ্জার (প্রশ্রাবের) স্থানে অজু করা। 
(১৪) তামার বাসন কিংবা তামার পেয়ালার পানি রৌদ্র কিংবা তাপের কারণে গরম হওয়া পানি দ্বারা অজু করা। 
➥ [সূরায়ে ক্বদর]

(১৫) নিজের অজুর জন্য বদনা কিংবা পাত্র নির্দিষ্ট করা এবং ঐ বদনা দিয়ে অন্য কাউকে অজু করতে না দেওয়া। 
(১৬) নিজের লজ্জাস্থান নিজে দেখা। 
(১৭) অতিরিক্ত রং দ্বারা রঞ্জিত তামার বদনা দ্বারা অজু করা ইত্যাদি।

❏ মাসয়ালা: (৭৬)
যদি কোন ব্যক্তি পরিপূর্ণ গোসল করে তাহলে গোসলের সাথে সাথে অজু হয়ে যাবে। নামাজের জন্য নতুনভাবে অজুর প্রয়োজন নাই। তবে সেক্ষেত্রে গোসলের সুন্নাত তরিকা হচ্ছে; গোসলের পূর্বে যেন অজু করে নেয়। আর গোসলের পর নতুন (তাজা) অজু ইবাদতের নিয়্যতে করা অতিব উত্তম। (৩৭)
➥ [ফতোয়ায়ে বরকাতুল উলুম, পৃষ্ঠা-৬৪]

❏ মাসয়ালা: (৭৭)
অজু ভঙ্গকারী বস্তু ২০টি, তন্মধ্যে সামনে-পিছনের স্থান হতে ১০টি আর সমস্ত শরীর হতে ১০টি। 

➠সামনে-পিছনের স্থান হতে ১০টি হচ্ছে: 
(১) প্রস্রাব করা 
(২) মজী নির্গত হওয়া 
(৩) ওয়াদী নির্গত হওয়া অর্থাৎ সে পূজজাতীয় পানি যা প্রস্রাবের পরে নির্গত হয় 
(৪) বাতাস বের হওয়া (মহিলাদের ক্ষেত্রে) 
(৫) পাথর বের হওয়া 
(৬) ইস্তেহাজা ইত্যাদির রক্ত প্রবাহিত হওয়া। এই ৬টি সামনের স্থান হতে। আর ৪টি হচ্ছে পিছনের রাস্তা হতে- 
(১) বায়ু বের হওয়া 
(২) পায়খানা বের হওয়া 
(৩) কীট বের হওয়া 
(৪) বহুমূত্রার রক্ত বের হওয়া। 

আর সমস্ত শরীর হতে ১০টি। যেমন- 
(১) রক্ত বের হওয়া 
(২) পূজ বের হওয়া
(৩) হলুদ রংয়ের পানি বের হওয়া 
(৪) মুখ ভরে বমি করা 
(৫) নেশাগ্রস্থ হওয়া 
(৬) পাগল হওয়া 
(৭) হেলান দিয়ে শয়ন করা 
(৮) নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসা 
(৯) কোন অসুস্থতার কারণে বেহুশ হওয়া 
(১০) মহিলা ও পুরুষ উভয়ই নগ্ন হয়ে শাহ্ওয়াতের সাথে একে অপরকে হাত লাগানো।

❏ মাসয়ালা: (৭৮)
পানি যদি ঘোলাটে হয়, উক্ত পানি দ্বারা গোসল ও অজু করা বৈধ। যতক্ষণ পর্যন্ত গন্ধ এবং স্বাদ পরিবর্তন না হবে।

❏ মাসয়ালা: (৭৯)
রং, খোশবু এবং স্বাদ অপবিত্র বস্তু পড়ার কারণে যদি উক্ত গুণ সমূহের পরিবর্তন ঘটে সেক্ষেত্রে উক্ত পানি দ্বারা অজু ও গোসল করা বৈধ নয়। যদি পবিত্র বস্তু পতিত হওয়ার কারণে যেমন- সাবান, জাফরান ইত্যাদি কারণে কিংবা পানি অনেকদিন বন্ধ থাকার কারণে রং, খোশবু ও স্বাদ পরিবর্তন হলে উক্ত পানি অপবিত্র নয়। উক্ত পানি দ্বারা গোসল এবং অজু করা বৈধ। তবে পানি পাওয়া যেতে হবে। অর্থাৎ পানি যেন গাঢ় না হয়ে পাতলা হয়।
প্রবাহিত তথা প্রবাহমান পানির হুকুম হচ্ছে- পানি এই পরিমান হতে হবে যে- যদি কেউ এতে পাতা ফেলে দেয় তা প্রবাহমান হবে। তবে সে পানির উৎপত্তি স্থল তথা শুরু পবিত্র হবে অর্থাৎ যেখান থেকে পানি প্রবাহিত হয়েছে, তা পবিত্র হতে হবে। যদিওবা অপবিত্র বস্তু ভাসমান হবে তবু উক্ত পানি পাক। সে পানি দ্বারা অজু ও গোসল করা বৈধ।

অজুর মধ্যে ফরজ

❏ মাসয়ালা: (৮০)

➠ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর মতে- অজুর মধ্যে ফরজ হচ্ছে ৪টি। যা পবিত্র কোরআন দ্বারা প্রমাণিত।
(১) সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করা 
(২) কনুসহ উভয় হাত ধৌত করা 
(৩) মাথার চার ভাগের এক ভাগ (এক চতুর্থাংশ) মাসেহ করা 
(৪) গিড়ালীসহ উভয় পা ধৌত করা।

➠ইমাম মালেক (رحمة الله) এর মতে অজুর মধ্যে ফরজ ৭টি। যথা: 
(১) নিয়ত করা 
(২) মুখমন্ডল ধৌত করা 
(৩) হাত ধৌত করা 
(৪) সমস্ত মাথা মাসেহ করা 
(৫) উভয় পা গিড়ালী পর্যন্ত ধৌত করা 
(৬) অজুর কর্ম তথা অজুর অঙ্গ সমূহে ধৌত করার ক্ষেত্রে পর পর দ্রুততার সাথে করা 
(৭) অজুর অঙ্গ সমূহে পানি ভাল ভাবে পৌঁছানো। 

➠ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর মতে অজুর ফরজ ৬টি। যথা: 
(১) নিয়ত করা
(২) সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করা 
(৩) কনুসহ উভয় হাত ধৌত করা 
(৪) মাথার কিছু অংশ মাসেহ করা এমনকি কয়েকটি চুলের উপর মাসেহ করলেও হবে 
(৫) গিড়ালী সহ উভয় পা ধৌত করা 
(৬) অজুর অঙ্গ সমূহ তারতীব হিসেবে ধৌত করা।

➠ইমাম আহমদ (رحمة الله) এর মতে অজুর ফরজ ৬টি। যথা:
(১) মুখমন্ডল ধৌত করা 
(২) কনুসহ উভয় হাত ধৌত করা 
(৩) সমস্ত মাথা কান পর্যন্ত মাসেহ করা 
(৪) গিড়ালী পর্যন্ত উভয় পা ধৌত করা 
(৫) তারতীব হিসেবে ধৌত করা 
(৬) পর পর অজুর অঙ্গ সমূহ বিরতিহীন ভাবে ধৌত করা।
➥ [শরহে মুসলিম ১ম খন্ড, ৩৯৬ পৃষ্ঠা]

❏ মাসয়ালা: (৮১)
অজুর অঙ্গ সমূহ ধৌত করার মধ্যে কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া এ জন্যই মুকাদ্দস (প্রথমে) করা হয়েছে যে পানির তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। একটি হচ্ছে রং যা দেখার দ্বারা অবগত হওয়া যায়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে স্বাদ বা মজা যা মুখে গ্রহণ করার মাধ্যমে জানা যায়। আর তৃতীয়টি হচ্ছে ঘ্রাণ যা নাকে দেওয়ার মাধ্যমে বুঝা যায়।

❏ মাসয়ালা: (৮২)
অজুর মধ্যে নাকে পানি দেওয়ার পূর্বে কুলি করার কথা এ জন্যই বলা হয়েছে যে, মুখ নাক হতে আফজল ও ফজিলত। আর এতে দেখার দৃষ্টি শক্তি অনেকাংশে বেশী। যেমন এটি তেলাওয়াতে কোরআন শাহাদাতাইন পাঠ ও খানা-পানি প্রবেশ করানোর স্থান।

❏ মাসয়ালা: (৮৩)
কোন নামাজী ব্যক্তির অযূ নষ্ট হয়েছে এবং অযূ করার জন্য বাইরে আসল। তখন সে যেন নামাযেই রয়েছে। যদি তার থেকে নামায নষ্টকারী কোন কাজ পাওয়া না যায় যেমন হাসা, কথা বলা ইত্যাদি।
 
Top