নামাযের বর্ণনা
✍ কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]

❏ মাসয়ালা: (১১)
আছরের ওয়াক্তের সময় কোন সুন্নাত পড়া আবশ্যক নয়। কিন্তু হুজুর (ﷺ) কোন কোন সময় চার রাকাত আবার কখনো দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ ফরজের পূর্বে আদায় করতেন। এ জন্য তা পড়া উত্তম।
-
ويستحب اربع قبل العصر وقبل العشاء وبعدها بتسليمة وإن شاء ركعتين (در مختار) 

❏ মাসয়ালা: (১২)
মাগরিবের নামাজের সময় তিন রাকাত ফরজ নামাজের পূর্বে কোন নামাজ না পড়া আবশ্যক। ফরজের পরে দুই রাকাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ। এ দুই রাকাতের পরে দুই, চার, কিংবা ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায়ে অনেক ছাওয়াব নিহিত। কোন কোন হাদিসে বিশ রাকাতের কথাও উলে­খ রয়েছে। এই নামাজকে সাধারণত সালাতুল আউয়াবীন বলা হয়।

➠দুররে মোখতার গ্রন্থে রয়েছে:

 وست بعد المغرب ليكتب من الأوابين 

মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নামাজ সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে এর মধ্যে দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা অন্তর্ভূক্ত করে চার রাকাত বৃদ্ধি করে আদায় করলে এর ছাওয়াব পাওয়া যাবে। 
➠তবে হাদিস শরীফে
 صلواة الاوابين কে صلواة الضحىٰ বলা হয়েছে।

❏ মাসয়ালা: (১৩) 
পবিত্র রমজান মাসে এশার ফরজ ও সুন্নাতের পর বিতিরের পূর্বে বিশ রাকাত তারাবীহর নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এর পর বিতির জামাতে আদায় করা উত্তম।

❏ মাসয়ালা: (১৪)
দিনের বেলায় নফল নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে দুই কিংবা চার রাকাতের বেশীর নিয়ত না করা ভাল। আর রাতের বেলায় দুই, চার ও আট রাকাত পর্যন্ত এক নিয়তে পড়া যাবে, তবে দুই রাকাতের নিয়ত করা উত্তম। অনুরূপ দিনের বেলায় নফল নামাজের কেরাত চুপে চুপে পড়া উত্তম। আর রাতের বেলায় গোপনে ও উচ্চস্বরে উভয়ের অনুমতি রয়েছে। যদি নিকটে কোন মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে তবে সেক্ষেত্রে উচ্চস্বরে না পড়া চায়, কেননা এতে ঘুমন্ত ব্যক্তির নিদ্রা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকবে।

❏ মাসয়ালা: (১৫)
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় হচ্ছে এশার পর হতে সুবহে সাদেক পর্যন্ত। পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফে এর বর্ণনা রয়েছে। হুজুর (ﷺ) সর্বদা রাত্রে দু’চার ঘন্টা আরাম করার পর তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠে যেতেন। অধিকাংশ সময় দন্ডায়মান অবস্থায় নামাজ আদায় করাতে তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত।
যতদিন পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়নি ততদিন পর্যন্ত রাসূল (ﷺ)-এর উপর তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ ছিল। যখন নামাজ ফরজ হয় তখন তা (তাহাজ্জুদ) নফল হিসেবে হয়ে যায়। ছাহাবায়ে কেরামগণের মধ্যে অধিকাংশ ছাহাবী তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।

➠ছাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে:

فى الليل رهبان والنهار فرسان 

অর্থাৎ: রাত্রে তাঁরা দুনিয়া বিমুখ তথা একাগ্রহচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করতেন আর দিনের বেলায় সাহসিকতার সহিত বীরযোদ্ধা হিসেবে জিহাদের ময়দানে যুদ্ধ করতেন। ছাহাবায়ে কেরামদের অনেকে এই নামাজ আদায় করতেন। এই নামাজকে دأب الصالحين তথা আল্লাহ্ ওয়ালার নামাজ বলা হয়ে থাকে।

❏ মাসয়ালা: (১৬) 
তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত তার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নাই, বরং দুই, চার, ছয় কিংবা আট রাকাত যে পরিমাণ ইচ্ছা পড়ে নেওয়া ভাল। সাধারণত: হুজুর (ﷺ) আট রাকাত আদায় করতেন। অর্ধ রাতের পর তা আদায় করা খুবই ভাল ও উত্তম।
আর যদি কখনো শরীরে অলসতা কিংবা দুর্বলতা অনুভব হয়, তবে এশার নামাজের পরে, অর্থাৎ এশারের ফরজ ও সুন্নাত আদায় করার পর এবং বিতির নামাজের পূর্বে দুই কিংবা চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেয়া ভাল। হুজুর (ﷺ) বিশেষ করে এশারের ফরজ ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আদায় শেষে দুই রাকাত করে চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। এ জন্যই তা আদায় করাতে সুন্নাত নামাজের ছাওয়াব ও পূণ্য নিহিত। অনুরূপ তাহাজ্জুদ নামাজেও সুন্নাতের ছাওয়াব বিদ্যমান। আর যদি তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব না হয় তবে এশার নামাজের পরে নফল নামাজগুলো আদায় করতে পারলে ভাল। এ নামাজ আল্লাহর সাথে সম্পর্কের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে এবং ধর্মের উপর অটল থাকা সর্বোপরি ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে যত প্রকার মুছিবত ও কষ্ট আসুক না কেন তা বরদাশ্ত ও ধর্য্য ধারণের ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। এই নামাজের মাধ্যমে আত্মা ও নফস পরিশুদ্ধ ও সংশোধন হয়ে থাকে। জবান ও বর্ণনার ক্ষেত্রে তাছির তথা অনুকম্পা ও আকর্ষণ এবং সাথে সাথে খেয়াল-ধারণার মধ্যে যে রকম খুলুসিয়ত ও অন্তরঙ্গতা এবং কলব ও দিলে শান্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে, যা সাধারণত অন্য কোন নফল নামাজ দ্বারা কিংবা কোন তাছবীহ ও জিকির দ্বারা সৃষ্টি হয় না। 

➠পবিত্র কোরআন শরীফে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে-

  [ إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئاً وَأَقْوَمُ قِيلاً]

(রাত্রে ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে উঠার মধ্যে আত্মার পবিত্রতা এবং স্বস্তি ও অটলতা সৃষ্টি হয়। আর কথাবার্তা সম্পূর্ণ ভাবে দুরস্ত ও অকপটে এবং ভদ্র ভাবে হয়ে যায়।  
 ● কাশশাফ।

➠হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে:

عليكم بقيام الليل فإنه دأب الصالحين قبلكم وهو قربة لكم إلى ربكم ومكفرة للسيئات ومنهاة عن الإثم- 

অর্থাৎ: তোমরা রাত্রে জাগ্রত হয়ে নামাজ আদায় করাকে তোমাদের জন্য আবশ্যক করে নাও। এ নিয়মটি তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার ও বুজুর্গ লোকদের অভ্যাস ছিল। এ নামাজ তোমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যবান ও প্রতিবেশী হিসাবে করে নিবে। আর তোমাদের গুনাহকে মাফ করে দেওয়া হবে এবং অন্যায় ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখবে।

হযরত ছাওয়াবন (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রয়েছে যে- রাত্রে জাগ্রত হওয়া খুবই কষ্টকর ও বোঝা। যখন তোমরা বিতির নামাজ পড়বে তখন দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিও।

فاذا الاوتر احدكم فليركع ركعتين فان قام من الليل والاكانتا له (رواه احمد مشكواة شريف) 

যদি রাত্রে জাগ্রত হয়ে উঠতে পারলেতো ভাল, তা না হলে এই দুই রাকাত নামাজই এর জন্য যথেষ্ট। এই নামাজ তাহাজ্জুদ নামাজের স্থলাভিসিক্ত হবে। আল্লাহ্পাক আমরা গুনাহগার ও মৃত্যুসম উম্মতদেরকে হুজুর (ﷺ) এর উসিলায় দয়া ও মেহেরবানী করেছেন। যদি কেউ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় না করে থাকে তাহলে দিনের বেলায় হউক কিংবা রাত্রের যে কোন সময় দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারলে ভাল।

❏ মাসয়ালা: (১৭)
تحية الوضوء ও تحية المسجد এর বর্ণনাঃ কোন মানুষ যদি ওজু করার পর দু’রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে এতে প্রচুর ছাওয়াব বিদ্যমান। যাকে তাহিয়্যাতুল ওজু বলা হয়ে থাকে। এর ফজিলত ও মর্তবা অনেক। এমনিভাবে মসজিদে প্রবেশ করার সাথে সাথে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করার মধ্যেও অসংখ্য ছাওয়াব নিহিত। যাকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ বলা হয়ে থাকে। আবার অনেকের মতে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ ওয়াজিব।
➠অন্য একটি হাদিস শরীফে নফল নামাজকে مـجبّـرات الصلواة বলা হয়েছে। 
অর্থাৎ ফরয, সুন্নাত নামাজের মধ্যে যে কমতি ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে থাকে উক্ত নফল নামাজ দ্বারা পরিপূর্ণ ও ক্ষয় পূরণ হয়ে যায়। তবে উম্মতের আছান তথা সহজতর হিসাবে এই নামাজকে আবশ্যক করা হয়নি। নিম্নে কয়েকটি নফল নামাজের পরিচিতি দেওয়া হলো:

এক. اشراق (এশরাক) এর বর্ণনা: 

এশরাক হচ্ছে সূর্য্য উদিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করা। হাদিস শরীফে এর অনেক ছাওয়াবের কথা বলা হয়েছে এবং হুজুর ছৈয়্যদে আলম (ﷺ) বলেছেন; যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জমাতে আদায় করার পর সূর্য্য উদিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর জিকির আজকার ও তাছবীহ-তাহলীলে পাঠরত থাকার পর এশরাকের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ পাক তাকে এবং তার সাথে সম্পৃক্ত আরো সত্তর হাজার লোককে ক্ষমা করে দিবেন।

দুই. صـلواة الضحى (ছালাতুদ দ্বোহা) এর বর্ণনা: 

এই নামাজ সূর্য্য যখন পরিপূর্ণ হবে তখন দু’রাকাত করে চার রাকাত নামাজ আদায় করার ব্যাপারে হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে। আট রাকাতও পড়া যাবে। এই নামাজকে চাশতের নামাজও বলা হয়। হুজুর (ﷺ) এই নামাজ বেশী-বেশী আদায় করতেন।
➥ [বুখারী ও মুসলিম শরীফ]

সাধারণত মাগরীবের নামাজের পরে ছয় রাকাত যে নফল নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে তাকে জন সাধারণ صلواة الاوّابين (ছলাতুল আউয়াবীন) বলে।

➠তবে হাদিস শরীফে صلواة الضحى কে صلواة الاوّابين বলা হয়েছে। 

➠হাদিস শরীফে আছে:

صلاة الاوّابين حين ترمض الفصال (مسلم شريف) 

অর্থাৎ: صلواة الاوّابين বলা হয় যখন অতিমাত্রায় রৌদ্রের তেজ ও তাপের কারণে উটের বাচ্চা পা নাড়তে থাকে। 

➠এ ছাড়া আরও নফল নামাজের বর্ণনা হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে। যেমন-
 صلواة التسبيح, صلواة الحاجة, صلواة الاستخاره ইত্যাদি। হুজুর (ﷺ) এর নিয়ম ও আদত মোবারক ছিলেন যে, যখনই কোন খুশী কিংবা পেরেশানীর সংবাদ শ্রবণ করতেন তখনই নামাজ তথা কৃতজ্ঞতা সূচক সিজদার জন্য দন্ডয়মান হয়ে যেতেন। খুশী ও আনন্দের ক্ষেত্রে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন আর পেরেশানী ও মুছিবতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য ও মদদ প্রার্থনা করতেন।

➠হযরত খোজাইফা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত:

كان النبى صلى الله عليه وسلم اذ احزبه امر صلى (أبو داود شريف) 

অর্থাৎ: যখন কোন পেরেশানীর কথা শ্রবণ করতেন বা পেরেশানীর কথা আসত তখন তিনি নামাজের জন্য দন্ডয়মান হয়ে যেতেন।

❏ মাসয়ালা: (১৮)
রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ জমাত সহকারে আদায় করা জায়েজ। 

➠হযরত আওফ ইবনে মালেক (رضي الله عنه) তাহাজ্জুদের নামাজে হুজুর (ﷺ)-এর সাথে ইকতেদা করেছিলেন এবং হুজুর (ﷺ)-এর পিছনে দন্ডয়মান হত। তবে শর্ত হচ্ছে এই জামাতের জন্য কোন ডাকা-খোঁজা কিংবা আজান-ইকামত দেওয়া যাবে না।
➥ [মেরাত ২য় খখন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা]


➠বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (رضي الله عنه) হতে এ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।
অত্র হাদীস দ্বারা অনেক মাসয়ালা সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যায়। প্রথমত: হচ্ছে নফল নামাজ বিশেষত: তাহাজ্জুদ নামাজ জামাতে আদায় করা জায়েয। যখন এর জন্য আজান, একামত ও লোকজনকে ডাকা-ডাকি এবং আহ্বান করার ব্যবস্থা না হবে।
➥ [মেরআত ২য় খন্ড ১৯০ পৃষ্ঠা]

❏ মাসয়ালা: (১৯)
কোন ব্যক্তি ভুলবশত: প্রথম রাকাতে সূরায়ে নাছ পাঠ করল এক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতেও সূরায়ে নাছ পাঠ করবে।

➠ফতহুল ক্বদীরে বর্ণিত রয়েছে:

قرأ فى الاولى بقل اعوذ برب الناس يقرء فى الثانية هذه السورة ايضًا لابأس ان يقرء سورة ويعيدها فى الثانية -
احسن الفتواى, صفه➥ [ ২৪৪]

তানভীরে আছে:
افادانّه يكره تنـزيهًا وعليه يحمل جزم القنية بالكراهة. 

❏ মাসয়ালা: (২০)
কোন ব্যক্তি নামাজের শেষ বৈঠকে জামাতে শরীক হলে তখন এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করেই নামাজ পুরো করবে।  
➥ [মাহমুদীয়া, ১৪ খখন্ড, ৩০৭ পৃষ্ঠা]

❏ মাসয়ালা: (২১)
যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত রয়েছে, সে ক্ষেত্রে ফরজ ও সুন্নাতের মধ্যবর্তী فاصله তথা পৃথক আছে?
হ্যাঁ! ফরজ ও সুন্নাত নামাজের মধ্যবর্তী فاصله (পৃথক) কথা-বার্তার মাধমে হউক কিংবা স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে হউক তা সুন্নাত।

ويسن ان يفصل بين السنة والفرض بكلام او انتقال والافضل ان ينتقل المنتقل ومصلى فرض من موضع فرضه (الترياق النافع صفه ৪৭)

❏ মাসয়ালা: (২২)
কবরস্থানে নামাজ পড়া, গোনাহর জায়গায় তথা ارض مغصوبين (অভিশপ্ত জায়গা) নামাজ পড়া কেমন? এ সমস্ত স্থানে নামাজ পড়া নাজায়েজ।

وتكره الصلواة فى المقبره ، وتكره الصلواة فى محل المعصيه وتحرم فى الاماكن المغصوبة -

অর্থাৎ কবরস্থানে নামাজ পড়া মাকরূহ, গোনাহর স্থানে নামাজ পড়া মাকরূহ এবং ارض مغصوبه (অভিশপ্ত জায়গা) নামাজ পড়া হারাম।  
(الترياق النافع صفه ৫৬) 

❏ মাসয়ালা: (২৩)
যে বৎসর মদীনা মোনাওয়ারার মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, হিজরতের প্রথম বৎসর। এই বৎসর রবিউসসানি মাসে জোহর, আছর ও এশারের চার রাকাত ফরজ নামাজ ফরজ হয়েছে। প্রথমে দু’রাকাত নামাজ ফরয ছিল। মাগরিব ও ফজরের নামাজ পূর্বের নিয়মে অবশিষ্ট রয়েছে। 
➥ [তাফরীহুল আজকিয়া ২য় খন্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা]

এর দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, নামাজ দু’দফা ফরজ হয়েছিল। প্রথম দু’রাকাত মক্কায়ে মোয়াজ্জমায় মাগরিবের নামাজ ব্যতীত। অতঃপর চার রাকাত মদীনা মোনাওয়ারায় হয়েছিল, ফজর ও মাগরিব ব্যতীত। ফজর ও মাগরিবের নামাজ পূর্বের নিয়মে বর্তমান পর্যন্ত প্রচলিত রয়েছে।

❏ মাসয়ালা: (২৪)
নফল নামাজ জমাতে আদায়ের হুকুম দু’ভাবে বিদ্যমান: 
(১) সুন্নাত 
(২) গায়রে সুন্নাত (সুন্নাত নয়)।

النوافل من حيث طلب الجماعة قسمان ، الاوّل ماتسن فيه الجماعة كصلاة العيدين والكسويين والتراويح والوتر في رمضان والاستسقاء ، والثانى ما لا تسن فيه الجماعة وهو ما عدا ذلك – (تنوير صفه ১৭২)

অর্থাৎ দুই ঈদের নামাজ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা), চন্দ্রগ্রহণ ও সূযর্য গ্রহণের নামাজ এবং তারাবীহ ও রমজান মাসে ভিতর নামাজ আর ইস্তিছকা অর্থাৎ বৃষ্টির জন্য নামাজ ইত্যাদি নামাজের জমাত সুন্নাত। উলে­খিত নামাজ ব্যতীত অন্যান্য নফল নামাজের জমাত গায়রে সুন্নাত।

❏ মাসয়ালা: (২৫)
এশার নামাজ বিলম্বে পড়া মুস্তাহাব।

❏ মাসয়ালা: (২৬)
নিজ আক্বীদা ও মছলকের খেলাফ তথা পরিপন্থীদের পিছনে নামাজ আদায় করা মাকরূহ।

كراهة الصلاة خلف المخالف حيث أمكنه خلف غيرهم ومع ذلك الصلوة معهم افضل من الانفراد وتحصل له فضيلة الجماعة, وذكر الفاسق والمبتدع قال لأن الصلاة خلف هؤلاء مكروهة مطلقًا. (الأشباه والنظائر مع شرح الحموي جلد-৪, صفحه ৩৭৮-৩৭৯) 

❏ মাসয়ালা: (২৭)
ফরজ কিংবা ওয়াজিব নামাজ আদায়কালীন যদি কেউ ডাকে তাহলে নামাজ ভঙ্গ করে ডাকে সাড়া দেওয়া কিংবা যাওয়া জায়েজ নাই। হ্যাঁ! হুজুর (ﷺ)-এর ডাকে সাড়া দেওয়া ও যাওয়া ফরজ নামাজ হউক কিংবা ওয়াজিব বা যেই নামাজই হউক না কেন নামাজ ভঙ্গ করে যাওয়া ওয়াজিব এবং রাসূল (ﷺ)-এর দরবারে উপস্থিত হওয়াতে তার নামাজ ভঙ্গ হবে না।
আর যদি নফল নামাজ আদায়কালীন মা সন্তানকে ডাক দেয় তখন তাতে সাড়া দেওয়া ও যাওয়া ওয়াজিব, আর বাপের ডাকে যাওয়া জায়েজ নাই।
➥ [শরহে মুসলিম শরীফ, ৭ম খন্ড, ৫৩পৃষ্ঠা]

❏ মাসয়ালা: (২৮) 
নফল নামাজ জামাতে আদায়ের জন্য تـداعى (ডাকা খোজা করা) মাকরূহ তানজীহি আর মাকরূহ তানজীহি হওয়ার ইল­ত ও কারণ تـداعى নয়। কেননা চার অথবা চারের অধিক ব্যক্তি জামাত সহকারে নফল নামাজ আদায় করা হানাফী ফকীহগণের দৃষ্টিতে সাধারণত মাকরূহে তানজীহি।

এ ক্ষেত্রে تـداعى হউক কিংবা না হউক। এর কারণ হানাফী ফকীহগণের মতে জামাত সহকারে নামাজ আদায় করা ফরজ ও ওয়াজিবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ জন্য নফল নামাজ জামাতে আদায় করা মাকরূহ তানজীহি।

➠ফতোয়ায়ে শামী গ্রন্থে আছে:

إن الجماعة فى التطوع ليست بسنة (شامى جلد-১, صفحه ৬২৪) 

নফল নামাজ জামাতে আদায় করা সুন্নাত নয়। হানাফী ফকীহগণের মতে নফল জামাত সহকারে আদায় করা মাকরূহ তানজীহি। তাহরীমি ও হারাম নয়। এ জন্য নফল নামাজ জামাতে আদায় করা জায়েজ নয়।
➥ [শরহে মুসলিম, ৭ম খন্ড, ৪১৩ পৃষ্ঠা]

তবে বর্তমানে প্রেক্ষাপটে যেহেতু মানুষের মধ্যে অলসতা বৃদ্ধি পাওয়াতে শবে বরাত, শবে ক্বদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ জামাতে আদায় করার ব্যাপারে মত পোষণ করেছেন।
(এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আমার রচিত, “আচ্ছালাতুত তা-তাউওয়ায়ু বেইকতেদায়ীল মুতাউয়ে’’ নামক কিতাবটি দেখুন)

❏ মাসয়ালা: (২৯)
ফিতনা-ফাসাদের যুগে ইবাদত-বন্দেগীর ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত আছে:

➠হযরত মা‘কর ইবনে ইয়াছার হতে বর্ণিত- হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন:

العبادة فى الهرج كهجرةٍ اِلـىَّ 

অর্থাৎ: ফিতনার যুগে ইবাদতের প্রতিদান আমার দৃষ্টিতে হিজরত করার সমপরিমান। 

➠হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত- রাসূলে করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন-

لا تقوم الساعة إلا على شرار الناس 

কিয়ামত তখনই সংঘটিত হবে যখন কেবলমাত্র খারাপ লোক অবিশষ্ট থাকবে।

❏ মাসয়ালা: (৩০)
নামাজ শবে মেরাজে ১৭ই রমজান তারিখে হিজরতের দেড় বছর পূর্বে ফরজ হয়েছে। আর মে‘রাজের পূর্বে দু‘ওয়াক্ত নামাজ ছিল। একটি হচ্ছে সূর্য্য উদয়ের পূর্বে আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সূর্য্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে।
তবে এক বর্ণনায় রমজান শরীফে মে‘রাজ সংঘটিত হওয়ার কথা আছে। আরেক বর্ণনা মতে আছে মে‘রাজ রজবের মধ্যে হয়েছিল। আর এটিই হচ্ছে সু-প্রসিদ্ধ ও সর্বসম্মত মতামত। 
➥ [লুগাতুল কোরআন ৪র্থ খন্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা]

❏ মাসয়ালা: (৩১)
যদি নামাজীর মাথার উপরে কিংবা ছাদের উপর ছবি (তাছ্বীর) ঝুলানো হয় অথবা নামাজীর আগে কিংবা নামাজীর ডানে-বামে অথবা সিজদার স্থানে ছবি থাকে, এ সমস্ত অবস্থায় নামাজ মাকরূহে তাহরীমি হবে। তেমনি স্থানে যদি কেউ নামাজ আদায় করে থাকে তবে সেক্ষেত্রে অন্য স্থানে গিয়ে দ্বিতীয়বার নামাজ আদায় করা আবশ্য হবে। যেখানে সে বস্তু না থাকবে যার দ্বারা নামাজ মাকরূহ হয়। নামাজীর পিছনে যদি ছবি হয় সেক্ষেত্রেও মাকরূহ হতে খালি নয়। তবে তা হবে সূক্ষ্ম ও হালকা মাকরূহ। অতএব নামাজ এরকম রুমে বা কামরায় আদায় করতে হবে যাতে নামাজীর সামনে, ডানে, বামে, উপরে এবং সিজদার স্থানে কোন প্রাণীর ছবি না হয়।
জ্ঞাতব্য যে, ছবি ছাপানো হউক কিংবা হাত দ্বারা অঙ্কিত হউক ইত্যাদির ক্ষেত্রে একই হুকুম প্রযোজ্য। অর্থাৎ মাকরূহে তাহরীমি হবে। আর প্রাণহীন কোন ছবি কিংবা ফটো থাকলে নামাজ মাকরূহ সৃষ্টি করবে না। যেমন- স্থান, বিল্ডিং, দালান, মসজিদ, মাদ্রাসা, গাছ, জমিন, আসমান ও বাগান ইত্যাদির ফটো। তেমনিভাবে ছবিযুক্ত টাকা, নোট, পয়সা, পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র যদি নামাজির পকেটে অথবা ব্যাগের মধ্যে লুকায়িত বা গোপনীয় ভাবে হয়, সে সব ক্ষেত্রে নামাজের মধ্যে মাকরূহ (কারাহাত) সৃষ্টি হবে না। 
➥ [আলমগীরি, দুররে মোখতার, ফতোয়ায়ে বরকাতুল উলুম ইত্যাদি]

❏ মাসয়ালা: (৩২) 
মুখে শব্দ দ্বারা উচ্চারণে নিয়্যত করা মুস্তাহাব। জানা আবশ্যক যে, নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে ছয়টি শর্ত বিদ্যমান। 

যেগুলো ব্যতীত নামাজ হবে না। যথা- 
(১) পবিত্রতা অর্জন 
(২) কাপড় দ্বারা ছতর আবরণ করা 
(৩) কেবলা মুখী হওয়া 
(৪) সময় হওয়া 
(৫) নিয়্যত করা 
(৬) তাকবীর বলা। 

নিয়্যত অন্তরের পরিপূর্ণ ও পাক্কা ইচ্ছাকে বলা হয়। মুখ দ্বারা নিয়্যতের শুদ্ধ উচ্চারণ করা মুস্তাহাব (بدعت مستحبه) নিয়্যতের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে- সে সময় যদি কোন ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে আপনি কোন নামাজ আদায় করতেছ, তখন কোন প্রকার চিন্তা ভাবনা ও ইতস্ত না করে বলে দেওয়া যে, আমি ফজর কিংবা জোহর বা আছরের নামাজ আদায় করতেছি। তবে অধীক এহতেয়াদ তথা সাবধানতা হচ্ছে তাকবীরে তাহ্রীমা আল্লাহু আকবর বলার সময় অন্তরে এই নিয়্যত বিদ্যমান থাকা যে- আমি ফজর কিংবা জোহরের নামাজ আদায় করতেছি।

❏ মাসয়ালা: (৩৩)
সুন্নাত নামাজ সমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান সুন্নাত হচ্ছে ফজরের সুন্নাত। এমনকি উক্ত সুন্নাতকে কেউ কেউ ওয়াজিব বলেছেন। পবিত্র হাদীসে বর্ণিত রয়েছে- ফজরের সুন্নাত তরক করিওনা, যদিওবা তোমাদের উপর শত্রুর ঘোড়া এসে যায়। এর পরের স্তর হচ্ছে জোহরের সুন্নাত।

❏ মাসয়ালা: (৩৪)
ফজরের নামাজ ক্বাজা হলে সূর্য্য হেলে যাওয়ার পূর্বে আদায় করে নেবে, সাথে সুন্নাত আদায় করবে। আর যদি ফরজ আদায় করা হয়েছে কিন্তু ফজরের সুন্নাত ক্বাজা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সুন্নাতের ক্বাযা নাই। তবে সূর্য্যের কিরন উজ্জ্বল্য হওয়ার পর আদায় করে নেয়া উত্তম।

❏ মাসয়ালা: (৩৫)
জোহর কিংবা জুমার ফরজ নামাজের পূর্বকার সুন্নাত ফওত (অনাদায়ী) হয়ে গেলে এক্ষেত্রে ফরজ আদায় করার পর সময় অবশিষ্ট থাকলে ফরযের পর আদায় করে নেবে। আর এতে উত্তম হচ্ছে ফরজের পরবর্তী সুন্নাত আদায় শেষে ফওত (অনাদায়ী) হয়ে যাওয়া সুন্নাত আদায় করা।

❏ মাসয়ালা: (৩৬)
জামাত আরম্ভ হওয়ার পর কোন নফল কিংবা সুন্নাতে মোয়াক্কাদা আরম্ভ করা জায়েজ নাই, কেবলমাত্র ফজরের সুন্নাত ব্যতীত। যখন সে জানতে পারবে যে, সুন্নাত আদায় শেষে জামাতে শরীক হতে পারবে, শরীক হওয়াটা যদিওবা শেষ বৈঠকে অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতুর মধ্যে হউক, সে ক্ষেত্রে সুন্নাত পড়ে নেবে। আর এই নামাজ এমন স্থানে আদায় করবে তার (নামাজ আদায়কারী) এবং জামাতের কাতারের মধ্যবর্তী আড়াল হয়। কাতার বরাবর কিংবা কাতারের পিছনে যেন না হয়।  

❏ মাসয়ালা: (৩৭)
সুন্নাত ও ফরজ নামাজের মধ্যবর্তী কথাবার্তা দ্বারা সুন্নাত বাতেল হবে না। তবে ছাওয়াবের ক্ষেত্রে কমতি হবে। কারণ ব্যতীরেকে ফরজের পরবর্তী সুন্নাত দেরীতে আদায় করা মাকরূহ। যদিওবা আদায় হয়ে যাবে।

❏ মাসয়ালা: (৩৮)
চার রাকাত বিশিষ্ট সুন্নাতে মোয়াক্কাদার প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর যদি ভুলবশতঃ দরূদ শরীফ পড়া হয়। সেক্ষেত্রে ছহু সিজদা করবে।

❏ মাসয়ালা: (৩৯)
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ব্যতীত অপরাপর সুন্নাত যেমন- গাইরে মুয়াক্কাদা, নফল, মান্নাতের নামাজ ইত্যাদি চার রাকাতের নিয়্যতে আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথম বৈঠকে দরূদ শরীফ পাঠ করবে এবং তৃতীয় রাকাতের জন্য যখন দন্ডয়মান হবে তখন সুবহানাকা (ছানা) এবং আউযু বিল্লাহ পাঠ করবে। 
(হামারা ইসলাম-পৃষ্ঠা-২৫৯)

❏ মাসয়ালা: (৪০)
দাঁড়িয়ে নফল নামাজ আদায় করার উপর শক্তি সামর্থ হওয়ার পরও বসে নফল নামাজ আদায় করা যাবে তবে দাঁড়িয়ে আদায় করা উত্তম।

❏ মাসয়ালা: (৪১)
নফল নামাজ বসে আদায় করার ক্ষেত্রে এমন ভাবে বসতে হবে যেমনভাবে তাশাহুদে বসা হয় এবং রুকু করার সময় এমনভাবে ঝুকতে হবে। যেন মাথা হাটু বরাবর হতেও সামান্য বেশী ঝুকবে।

❏ মাসয়ালা: (৪২)

قوله تعالى إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ 

➠অর্থাৎ: নামাজ যাবতীয় অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখে। 

➠হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এরশাদ করেছেন- যার নামাজের মাধ্যমে তাকে ভাল ও সৎ কাজের হুকুম না করবে এবং খারাপ কাজ হতে বিরত না করবে, তার নামাজ আল্লাহ হতে অনেক দূরে সরে দিবে। 

➠হযরত কাতাদাহ ও হযরত হাসন বছরী (رضي الله عنه) বলেন- এ ধরণের নামাজ তার জন্য অভিশপ্ত। 

➠জনৈক ব্যক্তি হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه)’র নিকট আরজ করছেন, যে অমুক ব্যক্তি চুরি করে থাকে অথচ সে একজন নামাজী, এর জবাবে হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন- তার নামাজের দ্বারা যে কোন সময় তার চুরি অভ্যাস পরিত্যাগ করাবে।

পাঠকগণ! পরীক্ষিত যে বেনামাজী ব্যক্তি অতীব লজ্জাহীন হয়ে থাকে। আর বেনামাজী ব্যক্তি নামাজী ব্যক্তি হতে গোনাহ বেশী করে থাকে। আর নামাজ পরিহার করা এবং নিজ মালিকের হুকুম ও নির্দেশ অমান্য করা সমস্ত গোনাহ হতে বড় গোনাহ এবং সমস্ত বেহায়া ও লজ্জাহীনতার চেয়েও বড় ও কঠিন বেহায়াপনা। 
➥ [তাফসীরে সূরা আলাম নাশরাহ কৃত-আল্লামা নক্বী আলী খান সাহেব, পৃষ্ঠা-৩৩৮]

❏ মাসয়ালা: (৪৩)
সিজদা সাহু করার পদ্ধতি হল, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে ডানে সালাম দিয়ে দু’টি সিজদা করবে (তা ভুলের পাথর শয়তানের জন্য) অত:পর তাশাহুদ পূর্ণ করবে এবং দরূদ শরীফ দু‘আ পড়ে সালাম ফিরাবে। এভাবে সিজদা সাহু দিলে নামায পরিপূর্ণ হবে।

❏ মাসয়ালা: (৪৪):
কোন ব্যক্তি এমন স্তরে পৌঁছতে পারে না যে ব্যক্তির উপর নামায, রোযা ইত্যাদি পড়তে হয় না। নবীর চেয়ে বড় আর কে আছে তার থেকে পর্যন্ত তা রহিত হয়নি।

❏ মাসয়ালা: (৪৫):
কসর নামাযের কাযার পদ্ধতি। যদি সফরের অবস্থায় কোন নামায কাযা হয় এবং ঘরে পৌঁছে সে তা পড়ে নেয় তখন তাকে কসর পড়তে হবে, তেমনি যদি কোন নামায ঘরে কাযা হল তখন সফরে যদি তা আদায় করতে চায় তখন পুরোভাবে পড়বে।  
➥ [ইসলামী ফিকাহ:১৬২]

❏ মাসয়ালা: (৪৬): 
নামাযের সময় আগে বা পেছনে কাপড়কে উচুঁ করা এবং কাপড়কে মাটি থেকে বাঁচানোর জন্য গোছিয়ে নেওয়া মাকরূহ।
নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা চুল পরিমান কাপড় উঠাওনা নামাযে।
নামাযরত অবস্থায় কপালের চুলকে মাটি থেকে বাঁচানোর জন্য তোলা বা মুখ দ্বারা আশপাশের মাটিকে ফুঁক দেওয়া মাকরূহ। যদি সিজদার স্থানে কঙ্কর থাকে তখন তা সরিয়ে দেওয়ার জন্য একবার দুবার ফুঁক দেওয়া বৈধ। 
➥ [ইসলামী ফিকাহ]

❏ মাসয়ালা: (৪৭)
নামাযরত অবস্থায় আঙ্গুল মটকানো বা এক হাতের আঙ্গুলকে অন্য হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করানো মাকরূহ।

❏ মাসয়ালা: (৪৮)
কোমরে হাত রাখা প্রয়োজন বিহীন এবং নামাযে মুখ ফিরানো মাকরূহ। চোখে ডানে বামে দেখাতে অসুবিধে নেই। তবে গর্দান ফিরানো বৈধ নয়।

❏ মাসয়ালা: (৪৯)
নামাযের সময় হাতে ইশারা করা সম্মুখে কোন গমনকারীকে বাঁধা দেওয়া ব্যতীত মাকরুহ।

❏ মাসয়ালা: (৫০)
মাথার পেছনের চুলকে জোট বেধে নামায পড়া মাকরূহ।

❏ মাসয়ালা: (৫১)
সূরা ফাতেহা বা  অন্য সূরা রুকুতে শেষ করা মাকরূহ।
তেমনি রুকুতে গিয়ে আল্লাহু আকবর বলা মাকরূহ বা পুরোপুরি দাঁড়িয়ে সামিয়াল্লাহু বলা উচিত নয়। এ দু’টি শব্দ রুকুতে যাওয়ার সময় ও রুকু থেকে উঠার মাঝখানে পড়া উত্তম।

❏ মাসয়ালা: (৫২)
ঘড়ি ও ক্যালেন্ডারের ব্যবহার আগে থেকে ছিল কিন্তু নামাযের জন্য তার ব্যবহার ছিল না। বর্তমানে স্থায়ী ক্যালেন্ডারে সময়ের যে নির্ধারণ রয়েছে তা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অংশ; কিন্তু বর্তমানে দূরবীণ ও অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি আকিষ্কারের ফলে তা আরো অগ্রগতি লাভ করেছে। তা মতে আমাদের ঘড়ির সময় চলে তাই আলিমগণ তদন্ত সাপেক্ষে যে ক্যালেন্ডার তৈরী করেছে তা সঠিক। তা ব্যবহারে শরীয়তে বাধা নেই। বরং মহান আল্লাহ যুগের পরিবর্তনের সাথে তার কুদরতের বহি:প্রকাশ ঘটান। যাতে বান্দাহ বিভিন্ন প্রকার সুবিধা অর্জন করতে পারে। তাই তা নামাযের সময়ের জন্য খুব মঙ্গলজনক। তাই তা দ্বারা সফর ও ইকামতের সাহায্য নেওয়া বৈধ। 
➥ [ইসলামী ফিকাহ]

❏ মাসয়ালা: (৫৩)
বিমানে নামায পড়ার পদ্ধতি হল, কিতাবুল ফিকাহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আতে এসেছে, যদি নৌকায় দাড়ানো মাত্র পড়ে যাওয়ার আশংখা থাকে বা দাড়ানোর কোন পদ্ধতি না থাকে তখন বসে বসে নামায আদায় করবে, তেমনি যদি বিমানে বসে পড়তে পারে তখন বসে পড়বে। কেননা নৌকায় যেমন কপাল মাটিতে লাগে না তেমনি বিমানেও কপাল মাটিতে লাগে না। তবে সে যে বস্তুর উপর সিজদা করবে তা যমীনের হুকুমে হবে। 
➥ [ফিকহে ইসলামী]

❏ মাসয়ালা: (৫৪)

قوله عليه السلام: هذا وقت الأنبياء من قبل الخ

অর্থ: এটি ইতিপূর্বের সকল নবীদের সময় ছিল:
এ থেকে বুঝা যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পূর্বের উম্মতের মাঝেও ছিল অথচ বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায শুধুমাত্র এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য ছিল। তখন তার জবাব হল পাঁচ ওয়াক্ত নামায যদিও পূর্বের  উম্মতের উপর ফরয ছিল না, সম্ভব হতে পারে তা নবীদের উপর ফরয ছিল বা তারা নফল হিসাবে তা আদায় করতেন এসকল সময়ে বা এই সাদৃশ্যতা ওয়াক্ত নির্ধারণে সময়ে নয়।

দ্বিতীয় উত্তর হল,  যদিও পাঁচ ওয়াক্ত নামায পুরোপুরিভাবে কোন উম্মতের উপর এককভাবে ফরয ছিল না;  কিন্তু তা সমষ্টিগতভাবে বা এক এক উম্মতের উপর এক এক নামায ফরয ছিল। তাই ইমাম আবু জাফর তাহাবী বলেন, হযরত আদম (عليه السلام) এর তাওবা ফযরের সময় কবুল হয়েছে; তাই তিনি শোকর আদায় স্বরূপ দু’রাকাত নামায পড়েছেন যা ফযরের নামাযের মূল এবং যখন হযরত ইসমাইল এর ফিদিয়াতে দুম্বা যবেহ হল, তা যোহরের সময় ছিল তখন হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) চার রাকাত যোহরের নামায আদায় করলেন এবং হযরত ওযাইর (عليه السلام)কে দ্বিতীয়বার আসরের সময় জীবিত করা হয়েছে, তখন তিনি আসরের সময় চার রাকাত নামায আদায় করেছেন এবং হযরত দাউদ (عليه السلام)-এর তাওবা মাগরিবের সময় কবুল করা হয়েছে তখন তিনি চার রাকাত শুরু করেছেন। তিনি অধিক ক্রন্দন আসার কারণে চতুর্থ রাকাত পড়তে সক্ষম হননি। তিন রাকাতে সালাম ফিরালেন। তাই মাগরিবের নামায তিন রাকাত হয়েছে এবং ইশার নামায উম্মতে মুহাম্মদী ছাড়া আর কেউ পড়েননি। তাই হাদিসের মর্মার্থ হল, যার উপর যে নামায ছিল তার সময় এটাই ছিল। তাই এখানে নবীদের দিকে সমষ্টিগতভাবে সম্পর্ক করা হয়েছে বা প্রত্যকের ভিত্তিতে নয়।
➥ [দরসে মেশকাত:খ, ২ পৃ:১৬]

নামাযে ক্বেরাত পড়ার হুকুম

❏ মাসয়ালা: (৫৫)
কিরাতের তিন পদ্ধতি:
১. তেওয়ালে মুফাস্সাল: অর্থাৎ কোরআন মজীদের ছাব্বিশ পারার সূরা হুজরাত থেকে ত্রিশ পারার সূরা বুরুজ পর্যন্ত সূরাকে বলা হয়। নবী (ﷺ) অধিকাংশ সময় ফজর ও যোহরে এ থেকে পড়তেন।
২. আউসাতে মুফাস্সাল: সূরা তারেক থেকে সূরা লাম ইয়াকুন পর্যন্ত তের সূরাকে বলা হয়। আছর ও এশার নামাযে তা থেকে পড়া উত্তম।
৩. কেসারে মুফাস্সাল: সূরা ইযা যুলযিলা থেকে শেষ পর্যন্ত যত সূরা রয়েছে তাকে কেসারে মুফাস্সাল বলা হয়। মাগরিবের নামাযে তা থেকে পাঠ করা হয়।
➥ [মালাবুদ্দাহ]
 
Top