কারামাতের কি অর্থ? তা কত প্রকার? 

✍ কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]

❏ মাসয়ালা: (২৬৬)
অস্বাভাবিক ঘটনাকে কারামত বলে যা বেলায়তের পরিচয়। এর বিপরীতে নবুয়তের দাবী করা তা মিথ্যা। অস্বাভাবিক ঘটনা যা মানুষদের থেকে প্রকাশ পায় তা ছয় প্রকার:
১. মুজেযা 
২. ইরহাছ এ দু’টি নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। প্রথমটি নবুয়তের পরে দ্বিতীয়টি নবুয়তের আগে 
৩. কারামত তা অলীদের থেকে পাওয়া যায়। 
৪. মাউনা তা প্রত্যেক মু’মিন মুসলমানদের থেকে পাওয়া যায়। 
৫. ইসতিদরাজ 
৬. ইহানাত এ দু’টি ফাসিকদের থেকে পাওয়া যায়। 
 ➥ তানবীরুল কুলুব

এমনকি তা কাফির ও মুশরিকদের থেকেও পাওয়া যায়। তা অনেক সময় যাদু ইত্যাদির মাধ্যমে বা মিথ্যার মাধ্যমে পাওয়া যায়। যেমন মুসাইলামা এক অন্ধের জন্য দু‘আ করেছিল সে ভাল হয়ে গেছে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যা চোখের জ্যোতি চলে যাচ্ছে সে মুসাইলামা কায্যাবের নিকট আসল এবং দু‘আ চাইল তখন তা ভাল হয়ে গেল।  

❏ মাসয়ালা: (২৬৭)
আল্লাহর অলীরাও কি সাধারণ মানুষের মত মসীবত ভোগ করেন। হ্যাঁ আল্লাহর অলীরাও সাধারণ মানুষের মত মসীবত ভোগ করেন। হাদিসে এসেছে, 

➠নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন,
اشد البلاء على الأنبياء ثم على الأولياء ثم الأمثل فالأمثل
অর্থ: সবচেয়ে বড় মসীবতে পড়েন আল্লাহর নবীরা অত:পর আল্লাহর অলীদের জন্য  অত:পর যারা তাদের পরে রয়েছে।
➥ তানবীরুল কুলুব:৩২৩।

এবং এও রয়েছে মসীবতের সময় ফেরেশতারা নবীদের সহযোগীতা করেন।  অলীদের জন্য মসীবত আসা নিশ্চিত। সাধারণ মানুষ থেকে মসীবত অনেক সময় ভাল কাজ করলেই চলে যায়। অলীদের জন্য মসীবত আসা মর্যাদা উঁচু করার হাতিয়ার।
ফায়দা: এখানে মসীবত থেকে শুধু শারীরিক রোগ নয়; বরং নবীদের মসীবত হল, তারা যেহেতু নবুয়ত ও বেলায়ত দু’টির অধিকারী দু’টি একত্র হওয়া দুটার মাঝে সামঞ্জস্য সৃষ্টি করা নবীদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। বেলায়তের দৃষ্টি আল্লাহর দিকে, আর নবুয়তের দৃষ্টি বান্দাহর দিকে, নতুবা কোন নবী শারীরিক রোগ তথা শ্বেত, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত ছিলেন না।
আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে দাউদ দামেস্কী বলেন, তাসাউফ ও শান্তি একত্র হতে পারে না।  

❏ মাসয়ালা: (২৬৮)
খাওয়ারেক তথা কারামত দু’প্রকার। 
১. ইচ্ছাধীন। 
২. অনিচ্ছাকৃত।
--------------
১.ইচ্ছাধীন কারামত হল, আহলে দাওয়াতের। তা তারা আল্লাহর কোনো না কোনো নাম যিকির করে থাকেন এবং সে উদ্দেশ্য আল্লাহর নামের বরকতে অর্জিত হয়।
২. অনিচ্ছাধীন কারামত হল যা আল্লাহর পক্ষ থেকে কাউকে দান করা হয়। যতদূর সম্ভব এ ধরণের আস্বভাবিক ঘটনাকে গোপন রাখা চায়।  
 ➥ নুখবাতুল লা‘আলী, ৭২।

❏ মাসয়ালা: (২৬৯)
প্রবাদ আছে যে, খারাপ চরিত্র যখন কারো স্বভাব হয়ে যায়, তখন তা মৃত্যুর পরে পৃথক হয়। তার অর্থ হল, এখানে মৃত্যু থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু বুঝানো হয়নি। কেননা অনেক আল্লাহর ওলী রয়েছে যারা তাওবা করার পর আল্লাহর অলী হয়ে যায়। তাই এটি কিভাবে বলা যায় যে, খারাপ অভ্যাস মৃত্যু পর্যন্ত থাকবে। সে রকম বিশ্বাস না রাখা চায়। এখানে আত্মার ও কুপ্রবৃত্তির মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে। যেমন বলা হয়: موتوا قبل ان تموتوا তোমরা মৃত্যুর পূর্বে মর। প্রকৃত মু’মিনরা উভয় জাহানে জীবিত। আল্লাহর অলী হাফেয শীরাযী বলেন, ঐ ব্যক্তি কখনো মরে না যার অন্তর ইশক দ্বারা জীবিত। কেননা; আল্লাহর অলীরা মরে না তারা একস্থান থেকে অন্য স্থানে যায়; বরং একটি স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়া হয়।  
 ➥ সকীনাতুল আউলিয়া, ১০৭।

❏ মাসয়ালা: (২৭০)
রাসূলে (ﷺ) এর ছায়ার ব্যাপারে কি হুকুম?
রাসূল (ﷺ) এর ছায়া যমীনে পড়ে না। এ ব্যাপারে হযরত যাকওয়ান নওয়াদেরুল উসূলে এক বর্ণনায় বলেন যে, যদিও আলিমগণ এ কথার ব্যাপারে সমালোচনা করেন; কিন্তু বড় সুফীগণ একথা স্বীকার করেন যে, নবী (ﷺ) এর ছায়া যমীনে পড়ে না। নবী (ﷺ) এর ছায়া যমীনে না পড়ার কারণ হল, তার পবিত্র আত্মাও যেমন সরু তেমনি তার পবিত্র শরীরও সরু মত হয়ে  গেছে এবং শরীরের সরুতার কারণে তার কাপড়ও সরুর মত। আর নূরানী শরীরের ছায়া হয় না; কেননা ছায়া মোটা হলে হয়। হায়াতুল ইসলাম কিতাবে এসেছে নবী (ﷺ) এর ছায়া যমীনে পড়ে না।
 ➥ সকীনা।

❏ মাসয়ালা: (২৭১)
আল্লাহর অলীদের আত্মা শরীর থেকে পৃথক হওয়ার পর তার আত্মাকে কি দুনিয়ার স্বাদ বুঝার ও কাজের সুযোগ দেওয়া হয়? 
মৃত্যুর পরে আল্লাহর অলীদের একই ধরনের ক্ষমতা থাকে; বরং মৃত্যুর পরে তার দৃষ্টিশক্তি, ক্ষমতা আরো বেশী বেগবান হয়। কেননা জীবনে তো শারীরিক ও কাপড় ইত্যাদির বেষ্টনী থাকে। কিন্তু মৃত্যুর পরে পর্দা উঠে যায়। যেমন কোন তলোয়ার যখন তার কোষ থেকে বের হয়ে আসে তখন তা আরো তেজ দেখা যায়। আর যে তলোয়ার কোষের ভেতর থাকে তার চেয়ে। তেমনি আল্লাহর অলীদের আত্মা শরীর থেকে বের হয়ে আসার পর আরো শক্তিশালী হয় এবং সে আরো বেশী কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। তাই আল্লাহর অলীদের মৃত্যুর পরে উন্নতি হয়।  
➥ সাকীনাতুল আউলিয়া: ১২৪
 
Top