কিতাবঃ ফতাওয়ায়ে রাবিয়া [হিদায়াত ও কুফরিয়্যাত] (২য় ও ৩য় খন্ড)
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
فتاوي رابعة
هدايت وكفريت
লেখক:
আব্দে রাসূল মুফ্তী নাজিরুল আমিন রেজভী হানাফী ক্বাদেরী
খলিফায়ে দরগাহে আ‘লা হযরত, বেরেলী শরীফ, ভারত 
পীর সাহেব, রেজভীয়া দরগাহ্ শরীফ, নেত্রকোণা
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রেজভীয়া তা‘লিমুস্ সুন্নাহ্ বোর্ড ফাউন্ডেশন
আন্তর্জাতিক রেজভীয়া উলামা পরিষদ
প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক, জামি‘আ-এ-‘ইল্মে মদীনা
রেজভীয়া দরগাহ্ শরীফ, সতরশ্রী, নেত্রকোণা
মোবাইল: ০১৫১১২২৩৩৫৫, ০১৭৪৭১৩৮১৮১ 
টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি


[লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত] 
প্রকাশ কাল :    
২৭শে রমজানুল মোবারক, ১৪২৮ হিজরী 
২৫শে আশ্বিন, ১৪১৪ বাংলা। 
১০ই অক্টোবর, ২০০৭ ইংরেজি।
কম্পিউটার কম্পোজ, বর্ণবিন্যাস এন্ড ডিজাইন:
মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম রেজভী

শুভেচ্ছা বিনিময়: ৫০.০০ টাকা মাত্র।

লেখকের ক’টি কথা

মহান রাব্বুল আলামীন হক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য বিধান করার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। বর্তমানে এ যুগ হল বেলায়াতের যুগ। এ যুগে ওয়ারিছাতুল আম্বিয়া তথা নবীগণের খাঁটি উত্তরসূরী হিসেবে আলিম ও পীর-মাশায়েখগণই হক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করবেন। আর এটাই আল্লাহ্ পাকের হুকুম যথা قُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدٌا অর্থাৎ তোমারা সত্য কথা বল।
আমি আল্লাহ্ পাকের অযোগ্য বান্দাহ্ হিসেবে শুধু আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীব (ﷺ)-এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আল্লাহ্’র হুকুম পালন করণার্থে কাওলুস্ সাদীদ বা সত্যবাণী প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি। 

❏ কারণ দয়াল রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থাৎ তোমরা সত্যের সাথে বাতিলকে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে হক্ব কথা গোপন করো না। (সূরা বাকারা: ৪২)  

অতি অনুতাপের সাথে বলছি যে, ইতিপূর্বে আম্বিয়ায়ে কিরাম থেকে শুরু করে সাহাবা কিরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, আউলিয়া কিরাম, হক্ব কথা প্রকাশ করতে গিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ বিভিন্নভাবে শহীদ হয়েছেন। 
বর্তমান যুগে সুন্নী জনতা ও সুন্নী আলিমগণের উপর, অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা ওহাবী ও ইয়াযিদী যুগের নির্মম অত্যাচার, হত্যা ও নির্যাতনের চেয়েও কোন অংশে কম নয়। শীতল পরিকল্পনা ও সূক্ষ্মতার আলোকে পরোক্ষ অত্যাচার বলেই সর্ব-সাধারণের চোখে ধরা পড়ছে না। সে দিন আর বেশী দূরে নয়, যে দিন ইয়াযিদ বাহিনীর ন্যায় নামধারী মুসলমান নজদী-ওহাবী ও মওদুদীর বংশধরদের দ্বারা সাধারণ সুন্নী মুসলমান ও সুন্নী আলিমগণের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্মম হত্যা কান্ডের ঝড় উঠবে আর মিথ্যা মামলায় সর্বহারা হবে। সে জন্য ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর সত্য পথ ও মত হতে সরে যাওয়া এবং হক্ব কথা লিখা ও বলা বন্ধ করে দেয়া ঈমানদারের কর্ম নয়।
اَلْاِنْسَانُ مُرَكَّبٌ مِّنَ الْخَطَاءِ وَالنِّسْيَانِ 
এ চিরন্তন বাণীর মর্মেই বলছি যে, মানুষেরই ভুল হয়। যদি কোন স্ব-হৃদয় ব্যক্তির নজরে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি ভেসে উঠে, দয়া করে আমাকে উপযুক্ত দলিলসহকারে জানালে-পরবর্তী সংস্করণে সন্তুষ্ট চিত্তে সংশোধন করে নিব ইনশাআল্লাহ্।
কাজেই দয়াল মাওলার নিকট ফরিয়াদ, আমাদের সকলকে সর্বপ্রকার ঈমানী পরীক্ষায়, ঈমানের উপর বহাল রেখে, ঈমানের সাথে বিদায় হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূচীপত্র — বিষয় — পৃষ্ঠা

১) যে কারণে
২) সুন্নী পরিচিতি 
৩) ছু্ন্নী আক্বিদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস
৪) বাতিল পরিচিতি
৫) দলীলাদির ভিত্তিতে বাতিলদের কর্মসূচী
৬) পাক ভারতে ওহাবী ফেৎনা
৭) ওহাবী ফেৎনার ভারতীয় এন.জি.ও দেওবন্দ মাদ্রাসা 
৮) ইসমাঈল দেহলভীর খাস অনুসারী ও দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধান নেতা
৯) রশিদ আহমদ গাংগুহীর ফাতওয়া 
১০) দেওবন্দীরাও ওহাবী 
১১) সোনার বাংলায় দেওবন্দী ফেৎনা 
১২) বাতিলদের বিভিন্ন দল ও তাদের আক্বীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস 
১৩) ঈমান রক্ষায় কুফুরীর পরিচিতি
১৪) তা‘লিমুস্ সুন্নাহ্ পরিচিতি ও মতাদর্শ
১৫) মানুষ আর বিবেক!
১৬) বাহাছনীতি
১৭) গ্রন্থপঞ্জি



যে কারণে

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ
الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰي نَبِيِّ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ ـ اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ـ بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ـ ﴿وَأَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۥ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِۦ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾ـ صَدَقَ اللّٰهُ الْعَظِيْمُ وَصَدَقَ رَسُوْلُهُ النَّبِيُّ الْكَرِيْمُ 
মু’মিন কেবলমাত্র নিজেই সৎভাবে চলে না, ভাল মানুষ হয় না অর্থাৎ ধর্মীয় সভ্যতা ও আচার অনুষ্ঠানগুলো নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে না, বরং সমাজের অন্যদেরকে ও সৎপথে আনতে চায়। সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান, মু’মিন জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। 

❏ এ মর্মে মহান রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন-
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
,‘তোমরা হলে উত্তম জাতি, গোটা মানবতার জন্য তোমাদের আগমন, (তাই) সৎকাজের আদেশ দাও, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহ্’র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর।’ (সূরা আলে ইমরান: ১১০) 

মু’মিন জীবনের যাবতীয় প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু হল সকল ভ্রান্তি হতে নিজেকে আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীবের পথে সোপর্দ করে দেয়া এবং সমাজে কল্যাণের প্রচলন ও মন্দের দূরীকরণ করা । 
আজকের এ সময়ে হক পন্থির ছদ্মবেশে বা সুন্নী নাম ধারণ করে বিভিন্ন অপকৌশলে ধর্মের দোহাই দিয়ে নতুন নতুন সাজানো মিথ্যা বক্তব্যকে হাদীসের নাম দিয়ে সরল, ভদ্র, পরহেজগার ও মা‘ছুম ফেরেশ্তার অভিনয় করে নবী-যুগের মুসলমানী পোষাকধারী, আমলকারী, মুখে-মুখে কালিমা পাঠকারী মুনাফিকদের ন্যায় বর্তমান যুগে ইয়াযিদী, নজদী, ওহাবী, মওদুদী ও ইলিয়াসী মুসলমান বানানোর লক্ষ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে বাতিল-পন্থীরা। আসলে কি এরাই হকপন্থী বা খাঁটি আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত, না অন্যরা? এ বিষয়টি কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানা একান্ত প্রয়োজন।
অপরদিকে আমরা অজানা ও অজ্ঞতা বশতঃ এমন কিছু কথা বলে ফেলি যা সম্পূর্ন কুফুরীমূলক এবং এ কুফুরী কথার দ্বারা আমাদের ঈমান-আক্বীদার উপর কুঠারাঘাত আসে, ফলে আমরা কাফিরে পরিণত হই। অথচ আমরা জানি না এ ধরণের কথা ঈমান ও আক্বিদার জন্যে বিষাক্ত সর্প। তাই কুফুরীমূলক বাক্যগুলো আমাদের জানা একান্ত আবশ্যক। ঈমান আনা যত সহজ সে ঈমান বজায় রাখা বড়ই কঠিন। যদি ঘটনাক্রমে কারো থেকে কুফুরীমূলক বাক্য বা কর্ম প্রকাশ পায়, তবে ঈমান বরবাদ হয়ে যাবে এবং জীবনের সমস্ত নেক কর্মগুলোও অসাড় ও অহেতুক হয়ে যাবে এবং আপন বিবিও ‘তালাকে বাইন’ হয়ে যাবে। তাই হক, বাতিল ও কুফুর এ তিনটি বিষয়ের উপর আমাদের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করা ঈমানী দায়িত্ব।
তাই ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে হক্ব, বাতিল ও কুফুর এ তিন বিষয় সম্পর্কীয় লেখকের দু’কলম লেখনী । 
  

সুন্নী পরিচিতি


❏ দয়াল রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
﴿وَأَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۥ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِۦ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
অর্থাৎ নিশ্চয়ই এটা আমার সোজা রাস্তা, সুতরাং তোমরা এ রাস্তার অনুসরণ কর বা চল, এতদভিন্ন অন্যান্য রাস্তায় যেয়ো না। কেননা (অন্যান্য রাস্তা) তোমাদেরকে আল্লাহ্’র রাস্তা হতে সরিয়ে দিবে। এটা তোমাদের প্রতি (আল্লাহ্’র পথে বহাল থাকার) ওসিয়ত, যাতে তোমরা পরহেযগার হতে পার। (সূরা আন‘আম: ১৫৩) 

আলোচ্য আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহ্ ‘এটা আমার সোজা রাস্তা, তোমরা এ সোজা পথে চল’ বলে তাঁর হাবীব মুহাম্মাদ মোস্তফা (ﷺ)-এর পথ ও মতে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা মূলতঃ হুযুর পাকের রাস্তাই আল্লাহ্ পাকের রাস্তা। সে সাথে বাতিল পথ ও মত থেকে বিরত থাকার ওসিয়ত করতঃ বাতিলদের থেকে দূরে থাকার নিমিত্তে বাতিলদের সঙ্গ নেওয়ার কুফল বর্ণনা করেছেন।
উল্লেখ্য যে, সুবুল (السُّبُلَ) বহুবচন শব্দটি দ্বারা ইয়াহুদীয়াত, নাসরানীয়াত এবং মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্ট বাতিল দলসমূহকে বুঝানো হয়েছে। কারণ অদ্যাবধি মুসলমানদের মধ্যে বাতিল ফিরকাসমূহের পিছনে ইয়াহুদী-নাসারাদের কালো হাত রয়েছে। ইসলামের প্রথম দিকে যাদের দ্বারা দলাদলির সূচনা হয়েছিল, তাদের অন্যতম হল ‘ইবনে সাবা’। সে মূলতঃ ইহুদী ছিল। মুসলমানদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছিল, যার প্রমাণ ইতিহাস বহন করছে। সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালে এ যুগেও তাই দেখা যায়।

❏ উক্ত আয়াতে ক্বারীমার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরাতে আহমদীয়া’র ২৬৭ ও ২৬৮ পৃষ্টায় বর্ণিত আছে যে,
وَهٰكَذَا يُفْهَمُ مِنَ الْحَدِيْثِ الْمَشْهُوْرِ وَهُوَ قَوْلُهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَتَفْتَرِقُ اُمَّتِيْ عَلٰي ثَلَثَةٍ وَّسَبْعِيْنَ فِرْقَةً وَّاحِدَةٌ مِّنْهَا نَاجِيَةٌ وَّالْبَوَاقِيُّ هَالِكَةٌ ..... وَلٰكِنَّ بِالتَّحْقِيْقِ وَالصِّدْقِ مَنْ كَانَ عَلٰي طَرِيْقِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ ـ
অর্থাৎ-অনুরূপভাবে প্রসিদ্ধ হাদীহ শরীফের দ্বারা জানা যায় যে, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন যে, অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে তিয়াত্তরটি ফিরকা হবে, তন্মধ্যে একটি মাত্র ফিরকা নাজাতপ্রাপ্ত বা বেহেশ্তী এবং বাকী সাকুল্য ফিরকা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা দোযখী। 

......... কিন্তু তাহ্ক্বীক ভিত্তিক সিদ্ধান্ত এ যে, নাজাতপ্রাপ্ত পথই হল আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।

১.    অনুরূপ তাফসীরে রুহুল মা‘আনীতে বর্ণিত যে,
هِيَ اَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ
অর্থাৎ- বেহেশ্তী দল হল আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।
২.    তিরমিযী ও মিশকাত শরীফের হাদীসে বর্ণিত যে, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন,
وَإِنَّ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي ـ رواه الترمذي
অর্থাৎ নিশ্চয় বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত ছিল। আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, শুধু একটি দল ব্যতীত বাকী সকল দলই জাহান্নামী হবে। এতদশ্রবণে সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! (ﷺ) সে নাজাতপ্রাপ্ত দল কোনটি? আল্লাহর রাসূল উত্তর দিলেন, আমি এবং আমার সাহাবাগণ যে আক্বীদার উপর রয়েছি। (মিশকাত, তিরমিযী, আহমদ, আবু দাউদ) 
মিশকাত শরীফের শরাহ্ মিরকাতে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হুযুর পাক ও সাহাবা কিরামগণের আক্বীদার উপর যে দলটি প্রতিষ্ঠিত থাকবে তাঁদের সম্পর্কে বর্ণিত যে, اَيْ تِلْكَ الْمِلَّةَ الَّتِي اَهْلُهَا النَّاجِيَةُ অর্থাৎ- ঐ দলটি হল যারা (জাহান্নামের আগুন থেকে) নাজাতপ্রাপ্ত।

❏ অনুরূপ মিশকাতুল মাছাবীহ শরীফের শরাহ্ মিরাতুল মানাজীহ-এর মধ্যে উপরোক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় রয়েছে যে,
میں اور میرے صحابہ ایمان کی کسوٹی پر ہیں جس کا ایمان ان کا ساہو وہ مؤمن ما سواۓ بے دین
অর্থাৎ- আমি এবং আমার সাহাবাগণের আক্বীদা বা ঈমানের উপর যাদের ঈমান বা আক্বীদা হবে তাঁরাই ঈমানদার, এতদভিন্ন বাকী সব বেদ্বীন।

❏ আক্বীদা শাস্ত্রের অন্যতম কিতাব শরহে আক্বাইদুন-নাসাফী কিতাবের ৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত যে,
مَا وَرَدَ بِهِ السُّنَّةُ وَمَضَي عَلَيْهِ الْجَمَاعَةُ فَسَمُّوْا اَهْلَ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ
অর্থাৎ- যা সুন্নাত দ্বারা ছাবিত এবং যার উপর সাহাবায়ে কিরাম প্রতিষ্ঠিত তারই নাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।
উক্ত ইবারতে প্রমাণিত হল যে, ঈমানদারের জামা‘আতের দ্বারা, আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতকে বুঝানো হয়েছে। কারণ মুহাক্কিকগণের তাহ্কীক মর্মে প্রমাণিত হয় যে, নবী করীম (ﷺ) এবং ঈমানদার সাহাবাগণের ঈমান বা আক্বীদার উপর যারা থাকবে তারাই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভূক্ত।

❏ হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে আহমদ ও আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত যে,
ثِنْتَانِ وَسَبْعُوْنَ فِي النَّارِ وَوَاحِدةٌ فِي الْجَنَّةِ وَهِيَ الْجَمَاعَةُ
অর্থাৎ- ৭২টি দল জাহান্নামী এবং ১টি দল হবে জান্নাতী। আর এ একটি দলই জামা‘আত তথা আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।

❏ মিশকাত শরীফের শরাহ মিরকাত নামক কিতাবে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,
فَلَا شَكَّ وَلَا رَيْبَ اَنَّهُمْ هُمْ اَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ
অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতই হল বেহেশ্তী জামা‘আত।

❏ ‘আনোয়ারুল হাদীস’ নামক কিতাবে হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী বুখারী রাহমতুল্লাহি আলাইহি ইলমে কালামের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘মাওয়াকিফ’ কিতাবের বরাত দিয়ে বলেন যে- “বেহেশ্তী বা নাজাতপ্রাপ্ত দল হল আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।”

যদি আপত্তি করা হয় যে, কিভাবে বুঝা যাবে যে, নাজাতপ্রাপ্ত বা বেহেশ্তী দলই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত এবং এটাই সোজা রাস্তা ও আল্লাহ্ পাক পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা এবং বাকী সব দোযখীদের রাস্তা? অথচ (এমতাবস্থায়) প্রত্যেক দলই দাবী করে যে, তার রাস্তা সঠিক এবং তার মাযহাব হক্ব বা সত্য।
এর জওয়াব হল, আমাদের উপরোক্ত দাবী এরকম নয় যে, শুধু মাত্র দাবী করা দ্বারাই হয়ে যাবে বরং এর জন্য বিশুদ্ধ প্রমাণাদীও মওজুদ রয়েছে। আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতই একমাত্র সত্য ও সঠিক পথ ও মত। এর বাস্তব প্রমাণ এ যে, এ ইসলাম ধর্ম স্বয়ং নবী করীম (ﷺ) হতে পর্যায়ক্রমে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। ইসলামের আক্বীদাসমূহ শুধু জ্ঞান দ্বারা অনুমান করে জানা বা বুঝা সম্ভব নয় বরং বিশুদ্ধ ইতিহাস শাস্ত্রে বুঝা যায় এবং সাহাবা কিরামগণের বাণী থেকেও জানা যায় এবং নবী করীম (ﷺ)-এর পবিত্র বাণীসমূহের পর্যবেক্ষণ দ্বারা পরিস্কার ও বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানা যায় যে, ছালফে-ছালেহীন অর্থাৎ সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবেঈন রিদওয়ানুল্লাহি তা‘আলা আলাইহিম আজমাঈন এবং তাঁদের পরে সকল বুযুর্গানে দ্বীন এ আক্বীদা এবং এ ত্বরীকার উপর অর্থাৎ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বিভিন্ন পথ মত ও বিদ‘আত এবং ব্যক্তি বা সাম্প্রদায়িক স্বার্থে মনগড়া মতবাদসহ প্রবৃত্তির চর্চা প্রথম যুগের পরে সৃষ্টি হয়েছে।
সাহাবায়ে কিরাম এবং ছালফে মুতাকাদ্দেমীন তথা প্রথম যুগের তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন ও মুজতাহিদগণের কেহই পরবর্তী এ সমস্ত বাতিল পথ ও মত এর মধ্যে ছিলেন না। বরং তারা এ সমস্ত নতুন পথ ও মতের বিরুদ্ধে ছিলেন। এমনকি পরবর্তীতে যাদের মধ্যে নতুন পথ-মতের আবিস্কার হল তাদের থেকে তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন ও মুজতাহিদীনে কিরাম সর্ব-প্রকার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে তাদের নতুন পথ ও মতের তথা বাতিল আক্বীদাসমূহ খন্ডন করেন।
ছিহাহ সিত্তাহ তথা বিশুদ্ধ ছয়টি হাদীস শাস্ত্রসহ অন্যান্য সকল বিশুদ্ধ হাদীস শাস্ত্রসমূহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাবাদীসহ যে সমস্ত কিতাবাদী ইসলাম ও ইসলামের হুকুম-আহকামের ভিত্তি হিসেবে পরিচিত, ঐ সমস্ত হাদীস শাস্ত্রসমূহের মুহাদ্দিসগণ এবং হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী প্রত্যেক মাযহাবের ফুকাহায়ে কিরাম ও উলামায়ে কিরাম এছাড়াও অন্যান্য উলামায়ে কিরাম যাঁরা উপরোক্ত ফুকাহায়ে কিরামের তবকায় ছিলেন তাঁরা সকলেই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
আশাঈরা ও মাতুরিদীয়া যাঁরা উছুলে কালাম اصول الكلام তথা কালাম শাস্ত্রের আইম্মা বা জ্ঞানী-গুণীগণ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন এবং সুন্নী জামা‘আতের গুরুত্ব ও মহত্ব বর্ণনা করেছেন এবং নকলী ও আকলী দলীলসমূহের দ্বারাও সুন্নী জামা‘আতের বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।
উপরন্তু যে সমস্ত আক্বীদার উপর হুযুর পাকের সুন্নাত ও ছালফে ছালেহীনের ইজমা রয়েছে ঐ সমস্ত আক্বীদাসমূহেরও পরিস্কার স্বীকৃতি প্রদানসহ গ্রহণ করে নিয়েছেন বলে আশাঈরা ও মাতুরিদীয়াগণকে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বলা হয়। যদিও এ নাম নতুন কিন্তু তাঁদের মাযহাব ও আক্বীদাসমূহ পুরাতন। তাঁদের পথ ও মতের ভিত্তি ছিল হুযুর (ﷺ)-এর অনুসরণ এবং পূর্ববর্তী ছালফে ছালেহীনের বাণী ও কর্মের অনুসরণ।
মাশায়েখে কিরামের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে জানা যায় যে, ছুফীগণের মধ্যে পূর্ববর্তী মুহাক্ক্বীক মাশায়েখ এবং বর্তমান যুগের বিচক্ষণ মাশায়েখ যাঁরা ত্বরীকত জগতের উস্তাদ, আবেদ-জাহেদ রিয়াযতকারী, পরহেযগার, ফানাফিল্লাহ, মাওলার প্রতি ধ্যানমগ্ন এবং আপন নফসের তাবেদারী হতে মুক্ত তারা সকলেই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী ছিলেন।
সূফীয়ায়ে কিরামের অতি নির্ভরযোগ্য কিতাব হল তা‘আর্রুফ। এ তা‘আর্রুফ সম্পর্কে সায়্যিদুনা শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রাহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, “তা‘আর্রুফ নামক কিতাব যদি আমরা না পেতাম, তাহলে তাসাওউফ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান লাভ সম্ভব হত না।” এ কিতাবের মধ্যে সূফিয়ায়ে কিরাম যে সমস্ত আক্বীদার উপর ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন তা সম্পূর্ণই হুবহু আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা।
সবোর্পরি আমাদের উপরোক্ত বর্ণনার সত্যতা এ যে, হাদীস, তাফসীর, কালাম, ফিকহ, তাসাওউফ, সিয়ার এবং বিশুদ্ধ ইতিহাসসমূহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাবাদী যা উদয় অস্তের সমগ্র জাহানে প্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত কিতাব। ঐ কিতাবসমূহকে একত্রিত করে আন্তরিকভাবে দলিলসমূহ লক্ষ্য করুন এবং বাতিল ফিরকার পুস্তকসমূহকেও একত্রিত করে উভয় পক্ষের বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ্য করলেই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ও বাতিল ফিরকার প্রকৃত হাক্বীকত প্রকাশ হয়ে যাবে।

❏ হাদীস, তাফসীর, ও ফিকহ্ জগতের প্রসিদ্ধ বিশেষজ্ঞ আল্লামা সৈয়দ আহমাদ ত্বাহত্বাভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
فَعَلَيْكُمْ يَا مَعْشَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِاِتِّبَاعٍ الْفِرْقَةِ النَّاجِيَةِ الْمُسَمَّاةِ بِاَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ فَاِنَّ نُصْرَةَ اللّٰهِ فِي مُوَافَقَتِهِمْ وَخُذْلَانَهُ وَسَخَطَهُ وَمَقْتَهُ فِي مُخَالَفَتِهِمْ وَهَذِهِ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ قَدِ اجْتَمَعَتِ الْيَوْمَ فِي الْمَذَاهِبِ الْاَرْبَعَةِ هُمُ الْحَنَفِيُّوْنَ وَالْمَالِكِيُّوْنَ وَالشَّافِعِيُّوْنَ وَالْحَنْبَلِيُّوْنَ وَمَنْ كَانَ خَارِجًا مِنْ هَذِهِ الْمَذَاهِبِ الْاَرْبِعَةِ ذَالِكَ الزَّمَانِ فَهُوَ مِنْ اَهْلِ الْبِدْعَةِ وَالنَّارِ ـ
অথার্ৎ- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য মুক্তিপ্রাপ্ত দল হল, যাঁদেরকে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বলা হয়। তাঁদের অনুসরণ করা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহ্ পাকের সাহায্য তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার মধ্যেই রয়েছে আর তাঁদের বিরোধিতা করার মধ্যে আল্লাহ্ তা‘আলার গোস্বা, অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ নিহিত রয়েছে। উক্ত মুক্তিপ্রাপ্ত দল বর্তমানে ৪ (চার) মাযহাবের মধ্যেই সীমিত। যাঁরা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বালী নামে পরিচিত। আর যে ব্যক্তি উক্ত ৪ (চার) মাযহাবের অর্থাৎ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বাহিরে থেকে যাবে সে বিদ্আতীদের অন্তর্ভূক্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং জাহান্নামী হবে। (ত্বাহত্বাভী আলাদ্ দুররিল্ মুখতার, ৪র্থ খন্ড, ১৫০ পৃষ্ঠা)

❏ সারকথা হল, মিশকাত শরীফের ৩০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত নূরে খোদা মুহাম্মদ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
اِتَّبِعُوا السَّوَادَ الْأَعْظَمَ فَإِنَّهُ مَنْ شَذَّ شُذَّ فِي النَّارِ ـ رواه ابن ماجه
অর্থাৎ- তোমরা বড় দলের অনুসরণ কর। যে বড় দল থেকে পৃথক থাকবে সে জাহান্নামী।

❏ এ মর্মে প্রসিদ্ধ কিতাব আশি‘আতুল লুম‘আত, বাবুল ই‘তিছাম, ১ম খন্ড, ১৪০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত, ইসলাম ধর্মের মধ্যে বড় জামা‘আত, আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।
উল্লেখ্য যে, বড় জামা‘আত সমস্ত সুন্নী মুসলমানদের মধ্য থেকে হতে হবে। কোন নির্দিষ্ট সময়ের বড় জামা‘আত অথবা কোন নির্দিষ্ট স্থানের মতামত দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। 

যদি কোন মহল্লায় বা গ্রামে একজন সুন্নী মুসলমান থাকে এবং সে এলাকায় অন্যান্য সকল লোকজন বিদ‘আতী বা বদ-মাযহাবী হয়, তাহলে ঐ একজন সুন্নী মুসলমানই সাওয়াদে আ‘যম বা বড় জামা‘আতের অন্তর্ভূক্ত হিসেবে গণ্য হবে। কারণ সে একজন ব্যক্তিই সাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলমানদের যে বড় সুন্নী জামা‘আত চলে আসছে, ঐ সুন্নী জামা‘আতের সঙ্গেই আছেন।

❏ সবশেষে নূরে খোদা মুহাম্মাদ মুস্তফা (ﷺ) ও আলী কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীমের জবান মুবারক থেকে মহান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের স্বীকৃতি ও ফযিলত শ্রবণ করুন:
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهُ قَالَ مَنْ كَانَ عَلَي السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ اِسْتَجَابَ اللّٰهُ دُعَاءَهُ وَكَتَبَ لَهُ بِكُلِّ خُطُوَةٍ يَخْطُوهَا عَشَرَ حَسَنَاتٍ وَرَفَعَ لَهُ عَشَرَ دَرَجَاتٍ ـ
অর্থাৎ- হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হাবীবে খোদা মুহাম্মাদ মোস্তফা (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর দু‘আ কবুল করবেন এবং তাঁর প্রত্যেক কদমের জন্য দশটি পূণ্য লিখবেন ও দশটি পদমর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। (বাহরুর রায়িক, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮২)

❏ হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত,
عَنْ عَلِيٍّ بْنِ اَبِيْ طَالِبٍ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰي عَنْهُ اَنَّهُ قَالَ الْمُؤْمِنُ اِذَا اَوْجَبَ السُّنَّةَ وَالْجَمَاعَةَ اسْتَجَابَ اللّٰهُ دُعَاءَهُ وَقَضَي حَوَائِجَهُ غَفَرَ لَهُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا وَكَتَبَ لَهُ بَرَأَةً مِنَ النَّارِ وَبَرَأَةً مِنَ النِّفَاقِ ـ
অর্থাৎ- তিনি বলেন, ঈমানদার যখন আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসরণকে নিজের উপর ওয়াজিব করে নেয়, তখন আল্লাহ্ তাঁর দু‘আ কবুল করেন। তাঁর চাহিদাগুলো পূর্ণ করেন। তার সকল গুণাহ্ মাফ করেন এবং তাঁকে জাহান্নাম ও নিফাক (মুনাফেকী) থেকে মুক্তি দান করেন। (বাহরুর রায়েক, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮২)

সুতরাং আদিল্লায়ে আরবাআ তথা শরীয়তের বিশুদ্ধ দলিলাদীর দ্বারা প্রমাণ হল যে, আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতই একমাত্র বেহেশ্তী জামাআত এবং নাজাতের রাস্তা ও মুক্তির তরীক্বা বা পথ।

সুন্নী আক্বীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস


১.    আল্লাহ্ ও আল্লাহর হাবীবকে সত্য বলে জানা, মানা ও ভালবাসা।
২.    কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াছ সত্য বলে জানা ও মানা।
৩.    কালিমা নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত প্রভৃতি যথা নিয়মে প্রতিপালন করা।
৪.    হুযুর পাকের সন্তুষ্টিই আল্লাহ্ পাকের সন্তুষ্টি হিসেবে জানা ও মানা।
৫.    রাসূলে পাকের সন্তুষ্টিই আল্লাহ্ পাকের সন্তুষ্টি এবং হযরত রাসূলে পাক (ﷺ)'র অসন্তুষ্টি আল্লাহ্ পাকের অসন্তুষ্টি।
৬.    সাহাবা কিরামকে মানা এবং তাঁদের দোষ বর্ণনা না করা।
৭.    আহলে বাইত-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
৮.    চার মাযহাবকে এবং মাযহাবের মতাবলম্বীগণকে সত্য বলে জানা, মানা ও ভালবাসা।
৯.    চার ত্বরীক্বা এবং তরীক্বার অনুসারীগণকে সত্য বলে জানা, মানা ও ভালবাসা।
১০.    রাসূলে পাকের আনুগত্য আল্লাহ্ পাকের আনুগত্য। রাসূলে পাকের সঙ্গে বে-আদবী বা গোস্তাখী করা আল্লাহ্ পাকের সঙ্গে বে-আদবী ও গোস্তাখী করার নামান্তর।
১১.    খোদা প্রদত্ত শক্তিতে হযরত রাসূলে পাক যখন যা ইচ্ছা তা করতে পারেন এবং যেখানে যাওয়ার ইচ্ছা করেন, সেখানেই তাশরীফ আনয়ন করতে পারেন। 
১২.    হাক্বীক্বতে মুহাম্মদী বা হুযুর পাকের হাক্বীক্বত মানব নয়, তবে তিনি মানবরূপে হিদায়াতের জন্য এসেছেন। তাঁর প্রকৃত সত্তা আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
১৩.    তিনি সর্বকালের নবী এবং শেষ নবী।
১৪.    তিনি আল্লাহর নূর ও নূরে মুজাচ্ছাম।
১৫.    খোদায়ী শক্তিতে হুযুর (ﷺ) সর্বত্র হাযির ও  নাজির।
১৬.    তিনি (ﷺ) গায়বের খবরদাতা।
১৭.    হুযুর (ﷺ) হায়াতুন্নবী বা স্বশরীরে জিন্দা নবী।
১৮.    তিনি রাহমতুল্লিল আলামীন, শাফিউল মুযনিবীন। তাই তাঁর সম্মানার্থে মিলাদ পড়া এবং দঁাড়িয়ে ক্বিয়াম করা।
১৯.    ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদ্যাপন করা।
২০.    হুযুর পাক (ﷺ)-কে ‘ইয়া’ বর্ণ যোগে ডাকা। যেমন- ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ইত্যাদি বলা।
২১.    রাসূলে পাক (ﷺ)-এর শত্রুদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করা। যদিও তারা আপন পিতা-মাতা, পুত্র, ভাই, ভগ্নি ও বংশধর হোক না কেন।
২২.    মিলাদ শরীফের মাহ্ফিল উদযাপন করা এবং ক্বিয়াম করা ও সালাম পাঠ করা।
২৩.    হুযুর পাকের পবিত্র নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করতঃ তা চোখে লাগানো।
২৪.    আবদুন নবী, আবদুল মুস্তফা, আবদুর রাসূল ও আবদুল আলী প্রভৃতি নাম রাখা জায়িয।
২৫.    আল্লাহ্ পাকের নাজিলকৃত কিতাবসমূহ, ফেরেশ্তাগণ, বেহেশ্ত, দোযখ ও তক্বদীরের উপর ঈমান স্থাপন করা।
২৬.    ইমাম মাহ্দী আলাইহিস সালাম যে আবির্ভূত হবেন, তা সত্য জানা।
২৭.    কিয়ামত সত্য, হাশর ময়দানে আল্লাহ্ পাকের দরবারে আমলনামার হিসাব হবে। পূণ্যবান ও পাপীদেরকে স্ব-স্ব আমলের বদলা প্রদান করার প্রতি বিশ্বাস করা।
২৮.    সাহাবা কিরামের প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভালবাসা রাখা।
২৯.    শবে মি‘রাজ, শবে বরাত, শবে ক্বদর ও আশুরাসহ প্রভৃতি অনুষ্ঠান পালন করা।
৩০.    গিয়ারভী শরীফ, ফাতিহা, চল্লিশা এবং শরীয়ত সম্মত উপায়ে উরস শরীফ করা এবং ইছালে সওয়াব করা।
৩১.    আল্লাহর ওলীগণের হাত, পা চুমু দেওয়া এবং মাযার যিয়ারত করা, গিলাফ দেওয়া, গোলাফ ছিটানোসহ উপরোক্ত প্রভৃতি অনুষ্ঠানাদী খালেছভাবে পালন করা সুন্নী জামা‘আতের নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভূক্ত।
৩২.    ন্যায় পরায়ন  মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা।
৩৩.    স্বীয় ইমামের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ না করা।
৩৪.    কোন মুসলমানকে কাফির বলে আখ্যায়িত না করা।
৩৫.    সফরে কিংবা বাড়ীতে (শরীয়ত বিধিতে) মোজার উপর মাসেহ করাকে বৈধ মনে করা এবং
৩৬.    নেককার-বদকার নির্বিশেষে প্রত্যেক ঈমানদার লোকের পিছনে নামায পড়াকে বৈধ মনে করা।
উপরোক্ত সুন্নী আক্বীদা সমূহ যাদের মধ্যে কথায় ও কর্মে প্রকাশ পাবে তারাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভূক্ত এবং উল্লেখিত আক্বীদাসমূহের প্রতি যাদের আপত্তি থাকবে, তারা বাতিল বা জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত।
হে আল্লাহ্ আমাদেরকে সত্যের উপর বহাল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বাতিল পরিচিতি

এ যুগের সকল লেবাসধারী মুসলমানগণ বেহেশ্তী জামা‘আত বা সুন্নী জামা‘আতের দাবীদার, কিন্তু মিশকাতুল মাছাবীহ্ শরীফে নবী করিম (ﷺ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মর্ম অনুযায়ী প্রমাণ হয় যে, নবীজির উম্মত মুসলমানের মধ্যে ৭৩ দলে বিভক্ত হবে তন্মধ্যে ৭২ দল লেবাসধারী বাতিল মুসলমান জাহান্নামী হবে। যাদের মধ্যে শরীয়ত ও ত্বরীকত্বের কর্ম থাকবে কিন্তু কর্মের রূহ থাকবে না। এ যুগে ঐ ৭২ দল মুসলমানরাও নিজেদেরকে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত তথা সুন্নী জামা‘আতের অন্তর্ভূক্ত বলে দাবী করছে। এমতাবস্থায় হক্ব দল ও বাতিল দলের মধ্যে সর্ব-সাধারণের জন্য পার্থক্য নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সুন্নী জামা‘আতের পরিচিতির পাশাপাশি বাতিল জামা‘আতের পরিচিতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো উপস্থাপন করলাম।
এ মর্মে নবীয়ে মাওলা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেন যে,
وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ خَطَّ لَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ خَطًّا ثُمَّ قَالَ  هٰذَا سَبِيْلُ اللّٰهِ ثُمَّ خَطَّ خُطُوْطًا عَنْ يَّمِيْنِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ وَقَالَ هٰذِهِ سُبُلٌ عَلٰى كُلِّ سَبِيْلٍ مِّنْهَا شَيْطَانٌ يَّدْعُوْ إِلَيْهِ  ثُمَّ قَرَأَ ﴿ وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۥ ﴾
অর্থাৎ- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ফরমান যে, হাবীবে খোদা (ﷺ) আমাদেরকে হক্ব-বাতিল বুঝানোর জন্য জমিনের মধ্যে একটা সোজা রেখা আঁকলেন। অতঃপর নবীজি ফরমান এটা আল্লাহর রাস্তা। তারপর সে সোজা রেখাটির ডানে এবং বামে অনেকগুলো রেখা আঁকলেন এবং ফরমালেন এগুলোও রাস্তা, প্রতিটি রাস্তার মধ্যে মানবরূপী শয়তান বসে নিজের দিকে দাওয়াত করছে। অতঃপর হুযুর (ﷺ) কুরআন মাজীদের আয়াতে ক্বারীমা তিলাওয়াত করে উক্ত রেখাসমূহ হতে সোজা রেখা সম্পর্কে বলেন- “এবং নিশ্চয়ই এটা আমার সোজা রাস্তা। সুতরাং তোমরা এ রাস্তায় চল এবং অন্যান্য রাস্তায় চলিও না।”
উক্ত হাদীছের মধ্যে বর্ণিত নকশাটি তাফসীরাতে আহমাদী শরীফের ৪৭২ পৃষ্ঠার অনুকরণে পূর্ণাঙ্গভাবে নিম্নে অঙ্কন করা হল:

▶ হক্ব তথা নূর নবীজি ও সাহাবা কিরামগণের সোজা রাস্তা হলঃ  ১টি
▶ বাতিল বা বক্র রাস্তা ডান দিকে প্রত্যেক রেখায় ৬টি করে ৬ রেখায়: ৩৬টি
▶ বাতিল বা বক্র রাস্তা বাম দিকে প্রত্যেক রেখায় ৬টি করে ৬ রেখায়: ৩৬টি
▶ সর্বমোট রাস্তা হল:(১ + ৩৬ + ৩৬) =৭৩টি

উল্লেখিত নকশায় মধ্যখানের সোজা রেখাটিই হল নূরে খোদা মুহাম্মাদ মোস্তফা (ﷺ) ও সাহাবাগণের রাস্তা। যারা এ সোজা পথের যাত্রী তাঁরাই আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হাদীসে শয়তানের রাস্তা বলে মূলতঃ জ্বীন জাতিকে বুঝানো হয়নি বরং শয়তান বলতে বাতিল আক্বীদা পোষণকারী দুশমনে রাসূলকেই বুঝানো হয়েছে। যাদের মধ্যে মুসলমানী লেবাসসহ শরীয়তের সকল অনুষ্ঠানাদী বিদ্যমান রয়েছে বটে। কিন্তু তারা বাতিল এবং তাদের বাতিল দলকে বড় করার জন্য, তাদের দলে দাওয়াত করছে।
অনুরূপ হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন,
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهِ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ لاَ يَقْبَلُ اللّٰه لِصَاحِبِ بِدْعَةٍ صَلاَةً وَّلاَ صَوْماً وَّلاَ صَدَقَةً وَّلاَ حَجّاً وَّلاَ عُمْرَةً وَّلاَ جِهَاداً وَّلاَ صَرْفاً وَّلاَ عَدْلًا يَّخْرُجُ مِنَ الْإِسْلاَمِ كَمَا تَخْرُجُ الشَّعْرَةُ مِنَ الْعَجِيْنِ
অর্থাৎ- হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন যে, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কোন বদ্-মাযহাব তথা বদ্-আক্বীদা সম্পন্ন ব্যক্তির রোযা, নামায, যাকাত, হজ্জ, উমরা, জিহাদ, ফরয ও নফল কোন কিছুই কবুল করেন না। বদ্-মাযহাবী ইসলাম ধর্ম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে আসে যেমনিভাবে আটার খামির থেকে চুল বেরিয়ে আসে। (ইবনে মাজাহ)
অনুরূপভাবে  সরকারে আকদাছ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  إِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّوْنَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُوْنَكُمْ إِنْ مَّرِضُوْا فَلَا تَعُوْدُوْهُمْ وَإِنْ مَّاتُوْا فَلا تَشْهَدُوْهُمْ وَإِنْ لَّقِيْتُمُوْهُمْ فَلَا تُسَلِّمُوْا عَلَيْهِمْ وَلَا تُجَالِسُوْهُمْ وَلَا تُشَارِبُوْهُمْ وَلَا تُوَاكِلُوْهُمْ وَلَا تُنَاكِحُوْهُمْ وَلَا تُصَلُّوْا عَلَيْهِمْ وَلَا تُصَلُّوْا مَعَهُمْ
অর্থাৎ- তোমরা বদ-মাযহাব তথা বদ-আক্বীদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকে দূরে রাখ, যাতে করে তারা তোমাদেরকে বিপথগামী করতে না পারে। তারা রুগ্ন হলে তাদের কাছে যেও না এবং তারা মৃত্যু বরণ করলে তাদের জানাযার নামাযে অংশ গ্রহণ করো না এবং তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম দিবে না, বসবে না, পানাহার করবে না, তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না, তাদের জানাযার নামাযে ইমামও হবে না এবং মুক্তাদীও হবে না। (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ অবলম্বনে)
তদ্রূপ রাসূলে আক্বদাস (ﷺ) ইরশাদ করেন,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِىْ آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُوْنَ كَذَّابُوْنَ يَأْتُوْنَكُمْ مِنَ الأَحَادِيْثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّوْنَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُوْنَكُمْ
অর্থাৎ- হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন যে, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন- আখেরী যামানায় মুসল্লী বেশে এমন একদল ধেঁাকাবাজ, প্রতারক ও মিথ্যাবাদীর দল বের হবে, যারা তোমাদের সামনে এমন কথা তুলে ধরবে যা কখনো তোমরা শুননি, তোমাদের পূর্বপুরুষ তথা বাপ-দাদাগণও শুনে নি। সুতরাং এ সমস্ত লোকদের থেকে তোমরা দূরে থাক এবং তাদেরকে দূরে রাখ। যেন তারা তোমাদেরকে বাতিল ফেরকায় নিতে না পারে এবং ফেতনা-ফাসাদে নিক্ষেপ করতে না পারে। (মুসলিম ও মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় আশ‘আতুল লুম‘আত, প্রথম খন্ড, ১৩৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত যে, এমন একটা জামা‘আত পয়দা হবে, যারা ধোকা ও চক্রান্তমূলক ষড়যন্ত্রের দ্বারা উলামা-মাশায়েখ ও নেককারগণের বেশে সংঘবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের দরদী হিসেবে চক্রান্ত মূলক মিষ্টি এবং নতুন কথার দ্বারা নিজেদের বুজুর্গী প্রকাশ করবে, যেন তারা তাদের মিষ্টি স্বরের দ্বারা স্বীয় মতবাদ প্রকাশ করতে পারে এবং নিরীহ মুসলমানদেরকে তাদের বাতিল আক্বীদা ও ধর্ম সম্পর্কে মনগড়া অপব্যাখ্যায় বা মতবাদে উৎসাহিত করতে পারে। মহান রাব্বুল আলামীন এ সমস্ত ফেৎনা থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন।


দলিলাদির ভিত্তিতে বাতিলদের কর্মসূচী


❏ তাফসীরে ছাবী নামক কিতাবের ৩য় খন্ডের ৩০৭ ও ৩০৮ পৃষ্ঠায় সূরা ফাতিরের ব্যাখ্যায় বর্ণিত যে,
هَذِهِ الْاَيَةُ نُزِلَتْ فِي الْخَوَارِجِ الَّذِينَ يُحَرِّفُوْنَ تَأْوِيْلَ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَيَسْتَحِلُّونَ بِذَالِكَ دِمَاءَ الْمُسْلِمِينَ وَاَمْوَالَهُمْ كَمَا هُوَ مُشَاهَدُ الْاَنَ فِي نَظَائِرِهِمْ وَهُمْ فِرْقَةٌ بِاَرْضِ الْحِجَازِ يُقَالُهُمُ الْوَهَّابِيَةُ يَحْسَبُونَ اَنَّهُمْ عَلَي شَىْءٍ اَلَا اِنَّهُمْ هُمُ الْكَاذِبُوْنَ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَاَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللّٰهِ اُولٰئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ اَلَا اِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
অর্থাৎ- আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় খারিজী ফিরকার আলোচনা করা  হয়েছে। যাদের কর্মধারা হল কুরআন ও সুন্নাহর বিকৃত করে মনগড়া ব্যাখ্যা করা। এ কারণেই তারা মুসলমানদের রক্তপাত করা ও ধন সম্পদ লুট করা হালাল মনে করে। যাদেরকে ওহাবী বলা হয়, তারা হল হিজায ভূখন্ডের একটি ফিরকা। তাদের (অপকর্মের) জলন্ত প্রমাণ আজও নিদর্শন হয়ে আছে। ওহাবীরা নিজেদেরকে হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে বলে মনে করে। প্রকৃতপক্ষে  (তাদের দাবী মিথ্যা ও) তারা মিথ্যাবাদী। তাদের উপর শয়তান ভর করে আল্লাহর স্মরণকে ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা হল শয়তানের দল। (হে ঈমানদারগণ) সাবধান! তোমরা শয়তানের (ওহাবীদের) দল হতে সতর্ক থাক। নিশ্চয় তারা পরপারে ক্ষতিগ্রস্ত।

❏ মক্কা মুআয্যমার মুফতী আল্লামা সায়্যিদ আহমদ দাহলান (رحمة الله) কর্তৃক সংকলিত ‘ফিৎনাতুল ওহাবীয়াহ’ নামক কিতাবের ৭৮ পৃষ্ঠার বর্ণনা,
وَمِمَّا كَانَ مِنْهُمْ اَنَّهُمْ يَمْنَعُونَ النَّاسَ مِنْ طَلَبِ الشَّفَاعَةِ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ اَنَّ اَحَادِيْثَ شَفَاعَةِ النَّبِيِّ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاُمَّتِهِ كَثِيْرُ مُتَوَاتِرَةٍ وَاَكْثَرُ شَفَاعَتِهِ لِاَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ اُمَّتِهِ وَكَانُوْا يَمْنَعُوْنَ مِنْ قِرَائَةِ دَلَائِلِ الْخَيْرَاتِ الْمُشْتَمِلَةِ عَلَي الصَّلَوةِ النَّبِيِّ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَي ذِكْرِهَا كَثِيْرٌ مِنْ اَوْصَافِهِ الْكَامِلَةِ وَيَقُولُونَ اِنَّ ذَالِكَ شِرْكٌ وَيَمْنَعُونَ مِنَ الصَّلَوةِ عَلَيْهِ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَي الْمَنَابِرِ بَعْدَ الْاَذَانِ حَتَّي اَنَّ رَجُلًا صَالِحًا كَانَ اَعْمَي وَكَانَ مُؤَذِّنًا وَصَلَّي عَلَي النَّبِيِّ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ الْاَذَانِ بَعْدَ اَنَّ كَانَ الْمَنْعُ مِنْهُمْ فَاَتُوْا بِهِ اِلَي ابْنِ عَبْدِ الْوَهَّابِ فَاَمَرَ بِهِ اَنْ يَّقْتُلَ فَقَتَلَ ـ
অর্থাৎ- ওহাবীদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহের মধ্যে এ আক্বীদাও রয়েছে যে, তারা হুযুর (ﷺ)ের শাফা‘আত কামনা করাকে নিষেধ করে। অথচ হুযুর পাকের শাফা‘আত সত্য এবং তিনি বড় বড় গুণাহ্গারদের শাফা‘আতকারী হিসেবে সহীহ হাদীস দ্বারা অসংখ্য দলিল বিদ্যমান রয়েছে। তাদের ভ্রান্ত মতবাদের আরেকটি হল যে, তারা হুযুর (ﷺ)ের শান ইজ্জত সম্বলিত দরূদ শরীফের সুবিখ্যাত ‘দালায়িলুল খায়রাত’ নামক কিতাবটি পড়তে বঁাধা দিত এবং পড়াকে শিরক বলে ফাতওয়া দিত। অনুরূপ ওহাবীরা আযানের পর হুযুর (ﷺ)ের উপর দরূদ পড়তে বারণ করত। ওহাবীদের নবী বিদ্বেষী আইন উপেক্ষা করে একজন পরহেযগার অন্ধ মুয়াযযিন আযানের পর মিনারায় দরূদ শরীফ পাঠ করার কারণে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর নির্দেশে মুআযযিন সাহেবকে কতল করে শহীদ করা হয়।

❏ জগৎ বিখ্যাত ‘ফাতাওয়ায়ে শামী’ নামক কিতাবের ৪র্থ খন্ডের বাবুল বুগাতের ২৬২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত যে,
كَمَا وَقَعَ فِي زَمَانِنَا فِي أَتْبَاعِ عَبْدِ الْوَهَّابِ الَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ نَجْدٍ وَتَغَلَّبُوا عَلَى الْحَرَمَيْنِ وَكَانُوا يَنْتَحِلُونَ مَذْهَبَ الْحَنَابِلَةِ لَكِنَّهُمْ اعْتَقَدُوا أَنَّهُمْ هُمْ الْمُسْلِمُونَ وَأَنَّ مَنْ خَالَفَ اعْتِقَادَهُمْ مُشْرِكُونَ وَاسْتَبَاحُوا بِذَلِكَ قَتْلَ أَهْلِ السُّنَّةِ وَقَتْلَ عُلَمَائِهِمْ حَتَّى كَسَرَ اللَّهُ تَعَالَى شَوْكَتَهُمْ وَخَرَّبَ بِلَادَهُمْ وَظَفِرَ بِهِمْ عَسَاكِرُ الْمُسْلِمِينَ عَامَ ثَلَاثٍ وَثَلَاثِينَ وَمِائَتَيْنِ وَأَلْفٍ
অর্থাৎ- যেমন আমাদের এ যুগে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর ভয়াবহ কর্মকান্ড। তারা নজদ থেকে বের হয়ে মক্কা মদীনার উপর ক্ষমতা বিস্তার করল। ওহাবীরা নিজেদেরকে হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী বলে দাবী করত। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তারাই একমাত্র মুসলমান আর বাকী সকলেই মুশরিক। এজন্যই তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীগণকে ও সুন্নী আলিমগণকে হত্যা করা ছাওয়াবের কাজ মনে করত। অবশেষে আল্লাহ্ তাদের মিথ্যা অহংকার চুর্ণ করে তাদের শহরগুলোকে নির্মূল করে দিলেন। তাদের মোকাবেলায় মুসলিম সৈণ্যদেরকে বিজয় দান করলেন। এ জঘন্যতম ঘটনাটি ১২৩৩ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল।

❏ ‘সাইফুল জাব্বার’ নামক প্রসিদ্ধ কিতাবে আল্লামা ফযলে রাসূল বদায়ূনী (رحمة الله) কর্তৃক বর্ণিত যে, ওহাবীরা মক্কা মুআজ্জমা ও মদিনা শরীফের সুন্নী নিরীহ লোকদেরকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। হারামাইন শরীফাইনে অবস্থানরত স্ত্রী-কন্যাদের ধর্ষণ করেছে। পুরুষ ও নারীদেরকে দাস-দাসীতে পরিণত করেছে। সৈয়দ বংশের ব্যক্তিবর্গগণকে হত্যা করেছে। মসজিদে নববীর সমস্ত ঝাড় লুণ্ঠন ও গালিচা উঠিয়ে নজদে নিয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইতের সকল মাযারসমূহকে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। এমনকি হুযুর পাকের বিশ্রামস্থল যে রওযা পাককে কেন্দ্র করে সকাল-সন্ধ্যায় প্রতিনিয়ত ফেরেশ্তাগণ সালাত ও সালাম পাঠ করতেন সে রওযা শরীফকেও ধ্বংস করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু যে ব্যক্তিটি ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্য নিয়ে রওযা পাকের কাছে গিয়েছিল, আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে নিয়োজিত একটি বিষাক্ত সাপের কামড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এভাবেই মহান রব্বুল আলামীন তাঁর হাবীবের আখেরী বিশ্রামস্থলকে বাতিলদের হাত থেকে রক্ষা করেন।

❏ “জা’আল হাক” নামক প্রসিদ্ধ কিতাবের লেখক আল্লামা শায়খ মুফ্তী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله) বলেন, “বাতিলদের নির্যাতন নিপীড়ন ছিল বর্ণনাতীত যন্ত্রণাদায়ক। যার বিবরণ দিতে গেলে হৃদয় কন্নায় ভরে উঠে। কুখ্যাত ইয়াযীদ হুযুর (ﷺ)-এঁর পরিবারবর্গের সঙ্গে শত্রুতা করেছে তাঁদের জীবদ্দশায়, কিন্তু তাঁদের ইনতিকালের ১৩০০ বছর পরেও ওহাবীদের হাতে সাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) লাঞ্চিত হচ্ছেন। ইবনে সাউদ হারামাইন শরীফাইনে যে বিভৎস কান্ড করেছে, তা এখনও প্রতিটি হাজীর চোখে ভেসে উঠে। আমি (মুফ্তী আহমদ ইয়ার খান নঈমী) স্বচক্ষে দেখেছি যে, পবিত্র মক্কা নগরীর কোথাও কোন সাহাবীর পবিত্র কবরের চিহ্ন মাত্রও নেই। এতে ওহাবীদের উদ্দেশ্য হল কেহ যেন ফাতিহা পাঠ করারও সুযোগ না পায়। যে জায়গায় নূরে খোদা মুহাম্মাদ (ﷺ) ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন, সে পবিত্র স্থানেও একটি তাবু খাটানো দেখেছি, যেখানে কুকুর ও গাধার অবাধ বিচরণ চলছে। পূর্বে এ জায়গায় একটি গম্বুজবিশিষ্ট ঘর ছিল, তাতে লোকজন যিয়ারত করত এবং নামায পড়ত। এটিই ছিল মা আমিনার ঘর। আর এ ঘরেই ঈমান ও ইসলামের নূর মুহাম্মাদ মোস্তফা (ﷺ) এর আগমন হয়েছিল। আজ সে পবিত্র স্থানের এমন অসম্মান ও অবমাননা চলছে যার অভিযোগ মহান আল্লাহর দরবারে রইল।”

পাক-ভারতে ওহাবী ফেৎনা

আরবের মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর বাতিল মতবাদকে ভারত উপমহাদেশে প্রচার করার জন্যে বিশাল সংগঠন গড়ে তুলেছিল মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী। সবশেষে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী প্রণীত ‘কিতাবুত তাওহীদ’ নামক গ্রন্থের উর্দূ ভাষায় খোলাসা অনুবাদ করতঃ ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামে প্রকাশ করে হিন্দুস্থানে ওহাবী আক্বীদা ব্যাপকভাবে প্রচারের আয়োজন করে। এ ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ প্রকাশ করার কারণে ইসমাঈল দেহলভী সীমান্তের সুন্নী মুসলমানদের হাতে নিহত হয়। তাই ওহাবীরা তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করে, শিখদের হাতে নিহত হয়েছে বলে অপপ্রচারণা চালায়। [প্রামাণ্য দ্রষ্টব্য আনোয়ারে আফতাবে ছাদাকাত।]

ওহাবী ফিতনার ভারতীয় এন.জি.ও দেওবন্দ মাদ্রাসা
ইসমাঈল দেহলভীর খাস অনুসারী ও দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধান নেতা

মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী নিহত হওয়ার পর তার ভারতীয় অনুসারীরা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাবের আক্বীদাসমূহ চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে ১৮৬৬ ইং সনে প্রতিষ্ঠা করে দেওবন্দ মাদ্রাসা।

মৌলভী ইসমাঈল দেহলভীর খাস অনুসারী ও দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধান নেতা মৌলভী রশিদ আহমদ গাংগুহী। যিনি ইসমাঈল দেহলভী কর্তৃক আনীত মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাবের বাতিল আক্বীদাসমূহ তাকভীয়াতুল ঈমান ও অনুরূপ বিভিন্ন পুস্তকাদীর মাধ্যমে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় প্রচারণাসহ বাস্তবায়ন ঘটান।

রশিদ আহমদ গাংগুহীর ফাতওয়া

মৌলভী রশিদ আহমদ গাংগুহী কর্তৃক ‘ফাতওয়ায়ে রশিদিয়া’ নামক স্ব-রচিত পুস্তকের ২৩৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত যে,  
محمد بن عبد الوہاب کے مقتدیوں کو وہابی کہتے ہیں ان کے عقائد عمده تھے اور مذهب ان كا حنبلى تھا ۔ البتہ ان کے مزاج میں شدت تھے مگر وہ اور ان کے مقتدی اچھے ہیں مگر ہاں جو حد سے بڑھ گیے ان میں فساد اگیا ہے اور عقائد سب کے متحد ہیں اعمال میں فرق حنفی شافعی مالکی حنبلی کا ہے۔
অর্থাৎ- রশিদ আহমদ গাংগুহী বলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের মতবাদে অনুসারীগণকে ওহাবী বলা হয়। তার মতবাদ খুবই উত্তম ছিল এবং তার মাযহাব ছিল হাম্বলী। তার স্বভাব ছিল কড়া এবং তিনি ও তার অনুসারীরা খুবই ভাল ছিল কিন্তু যারা সীমাতিক্রম করেছে তাদের মধ্যে কলহ এসেছে। আর ওহাবীদের সকলের আক্বীদা এক, মতবাদের মধ্যে মতবিরোধ নেই শুধু তাদের আমলের মধ্যে হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলীর মত পার্থক্য রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, দেওবন্দ মাদ্রাসার নেতা রশিদ আহমদ গাংগুহীর ফাতওয়া অনুযায়ী পরিষ্কার হল যে, দেওবন্দীরাও ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী।

দেওবন্দীরাও ওহাবী

ভারত উপ-মহাদেশে ওহাবী মতবাদ প্রচারের জন্যে  যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবং তাদের মতবাদ প্রচারের জন্য যে সমস্ত পুস্তিকাদি রচনা করেছে তার কিছু তালিকা নিম্নে বর্ণনা করা হল।
১.    তাহ্যীরুন্নাস: মৌং কাশেম নানুতভী, প্রতিষ্ঠাতা, দেওবন্দ মাদ্রাসা, ইউ.পি, ভারত।
২.    তাকবীয়াতুল ঈমান: মৌং ইসমাঈল দেহলভী।
৩.    বারাহীনে কাতিয়া: মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী।
৪.    হিফযুল ঈমান: মৌং আশরাফ আলী থানভী।
৫.    আল ইফাযাতুল ইয়াওমীয়া: মৌং আশরাফ আলী থানভী।
৬.    ফাতাওয়া-এ-রশীদিয়া: মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহী।
৭.    তাযকীরুল ইখওয়ান: মৌং ইসমাঈল দেহলভী।
৮.    ইযাহুল হক: মৌং ইসমাঈল দেহলভী।
৯.    রিসালা-এ-একরোযী: মৌং ইসমাঈল দেহলভী প্রভৃতি।
এতে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, দেওবন্দীরা ওহাবী মতালম্বী ও মতাদর্শী। ফলে দেওবন্দীরাও খাঁটি ওহাবী। 

সোনার বাংলায় দেওবন্দী ফেতনা

ইসমাঈল দেহলভী কর্তৃক আনীত ওহাবী মতবাদসমূহ প্রতিষ্ঠা ও প্রশিক্ষণের স্থান হিসেবে নির্মিত হয় ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা। বাংলাদেশের ছেলেরা সুদূর ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে অধ্যয়ন করে কিন্তু ওহাবী মতবাদের কালো ছায়ায় ধর্মের মূল আদর্শ বিদ্বেষী ও ধ্বংসকারী হিসেবে দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে আসে। সে সাথে তাদের ওহাবী দেওবন্দী মতবাদ প্রচার-প্রসারের জন্যে গড়ে তুলে সোনার বাংলার মুক্ত জমিনে খারেজী ও কওমী মাদ্রাসা। এভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার ঘরে ঘরে ওহাবী দেওবন্দীদের ঈমান নাশক বিষাক্ত বন্যা।
হে দয়াল রাব্বুল আলামীন! আমাদেরকে তোমার মাহবুব মুহাম্মাদ মোস্তফা (ﷺ)'র খাতিরে ওহাবী ও দেওবন্দীদের কালো গ্রাস থেকে হিফাযত করুন।

বাতিলদের বিভিন্ন দল ও তাদের আক্বীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস

মুখবীরে গায়ব, নবীয়ে মাওলা, নূরে আ‘লা, নূরে মুজাচ্ছাম, মুহাম্মাদ মোস্তফা (ﷺ), আখেরী জামানায় যে সমস্ত দাজ্জাল এবং মিথ্যাবাদীদের আগমন সম্পর্কে খবর দিয়েছিলেন, বর্তমান জামানায় সে দাজ্জাল ও কাজ্জাবের বিভিন্ন সম্প্রদায় দেখা যাচ্ছে। যারা মুসলমানগণের সামনে বিনয়ের স্বরে এমন কথা বলে, যা তাদের বাপ-দাদারাও কখনো শুনেনি।
তাদের থেকে একটি সম্প্রদায় হল, যারা নিজেদেরকে আহলে কুরআন বলে দাবী করে। তারা হুযুর (ﷺ)কে শুধু সংবাদ বাহক হিসেবে জানে এবং নির্দ্বিধায় প্রকাশ্যে হুযুর পাকের সমস্ত হাদীস শরীফকে অস্বীকার করে। এমনকি স্বয়ং হুযুর (ﷺ)-এর অনুসরণকেও অস্বীকার করে। আর বলে এগুলো তো এমন কথা যা আমাদের বাপ-দাদাগণও শুনেন নি। 

❏ অথচ আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা হুযুর পাকের অনুসরণ করার জন্য ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এঁর অনুসরণ কর। (সূরা নিসা: ৫৯)

বাতিলদের থেকে মির্জা গোলাম কাদিয়ানী নামে একটি দল আছে। এরা মির্জা গোলামকে ইমাম মাহদী, মুজাদ্দিদ, নবী এবং রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করে এবং হুযুর পাকের পরেও অন্য নবী পয়দা হওয়া বা আগমন করা জায়িয মনে করে। এগুলোতো এমন বদ্-আক্বীদা যা আমাদের বাপ-দাদাগণও শুনেননি 

❏ বরং হুযুর নূরে খোদা মুহাম্মাদ মোস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করেন-
اَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ
অর্থাৎ আমি সকল নবীগণের শেষ নবী, আমার পরে কোন (নতুন) নবী হবে না। (মিশকাত শরীফ, ৪৬৫ পৃষ্ঠা)

❏ অনুরূপ কুরআনুল কারীমেও ইরশাদ হচ্ছে-
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
অর্থাৎ হুযুর (ﷺ) তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সকল নবীগণের শেষ নবী। (সুরা আহযাব: ৪০)

উল্লেখিত আয়াতে ক্বারীমা দ্বারা প্রমাণ হলো যে, হুযুর পাকের যাতে আক্বদাসের আগমনে অন্য কোন নতুন নবীর আগমনের সিলসিলা সমাপ্ত হয়ে গেছে, এমনকি তাঁর আগমনে তাঁর পরবর্তীতে নবুওতের দরজায় মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে। এ মর্মে উল্লেখিত আয়াতে ক্বারীমা ছাড়াও কাত্বয়ী আদিল্লা মওজুদ রয়েছে। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় নবী পাকের পরে আর কখনো কোন নতুন নবীর আগমন ঘটবে না।
বাতিলদের থেকে আরো একটি দল যারা ওহাবী-দেওবন্দী নামে পরিচিত। এ দলের আক্বীদা হল হুযুর পাকের যে রকম ইলম রয়েছে, অনুরূপ ইলম বা জ্ঞান শিশু, পাগল এবং চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যেও রয়েছে। নাউযু বিল্লাহ্!
যেমন, দেওবন্দীদের মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবী তার নিজ পুস্তক ‘হিফজুল ঈমান’-এর ৮ম পৃষ্টায় হুযুর পাকের পূর্ণ ইলমে গায়বকে অস্বীকার করে আংশিক ইলমে গায়বকে স্বীকার করেছে এবং আংশিক ইলমে গায়ব সম্পর্কে লিখেছে, এমন (আংশিক ইলমে গায়ব জানার মধ্যে) হুযুরের কি বিশেষত্ব আছে? এমন আংশিক ইলমে গায়ব তো যায়েদ, আমর বরং প্রত্যেক শিশু, পাগল এমনকি সমস্ত জীব জন্তু এবং চতুষ্পদ জানোয়ারের মধ্যেও আছে। (নাউযুবিল্লাহ)
বাতিলদের থেকে ওহাবী দেওবন্দীদের আরো একটি আক্বীদা এ যে, হুযুর (ﷺ) সকল নবীগণের শেষ নবী নন। তাঁর পরে আরো অন্য নবী আসতে পারে। যেমন- 

❏ মৌলভী কাশেম নানুতুভী (দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা) সে তার পুস্তক ‘তাহজিরুন্নাস’-এর ৩নং পৃষ্ঠায় লিখেছে, “বুদ্ধি-বিবেকহীন লোকেরা হুযুর (ﷺ)কে خَاتَمَ النَّبِيِّينَ -খাতামুন্নাবিয়্যীন অর্থ অনুযায়ী পূর্ববর্তী সকল নবীগণের মধ্যে তাঁকে আখেরী বা শেষ নবী হিসেবে জানে। কিন্তু জ্ঞানী-গুণী সম্প্রদায়ের নিকট এ কথা অতি স্পষ্ট যে, হুযুর (ﷺ) সকল নবীগণের পূর্বে বা পরে আগমনের মধ্যে মৌলিকভাবে কোন মর্যাদা বা গুরুত্ব নেই।” (নাউযুবিল্লাহ)

❏ অনুরূপ উক্ত পুস্তকের ২৮ পৃষ্টায় সে লিখেছে যে, “বিশেষ প্রয়োজনে যদি হুযুর (ﷺ)-এর পরে কোন নবীর আগমন ঘটেই যায়, তাহলে হুযুর (ﷺ)-এর খতমে নবুওয়্যাত বা শেষ নবী হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য সৃষ্টি বা অসুবিধা হবে না।”
উল্লেখিত আলোচনার সারকথা এ যে, হুযুর পাকের পরেও অন্য নবীর আগমন হতে পারে। (নাউযুবিল্লাহ)। যেমন নবী পাকের পরেও দেওবন্দ মাদ্রাসার ছাত্র মির্জা গোলাম কাদিয়ানী নবী দাবী করেছে।
বাতিলদের থেকে দেওবন্দী সম্প্রদায়ের আরো একটি আক্বীদা হল, শয়তান ও মালাকুল মউতের ইলম বা জ্ঞানের চেয়েও হুযুর পাকের ইলম কম। যে ব্যক্তি শয়তান এবং মালাকুল মউতের জ্ঞানের ব্যাপকতাকে স্বীকার করবে সে মু’মিন মুসলমান বটে কিন্তু হুযুর (ﷺ)-এর জ্ঞানের ব্যাপকতাকে স্বীকারকারী মুশরিক ও বেঈমান। যেমন, দেওবন্দীদের মুরুব্বী মৌলভী খলিল আহমদ আম্বটী ‘বারাহীনে কাতেয়া’ নামক পুস্তকের ১৫ পৃষ্ঠায় লেখেছে যে, “শয়তান এবং মালাকুল মউতের জ্ঞানের ব্যাপকতা বা বিশালতা সম্পর্কে নছ তথা বিশুদ্ধ দলিলাদীর দ্বারা স্বীকৃতি বা ছাবেত রয়েছে। কিন্তু মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর  জ্ঞানের ব্যাপকতা সম্পর্কে কোন ধরণের বিশুদ্ধ প্রমাণাদী রয়েছে কি? যার দ্বারা সমস্ত দলিলাদীকে খন্ডন করে এক ধরণের শির্ক প্রতিষ্ঠা হবে?” (নাউযুবিল্লাহ)
●  উক্ত ৭২ দলীয় বাতিল নামধারী মুসলমানদের আরো একটি আক্বীদা এ যে, আল্লাহ্ তা‘আলা মিথ্যা বলতে পারেন। (নাউযুবিল্লাহ) (রেছালায়ে একরোজি, পৃষ্টা ১৪৫ লেখক- মৌলভী ঈসমাইল দেহলভী)
●  নবীয়ে মাওলার ভবিষ্যদ্বাণী মতে মিথ্যাবাদী ও দাজ্জাল হতে আরো একটি জাহান্নামী ৭২ দলীয় ফিরকা বের হয়েছে, যারা বলে- হুযুর ছাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মরে মাটির সঙ্গে মিশে গেছেন। (নাউযুবিল্লাহ) (ত্বাকবিয়াতুল ঈমান, পৃষ্টা ৭৯)
এ সমস্ত আক্বীদা বা বিশ্বাস কি মূলতঃ স্বয়ং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)কে অস্বীকার করা নয়? কারণ এ সমস্ত বক্তব্যের দ্বারা মূলতঃ আল্লাহর উলুহিয়্যাত ও রাসূল পাকের রিসালাতের অস্বীকৃতি বুঝায়।
সুতরাং এ ধরণের ধর্ম বিশ্বাস যাদের মধ্যে আছে, তাদের নামায, রোযা, টুপি, দঁাড়ি থাকা সত্বেও তারা কাফির। কারণ মু’মিন-মুসলমান কুফুরীর দ্বারা কাফির হয়। কাফির কুফুরীর দ্বারা মুসলমান হয় না বরং কাফিরই থেকে যায়।
সংক্ষিপ্ত করণার্থে সামান্য প্রমাণাদী উপস্থাপন করেছি মাত্র। উক্ত বাতিল জামাআত ওহাবী ও দেওবন্দীদের ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে জানতে হলে নিম্নের পুস্তকাদী পড়ুন:
(১) আচ্ছাওয়ারিমুল হিন্দিয়া।
(২) হুচ্ছামুল হারামাঈন।
(৩) ওয়াহাবীদের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তাদের বিধান।
(৪) নজদী পরিচয়।
(৫) ওয়াহাবী পরিচয়।
(৬) এক নজরে ওয়াহাবী আকায়েদ প্রভৃতি।
●  অনুরূপভাবে বাতিলদের থেকে আরো একটি দলের নাম হল জামাআতে ইসলামী। সে দলের প্রতিষ্ঠাতা মিঃ মওদুদী। সে তার ভ্রান্ত মতবাদ ও নাপাক চিন্তাধারার মাধ্যমে মানুষকে ধেঁাকায় ফেলার উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে ইসলামের বুলি তথা লেবাস ও বক্তব্য নিয়ে ইসলাম ধর্মকে বিকৃত করে নতুন ধর্ম সৃষ্টি করার স্বপ্ন দেখছে।
ঈমানদার ভাইগণের সতর্কতার জন্য মিঃ মওদুদীর ঈমান বিধ্বংসী ভ্রান্ত মতবাদ ও অপবিত্র চিন্তা ধারার কতিপয় দৃষ্টান্ত তার লিখিত বিভিন্ন পুস্তকাদির প্রমাণসহ উপস্থাপন করছি।
আল্লাহ্ সম্পর্কে মন্তব্য
(১) ইসলামী আক্বীদা: মহান আল্লাহ্ কোন ক্ষেত্রে জুলুমের আশংকা জনিত কোন বিধান দেন নাই। (সুরা ইউনুস: ৪৪)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলা-মেশা, সে ক্ষেত্রে যিনার কারণে (আল্লাহর আদেশকৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম। (তাফহীমাত ২য় খন্ড ২৮১পৃঃ)
মহানবী (ﷺ) সম্পর্কে মন্তব্য
(২) ইসলামী আক্বীদা: মহানবী (ﷺ)  মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত। (হাদীস শরীফ, ফাতাওয়ায়ে শামী)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: মহানবী (ﷺ) মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। (অর্থাৎ তিনি মানবিক দুর্বলতার বশবর্তী হয়ে গুনাহ করেছিলেন)। (তর্জমানুল কুরআন, সংখ্যা-৮৫, পৃঃ ২৩০)
(৩) ইসলামী আক্বীদা: হুযুর (ﷺ) নিজ মনগড়া কোন কথা বলেন নি। (আল্ কুরআন)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: মহানবী (ﷺ) নিজ মনগড়া কথা বলেছেন এবং তিনি নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ করেছেন। (তর্জমানুল কুরআন, রবিউল আউয়াল, সংখ্যা ১৩৬৫ হিঃ)
পবিত্র কুরআন সম্পর্কে মন্তব্য
(৪) ইসলামী আক্বীদা: কুরআন মাজীদের মনগড়া ব্যাখ্যা করা নাজায়িয ও হারাম। (তিরমিযী শরীফ, ২য় খন্ড, ১১৯ পৃঃ)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: কুরআন মাজীদের মনগড়া ব্যাখ্যা করা জায়িয। (তর্জমানুল কুরআন, জমাদিউল উখরা সংখ্যা ১৩৫৫ হিঃ)
তাই স্বয়ং মিঃ মওদুদী ‘তাফহীমুল কুরআন’ নামে, কুরআন মাজীদের মনগড়া অপব্যাখ্যা লিখে নিজেও গোমরাহ হল এবং মুসলমানদেরকেও গোমরাহ করার ফঁাদ পেতে গেল। মওদুদীর তাফহীমুল কুরআন যে কুরআন মাজীদের মনগড়া ব্যাখ্যা, এটা শুধু আমাদেরই কথা নয় বরং মিঃ মওদুদী স্বয়ং আপন তাফহীমুল কোরআনের ভূমিকায় স্পষ্ট করে এর স্বীকারোক্তি পেশ করে বলেছে যে, “কুরআন পড়ে আমার যা কিছু বুঝে এসেছে এবং আমার অন্তরে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তা হুবহু আমি তাফহীমুল কোরআনের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছি।” (মোকাদ্দায়ে তাফহীমুল কুরআন)
(৫) ইসলামী আক্বীদা: আল্লাহর নির্দেশিত ও নবী করিম (ﷺ)-এর দেখানো পথ-নির্দেশ অনুযায়ী সাহাবা কিরাম রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন আইম্মায়ে মুজতাহেদীন (রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম) কুরআন মাজীদের যেরূপ ব্যাখ্যা করেছেন, তা হাদীস ও তাফসীরের পুরাতন ভান্ডারে বিদ্যমান রয়েছে, কুরআন মাজীদের সেরূপ ব্যাখ্যা করা অপরিহার্য। অন্যথায় পদচ্যুত হওয়া অবশ্যম্ভাবী। (কুরআন, ফিকহ্ ও দাওয়াত, ২১৬ পৃঃ)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: ●  তাফসীরের পুরাতন ভান্ডার হতে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে নেই। (তানকীহাত ১১৪ পৃঃ)
●  কুরআন বুঝার উত্তম পন্থা একমাত্র এটাই হতে পারে যে, কুরআন বুঝার ইচ্ছা পোষনকারী ব্যক্তি সর্বপ্রথম এটা জানবে যে, কুরআনের ইলহাম তার উপর নাযিল হচ্ছে (অর্থাৎ সে রসুল) অতঃপর এটা বুঝে কুরআন পাঠ করবে যে, সে নিজেই এ কুরআন নাযিল করছে (অর্থাৎ সে স্বয়ং আল্লাহ্) আমি (মওদুদী) কুরআন বুঝার এ পন্থাকেই গ্রহণ করছি। (নাওয়ায়ে পাকিস্থান লাহোর ৪ঠা সেপ্টেঃ ১৯৫৫ ইং)
আম্বিয়ায়ে কিরাম আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কে বক্তব্য
(৬) ইসলামী আক্বীদা: নবীগণ মাছুম অর্থাৎ নিষ্পাপ, তাঁরা কোন গুনাহ করেন নি। (হাদীস শরীফ, তাফসীরে রুহুল বয়ান)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: নবীগণ মা’ছুম নন। প্রত্যেক নবীই গুনাহ করেছেন। (তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ৪৩ পৃঃ)
(৭) ইসলামী আক্বীদা: নবীগণ মহা সম্মানিত সর্বোত্তম। তাঁদের দোষ বর্ণনা করা হারাম ও কুফুরী। (শামী ও তাফসীরুল কামালাইন, ৪র্থ খন্ড, ৪পৃঃ)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: (নবী হউক, সাহাবা হউক) কারো সম্মানার্থে তার দোষ বর্ণনা না করাকে জরুরী মনে করা, আমার দৃষ্টিতে মূর্তি পূজারই শামিল (তর্জমানুল কুরআন, ৩৫ তম সংখ্যা, ৩২৭ পৃঃ)
তাই মিঃ মওদুদী লাগামহীন নবীগণের উপর মিথ্যা দোষ বর্ণনা করতে গিয়ে বলল, হযরত আদম (আলাইহিস্ সালাম) মানবিক দূর্বর্লতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্টি ত্বরিত জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে তিনি আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফরমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন। (তাফহীমুল কুরআন, ২য় খন্ড, ১৯৩ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীস সম্পর্কের্র্ বক্তব্য
(৮) ইসলামী আক্বীদা: পবিত্র হাদীসসমূহ নবী করিম (ﷺ) হতে মহা মনীষী সাহাবা কিরাম রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমের  বর্ণনার মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য সূত্রে মুহাদ্দেসীনে কিরামের নিকট পৌঁছেছে এবং মুহাদ্দেসীন কিরাম সাধ্যাতীত সতর্কতা অবলম্বন করতঃ বর্ণনাকারীর সার্বিক অবস্থাদি, যোগসূত্র ইত্যাদি যাচাই-বাচাই ও উসূলে হাদীসের ভিত্তিতে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তা গ্রহণ করেছেন। কাজেই হাদীস শাস্ত্র সত্য, বিশ্বাস্য ও নির্ভরযোগ্য। (উসূলে হাদীস)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: ●  হাদীস তো কতিপয় মানুষ হতে কতিপয় মানুষের নিকট পৌঁছেছে। কাজেই তার সত্যতা সমন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মিতে পারে না, বড় জোর ধারণা করা যেতে পারে। (তর্জমানুল কুরআন, রবিঃ আউঃ সংখ্যা, ১৩৬৫ হিঃ)
●  কোন ভদ্রলোকই একথা বলতে পারে না যে, যে সব হাদীস আমাদের নিকট পৌঁছেছে তা ধ্রুব সত্য- তার সত্যতা সন্দেহাতীত। বুখারী শরীফের ছয় হাজার হাদীসের সবগুলো যে সহীহ্, হাদীসের গোড়া ব্যক্তিও একথা বলতে পারে না। (দ্বীনী রুজহানাত, পৃৃষ্ঠা-১০০)
●  বুখারী শরীফের হাদীসও বিনা সমালোচনায় গ্রহণ করা অন্যায় (তর্জমানুল কুরআন শাওয়াল, ১৩৫২ হিঃ)
●  সাহাবাগণ মনগড়া ধারণাকেও হাদীস হিসেবে পেশ করতেন। (তর্জমানুল কুরআন, ৩৫ তম সংখ্যা)
●  নবী করীম (ﷺ) সন্দেহযুক্ত মনগড়া ধারণাও (হাদীস হিসেবে পেশ করতেন)। (তর্জর্মানুল কুরআন ১৩৬৫হিঃ)
●  হাদীসের পুরাতন সম্পদ হতে ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করা উচিৎ নয়। (তর্জমানুল কুরআন, জমাঃ উলাঃ ১৩৫৫ হিঃ)
সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম সম্পর্কে বক্তব্য
(৯) ইসলামী আক্বীদা: সাহাবা কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন সত্যের মাপকাঠি। (হাদীস শরীফ ও ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৩২১)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: সাহাবাগণ সত্যের মাপকাঠি নয়। (দস্তুরে জামায়াতে ইসলামী, পৃষ্ঠা-৭ [সার সংক্ষেপ])
(১০) ইসলামী আক্বীদা: সাহাবা কিরাম অনুসরণ যোগ্য। (হাদীস ও মাকতুবাতে ইমমে রাব্বানী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-১০২)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: সাহাবা কিরাম অনুসরণ যোগ্য নয়। (দস্তুরে জামাআতে ইসলামী, পৃষ্ঠা-৭ [সার সংক্ষেপ])
(১১) ইসলামী আক্বীদা: সাহাবায়ে কিরাম সমালোচনার ঊর্ধ্বে। তাঁদের দোষ বর্ণনা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। (শরহুল আকায়েদ, পৃষ্ঠা-৩৫২)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: সাহাবাগণ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তাদের দোষ বর্ণনা করা যায়। সাহাবাগণের সম্মান করার জন্য তা যদি জরুরী মনে করা হয় যে, কোন ভাবেই তাদের দোষ বর্ণনা করা যাবে না, তবে আমার দৃষ্টিতে তা সম্মান নহে, বরং মূর্তিপূজা; যার মূলোৎপাটনের জন্য জামায়াতে ইসলামীর জন্ম। (তর্জমানুল কুরআন, সংখ্যা নং- ৩৫, পৃঃ ৩২৭)
তাই মিঃ মওদুদী উল্লেখিত স্বীয় আক্বীদার ভিত্তিতে শিয়া, রাফেযী ও খারেজীদের অনুকরণে সাহাবা কিরামের মিথ্যা ও গর্হিত দোষ বর্ণনা করতে গিয়ে বলল:
(ক) সাহাবা কিরামগণ অনেক মনগড়া হাদীস বর্ণনা করেছেন। (তর্জমানুল কুরআন, ৩৫ তম সংখ্যা, ৩২৭পৃঃ)
(খ) সাহাবাদের মধ্যে জাহেলিয়্যাতের বদগুণ পুনরায় ফিরে এসেছিল। (তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ১৫৫পৃষ্টা)   

(গ)  অনেক সময় সাহাবাদের মধ্যে মানবিক দুর্বলতা প্রাধান্য লাভ করতঃ তারা একে অপরের উপর হামলা করে বসতেন এবং পরস্পর গালি-গালাজ শুরু করতেন। (তর্জমানুল কুরআন, ১৩৫৫ হিঃ)

(ঘ) বহু বছরের শিক্ষার পরও সাহাবাগণ জিহাদের প্রকৃত স্পিরিট উপলব্ধি করতে বার বার ভুল করতেন। (তর্জমানুল কুরআন, রবিঃ ছানী, সংখ্যা, ১৩৫৭ হিঃ)

(ঙ) তাঁরা ইসলামের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনাকে বুঝতে অসমর্থ হয়ে পড়েছিলেন। (তর্জমানুল কুরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৫৭ হিঃ)
ফেরেশ্তা সম্পর্কে বক্তব্য

(১২) ইসলামী আক্বীদা: ফেরেশ্তাগণ নূরের তৈরি, আল্লাহর মাখলুক। তাঁরা স্ত্রীও নন পুরুষও নন। তাঁদের খানা-পিনার প্রয়োজন হয় না। সর্বদা তাঁরা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন। (শরহে আক্বায়েদে নসফী, ৩২২পৃঃ)

মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: ফেরেশ্তাগণ প্রায় ঐ জিনিস যাকে গ্রীক, ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেবী-দেবতা স্থীর করেছে। (তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন, ১০পৃঃ)

ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বক্তব্য

(১৩) ইসলামী আক্বীদা: মহান আল্লাহ্ বলেন ইসলাম একটি ধর্মের নাম। (সূরা মায়েদা: ৩)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: ইসলাম কোন ধর্মের নাম নয়, বরং এটা হল একটি বিপ্লবী মতবাদ। (তাফ্হীমাত, ১ম খন্ড, ৬২পৃঃ)

মাযহাব সম্পর্কে বক্তব্য

(১৪) ইসলামী আক্বীদা: ঈমাম চতুষ্টয়ের পরবর্তী যুগের মুসলমানদের চাই- আলেম হন, চাই মূর্খ হন, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী এ চার মাযহাব হতে কোন এক নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব। এ চার মাযহাবের (প্রকৃত আক্বীদার) অনুসারী সকলেই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত নামে অভিহিত। (মাদারেজুন্ নবুয়ত, ১২৬পৃঃ)

মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: ●  জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য তাক্বলীদ করা (চার মাযহাব হতে কোন নির্দিষ্ট এক মাযহাবের অনুসরণ করা) নাজায়িয ও গুনাহের কাজ। বরং নাজায়িয ও গুনাহের চেয়েও জঘন্যতম। (রাসায়েল মাসায়েল, ১ম খন্ড, ১৩৫পৃঃ )
●  আমি মওদুদী নিজে হানাফী, শাফেয়ী ইত্যাদি কোন মাযহাবেরই অনুসারী নই। (রুয়েদাতে এজতেমা, ৩য় খন্ড, ২৮পৃঃ)

সুন্নাত সম্পর্কে বক্তব্য

(১৫) ইসলামী আক্বীদা: নবী করীম (ﷺ)-এর আদত-আখলাক ও স্বভাব-চরিত্র আমাদের অনুকণের জন্য উত্তম নমুনা বা সুন্নাত। (কুরআন শরীফ, বুখারী, ২য় খন্ড, ১০৮৪পৃঃ)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: মহানবী (ﷺ)-এর আদত-আখলাককে সুন্নাত বলা এবং উহা অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে সাংঘাতিক ধরণের বিদ্আত ও মারাত্মক ধর্ম বিগড়ন। (রাসায়েল মাছায়েল, ২৪৮পৃঃ)

দাঁড়ি রাখা সম্পর্কে বক্তব্য

(১৬) ইসলামী আক্বীদা: এক মুষ্ঠি পরিমান দঁাড়ি রাখা ওয়াজিব। কেঁটে ছেঁটে এর কম রাখা হারাম। (বুখারী শরীফ, ৭৫পৃঃ; মুসলীম শরীফ, ১২৯পৃঃ; আবু দাউদ শরীফ, ২২১পৃঃ)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: দাঁড়ি কাটা, ছঁাটা জায়িয। কেঁটে ছেঁটে একমুষ্ঠির কম হলেও ক্ষতি নাই। মহানবী (ﷺ) যে পরিমাণ দাঁড়ি রেখেছেন, সে পরিমাণ দাঁড়ি রাখাকে সুন্নাত বলা এবং তার অনুসরণে জোর দেয়া আমার মতে মারাত্মক অন্যায়। (রাসায়েল মাছায়েল, ১ম খন্ড, ২৪৭ পৃঃ)

নামায, রোযা ইত্যাদি সম্পর্কে বক্তব্য

(১৭) ইসলামী আক্বীদা: দ্বীনের আসল মাকছুদ কালেমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি কায়েম করা। ইসলামী হুকুমত উক্ত মাকছুদ অর্জনে সহায়ক। (হাদীস শরীফ ও শরহুল আক্বায়েদ, ৩০৪পৃঃ)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: দ্বীনের আসল মকছুদ ইসলামী হুকমত। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদী সমস্ত ইবাদতই উক্ত মাকছুদ অর্জনের মাধ্যম। (আকাবেরে উম্মতকী নজরমে, ৬৪পৃঃ)
মিঃ মওদুদীর উপরোক্ত মন্তব্যের ফল এ দঁাড়ায় যে, ইসলামী হুকুমত অর্জন হলে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতের কোনই প্রয়োজন নাই। যেহেতু মাকছুদ অর্জিত হলে মাধ্যমের আর প্রয়োজন থাকে না। (নাউযুবিল্লাহ)

যাকাত সম্পর্কে বক্তব্য

(১৮) ইসলামী আক্বীদা: যাকাত আদায়ের জন্য তামলীকে ফকির (দরিদ্রকে মালিক বানানো) জরুরী। (হাদীস শরীফ ও মাবছুত, ২য় খন্ড, ২০২পৃষ্টা)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: যাকাত আদায়ের জন্য তামলীকে ফকির (দরিদ্রকে মালিক বানানো) জরুরী নয়। (তর্জমানুল কুরআন, জিলহজ্জ সংখ্যা, ১৩৭৫হিঃ)
হারাম জানোয়ার সম্পর্কে বক্তব্য

(১৯) ইসলামী আক্বীদা: শিকারী পাখি যথা: চিল, শকুন ইত্যাদি এবং হিংস্র জন্তু যথা: কুকুর, খেকশিয়াল, বিড়াল, কাক, সাপ ইত্যাদি ভক্ষণ করা হারাম। (মুসলিম শরীফ, ২য় খন্ড, ১৫৫পৃষ্টা)
মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: চিল, শকুন, কুকুর, খেঁকশিয়াল, বিড়াল, কাক, সাপ ইত্যাদি জানোয়ার ভক্ষণ করা হারামও নয়, মাকরুহে তাহরীমাও নয়, বরং মশ্কুক মাকরূহ বা সন্দেহ যুক্ত মাকরূহ। (তর্জমানুল কুরআন, রবিউচ্ছানী সংখ্যা ১৩৬২হিঃ)

উল্লেখ্য যে, জামাআতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মিঃ মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার পরবর্তী এ যুগের বাঙ্গালী মিঃ মওদুদীর আক্বীদার অনুসারী মিঃ গোলাম আজমের আক্বীদার মধ্যে পূর্ণ সামঞ্জস্যতার বা সম্পৃক্ততার নমুনা 
তথা বাস্তব দৃষ্টান্ত নিম্নে উপস্থাপন করা হল:

●  মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: মহানবী (ﷺ) মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দুর্বলতার বশবর্তী হয়ে গুনাহ করেছিলেন। (তর্জমানুল কুরআন, ৮৫তম সংখ্যা, ২৩০পৃঃ)

মিঃ মওদুদীর এ যুগের অনুসারী মিঃ গোলাম আজমের আক্বীদা: নবী অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন। তিনি অতি মানব ছিলেন না। সব মানুষের মতই তিনি পিতার ঔরসে মাতার গর্ভে জন্ম নিয়েছেন। তিনি আমাদের মত স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন, নবীকে অতি মানব মনে করে অতি ভক্তি দেখানো হয়। ...... নবীর পজিশন হল তিনি মাটির মানুষ, তিনি ফেরেশতা বা জ্বিন নন ..... রাসুল (ﷺ) এর দেহ আর সব মানুষের মতো মাটির তৈরীই ছিল। প্রভৃতি। (সীরাতুন্নবী সংকলন, পৃঃ ৭, ৮, ৯)

গোলাম আজমের উপরোক্ত আলোচনায় হুযুর (ﷺ)কে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তুলনা করে বুঝাতে চেয়েছেন যে, সাধারণ মানুষ যেমনিভাবে ভাল-মন্দ, পাপ-পূন্য করে থাকে তেমনিভাবে হুযুর (ﷺ)-ও ভাল-মন্দ, পাপ-পূন্য থেকে মুক্ত নন। (নাউযুবিল্লাহ)
তাই তিনি বলতে পেরেছেন নবী অতি মানব নয়, সব মানুষের মতই স্বাভাবিক ভাবে মাতা-পিতার ঔরসে জন্ম নিয়েছেন। তিনি আমাদের মত স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন। তাঁকে অতি মানব মনে করা অতি ভক্তি দেখানো মাত্র। (নাউযুবিল্লাহ)

❏ মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: সাহাবাদিগকে সত্যের মাপকাঠি জানবে না। (দস্তুরে জামায়াতে ইসলামী, পৃষ্ঠা-৭, সার সংক্ষেপ)

❏ মিঃ গোলাম আযমের আক্বীদা: দ্বীনের মাপকাঠি বা মানদন্ড একমাত্র রাসূল। সাহাবায়ে কিরাম (সত্য দ্বীনের) মাপকাঠি নন। (সীরাতুন্নবী সংকলন, পৃ: ১৪)

❏ মিঃ মওদুদীর আক্বীদা: নবী, অলী, শহীদ, দরবেশ, গাউস-কুতুব ও উলামা এবং পীর মাশায়েখগণকে বিশ্বাস করা শিরক এবং ফাতেহা খানি, ওরছ শরীফ, নযর নিয়াজ ও কবর যিয়ারত মুশরিকদের পূজা অর্চনার মত। (ইসলামী রেঁনেসা আন্দোলন, পৃঃ ৬)

❏ মিঃ গোলাম আযমের আক্বীদা: ধর্মের নামে এক শ্রেণীর লোক হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) ও হযরত মুঈনুদ্দীন চিশতী (رحمة الله) কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকেও বড় মর্যাদা দিয়ে বসে। এসব অলীদের মাযারে যেয়ে হাজার হাজার মানুষ তাদের কাছে সন্তান, চাকুরী ও দুনিয়ার বহু কিছু চায়। অথচ এসব দেয়ার ক্ষমতা রাসুলেরও নেই। আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্বার নিকট এসবের জন্য দোয়া করা শিরকী কাজ। (সীরাতুন্নবী সংকলন, পৃঃ ১৬)

উপরোক্ত দৃষ্টান্তসমূহ হতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মিঃ মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ বর্তমান জামাআতে ইসলামীর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ্ এদের হিদায়াতের জন্যে কৃপা নযর করুন।

মিঃ মওদুদীর জামাআতে ইসলামের প্রকৃত রূপ বা ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে জানতে হলে নিম্নের পুস্তকসমূহ পড়ুন:

(১) ছারছীনা দারুস্ সুন্নাত আলীয়া মাদ্রাসা হতে প্রকাশিত আল্লামা আজিজুর রহমান নেছারাবাদী কর্তৃক রচিত “জামাআতে ইসলামী নামধারী মওদুদী জামাআতের স্বরূপ”।
(২) ঢাকা লালবাগ থেকে মুফতী মাওলানা মনসুরুল হক কর্তৃক রচিত “মিঃ মওদুদীর নতুন ইসলাম”।
(৩) সিলেট থেকে প্রকাশিত মাওলানা হাবীবুর রহমান কর্তৃক রচিত “বিংশ শতাব্দীর জাহেলীয়াত মওদুদীর ফেৎনা”।
(৪) চট্রগাম থেকে প্রকাশিত মাওলানা মোহাম্মাদ ইছহাক কর্তৃক রচিত “মওদুদী ও ইসলাম।”
(৫) কলকাতা থেকে প্রকাশিত মোহাম্মাদ তাহের কর্তৃক রচিত “ইসলামের নামে একটি নতুন ধর্ম”।
(৬) ঢাকা থেকে মাওলানা হাফেজ্জী সাহেব কর্তৃক সম্মাদিত “সতর্কবাণী”।
(৭) ঢাকা হতে প্রকাশিত মাওলানা জাকির হোসাইন সাহেব কর্তৃক রচিত “এক নজরে মওদুদীবাদী জামাআত শিবিরের ভ্রান্ত মতবাদ”।
এতদভিন্ন এ মওদুদী ফেৎনার ভয়াবহ কর্মকান্ড সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের লেখকগণ বাংলা-আরবী-উর্দ্দু প্রভৃতি ভাষায় পরিচিতি পেশ করে গেছেন। সংক্ষেপ করণার্থে সামান্য প্রমাণাদি পেশ করেছি মাত্র।
এমনিভাবে হুযুর পাকের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী দাজ্জাল ও মিথ্যাবাদীদের থেকে আরো একটি প্রকাশ্য মিথ্যাবাদী ও দাজ্জালের দল রেরিয়েছে, যে দলের নাম প্রচলিত তবলীগ জামাত। এ প্রচলিত তবলীগ জামাআতের প্রতিষ্ঠাতা দীল্লীর মৌঃ ইলিয়াছ। নিম্নে তাদের কিছু ভ্রান্ত মতবাদ তুলে ধরা হলো:
(১) ইসলামী তাবলীগ: আল্লাহ্ ও আল্লাহর হাবীব (ﷺ)-এর নীতি নির্দেশ অনুযায়ী তাবলীগ হচ্ছে ৫ উসুল তথা পঞ্চবেনার উপর।
ইলিয়াছী তাবলীগ: ভারতের ইলিয়াছের নীতি নির্দেশ অনুযায়ী তাবলীগ হচ্ছে মনগড়া ৬ উসুল তথা ষষ্ঠ বেনার  উপর। (নাউযুবিল্লাহ)
(২) ইসলামী তাবলীগ: ৫ উসুল বা পঞ্চবেনার তাবলীগ যা হুবহু কুরআন, হাদীস অনুযায়ী এবং যাতে কোন প্রকার পরিবর্তন করা হয়নি। যথা: কালেমা, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত। (কুরআন হাদীস মতে)

ইলিয়াছী তাবলীগ: 

৬ ছয় উসুল বা ষষ্ঠ বেনার তাবলীগ যা কুরআন, হাদীসের বহির্ভূত বা শরীয়ত পরিপন্থী এবং যাতে পরিবর্তন করা হয়েছে। যথা: 
(১) কালেমা 
(২) নামায এ দু’টিকে গ্রহণ করে রোযা, হজ্জ এবং যাকাত এ তিনটির পরিবর্তে 
(৩) ইকরামুল মুসলেমীন, 
(৪) ইলম ও যিকির 
(৫) তাছহীহে নিয়ত ও 
(৬) নফরুন ফি ছাবিলিল্লাহ বা তাবলীগ। (ইলিয়াছী মতে)

হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন-
 مَنْ بَدَّلَ دِيْنَهُ فَاقْتُلُوْهُ 
-যে ব্যক্তি ধর্মের মধ্যে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করবে তাকে কতল কর। অথচ প্রচলিত তাবলীগ ওয়ালারা প্রকাশ্যে ধর্মের স্তম্ভ পরিবর্তন করে বুজুর্গ ও সূফী বেশে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে ধোকা দিচ্ছে। মানুষও এদের না চিনে-জেনে খেদমত করছে। তাবলীগের আমীররা নিরীহ মুসলমানগণকে নকল বিধান বাজারজাত করার জন্য বলে থাকে যে, ইকরামুল মুসলেমীন, ইলম ও যিকির, তাছহীয়ে নিয়ত ও নফরুন ফি সাবিলিল্লাহ বা তাবলীগ প্রভৃতি ইসলামের বেনা নয়। বরং এগুলি তাবলীগের উছুল। বেনা এক বিষয় আর উছুল অন্য বিষয়। এভাবে সরলমনা মানুষকে সরল পন্থায় ধোকা দিচ্ছে। অথচ আরবী লোগাত ও ব্যাকরণগত দিক থেকে উছুল এবং বেনার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। اصول ও بنا দুইটিরই অর্থ এক বিধায় এ ধরণের শব্দকে আরবী ভাষায় লফজে মুরাদেফ বলা হয়। যেমন اصول শব্দটি আছল শব্দের বহুবচন। অর্থ- স্তম্ভ, মূল, শিকর, প্রভৃতি। তেমনি বেনা শব্দের অর্থও মূল, শিকড়, স্তম্ভ প্রভৃতি। যেমন পানি ও জল, বায়ু ও বাতাস, নীড় ও ঘর এসব পাশাপাশি শব্দগুলোর অর্থগত দিক থেকে কোন পার্থক্য নেই। সবকটির একই অর্থ। অর্থাৎ যাকে পানি বলে তাকেই জল বলে। তদ্রূপ  উছুল ও বেনার মধ্যে অর্থগত কোন পার্থক্য নেই, দুটিরই অর্থ এক অর্থাৎ মূল, শিকর বা স্তম্ভ।
উল্লেখ্য যে, যে সমস্ত বিষয় ইসলামের উছুল বা বেনা নয় যথা ইকরামুল মুসলেমীন, ইলম ও যিকির, তাছহীয়ে নিয়ত ও নফরুন ফি সাবিলিল্লাহ বা তাবলীগ প্রভৃতি বিষয়সমূহকে ইসলামের উছুল বা বেনা বলে দাবী করা কুফুরী। কারণ ইসলামের স্তম্ভ বা উছুল হিসেবে এ সমস্ত বিষয়কে স্থীর বা নির্ধারণ করার ক্ষমতা আল্লাহ্ পাক একমাত্র নবীগণকে দান করেছেন। হে আল্লাহ্ এদেরকে হিদায়েত নসীব করুন।
(৩) ইসলামী তাবলীগ: পঞ্চবেনা বা ৫ উছুলের তাবলীগ যা আল্লাহ্ পাকের মনোনীত এবং হুযুর (ﷺ) কর্তৃক প্রবর্তিত। (কুরআন কর্তৃক)
ইলিয়াছী তাবলীগ: প্রচলিত ৬ উছুলের তাবলীগ ভারতের ইলিয়াছ সাহেবের মনোনীত এবং মনগড়া প্রবর্তিত। (ইলিয়াছ কর্তৃক)
লক্ষ্য করুন “তাবলীগের  পথে” লেখক মাওলানা বছির  উদ্দিন। এ পুস্তকের ২৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে “হযরত ইলিয়াছ (রহঃ)-এর প্রবর্তিত তাবলীগের নিয়ম হযরত ইলিয়াছ (রহঃ) কৃত মালফুজাত কিতাবে বলেন, এ তাবলীগের নিয়ম আমার উপর স্বপ্নে প্রদত্ত হইয়াছে।” হে দয়াল এদেরকে হিদায়েত করুন।
(৪) ইসলামী তাবলীগ: কাফির তথা বিধর্মীদের নিকটে মুসলমান বানানোর উদ্দ্যেশে তাবলীগ করা হয়।
ইলিয়াছী তাবলীগ: মুসলমানদর নিকটে ইলিয়াছী মুসলমান বানানোর উদ্দ্যেশে তাবলীগ করা হয়। যেহেতু তারা মুসলমানদেরকে অমুসলিম ধারণা করে বাড়ী-ঘরে, অলিতে-গলিতে, মসজিদে-মসজিদে তাবলীগ করে থাকে। কারণ ইলিয়াছী তাবলীগীরা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে মুসলমান হিসেবে জানে না। (দেখুন: মালফুজাতে ইলিয়াছ, ৪৭ পৃঃ)
হে আল্লাহ্! এ শ্রেণীর মুনাফিক মুসলমানদের থেকে নিরীহ মুসলমানগণের ঈমান হিফাযত করুন।
(৫) ইসলামী তাবলীগ: নবী পাকের কর্ম দিয়ে বিধর্মীর ধর্ম-কর্ম বদল করে মুসলমান বানানো হয়।
ইলিয়াছী তাবলীগ: ইলিয়াছী কর্ম দিয়ে নবী পাকের ধর্ম-কর্ম বদল করে ইলিয়াছী মুসলমান বানানো হয়। দেখুন: মাওলানা হাছান আলী কৃত “আল্ আছরে” রয়েছে “আজকাল আমাদের ব্যবস্থা দিয়ে নবী সাহেবের ব্যবস্থা বদল করা হয়েছে”। (নাউযুবিল্লাহ) উক্ত লেখকের ঠিকানা: সাং+পো: বেলার, রায়পুরা-ঢাকা।
(৬) ইসলামী তাবলীগ: পঞ্চ বেনার বা ৫ উছুলের তাবলীগ যা কুরআন, হাদীস তথা শরীয়তের দলিল দ্বারা প্রাপ্ত । যথাঃ কালেমা, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত। (কুরআন ও হাদীস শরীফ হতে প্রাপ্ত)
ইলিয়াছী তাবলীগ: ষষ্ঠ বেনা বা ৬ উছুলের তাবলীগ যা শরীয়তের দলিল দ্বারা প্রাপ্ত নয় বরং ইলিয়াছ সাহেবের স্বপ্নে প্রাপ্ত। যথাঃ কালেমা, নামায, ইকরামুল মুসলেমীন, ইলম ও যিকির, তাছহীয়ে নিয়ত ও নফরুন ফি সাবিলিল্লাহ বা তাবলীগ। (ভারতের ইলিয়াছ হতে স্বপ্নে প্রাপ্ত)
প্রথম আলোচনা: ধর্মপ্রাণ ভাইগণের খেদমতে বলছি যে, বর্তমান প্রচলিত তাবলীগ জামাআত যারা হাড়ী-পাতিল, কঁাথা-বালিশ ও লাকড়ীর বোঝাসহ প্রভৃতি নিয়ে সারিবদ্ধভাবে অলি-গলিতে ঘুরে ঘুরে কলেমার দাওয়াত দেয় এবং মসজিদে থাকে ও খানা-পিনা করে এবং রাত্রী যাপন করে ও তাবলীগী নেছাব বই পড়ে শুনায়, এ ধরণের ছয় উছুলী তাবলীগ জামাআত কুরআন ও হাদীস শরীফের কোথাও উল্লেখ নেই। 

❏ বরং এ মর্মে ভারতের ইলিয়াছ সাহেব নিজেই বলেন:
اس تبلیغ کا طریقہ بھی مجھ پر خواب میں منکشف ہوا
অর্থাৎ প্রচলিত তাবলীগ জামাআতের নিয়ম-নীতি আমি স্বপ্নে প্রাপ্ত হয়েছি। (মালফুজাতে ইলিয়াছ, ৫১পৃঃ)

ধর্মপ্রাণ ভাইগণের নিকট আরয, একদিন যেখানে সকলেই  ফিরে যেতে হবে সমস্ত হিসাব দেওয়ার জন্য, সেদিন বিবেকের হিসাবও দিতে হবে। একবার ভেবে দেখুন তো আপনি প্রচলিত ইলিয়াছী তাবলীগ করে মুহাম্মদী (ﷺ) তথা ইসলামী তাবলীগ করছেন না ইলিয়াছী তাবলীগ করছেন? আপনি উম্মত কার? আর ধর্ম পালনে অনুসরণ করছেন কার? স্বপ্ন কি শরীয়তের দলিল হতে পারে? স্বপ্ন যদি শরীয়তের দলিল হয় তাহলে,
স্বপ্নে    বাস্তবে
কেহ যদি স্বপ্নে মন্ত্রিত্ব লাভ করে    তবে তাকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হবে কি?
কেহ যদি স্বপ্নে কোন মেয়েকে বিবাহ করে    তবে তাকে উক্ত মেয়ে দেয়া হবে কি?
কেহ যদি স্বপ্নে আপন স্ত্রীকে ত্বালাক প্রদান করে    তবে ত্বালাক পতিত হবে কি?
কেহ যদি স্বপ্নে রুষ্ট, কোরমা, পোলাও প্রভৃতি খায়    তাহলে পেট ভরবে কি?
কেহ যদি স্বপ্নে অযু-গোসল করে    তাহলে পবিত্র হবে কি?
সুতরাং সহজ কথায় আসুন স্বপ্ন শরীয়তের দলিল নয়। বরং ৬ উছুলের প্রচলিত তাবলীগ ধর্মের নামে নতুন ইসলাম।
দ্বিতীয় আলোচনা: ধর্মের মধ্যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন এবং বর্ধিতকরণ, এমনকি পাক-নাপাক, হালাল-হারাম, সিদ্ধ-নিষিদ্ধ প্রভৃতি নির্ধারণ করার ক্ষমতা আল্লাহ্ পাক একমাত্র নবীগণকে প্রদান করেছেন। মানুষ যেহেতু নবী নন কাজেই ধর্মের মধ্যে পরিবর্তনের ক্ষমতা কোন মানুষের নেই। তথাপিও ভারতের ইলিয়াছ নবী না হয়েও আল্লাহ্ ও রাসুল কর্তৃক ৫ উছুলের ধর্মকে পরিবর্তন করে ৬ উছুল তৈরী করাটা নবুওতী দাবী করার স্বপ্ন ব্যতীত অন্য কিছু নহে।

❏ তাইতো ইলিয়াছ সাহেব বলেন:
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ کی تفسیر خواب میں القا ہو‍‌ئی کہ تم مثل انبیا علیہم السلام کے لوگوں کے واسطے ظاہر کئے گئے ہو۔
অর্থাৎ মৌঃ ইলিয়াছ সাহেব বলেন “কুনতুম খায়রা উম্মাতিন” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আমার উপর স্বপ্ন যোগে এরূপ এল্ক্বা তথা এলহাম হয়েছে যে, হে ইলিয়াছ! তুমি নবীদের মতই মানুষের নিকট প্রেরিত হয়েছ। (মালফুযাতে ইলিয়াছ, ৫১পৃঃ)

❏ উপরোক্ত বক্তব্যে ইলিয়াছ ‘মিছলে আম্বিয়া’ বলে স্পষ্ট নবী দাবী করেছে। (নাউযুবিল্লাহ ) এছাড়াও সে উক্ত পুস্তকের ১২৫ পৃষ্ঠায় বলেছে, ‘আমি ওয়ারিস সূত্রে নবুয়তপ্রাপ্ত হয়েছি।’ (নাউযুবিল্লাহ)

হে মহান! এদের হিদায়েত নসীব করুন।
(৭) ইসলামী তাবলীগ: খাঁটি মুসলমান শুধু এক প্রকারেই হয়ে থাকে। অর্থাৎ যারা দ্বীনে মুহাম্মাদী (ﷺ)-এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
ইলিয়াছী তাবলীগ: খাঁটি মুসলমান শুধু দুই প্রকারেই হয়ে থাকে। অর্থাৎ যারা প্রচলিত ৬ উছুলের তাবলীগী (চিল্লায়) বের হবে এবং যারা এদেরকে সাহায্য করবে। লক্ষ্য করুন,

❏ ইলিয়াছ সাহেব বলেন:
مسلمان دو ہی قسم کے ہو سکتے ہیں تیسری کوئی قسم نہیں۔ یا اللّہ کے راستے میں خود نکلنے والے ہوں یا نکلنے والوں کی مدد کرنے والے ہوں۔
অর্থাৎ মুসলমান শুধু দুই প্রকারেই হয়ে থাকে। মুসলমান হওয়ার তৃতীয় কোন প্রকার নেই। যারা (প্রচলিত তাবলীগে) আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে যায় এবং যারা তাদেরকে সাহায্য করবে। (মালফুজাতে ইলিয়াছ, ৪৭পৃঃ)

মৌঃ ইলিয়াস সাহেবের মতে স্বপ্নেপ্রাপ্ত প্রচলিত ৬ উছুলী তাবলীগ যারা করছে না এবং তাদেরকে যারা সাহায্য করছে না তারা মুসলমান না। বরং তার মতে শুধু মুসলমান তারাই যারা স্বপ্নেপ্রাপ্ত তাবলীগে অংশগ্রহণ করে এবং যারা এদেরকে সাহায্য করে। অর্থাৎ সে তার আবিস্কৃত দলভুক্তদের ব্যতীত বাকী সকল মুসলমানকে অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করেছে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, সাহেবে শরীয়ত নবীয়ে মাওলা মুাহাম্মাদ মোস্তফা (ﷺ) হতে সাহাবা কিরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহীদীন এমনকি ইলিয়াছ সাহেবের পিতাও স্বপ্নেপ্রাপ্ত ৬ উছুলের তাবলীগ পাননি, তবে তাদের কি উপায় হবে? তারা কি মুসলমান নয়? (নাউযুবিল্লাহ)
ইলিয়াছ সাহেবের মতে, ইলিয়াছ সাহেব এবং তার দলবলের মতাদর্শের বাহিরে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মুসলমানই মূলতঃ মুসলমান নয়। যে কারণে তারা কাফিরদের পরিবর্তে মুসলমানকে অমুসলিম ধারণা করে অলি-গলিসহ মসজিদে-মসজিদে তাবলীগ করে থাকে।
প্রকাশ থাকে যে, তাবলীগ করা হয় কাফেরের নিকট এবং তা‘লিম দেয়া হয় মুসলমানদের নিকট। কিন্তু তাদের তাবলীগ হচ্ছে মুসলমানের মসজিদে-মসজিদে। হে বেকুফ সম্প্রদায়! তাবলীগ কি মুসলমানের নিকট করা হয়? মসজিদে কি কাফির তথা হিন্দু, খ্রিষ্টান বাস করে? মসজিদগুলো কি বিধর্মীদের গির্জা মন্দির? (নাউযুবিল্লাহ)
প্রমাণাদিসহ উল্লেখিত আলোচনার দ্বারা সূর্যের মত পরিস্কার হয়ে গেল যে, ভারতের ইলিয়াছ কর্তৃক স্বপ্নেপ্রাপ্ত ৬ উছুলী তাবলীগ সম্পূর্ণ মনগড়া ও কুরআন-হাদীস বহির্ভূত। এদের অবস্থা হল মধুর লেবেল ভিতরে বিষ। এরা কাদিয়ানী ও রাফেযীদের থেকেও নিকৃষ্ট মুনাফিক।
হে নিরীহ মুসলমান ভাইগণ! এদের কালোগ্রাস হতে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করুন।

মৌঃ ইলিয়াছ কর্তৃক প্রবর্তিত ছয় উছুলী প্রচলিত তাবলীগ জামাআতের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে বিভিন্ন লেখকগণের পুস্তকসমূহ পড়ুন:
(১) নেত্রকোণা হতে প্রকাশিত মাও. আকবর আলী রেজভী সাহেব কর্তৃক রচিত: স্বপ্নে পীরালীর ইতিহাস।
(২) কুমিল্লা হতে প্রকাশিত আল্লামা আবেদ শাহ্ সুন্নী আল্ ক্বাদেরী কর্তৃক রচিত: প্রচলিত তাবলিগ বিষয়ক কিতাবসমূহ।
(৩) ঢাকা হতে প্রকাশিত, মাওলানা হারিছুর রহমান সাহেব কর্তৃক রচিত: “তাবলীগ সমাচার”।
(৪) নোয়াখালী হতে প্রকাশিত, মাওলানা আবুল কাসেম রেজভী সাহেব কর্তৃক রচিত: “তাবলীগ জামাতকে একশত জিজ্ঞাসা ”।
(৫) ঢাকা হতে প্রকাশিত, মৌলভী সূফী হাবীবুর রহমান এম এ কর্তৃক: “ইসলাম ও বেদআত”।
(৬) কুমিল্লা হতে প্রকাশিত, হাফেজ মঈনুল ইসলাম কর্তৃক রচিত: “তাবলীগ দর্পণ”।

এছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে আরবী-উর্দ্দু ও বাংলা ভাষায় প্রচলিত ছয় উছুলের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে অনেক পুস্তকাদী রয়েছে। যাতে তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ স্পষ্ট ভেসে উঠেছে।
শরীয়তের দৃষ্টিতে উক্ত আক্বীদাসমূহের পরিণতি
বর্ণিত আক্বীদাসমূূূহ ছাড়াও ঐ সমস্ত ফিরকাগুলোর আরো অসংখ্য কুফুরী আক্বায়েদ রয়েছে। যে কারণে মক্কা মোয়াজ্জামা, মদিনা তাইয়্যোবা, হিন্দ, চীন্দ, বাঙ্গাল, পাঞ্জাব, বার্মা, মাদ্রাজ, গুজরাত, কাট ইয়াওয়ার, বেলুচিস্তান, চরহদ এবং এতদভিন্নও বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কিরাম ও মুফতীয়ানে এজাম ঐ সমস্ত ফিরকার লোকদেরকে পরিস্কার কাফির ও মুরতাদ ফাতওয়া প্রদান করেছেন।
উক্ত দলগুলোর কুফুরীর কারণে কাফির ও মুরতাদ হওয়া সম্পর্কে ফাতওয়া, হুসসামুল হারামাইন এবং আচ্ছাওয়ারিমুল হিন্দিয়া নামক কিতাবদ্বয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
মুসলমানকে মুসলমান জানা এবং কাফিরকে কাফির জানা ধর্মের গুরত্বপূূূর্ণ একটি অংশ। যদিও কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে ইয়াক্বীনের সাথে বলা যায় না যে, তার মৃত্যু ঈমানের উপর হয়েছে না কুফুরীর উপর হয়েছে। যেহেতু সে সময় (মৃত্যুর সময়) ঈমানের সাথে মৃত্যু হল না কুফুরীর সাথে মৃত্যু হল সে বিষয়ে শরীয়তের কোন দলিল নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা স্পষ্ট কাফিরকে কাফির বলা যাবে না একথা বুঝায় না। কারণ কাফির নতুন করে কাফির হয় না বরং কাফির তাওবা করে মুসলমান হতে পারে। সুতরাং কোন মুসলমানের মধ্যে স্পষ্ট কুফুরী পাওয়া গেলে বা কুফুরীতে লিপ্ত থাকলে তাকে ক্বাতয়ী বা স্পষ্ট কাফির বলা হবে। কারণ যে ব্যক্তি স্পষ্ট কুফুরী করেছে সে কাফির হয়েছে। ক্বতিয়ী কাফির বা স্পষ্ট কাফিরের কুফুরীর মধ্যে সন্দেহকারী ব্যক্তিও কাফির হয়ে যায়। (বাহারে শরীয়ত)
কতেক নামধারী অজ্ঞ আলিম বলে থাকে যে, আহলে কিবলা বা যে সমস্ত মুসলমান কিবলার দিকে নামায পড়ে তাদেরকে কাফির বলা যাবে না, চাই সে যে আক্বীদাই রাখুক বা সে যাই করুক না কেন। মনে রাখতে হবে, এ সমস্ত ধারণা সম্পূর্ণই ভুল। বরং বিশুদ্ধ মত হল এ যে, যখন আহলে কিবলা বা নামাযীর মধ্যে তার স্ব-জ্ঞানে স্পষ্ট কুফুরীর কোন আলামত বা চিহ্ন পাওয়া যাবে বা তার দ্বারা কুফুরীর কোন সমর্থন প্রকাশ পাবে, তখন তাকে স্পষ্ট কাফির বলা যাবে।

❏ এ মর্মে হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহিল বারী শরহে ফিকহে আকবরের ১৮৯ পৃষ্ঠায় বলেন:
اِنَّ الْمُرَادَ بِعَدَمِ تَكْفِيْرِ اَحَدٍ مِّنْ اَهْلِ الْقِبْلَةِ عِنْدَ اَهْلِ السُّنَّةِ اَنَّهُ لَايُكَفِّرُ مَالَمْ يُوْجَدْ شَىْءٌ مِّنْ اِمَارَاتِ الْكُفْرِ وَعَلَامَاتِهِ وَلَمْ يُصَدِّرْ عَنْهُ شَىْءٌ مِّنْ مُّوْجِبَاتِهِ
অর্থাৎ- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নিকট কোন আহলে কিবলা বা নামাযীকে কাফির বলা যাবে না। এর অর্থ হল, আহলেই কিবলাকে কাফির বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আহলে কিবলা থেকে কুফুরীর কোন আলামাত বা চিহ্ন পাওয়া না যাবে এবং আহলে কিবলা থেকে কুফুরীমূলক কোন কথায় বা কর্মে সমর্থন প্রকাশ না হবে।"

উল্লেখিত দলিলের দ্বারা প্রমাণ হলো, নামাযী তথা মুসলমানকে কাফির বলা যাবে, যখন তার মধ্যে কুফুরী পাওয়া যাবে। কিন্তু কুফুরী পাওয়া না গেলে কাফির বলা যাবে না।

❏ জগৎ বিখ্যাত শামী নামক কিতাবের ১ম খন্ডের ৩৯৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত যে,
لَا خِلَافَ فِي كُفْرِ الْمُخَالِفِ فِي ضَرُوْرِيَّاتِ الْاِسْلَامِ وَاِنْ كَانَ مِنْ اَهْلِ الْقِبْلَةِ الْمَوَاظِبِ طُوْلُ عُمْرِهِ عَلَي الطَّاعَاتِ كَمَا فِي شَرْحِ التَّحْرِيْرِ
অর্থাৎ- ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ের অস্বীকারকারী ইমামগণের সর্বসম্মতিক্রমে কাফির। যদিও সে আহলে কিবলা বা মুসলমান। এমনকি তার দীর্ঘ জীবন বা সারাটি জীবন নিয়মিত ধর্মীয় কর্মে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও কাফির। এ বর্ণনা শারহুত তাহরীরের মধ্যেও রয়েছে।"

❏ জগৎ বিখ্যাত ফাতওয়ার কিতাব ‘ফাতাওয়ায়ে শামী’র  তৃতীয় খন্ডের ৩০০ পৃষ্টায় বর্ণিত, ইমাম আবু ইউছুফ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কিতাবুল খারাজ এর মধ্যে বর্ণনা করেন যে,
اَيُّمَا رَجُلٍ مُّسْلِمٍ سَبَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْ كَذَّبَهُ اَوْ عَابَهُ اَوْ تَنَقَّصَهُ فَقَدْ كَفَرَ بِاللّٰهِ تَعَالٰي وَبَانَتْ مِنْهُ اِمْرَأَتُهُ
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি হুযুর (ﷺ)কে গালি দেয় অথবা তাঁর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তথা মিথ্যাবাদী বানায় অথবা তাঁর প্রতি কোন দোষ আরোপ করে বা দোষী বানায় অথবা তাঁর শান-মানকে ঘাটায় বা খাট করে, তাহলে সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বয়ং আল্লাহর সাথে কুফুরকারী হিসেবে কাফির হবে এবং সে ব্যক্তির বিবি তালাক হয়ে যাবে।"

উপরোক্ত দলিলসমূহের দ্বারা প্রমাণ হলো, মুসলমানী তথা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, টুপি, দঁাড়ি, পাগড়ী প্রভৃতি আমল জীবনভর করে আসলেও কাফির হয়ে যাবে, যদি ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অস্বীকার করে বা ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি বেয়াদবী, অবহেলা ও অনাস্থা প্রদর্শন করে।
জ্ঞানী বর্গের চিন্তার বিষয় যে, ধর্মের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণর্ বিষয় হলো হুযুর (ﷺ)। কারণ তাঁর দ্বারাই ধর্মের তথা নামায-রোযা, হজ্জ-যাকাত প্রভৃতির বাস্তবায়ন এবং প্রকাশ, তাঁর খাতিরেই আদম হতে ঈসা (আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত প্রত্যেক নবীগণ এবং প্রত্যেক নবীগণের নবুওয়্যাতের এবং ধর্মের প্রকাশ ও সৃষ্টি হয়েছে।

❏ আল্লামা রুমী বলেন-
اصل ايمان روح قرآن مغز دين ●  هست حب رحمة للعالمين
অর্থাৎ- ঈমানের মূল, কুরআনের রূহ, ধর্মের মগয, সমগ্র আলমের রহমত নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ)।

এমতাবস্থায় যিনি ঈমানের মূল, কুরআনের রূহ, ধর্মের মগয, নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ), তিনি ধর্মের জরুরী বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কি-না? তাঁর প্রতি বেয়াদবি, গোস্তাখী বা তাঁর খতমে নবুয়তসহ অন্যান্য গুণাবলীকে অস্বীকার করার দ্বারা ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অস্বীকার বা বেয়াদবি, গোস্তাকী করা হল কি-না? কারণ হুযুর (ﷺ) ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে অন্যতম।
পরিতাপের বিষয় যে, আজকাল বহু ওহাবী, খারেজী, দেওবন্দী ও মওদুদী মার্কা নামধারী আলেম নবীয়ে মাওলা (ﷺ)কে অমার্জিত ভাষায় গাল মন্দসহ মিথ্যা ও অপবাদ সম্বলিত বই-পুস্তক প্রচার করে বেড়াচ্ছে। যা ইতিপূর্বে বর্ণনা করেছি।
     হে আল্লাহ্! এদের বিষাক্ত ছোবল থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন।

ঈমান রক্ষায় কুফুরীর পরিচিতি

‘দস্তুরুল কুযাত’ নামক কিতাবে ‘ফাতাওয়ায়ে খুলাসা’ কিতাব থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে যে, কোন মু’মিন ব্যক্তির মাঝে কুফুরীর একাধিক অবস্থা যদিও পাওয়া যায়, তথাপিও তাকে কাফির বলে ফাতওয়া দেয়া উচিত নয়। কেননা হতে পারে অজ্ঞতা বা অন্য কোন কারণে শুধমাত্র কুফুরী শব্দ উচ্চারণ হয়েছে, কিন্তু উদ্দেশ্য কুফুরী নয়।
তবে কেহ যদি হুযুর পাক (ﷺ)-এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য কুফুরীমূলক বাক্য বা উক্তি প্রকাশ করে, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে সঙ্গে সঙ্গে কাফির হয়ে যাবে। এতে কুফুরকারীর নিয়ত, অজ্ঞতা ও অন্যান্য দিক লক্ষ্য করার প্রয়োজন নেই এবং তা’বিল বা যুক্তি ও আপত্তিরও সুযোগ নেই। যেহেতু হুযুর পাক (ﷺ) স্বয়ং ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং তিনি পূর্বাপর ধর্ম ও সৃষ্টির মূল।
উল্লেখ্য যে, ফাতওয়ার প্রশ্নে মর্ম ও উদ্দেশ্য বুঝা আবশ্যক। তাই অজ্ঞতা বা অন্য কোন কারণে কারো থেকে কুফুরী পরিলক্ষিত হলে তাকে কুফুরী ফাতওয়া না দিয়ে সংশোধনের সুযোগ হিসেবে জানিয়ে দিতে হবে যে, এটা কুফুরী। 

জানার পরও কুফুরী পরিলক্ষিত হলে কুফুরী ফাতওয়া প্রযোজ্য হবে।

❏ ১নং ফাতওয়া:   
যদি কোন মুসলমান কুরআনুল কারীমকে মানব রচনা বলে অথবা কুফুর ও ঈমানকে এক বরাবর জানে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ২নং ফাতওয়া:   
কেহ কুরআন শরীফের কোন আয়াতকে অস্বীকার করলে অথবা ঠাট্টা করলে অথবা কোন আয়াতের আয়েব (দোষ) বর্ণনা করলে কাফির হবে। 

❏ ৩নং ফাতওয়া:   
ঠাট্টা ও কৌতুক ভরে মানুষের কথার স্থানে কুরআনুল কারীমের আয়াত ব্যবহার করলে কাফির হবে। যেমন- কেহ বলল তুমি ক্বুলহু আল্লাহ্, চামড়া খুলে নিয়েছ অথবা ক্ষুধায় আমার পেট ক্বুলহু আল্লাহ্ পড়ছে, অথবা তুই ইন্না আতাইনা সূরার চেয়েও খাট, অথবা ওয়া কানা মিনাল কাফিরীন (অর্থ অন্ধরা সবাই কাফির), অথবা আলক্বারিয়াতু মালক্বারীয়া অর্থাৎ কারিয়া বা লুট করে মাল নেয়া আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন। প্রভৃতি উক্তিসমূহ কুফুরী।

❏ ৪নং ফাতওয়া:   
কেহ যদি কাউকে বলে, জামা‘আতের সাথে নামায আদায় কর। এতদশ্রবণে যদি বলে اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَي (ইন্নাস সালাতা তানহা) অর্থ নিশ্চয়ই নামায বঁাধা প্রদান করে, তবে সে কাফির হবে। কেননা সে আল-কুরআনের আয়াতের সাথে বিদ্রূপ করেছে। অনুরূপ ভাবে কুরআনুল কারীমের কোন অংশকে বিদ্রূপ অর্থে ব্যবহার করা কুফুরী।

❏ ৫নং ফাতওয়া:    
যদি কেহ ঈমানদার হওয়া সম্বন্ধে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে কাফির হবে এবং আল্লাহ্ পাকের কোন নাম গুণ বা হুকুমের প্রতি জেনে বুঝে বিদ্রূপ করলে অথবা জান্নাতের আশা ও জাহান্নামের ভয়ের বিষয়কে অস্বীকার করলে কিংবা তাঁর শরীক, সন্তান ও স্ত্রী প্রভৃতি স্থির করলে অথবা তাঁকে অজ্ঞান ও অক্ষম বলে ধারণা করলে কাফির হবে ।

❏ ৬নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে স্বয়ং আল্লাহ্ও যদি এ কাজ করার জন্য নির্দেশ  দেন তবুও আমি করব না, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ৭নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে, তুমি আমার নিকট আল্লাহর চেয়েও অধিক প্রিয়, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ৮নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বিবির সঙ্গে ঝগড়ায় পরাজয় হয়ে বলে, আমি কি করে তোমার সাথে পারব স্বয়ং আল্লাহ্ তোমার সাথে পারে না, তবে সে  কাফির হবে ।

❏ ৯নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে উপরে আল্লাহ্ আর জমিনে তুমি বা অমুক ব্যক্তি  অথবা এরূপ বলে যে, আগে আল্লাহ্ পাছে তুমি, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ১০নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি আল্লাহ্কে জালেম বলে অথবা বলে যে, আল্লাহ্ তুমি আমার উপর জুলুম করো না, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ১১নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি তার দুশমনকে বলে যে, আমি আল্লাহর হুকুম মত কাজ করি অতঃপর দুশমন উত্তরে বলে যে, আমি খোদার হুকুম বুঝি না অথবা এখানে খোদার হুকুম চলবে না, তবে সে কাফির হবে।  

❏ ১২নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কাউকে বলে যে, তুমি যাও এবং খোদার সাথে লড়াই কর, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ১৩নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কাউকে বলে তুমি এমন কাজ করিও না, আল্লাহ্ তোমাকে দোযখে দিবে, প্রতি উত্তরে সে যদি হেলা-তাচ্ছিল্যের সাথে বলে যে, আমি দোযখের আযাবকে ভয় করি না, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ১৪নং ফাতওয়া:    
কেউ যদি কাউকে বলে যে, তুমি যদি দু’জাহানের খোদাও হও তবুও আমি তোমার কাছ থেকে হক আদায় করে ছাড়ব, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১৫নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি খোদার প্রতি বখিলী ও জুলুম প্রভৃতি দোষারোপ করে তবে সে কাফির হবে।

❏ ১৬নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি সন্দেহ করে বলে যে, আল্লাহ্ যদি রোজ ক্বিয়ামতে হক ইনসাফ (বিচার) করেন, তবে আমি বিচার পাব, তবে সে কাফির  হবে। 

❏ ১৭নং ফাতওয়া:    
কেউ যদি বলে খোদা তুমি আমার প্রতি রহম করতে বখিলী করো না, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১৮নং ফাতওয়া:    
কেউ যদি কাউকে গুণাহের কাজ করতে দেখে বলে যে, তুমি খোদাকে ভয় করনা? উত্তরে যদি সে বলে যে, না, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১৯নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি মিথ্যা কথা বলে আর অন্য ব্যক্তি যদি বলে যে, খোদা তোমার মিথ্যা কথার বরকত দান করুক, তবে সে কাফির হবে।

❏ ২০নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কাউকে বলে ইনশা-আল্লাহ্ তুমি এ কাজ কর, প্রতি উত্তরে যদি সে বলে আমি ইনশা-আল্লাহ্ ছাড়াই এ কাজ করব, তবে সে কাফির হবে।

❏ ২১নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি পীড়িত অথবা দরিদ্র অবস্থায় পতিত হয়ে বলে যে, যখন দুনিয়ায় সুখ-শান্তি হলনা তবে কেন আল্লাহ্ আমাকে সৃষ্টি করল? এ সম্পর্কে কিছু সংখ্যক মুফতীগণের মতে কাফির না হলেও শক্ত গুণাহ্গার হবে।

❏ ২২নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি দরিদ্রতার কবলে পরে বলে যে, অমুক লোকটি আল্লাহর বান্দা সে এত ধন সম্পত্তির অধিকারী আমিও তাঁর বান্দা, আমার এত দুঃখ কষ্ট এটা কি খোদার সুবিচার? তবে সে কাফির হবে। 

❏ ২৩নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে খোদার কসম আর তোমার মাথার কসম অথবা তোমার জানের কসম, তবে কাফির হওয়া সম্বন্ধে মতভেদ আছে।

❏ ২৪নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বিপদে পড়ে বলে যে, খোদা তুমি আমার টাকা-কড়ি কেড়ে নিলে, আমার সন্তান কেড়ে নিলে ,আমার অমুক অমুক বস্তু সমূহ কেড়ে নিলে আর তুমি কি-ইবা করবে, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ২৫নং ফাতওয়া:    
কোন ব্যক্তি বিবাহ করার সময় শরীয়তের স্বাক্ষীদ্বয় উপস্থিত ব্যতীরেকে যদি বলে যে, আমি আল্লাহ্ ও রাসূল (ﷺ)কেই স্বাক্ষী রাখলাম, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ২৬নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি জান্নাত, জাহান্নাম, কবরের আজাব, নেকী-বদী ওজন করার মিজান, পুলছেরাত, আমল-নামা ও আল্লাহর দীদার অবিশ্বাস করে কিংবা তকদীর অথবা মৃত্যুর পর জিন্দা হওয়াকে অবিশ্বাস করে, তবে সে কাফির হবে।

❏ ২৭নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে যে, আল্লাহ্ চারজন বিবি হালাল করেছেন, কিন্তু আমি তা পছন্দ করিনা, তবে সে কাফির হবে।

❏ ২৮নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কারো উপর যুলুম করে আর মজলুম যদি বলে হে আল্লাহ্ তুমি এর তওবা কবুল করো না। আর তুমি যদি করই তবে আমি কবুল করব না, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ২৯নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি রমজান মাসের আগমণে বলে যে, কি মছিবত মাথায় আসল, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৩০নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে যে, আল্লাহ্ তোমার কসম ও তোমার পায়ের কসম তবে কাফির হবে। কেননা প্রকৃত পক্ষেই আল্লাহ্ পাকের হাত, পা আছে এ ধারণা করা আল্লাহ্ পাকের বেমিছাল শানের পরিপন্থী যেহেতু তাঁর সাথে কোন বা কারও তুলনা নেই। 

❏ ৩১নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে অমুক ব্যক্তি যদি নবী হয় তবুও আমি তার উপর ঈমান আনব না অথবা আল্লাহ্ যদি আমাকে নামাজের জন্য আদেশ করেন তবুও আমি নামায আদায় করব না। অথবা ক্বিবলা যদি অমুক দিকে হয় তবে আমি নামায আদায় করব না। এ সমস্ত বক্তব্যে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ৩২নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে আল্লাহ্ পাকের হুকুম তো এরকম। এতদ শ্রবণে অন্যজন বলল, খোদার হুকুম আমি কি জানি? তবে সে কাফির হবে।

❏ ৩৩নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কোন মাছআলা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করে অতঃপর উত্তর দাতা বলে এ বিষয়ে ঈমামগণের মতানৈক্য রয়েছে। তারপর প্রশ্নকারী যদি আবারও বলে যে, তাহলে কি আল্লাহ্ সম্পর্কে কোন সন্দেহ আছে? উত্তর দাতা যদি বলে হঁ্যা এ বিষয়ে মতানৈক্য আছে তবে উভয়ে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ৩৪নং ফাতওয়া:    
আল্লাহ্ পাকের রহমত হতে নৈরাশ হওয়াও কুফুরী।

❏ ৩৫নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি হুযুর পাকের খাদেম হযরত আবু বকর ছিদ্দিক ও হযরত উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমাকে গালি দেয় তবে কাফির হবে। 

❏ ৩৬নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি হুযুর পাক (ﷺ)-এর ব্যাপারে ঠাট্টা করে অথবা গালি দেয় অথবা মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর শান-মান খাট করতে চেষ্টা করে অথবা তাঁর সাথে কোন প্রকারের দুশমনি রাখে তবে কাফির হবে।

❏ ৩৭নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি হুযুর পাক (ﷺ)কে শেষ নবী বলে অস্বীকার করে তবে সে কাফির হবে।

❏ ৩৮নং ফাতওয়া:    
যে অভিশপ্ত ব্যক্তি সরওয়ারে কায়েনাত ফখরে মওজুদাত রাসূলে খোদা (ﷺ)কে গালি দিবে বা তাঁর এহানাত করবে অথবা তাঁর ধর্মীয় কোন ব্যাপারে বা তাঁর সুরত মুবারকের অথবা তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে কোন আয়েব বর্ণনা করবে, তাহলে সে ব্যাক্তি চাই মুসলমান হোক বা যিম্মী বা হরবী হোক চাই রসিকতা মূলক বলে থাকুক কাফির হয়ে যাবে। তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। তার তওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। অধিকন্তু একথার উপরও উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছালাম এর যে কোন একজনের শানেও যদি কেহ বেয়াদবি করে বা তাঁকে হালকা মনে করে তবে তা কুফুরী হবে। বেয়াদবি কারী চাই হালাল মনে করে করুক বা হারাম মনে করে থাকুক।

❏ ৩৯নং ফাতওয়া:    
রাফিযীদের ন্যায় কেহ যদি বলে হুযুর পাক (ﷺ) দুশমনদের ভয়ে আল্লাহর কোন কোন বিধান মানুষের কাছে পৌঁছাননি, তবে কাফির হবে।

❏ ৪০নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কোন পয়গাম্বরকে অস্বীকার করে তবে সে কাফির হবে।

❏ ৪১নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি হুযুর পাক (ﷺ)-এর কোন সুন্নাতকে অস্বীকার করে বা অবজ্ঞাভরে কোন সুন্নাত অপছন্দ করে, তবে কাফির হবে।

❏ ৪২নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি হুযুর পাক (ﷺ)-এর চুল মোবারককে অসম্মান প্রদর্শনের উদ্দ্যেশে মোবারক শব্দটি যোগ না করে শুধু চুল, হাত, মুখ প্রভৃতি বলে, তবে কাফির হবে।  

❏ ৪৩নং ফাতওয়া:    
কেহ কাউকে বলল তোমার গোঁফ ছোট করে নাও, কেননা তা সুন্নত, উত্তরে যদি সে ব্যক্তি অবজ্ঞাভরে বলে আমি তা করব না, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৪৪নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কারো গায়ে ছুন্নতী লম্বা জামা দেখে ঠাট্টা করে বলে আলাম তারা বা এ জাতীয় আয়াতে কারীমা ও শব্দ উচ্চারণ করে, তবে কাফির হবে।

❏ ৪৫নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কারো লম্বা দাঁড়ি দেখে ঠাট্টা করে, সাইন বোর্ড বা প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে, তবে কাফির হবে।

❏ ৪৬নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি ঠাট্টা ভাবে ছুন্নতকে হেয় করার জন্য বলে ঈমান অন্তরের মধ্যে, দাঁড়ির মধ্যে কি ঈমান আছে? তবে সে কাফির হবে।

❏ ৪৭নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে হুযুর পাক (ﷺ) লাউ পছন্দ করতেন। এতদ শ্রবণে এক ব্যক্তি অবজ্ঞা ভরে বলল, আমি তা পছন্দ করি না, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৪৮নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে সুন্নাত কি কাজে আসবে অথবা বলে যে, রেখে দাও তোমার সুন্নাত বা রেখে দাও তোমার শরীয়ত, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৪৯নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি সামান্য বোধ করে কোন ছুন্নতকে সর্বদা ছেড়ে দেয় কিংবা ঘৃণা বশতঃ তা ত্যাগ করে, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ৫০নং ফাতওয়া:    
নখ কাটা সুন্নাত এ কথা শুনে অন্য জন যদি বলে, যদিও সুন্নাত হয়, তবুও আমি করব না অথবা বলে সুন্নাত কি কাজে আসবে ? তবে সে কাফির হবে।

❏ ৫১নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কোন নেককার লোককে ফাসেক ফাজেরদের মজলিশের দিকে ইশারা করে বলে যে, এসো দেখে নাও মুসলমানী কাকে বলে, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৫২নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে, আমি যদি মুসলমান হই, এ কথা শুনে অন্যজন বলল তোমার উপর এবং তোমার মুসলমানীর উপর লানত, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৫৩নং ফাতওয়া:   
নিজের বা অপরের জন্য কুফুরী কামনা করা কুফুরী। 

❏ ৫৪নং ফাতওয়া:    
কেউ যদি বলে আমার সাথে শরীয়তের পথে চল। এতদ্শ্রবনে অন্যজন যদি বলে, আমাকে নিতে হলে সিপাহী নিয়ে এসো, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৫৫নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি অপরজনকে বলে, চল! অমুককে আমর বিল মা’রূফ তথা সৎকাজের আদেশ করি। এতে দ্বিতীয় জন যদি বলে সে আমার কে যে, তাকে আমর বিল মা’রূফ করতে হবে। দ্বিতীয় ব্যক্তি কাফির হবে। কেননা সে একটি ফরজকে এহানত করেছে। 

❏ ৫৬নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কাউকে বলে ঈমান কি? প্রতি উত্তরে যদি বলে জানি না, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ৫৭নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি শরীয়তকে বা শরীয়তের কোন বিষয়কে অস্বীকার করে তবে সে কাফির হবে।

❏ ৫৮নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে আমি ইসলাম ও তাঁর গুণাবলী জানিনা, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৫৯নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে আমার আক্বীদা ফেরাউন ও শয়তানের আক্বীদার মত তবে সে কাফির হবে।

❏ ৬০নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি শরীয়তের ফায়সালাহ অনুযায়ী আপন হক দাবী করে বলে যে, শরীয়তের ফায়সালা তো এরকম। এতে অপর ব্যক্তি যদি সজোরে প্রত্যাখ্যান করে বলে শরীয়তের জন্য বুঝি এ কাজ? এতে দ্বিতীয় ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। কেননা এখানে শরীয়তকে অবজ্ঞা করা হল।

❏ ৬১নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি গুণাহের কাজ করার সময় ঠাট্টা করে বলে যে, আমি মুসলমানী প্রকাশ করছি, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৬২নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি তায়াম্মুম কারীকে দেখে হাসে, তবে সে শরীয়তের সংবিধানকে হেয় করে দেখার কারণে কাফির হবে।

❏ ৬৩নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি ইসলাম ধর্মের সাথে অন্য কোন মানব রচিত ধর্মকে তুলনা করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। যেমন: হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্দ প্রভৃতির সঙ্গে তুলনা করা। 

❏ ৬৪নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি শরীয়তের বিধানকে আযাব মনে করে, তবে সে কাফির হবে। যেমনঃ অনেকেই রমযানের রোযা, শীতের সেহরী, আল্লাহর পথে প্রকাশ্য জেহাদ প্রভৃতিকে আযাব মনে করে। এগুলোও সে মাসআলার শ্রেণীভুক্ত।

❏ ৬৫নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি ক্বিবলার দিক ব্যতীত ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্য দিকে ফিরে নামায পড়ে, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৬৬নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে আদম আলাইহিছ ছালাম গন্দম না খেলে আমরা আজ হতভাগ্য হতাম না, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ৬৭নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে হযরত আদম আলাইহিছ ছালাম কাপড় বানাতেন অতএব আমরা সকলেই জোলার সন্তান, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৬৮নং ফাতওয়া:    
কেহ কাউকে বলল তুমি নামায পড়, প্রতি উত্তরে অবজ্ঞা ভরে বলল আমি কখনও নামায পড়ব না, তবে সে কাফির হবে। যেমনঃ কেউ কাউকে বলল, তুমি নামায পড় আর উত্তরে সে বলল নামায পড়া আর না পড়া একই কথা। অথবা বলল এত নামায পড়লাম যে, অন্তর অস্থির হয়ে পড়েছে, অথবা বলল নামায কোন কাজে লাগে? অথবা বলল অনেক নামজইতো পড়লাম কিন্তু কোন লাভতো হল না। অথবা বলল তুমিই বা এত নামায পড়ে কি করলে? প্রভৃতি বাক্য সমূহ কুফুরী।

❏ ৬৯নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে বিনা অজুতে অথবা নাপাক শরীরে কিংবা নাপাক কাপড়ে নামায পড়ে তবে সে কাফির হবে।

❏ ৭০নং ফাতওয়া:    
স্পষ্ট হারামকে হালাল জানলে বা স্পষ্ট হালালকে হারাম জানলে অথবা কোন ফরজকে ফরজ বলে অস্বীকার করলে কাফির হবে। 

❏ ৭১নং ফাতওয়া:    
কেউ যদি হারাম বস্তু খাবার কালে বিছমিল্লাহ বলে তবে কাফির হবে এবং হায়েজের সময় স্ত্রী সহবাসকে হালাল জানলে কাফির হবে।

❏ ৭২নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি ঠাট্টা বিদ্রূপ, কৌতুক বা অবজ্ঞা ভরে মুখ থেকে কুফুরী শব্দ বের করে তবে সে কাফির হবে।

❏ ৭৩নং ফাতওয়া:    
কাফিরদের হোলী দেওয়ালি পুজাতে আমোদ ফুর্তি দেখে কেহ যদি বলে, এটা অতি সুন্দর প্রথা তবে কাফির হবে। (যা মুসলমানী প্রথার উপর প্রধান্য দেওয়া হল)

❏ ৭৪নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কোন ঈমানদার বা মুসলমাকে কাফির বলে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ৭৫নং ফাতওয়া:    
এক ব্যক্তি কুফুরী মূলক কথা বলল দ্বিতীয় ব্যক্তি তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে হাস্য করল, এ ক্ষেত্রে উভয়েই কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৭৬নং ফাতওয়া:    
গুণাহ্ ছোট হোক আর বড় হোক হালাল জানলে কাফির হবে।

❏ ৭৭নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি ইনকার, ঘৃণা, তাচ্ছিল্য করে নামায ত্যাগ করে তবে কাফির হবে। আর যদি শৈথিল্য বশতঃ হয়, তবে কাফির হবে না বরং গুণাহগার হবে। 

❏ ৭৮নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কাফির হয়ে যাবে বলে ইচ্ছা করে, তবে সে সঙ্গে সঙ্গেই কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৭৯নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে আমি ছাওয়াব ও আজাবের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট, তবে সে কাফির হবে।

❏ ৮০নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে যতক্ষণ হারাম রুজী পাব তো হালালের কাছে কেন যাব, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৮১নং ফাতওয়া:    
কেউ যদি রুগ্নাবস্থায় বলে, চাই আমার কাফেরের মৃত্যু হোক, চাই মুসলমানের মৃত্যু হোক, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা সে কুফুরীর মৃত্যুর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। 

❏ ৮২নং ফাতওয়া:    
কেউ যদি আযান দিচ্ছে এমতাবস্থায় অন্যজন এ আজান শুনে বলল যে, তুমি মিথ্যা বলছ, তবে কাফির হবে। কেননা আজানের প্রতি এহানত করা হয়েছে।

❏ ৮৩নং ফাতওয়া:    
কেউ যদি একজনকে বলে তুমি কাফির হয়ে গেছ। আর সে ব্যক্তি উত্তরে বলল আমারও তাই ধারণা, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৮৪নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি এরূপ বলে যে, নামায-রোজা থেকে খেলা-ধূলাতো আমাকে আবদ্ধ করে রেখেছে সুতরাং নামায-রোজা করার মত সুযোগ কোথায়? তবে সে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৮৫নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি এরূপ বলে যে, তুমি কিছু দিন নামায থেকে বিরত থেকে দেখে নাও বেনামাজির মাঝে কত মজা ! তবে সে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৮৬নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি এমন কামনা করে যে, যিনা বা নাহক্ব, হত্যা যদি হালাল হত তবে কতইনা ভাল হত, তবে এরূপ কামনাকারী কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৮৭নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি ছগীরা গুণাহ করে এবং অন্য কেহ তাকে তওবা করার জন্য বলে, এতে সে যদি বলে আমি এমন কি করেছি যার জন্য তওবা করতে হবে, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ৮৮নং ফাতওয়া:   
কোন কাফির শরাব পান করছে, এমতাবস্থায় তার কোন আত্মীয় তথায় উপস্থিত হয়ে তাকে টাকা প্রদান করল অথবা সবাই তাকে মোবারকবাদ জানালো, তাহলে উভয় অবস্থাতে সকলেই কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৮৯নং ফাতওয়া:    
কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি কোন অমুসলিম সুন্দরী নারীকে দেখে বলে আহ্ আমি যদি তার ধর্মাবলম্বী হতাম, তাহলে তাকে বিবাহ করতে পারতাম, তবে কামনাকারী কাফির হয়ে যাবে।

❏ ৯০নং ফাতওয়া:    
কোন মহিলা যদি তার স্বামীকে বলে, তোমার সাথে বসবাস করার চেয়ে কাফির হয়ে যাওয়া উত্তম, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা সে স্বামীর অবাধ্য হয়েছে আর স্বামীর বাধ্য থাকা ফরজ। যেহেতু মহিলা এ ক্ষেত্রে কুফুরকে ফরজের উপর প্রাধান্য দিয়েছে।

❏ ৯১নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি মদ বা যিনা করার শুরুতে বিছমিল্লাহ বলে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে।    

❏ ৯২নং ফাতওয়া:    
যদি কেহ কুরআন ও হাদীসের বিধানকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ৯৩নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি ইহ ও পর জগতের স্পষ্ট কোন কারণ ব্যতীত কোন আলেম বা ফকীহকে গালি দেয় তবে সে কাফির হবে। 

❏ ৯৪নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে, ইলমের মজলিশের সাথে আমার কি আবশ্যক? কিংবা বলে যে, আলেমগণ যা বলে তা পালন করার ক্ষমতা কার আছে? তবে সে কাফির হবে।

❏ ৯৫নং ফাতওয়া:    
কোন ফকীহ বা আলেম, ইলম বা হাদীছের কথা বর্ণনা কালে কেহ যদি বলে, এ কথা কি কাজে আসবে? টাকার প্রয়োজন, বর্তমান যুগে টাকাই মানুষের মান-সম্মান লাভ হয়, এমন ইলম কি কাজে আসবে? তবে সে কাফির হবে।

❏ ৯৬নং ফাতওয়া:    
কেহ কোন ফাতওয়া দেখে যদি বলে, তুমি এটা কিসের ফাতওয়ার হুকুমনামা নিয়ে এসেছ? সে যদি শরীয়তকে তুচ্ছ ও হালকা মনে করে বলে থাকে, তবে সে কাফির হবে।    

❏ ৯৭নং ফাতওয়া:    
কোন কাফির ব্যক্তি যদি একজন ওয়ায়েজকে বলে, আমাকে ইসলাম শিখিয়ে দিন, যাতে আমি আপনার হাতে মুসলমান হতে পারি। সে লোকটি উত্তরে বলল, এখন ক্ষান্ত কর এবং অমুক কাযী বা আলেমের কাছে অথবা অমুক দিন মাহফিলে গিয়ে মুসলমান হয়ে যেও, তবে সে ওয়ায়েজ কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ৯৮নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি বলে উলামায়ে দ্বীনের কাজ এরকম, কাফিরদের কাজও এরকম, তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ৯৯নং ফাতওয়া:    
কেহ যদি কোন মদের আড্ডায় ওয়ায়েজ এর মত মঞ্চে বসে ওয়াজ করাকে বিদ্রূপ করে, হাসি ঠাট্রার কথা বলে এবং শ্রোতারাও তা শ্রবণ করে হাসা-হাসি করে তবে সকলেই কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ১০০নং ফাতওয়া:
কেহ যদি কোন উঁচু স্থানে বসে থাকে এবং মানুষ ঠাট্টা স্বরূপ তার কাছ থেকে মাছআলা জিজ্ঞাসা করে, আর সেও ঠাট্টা করে উত্তর দিতে থাকে এমতাবস্থায় সকলেই কাফির হবে।

❏ ১০১নং ফাতওয়া:
কেহ যদি বলে যে, তুমি যদি দ্বীনি ইলমের বা নছিহতের মজলিসে যাও, তবে তোমার স্ত্রী ত্বালাক হয়ে যাবে অথবা তোমার জন্য তোমার স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, তবে বক্তা কাফির হয়ে যাবে।

❏ ১০২নং ফাতওয়া:
কোন মুসলমান যদি মূর্তি তৈরী করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ১০৩নং ফাতওয়া:
যদি কোন মুসলমান বিধর্মীদের নিরোজ বা অষ্টমী জাতীয় অনুষ্ঠানাদীতে এমন কোন বস্তু ক্রয় করে যা মুসলমানদের জন্য জায়েজ নেই, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। যেমন জীবের আকৃতিতে কোন খাদ্য সামগ্রী বা খেলার সামগ্রী ক্রয় করা।

❏ ১০৪নং ফাতওয়া:
কতেক ফকীহ্গণের মতে কেহ যদি ৫০ (পঞ্চাশ) বছর আল্লাহর ইবাদত করে অতঃপর সে অমুসলিমদের কোন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে, তবে তার ৫০ (পঞ্চাশ) বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে এবং সে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ১০৫নং ফাতওয়া:
কোন সাধারণ ব্যক্তি যদি গায়েব জানার দাবী করে বা কোন গণক বা ভবিষ্যৎ বক্তার কথা বিশ্বাস করে, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১০৬নং ফাতওয়া:
যদি কেহ বলে যে, তোমার চেহারাকে আজরাঈলের চেহারার ন্যায় দুশমন জানি, তবে অধিকাংশ মুফ্তীগণের মতে কাফির হবে।

❏ ১০৭নং ফাতওয়া:
কেউ যদি জেনে বুঝে ছাওয়াব পাওয়ার আশায় হারাম বস্তু দান করে তবে কাফির হবে। আর গরীব তা হারাম জেনেও যদি তার জন্য দোয়া করে এবং দাতা আমিন! আমিন! বলে, তবে কাফির হবে।

❏ ১০৮নং ফাতওয়া:
কেহ যদি কাউকে বলে দুনিয়াকে আখেরাতের জন্য ত্যাগ কর, এর উত্তরে যদি বলে নগদকে বাকীর পরিবর্তে ছাড়তে পারি না, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১০৯নং ফাতওয়া:
কেহ যদি কোন পাখির আওয়াজ শুনে ভবিষ্যৎ করে যে, একজন লোক মারা যাবে, মেহমান আসবে প্রভৃতি তবে সে কাফির হবে।

❏ ১১০নং ফাতওয়া:
আমাবশ্যা, পূর্ণিমা, গ্রহ-নক্ষত্র ও মেঘ গর্জন ইত্যাদিকে বৃষ্টি হওয়ার কারণ বলে ভবিষ্যৎ করা কুফুরী।

❏ ১১১নং ফাতওয়া:
কেহ যদি বলে আমি অমুকের স্বাক্ষী বিশ্বাস করব না। যদিও সে জিব্রাঈল বা মিকাঈল হয়, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১১২নং ফাতওয়া:
কেহ যদি বলে এ যুগে যতক্ষণ বিশ্বাস ঘাতকতা না  করি বা মিথ্যা কথা না বলি ততক্ষণ একদিন ও চলতে পারি না কিংবা বলে যে, যদি তুমি বেচা-কেনা, কাজ-কারবারে মিথ্যা কথা না বল, তাহলে রুটি বা খোরাক জুটবে না, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ১১৩নং ফাতওয়া:
কেহ যদি বলে মিথ্যা বলিও না, উত্তরে যদি বলে তাহলে মিথ্যা কিসের জন্য? তবে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ১১৪নং ফাতওয়া:
কেহ যদি বলে মদ খেওনা, উত্তরে যদি বলে তাহলে মদ কিসের জন্য? তবে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ১১৫নং ফাতওয়া:
কেহ যদি কাউকে বলে তুমি অমুকের সঙ্গে সন্ধি করে নাও, তদুত্তরে যদি বলে মূর্তিকে সেজদা করব তবুও তার সাথে সন্ধি করব না, তবে দ্বিতীয় ব্যক্তি কাফির হবে। 

❏ ১১৬নং ফাতওয়া:
কোন মদ্যপায়ী লোক যদি বলে আমাদের খুশিতে যারা খুশি, তারা খুশহালে থাকবে, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১১৭নং ফাতওয়া:
কোন মেয়েলোক যদি বলে আকলমন্দ স্বামীর উপর লানত, তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ১১৮নং ফাতওয়া:
কেহ যদি কোন জালেম বাদশাহ বা বিচারককে (জাগতিক স্বার্থে) ন্যায় বিচারক বলে আখ্যায়িত করে, তবে ইমাম আবু মানসুর মাতুরদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ১১৯নং ফাতওয়া:
কেহ যদি এরূপ বিশ্বাস করে যে, খেরাজ বা এ জাতীয় যে সমস্ত সরকারী ভান্ডার আছে তার মালিকানা বাদশারই, তবে সে ব্যক্তি কাফির হবে।

❏ ১২০নং ফাতওয়া:
কেহ যদি কোন মেয়ে লোককে বলে, তুমি মুরতাদ হয়ে যাও, তাহলে তোমার স্বামী থেকে পৃথক হতে পারবে, তবে যে একথা শিক্ষা দিল সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা এ কথার মাধ্যমে অন্যকে কুফুরী করার প্রতি উৎসাহিত করা হল এবং নিজেও কুফুরী করাকে পছন্দ করল ।

❏ ১২১নং ফাতওয়া:
কেহ যদি অগ্নিপুজকদের ন্যায় টুপি পরিধান বা জামা-কাপড় পরিধান করে, কিছু সংখ্যক আলেমগণের মতে সে সঙ্গে সঙ্গে কাফির হয়ে যাবে। 

❏ ১২২নং ফাতওয়া:
কেহ যদি ব্যবসায়িক সুবিধা লাভের জন্য জানি (ব্রাহ্মনদের পৈতা) পরিধান করে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ১২৩নং ফাতওয়া:
কেহ যদি করয্দারকে বলে যে, আমার টাকা-পয়সা দুনিয়াতে দিয়ে দাও। কেননা আখেরাতে তো টাকা-পয়সা থাকবেনা, করয্দার বলল আরও ১০টি টাকা আমাকে দিয়ে দাও, আখেরাতে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিও, এতে সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা একথা দ্বারা আখেরাতকে এহানত করা হল।

❏ ১২৪নং ফাতওয়া:
কেহ যদি বলে বেক্কলের ডাল হলেই মেহমানী, তবে সে কাফির হবে। কেননা ৭০জন পয়গাম্বর ডালের প্রশংসা করেছেন।

❏ ১২৫নং ফাতওয়া:
কেহ যদি ছগীরা গুণাহ অস্বীকার বশতঃ হালাল জেনে করে কাফির হবে। কিন্তু কবীরা গুণাহকে গুণাহ জেনে করলে কাফির হবে না বরং গুণাহ হবে এবং তওবা করলে দয়াল মাওলা মাফ করে দিতে পারেন। 

❏ ১২৬নং ফাতওয়া:
যে বিষয়টি সমস্ত মুফতীগণের মতে কুফুরী মূলক তা যদি কেহ আমল করে, তবে তার সমস্ত নেক আমল কুফূরীর কারণে বিনষ্ট  হয়ে যাবে, তার বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে, পুনরায় ঈমান গ্রহণ করতঃ বিবাহ শুদ্ধ করে নিতে হবে, নতুবা সন্তান হারামজাদা হবে। হজ্ব করে থাকলে পুনরায় হজ্ব করা ওয়াজিব হবে। 

❏ ১২৭নং ফাতওয়া:
আর যে বিষয়ে সমস্ত মুফতীগণের মতে কাফির হওয়া সমন্ধে মতভেদ আছে, কেহ যদি এরূপ মতভেদ পূর্ণ কুফুরী কথা বা কর্ম করে, তাহলে সে তওবা করে নিবে এবং কালেমা পড়ে নিবে এবং বিশুদ্ধতার জন্য বিবাহ দোহরাবে।

❏ ১২৮নং ফাতওয়া:
কেহ যদি স্বেচ্ছায় শরীয়ত সঙ্গত কোন কারণ ব্যতীত কুফুরীমূলক কথা বলে এবং তার যদিও তদনুরূপ আক্বীদা না থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। আর যদি কোন মূর্খ লোক কুফুরী মূলক কথা বলে থাকে কিন্তু কথাটি কুফুরী মূলক হওয়া সম্পর্কে তার জ্ঞান না থাকে তবে কাফির হওয়া সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে। অধিকাংশ মুফতীগণের মতে সে কাফির হবেনা। কিন্তু যদি তা দ্বীনের জরুরী বিষয় হয় এবং তা যদিও না জেনে বলে থাকে তথাপিও সে ব্যক্তি কাফির হবে, কেননা কোন মুসলমানের পক্ষে দ্বীনের জরুরী বিষয়গুলো না জানা কোন ওজর আপত্তি হতে পারে না।

❏ ১২৯নং ফাতওয়া:
কেহ যদি নবুয়তকে সাধণা করে অর্জন করা যায় বলে বিশ্বাস করে, তবে কাফির হবে।

❏ ১৩০নং ফাতওয়া:
কেহ যদি হুযুর পাক (ﷺ)-এর ইলমে গায়েবকে সাধারণ ভাবে অস্বীকার করে তবে কাফির হবে।

❏ ১৩১নং ফাতওয়া:
কেহ যদি বলে হুযুর পাক (ﷺ)-এর ইল্মের (জ্ঞান) চেয়ে শয়তানের ইল্ম বেশী, তবে সে কাফির হবে। 
❏ ১৩২নং ফাতওয়া:
কেহ যদি হুযুর পাক (ﷺ)কে হেকারতের বা তাচ্ছিল্যের সাথে বড় ভাই, মানুষ, লোক, মুহাম্মদ বলে ডাকে, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১৩৩নং ফাতওয়া:
কেহ যদি হুযুর পাকের অসংখ্য গুণরাজীর কোন একটিকে যেমন: হুযুর পাক রাহমাতুল্লিল আলামীন, শাফিউল মুজনেবীন, খাতামুন নাবেয়ীন প্রভৃতিকে অস্বীকার করে, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ১৩৪নং ফাতওয়া:
যে ব্যক্তি ধর্মের মৌলিক বিষয়ের কোন একটির কুৎসা বা অবজ্ঞা করে, তবে সে ব্যক্তি কাফির হবে। যদিও তার অসংখ্য নেক আমল থেকে থাকে।

❏ ১৩৫নং ফাতওয়া:
যদি কেহ, নবী নয় এমন কাউকে নবী কিংবা নবীর বরাবর বা নবীর চেয়ে উত্তম মনে করে, তবে সে সর্ব-সম্মতিক্রমে কাফির হবে।

❏ ১৩৬নং ফাতওয়া:
যে ব্যক্তি কোন অলিউল্লাহ তথা আল্লাহর অলীকে কোন নবীর চেয়ে উত্তম বা বরাবর মনে করে, তবে সে কাফির হবে।   

❏ ১৩৭নং ফাতওয়া:
যদি কেহ অবজ্ঞার সঙ্গে বলে যে, পাক-পাঞ্জাতন কোন বিষয় না, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১৩৮নং ফাতওয়া:
যদি কেহ বলে নবীগণকে গায়েবের ইলম দেওয়া হয় নাই, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১৩৯নং ফাতওয়া:
যদি কেহ বলে আল্লাহর জাতের মধ্যে মিথ্যা থাকা সম্ভব, তবে সে কাফির হবে।

❏ ১৪০নং ফাতওয়া:
যদি কেহ এ আক্বীদা পোষণ করে যে, হুযুর পাক (ﷺ)-এর পরে আরো নবী আসা সম্ভব, তাহলে সে কাফির হবে।

❏ ১৪১নং ফাতওয়া:
কেউ যদি বলে নামাজের মধ্যে হুযুর পাক (ﷺ)-এর ধ্যান ধারণার চেয়ে গরু-গাধার (অর্থাৎ চতুষ্পদ জন্তুর) ধ্যান ধারণা অতি উত্তম তাহলে কাফির হবে। 

❏ ১৪২নং ফাতওয়া:
কেহ যদি বলে হুযুর পাক (ﷺ)-এর মর্যাদা বড় ভাইয়ের সমতুল্য। এর চেয়ে অধিক মর্যাদার অনুপযোগী তাহলে সে কাফির হবে।

❏ ১৪৩নং ফাতওয়া:
কেহ যদি বলে, ফেরেশ্তাগণ ও নবীগণ যদিও সাক্ষী প্রদান করে বলে যে, তোমার কাছে রৌপ্য নাই তবুও আমি বিশ্বাস করব না, তবে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ১৪৪নং ফাতওয়া:
কেহ যদি হুযুর (ﷺ) আল্লাহর নূর হওয়াকে অস্বীকার করে তবে কাফির হবে।

❏ ১৪৫নং ফাতওয়া:
কেহ যদি হুযুর (ﷺ)-এর  হাযির নাজির হওয়াকে অস্বীকার করে, তবে কাফির হবে।

❏ ১৪৬নং ফাতওয়া:
কেউ যদি আল্লাহর দীদার বা দর্শনকে অস্বীকার করে তবে কাফির হবে।

❏ ১৪৭নং ফাতওয়া:
কেহ যদি কোন বাদশাহকে (বা অন্য কাউকে) ইবাদতের সেজদা করে, তবে সর্ব সম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যাবে, তবে কদমবুচি বা পদচুম্বন ও হস্ত চুম্বন সুন্নত।

❏ ১৪৮নং ফাতওয়া:
যে ব্যক্তি হুযুর (ﷺ) শাফায়াতকারী হওয়া ও হায়াতুন নবী হওয়াকে অস্বীকার করবে সে কাফির হয়ে যাবে।

❏ ১৪৯নং ফাতওয়া:
যদি কেহ এ আক্বিদা পোষণ করে যে, হুযুর পাক (ﷺ) মরে মাটির সঙ্গে মিশে গেছেন, তবে সে কাফির হবে। 

❏ ১৫০নং ফাতওয়া:
কোন আহলে ক্বিবলা বা মুসলমান ব্যক্তি যদি হুযুর (ﷺ)কে গালি দেয় অথবা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করে তথা মিথ্যাবাদী বানায় অথবা তাঁর প্রতি কোন দোষারোপ করে বা দোষী বানায় অথবা তাঁর শান-মানকে ঘাটায় বা খাট করে, তাহলে সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বয়ং আল্লাহর সাথে কুফুরী কারী হিসেবে কাফির হবে এবং সে ব্যক্তি থেকে তার স্ত্রীর বিবাহের সম্র্পক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

হে আল্লাহ্ আমাদেরকে এ সমস্ত আক্বীদা ও কর্মাদি থেকে হুযুর (ﷺ)-এর খাতিরে হিফাযত করুন। আমিন।

 
Top