মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রজনীতে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাসমূহ
🖋কৃতঃ মাসুম বিল্লাহ সানি



👉 সৃষ্টির সেরা শুভ রজনী যে রজনীতে রত্নাগর্ভা মা আমিনা (রাঃ) ধারন করলেন রাসূলাল্লাহ (ﷺ) এর নূর মুবারককে পবিত্র নূরানী গর্ভে :


- এ রজনীতে শয়তানদের বনী আদমকে বিভ্রান্ত করার সকল কৌশল বন্ধ হয়ে গেল।
- ফেরশতাকুল শয়তানের সিংহাসন উল্টিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিল।
- জৈনক ফেরেশতা এটাকে সমুদ্রে চল্লিশ দিন পর্যন্ত ডুবাতে থাকল।
- ফেরশতাকুল শয়তানকে ভীষন প্রহার করল, ফলে সে আবূ কোবাইস নামক পাহাড়ে আত্নগোপন করতে বাধ্য হলো।
- শয়তান সেখানে ভীষন চিত্‍কার করতে থাকল। চিৎকার শুনে তার দল লশকর সকলে এসে উপস্থিত হলো।
তারা বলল, হে দলপতি! আপনি ক্রন্দন করছেন কেন?সে বলল মহাবিপদ উপস্থিত।অত্র রাত্রিতে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) মাতৃগর্ভে স্থিতি লাভ করেছে।
- তার দরুনই দুনিয়া ও আখিরাতের ইজ্জত,
- সে নগ্ন তলোয়ার নিয়ে আবির্ভূত হবে।
- ফলে আমার বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে,
- সে পূর্ববতী ধর্মগুলো রহিত (মূলোচ্ছেদ) করে দিবে;
- মূর্তিসমূহ ধ্বংস করে দিবে;
- ব্যভিচার, শারাবখোরী ও জুয়া হারাম করে দিবে;
- জৌতিষ্কের বিদ্যা বিলুপ্ত করবে;
- হক কথা বলবে;
- ইনসাফে শ্রীবৃদ্ধী সাধন করবে;
- আসমানের তারকামালার ন্যায় মসজিদসমূহ মিটমিট করে জ্বলতে থাকবে;
- প্রতি স্থানে আল্লাহর নাম নিবে;
উক্ত উত্তম কাজগুলো তার জামায়াতকে আকড়িয়ে থাকবে, এগুলোতে আমার কোন ফন্দী চলবেনা।
  • [সূত্র- রাওজাতুল আহবাব]


👉 ইমাম আল-বায়হাকী (রহ) ও ইমাম আবু নুআইম (আল-আসবাহানী রহ.) বর্ণনা করেন,
‘ওই সময়টায় এক ইহুদি ব্যবসার কাজে মক্কায় অবস্থান করছিলেন। যখন হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভ-আবির্ভাবের রাতটি ঘনিয়ে এলাে তখন তিনি বললেন, ওহে ইহুদি জাতি! মহামানব আহমদ (ﷺ) এর তারকা উদিত হয়েছে, আজ রাতেই তিনি জন্মলাভ করবেন।
  • (ক) আল-বায়হাকী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ. ১, পৃ. ১০৯-১১০, হাদীস: ৪৬; 
  • (খ) আবু নুআইম আল-আসবাহানী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ, ১, পৃ. ৭৫, হাদীস: ৫, হযরত হাসান ইবনে সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত
  • (গ) মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ ১১৬

👉 হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, 

সে সময় এক ইহুদি মক্কায় অবস্থান করছিলেন। যখন হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভ-আবির্ভাবের রাতটি ঘনিয়ে এলাে তখন তিনি বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আজ কি তােমাদের বংশে কোনাে নবজাতকের জন্ম হয়েছে? তারা বলল, না। তিনি বললেন, দেখো দেখো! নিশ্চয় আজ রাতে জন্ম নেবেন এ জাতির নবী (ﷺ) তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে এর নিদর্শন রয়েছে। একথা শুনে কুরাইশের লােকেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লাে এবং খবরাখবর নিতে লাগলাে। অতঃপর খবর পাওয়া গেল, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের ঘরে এক নবজাতক জন্ম নিয়েছে। কুরাইশের লােকজনকে সাথে নিয়ে ইহুদি তাঁর মায়ের কাছে হাজির হলেন। মাতা আমিনা তাঁর সদ্যোজাত শিশুটিকে দেখাতে সম্মত হন। ইহুদি নবুওয়াতের নিদর্শন দেখে চমকে গেলেন এবং বলে ওঠলেন, ইসরাইলের বংশে নুবুওয়তের ধারা শেষ হয়ে গেছে। হে কুরাইশ সম্প্রদায়! খােদার কসম! এই শিশুটির মাধ্যমে গােটা পৃথিবীতে তােমরা সুউচ্চ মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে। তাঁর জীবনাদর্শ সমগ্র দুনিয়ায় বিস্তার লাভ করবে।
- এটি ইমাম ইয়াকুব ইবনে সুফয়ান (রহ) হাসান স্তরের সনদে বর্ণনা করেছেন। ফতহুল বারীতে এমনটিই বর্ণিত হয়েছে।

  • ইবনে হাজর আল-আসকলানী, ফতহুল বারী, খ, ৬, পৃ. ৫৮৩, 
  • মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ ১১৬


👉 নবী করীম -এর জন্ম মুহূর্তে কিসরার রাজপ্রাসাদে প্রবল কম্পনের সৃষ্টি, এর চৌদ্দটা ইট খসে পড়া, রাজকীয় লেক শুকিয়ে যাওয়া এবং পারস্য অগ্নিশিখা নিভে যাওয়া—যে-অগ্নিশিখা হাজার বছর থেকে কেউ নেভায়নি। এ-ধরনের ঘটনাবলিও বেশ বিষ্ময়কর। এ-প্রসঙ্গে আরও অনেকে বর্ণনা করেছেন, এটি একটি প্রসিদ্ধ বর্ণনা।

  • (ক) আল-বায়হাকী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ. ১, পৃ. ১২৬-১২৭, হাদীস: ৬১।
  • (খ) আবু নুআইম আল-আসবাহানী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ. ১, পৃ. ১৩৮, হাদীস: ৮২।
  • (গ) আল-খারায়িতী, ওয়াতিফুল জিনান, পৃ. ৫৭, হাদীস: ১৪।
  • (ঘ) মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ ১১৭।
  • (ঙ) ইবনে আসাকির, তারিখুল দামিস্ক, খ, ৩৭, পৃ. ৬১, হাদীস: ৪৪০৪;


👉 হানি ইবন হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
এ রাতটিতে আল্লাহর রাসুল (ﷺ) জন্মলাভ করেন ওই রাতে কিসরার রাজপ্রাসাদে প্রবল কম্পনের হয়, এর চৌদ্দটি ইট খসে পড়ে, পারস্য অগ্নিশিখা নিভে যায়- যে অগ্নিশিখা হাজার বছর কেউ নেভায় নি এবং রাজকীয় লেক শুকিয়ে যাওয়া।'

  • [ইবনে আসাকির, তারিখুল দামিস্ক, খ, ৩৭, পৃ. ৬১, হাদীস: ৪৪০৪]

👉 চৌদ্দটা ইট খসে পড়ার মধ্যে খসে পড়া ইটের সমপরিমাণ তারা এ সাম্রাজ্যে রাজত্ব করতে পারবে—এমন ইঙ্গিত নিহিত ছিলাে। বাস্তবত (নবী করীম ﷺ- এর জীবদ্দশায়) চার বছরে তাদের দশজন সম্রাট রাজত্ব করে এবং অন্যরা হযরত ওসমান (ইবনে আফফান গ্রাঙ্গ)-এর খিলাফত পর্যন্ত সময়ে ক্ষমতায় ছিলাে। 
  • (১) ইবনে সাইয়িদুন নাস, উরুন অল-আসর ফি চুনুন আল-মাযি ওয়া আশ-শামায়িল ওয়া আস সিয়ার : ১, পৃ: ৩৬ 
  • (২) ইমাম কাস্তালানী : আল-মাওয়াহিবুল লুদুনিয়ায়ও উল্লেখ আছে।
  • (৩) মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ ১১৭
👉 এছাড়া আকাশের নিরাপত্তার জন্য শিহাব নামক অগ্নিগােলক মােতায়েন, শয়তানের আনাগােনার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া এবং ওঁৎপেতে ঊর্ধ্বজগতের বার্তা শােনার ক্ষেত্রে শয়তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরােপের ঘটনাও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
  • [ইমাম কাসতালানী : আল-মাওয়াহেব, খ, ১, পৃ. ৮০-৮১]



নবী করীম ﷺ খতনাকৃত এবং নাভিকর্তিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন।



👉 হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত আছে,
عن أنس به، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من كرامتي على بي آي ويذ مختونا، وكم ير أحد وعي».
নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেন,
খতনাকৃত অবস্থায় আমি জন্মলাভ করেছি এটি আমার প্রভুর পক্ষ থেকে আমাকে প্রদত্ত বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার একটি এবং কেউ আমার লজ্জাস্থান দেখেনি।"

  • (১) আত-তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, খ, ৬, পৃ. ১৮৮, হাদীস: ৬১৪।
  • (২) আবু নুআইম আল-আসবাহানী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ. ১, পৃ. ১৫৪, হাদীস: ৯১।
  • (৩) আল-খতীবুল বাগদাদী, তারিখে বগদাদ, খ. ২, পৃ. ১৭৯, হাদীস: ২৩২।
  • (৪) ইবনে আসাকির, তারিখ দামিস্ক, খ, ৩, পৃ. ৪১৩, হাদীস: ৭৬২ । 
  • (৫) যিয়াউদ্দিন আল-মাকদিসী, আল-আহাদীসুল মুখতারা, খ, ৫, পৃ. ২৩, হাদীস: ১৮৬৪
  • (৬) মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ : ১১৮ 


👉 আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,
নবীজি ﷺ খতনাকৃত অবস্থায় জন্মলাভ করেন।

  • [ইবনে আসাকির, তারিখুল দামিস্ক, খ, ৩, পৃ. ৪১২, হাদীস: ৭৬১]


👉 আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, 'আমি খতনাকৃত ও নাভিকর্তিত অবস্থায় জন্মলাভ করেছি।

  • [ইবনে আসাকির, তারিখুল দামিস্ক,  খ. ৩, পৃ. ৪১৪, হাদীস: ৭৬৫]


👉 আল-মুখতারা গ্রন্থে গ্রন্থগার এটিকে বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। | ইমাম আল-হাকিম একা আল-মুস্তাদরিক গ্রন্থে বলেছেন,
নবী করীম ﷺ খতনাকৃত অবস্থায় জন্ম নেওয়ার বিষয়ক বর্ণনাসমূহ ধারাবাহিক সূত্ৰ পরম্পরা স্তরের।

  • [আল-হাকিম, মুস্তাদরাক খ. ২, পৃ. ৬৫৭, হাদীস: ৪১৭৭]


👉 ইমাম ইবনে দুরায়দ (রহ) এর আল-বিশাহ গ্রন্থে এসেছে,
“হযরত ইবনুল কলবী (রহ) বলেছেন, আমরা জনতে পেরেছি যে, হযরত আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে খতনাকৃত অবস্থায়। তার পরবর্তীতে আরও ১২জন নবী (আ) কে খতনাকৃত অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে আর হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন সেই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ জন।

  • [ইমাম কাসতালানী, আল মাওয়াহেব, খ. ১, পৃ. ৮২]
 
Top