মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে জিবরীল (عليه السلام)-এর হাজিরা
[Bengali translation of www.ziaislamic.com's article "Jibreel in the presence of the Holy Prophet Muhammad (Sallallahu alaihi wa sallam)"; translator: Kazi Saifuddin Hosain]

মূল: জিয়া-ইসলামিক-ডট-কম
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

[উৎসর্গ: পীর ও মোর্শেদ সৈয়দ মওলানা এ, জেড, এম, সেহাবউদ্দীন খালেদ আল-কাদেরী আল-চিশ্তী (رحمة الله)-এর পুণ্যস্মৃতিতে...]

প্রিয়নবী (ﷺ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব

আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয়নবী (ﷺ)-কে অন্যান্য সকল নবী (عليه السلام)-এর চেয়ে মাহাত্ম্য, গুণাবলী, মো’জেযা (অলৌকিকত্ব) ও আধ্যাত্মিক মকাম তথা মর্যাদার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। 

❏ আয়াত ১ :

আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান:
“এঁরা রাসূল, আমি তাঁদের মধ্যে এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠ করেছি। তাঁদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কেউ এমনও আছেন যাঁকে (অর্থাৎ, মহানবী (ﷺ)কে) সবার ওপর মর্যাদাসমূহে উন্নীত করেছি। আর আমি মরিয়ম-তনয় ঈসাকে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ প্রদান করেছি; এবং পবিত্র রূহ দ্বারা তাঁকে সাহায্য করেছি; আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের পরবর্তীরা পরস্পর যুদ্ধ করতো না তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনগুলো আসার পর; কিন্তু তারা তো পরস্পর বিরোধকারী হয়ে গিয়েছে (নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছা যা তাদেরকে দান করা হয়েছিল এবং যার জন্যে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে, তারই বশবর্তী হয়ে)। তাদের মধ্যে কেউ ঈমানের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) রইলো এবং কেউ কাফের হয়ে গেল; আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হতো না; কিন্তু আল্রাহ যা চান করে থাকেন।” [সুরা বাকারা: ২৫৩ আয়াত; মুফতী আহমদ এয়ার খান (رحمة الله) কৃত ‘নূরুল এরফান’]

ফেরেশতাকুল-সহ সকল সৃষ্টি-ই মহানবী (ﷺ)-এর উম্মত 

আমাদের ঈমান ও আকীদা-বিশ্বাসের অনস্বীকার্য দিক হলো অন্তরে এই প্রত্যয় পোষণ করা যে, মহানবী (ﷺ)-ই বিশ্বজগত ও এর তাবৎ বস্তু সৃষ্টির মূল উপলক্ষ এবং এগুলোর অস্তিত্বের (একমাত্র) কারণ। সমস্ত সৃষ্টিজগত, যা’তে অন্তর্ভুক্ত ফেরেশতাকুল-ও, তাঁরই উম্মত বলে সহীহ 

❏ হাদিস ১ :

মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান:
“আর আমি সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে এবং নবুওয়্যতের ক্রমধারা উপলক্ষে প্রেরিত হয়েছি।” [সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, হাদীস নং ৫২৩; মুসনদ-এ-ইমাম আহমদ হাম্বল, হাদীস নং ৮৯৬৯]

মোল্লা আলী কারী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় তাঁর কৃত ‘মেরকাত শরহে মেশকাত’ গ্রন্থে লেখেন: অর্থাৎ, আমি সমগ্র বিশ্বজগত, জ্বিন-ইনসান, ফেরেশতা, পশুপাখি ও জড় পদার্থের জন্যে রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। [মিরকা‘তুল মাফাতীহ, ৫ম খণ্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা]

আল্লাহতা’লা তাঁর প্রিয়নবী (ﷺ)-এর মহিমা ও উচ্চ মকাম/মর্যাদা বর্ণনা করেছেন এবং উম্মতে মোহাম্মদীকে আদেশ করেছেন বিশ্বনবী (ﷺ)-কে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে, যেমনটিঃ

❏ আয়াত ২ :

এরশাদ হয়েছে সূরা ফাতাহ’তে -
“যাতে ওহে লোকেরা! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান আনো এবং রাসূল (ﷺ)-এর মহত্ত্ব বর্ণনা ও (তাঁর প্রতি) সম্মান প্রদর্শন করো, আর সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করো।” [৪৮:০৯]

পুণ্যাত্মা জ্বিন ও ইনসান, ফেরেশতা ও সকল সৃষ্টি মহানবী (ﷺ)-কে সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন। এ কথা ধারণাও করা যায় না যে ফেরেশতাকুল, বিশেষ করে তাঁদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় জিবরীল আমীন (عليه السلام) কোনোভাবেই হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হবেন।

❏ আয়াত ৩ :

আল্লাহতা’লা সূরা তাহরীমে এরশাদ ফরমান:
“হে ঈমানদারবর্গ! নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে ওই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর, যার ওপর শক্তিশালী ও কঠোর ফেরেশতাবৃন্দ নিয়োজিত রয়েছেন, যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেন না এবং যা তাদের প্রতি আদেশ হয়, তা-ই করেন।” [৬৬:০৬]

আল্লাহতা’লা জিবরীল আমীন (عليه السلام)-কে মহানবী (ﷺ)-এর সেবক/খেদমতগার বানিয়েছিলেন। তাঁকে সৃষ্টি-ই করা হয়েছিল শুধুমাত্র প্রিয়নবী (ﷺ)-এর খেদমত করার উদ্দেশ্যে। ইমাম ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) শায়খ আবদুল আযীয দাব্বাগ (رحمة الله)-কে উদ্ধৃত করে লেখেন:

হযরত জিবরীল আমীন (عليه السلام)-কে যা যা উচ্চ মকাম বা মর্যাদা (খোদাতা’লার পক্ষ থেকে) মঞ্জুর করা হয়েছিল, তার সবই মহানবী (ﷺ)-এর সাথে তাঁর সংশ্লিষ্টতা বা সম্পর্ক এবং হুযূর পাক (ﷺ)-এর প্রতি তাঁর খেদমতের কারণেই মঞ্জুর করা হয়েছিল। জিবরীল (عليه السلام) যদি মহানবী (ﷺ)-এর খেদমত না করে সারা জীবন কাটিয়ে দিতেন এবং আপন শক্তি ব্যয়ে ওই সব উচ্চ আধ্যাত্মিক মকামগুলো অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন, তবু নিজ হতে তিনি ওগুলোর একটি মকাম-ও অর্জন করতে সক্ষম হতেন না। তিনি মহানবী (ﷺ)-এর কাছ থেকে যা যা (খোদায়ী) আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়েছেন, সেগুলো সম্পর্কে শুধু তিনি-ই জানেন, আর জানেন সেসব পুণ্যাত্মা, যাঁদের জন্যে খোদাতা’লা তাঁর মা’রেফতের (তথা খোদার ভেদের রহস্যপূর্ণ জ্ঞানের) দরজাগুলো খুলে দিয়েছেন।

হযরত আবদুল আযীয দাব্বাগ (رحمة الله) আরও বলেন: জিবরীল আমীন (عليه السلام)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সেবা করার জন্যে, আর তাই তিনি তাঁর গোটা সত্তা দ্বারা মহানবী (ﷺ)-এর প্রতি সমর্থন যুগিয়েছেন।

রাসূলে পাক (ﷺ)-এর রহমত (করুণাধারা) হতে জিবরীল (عليه السلام) লাভবান  

❏ হাদিস ২ :

ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله)-এর প্রধান রচনা-কর্ম ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে তিনি লেখেন:
বর্ণিত আছে যে মহানবী (ﷺ) জিবরীল আমীন (عليه السلام)-কে বলেছিলেন, আমার বিশেষ রহমত হতে আপনি কি কোনো কিছু প্রাপ্ত হয়েছেন? জবাবে জিবরীল (عليه السلام) বলেন, জ্বি হ্যাঁ, আমি আমার ভাগ্য (পরিণতি) সম্পর্কে শংকিত ছিলাম। কিন্তু আমি এখন নিশ্চিন্ত। কেননা, আপনার কারণেই আল্লাহ আমার ব্যাপারে বলেন:

“যে (সত্তা তথা জিবরীল) শক্তিশালী (সত্যের প্রতি আহ্বানে, খোদার বাণী পৌঁছে দেয়ার বেলায় এবং আধ্যাত্মিক যোগ্যতায়), আরশ অধিপতির দরবারে সম্মানিত (গৌরব ও মহিমায়), সেখানে তার আদেশ পালন করা হয়, (যে) আমানতদার।” [সূরা তাকভীর, ২০ আয়াত]

আধ্যাত্মিক জগতে জিবরীল (عليه السلام) মহানবী (ﷺ)-এর উজির 

আল্লাহ পাক হযরত জিবরীল (عليه السلام)-কে মহানবী (ﷺ)-এর সেবক-ই কেবল বানান নি, বরং আধ্যাত্মিক জগতে তাঁকে তাঁর উজির-ও বানিয়েছেন। 

❏ হাদিস ৩ :

ইমাম হাকীম নিশাপুরী (رحمة الله) নিজ ‘মোস্তাদরাক’ কেতাবে এই প্রসঙ্গে ইমাম বোখারী (رحمة الله) ও ইমাম মুসলিম (رحمة الله)-এর সূত্রে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন:
হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী (رضي الله عنه)-এর সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আধ্যাত্মিক জগতে আমার দু’জন উজির এবং এই দুনিয়ায় দু’জন উজির আছেন। আধ্যাত্মিক জগতে দু’জন হলেন জিবরীল (عليه السلام) ও মিকাইল; অার দুনিয়ায় দু’জন হলেন আবূ বকর (رضي الله عنه) ও উমর (رضي الله عنه)।

এই হাদীসটি শব্দচয়নে সামান্য পরিবর্তনসহ অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে। 
১.ইমাম হাকীম (رحمة الله) নিজ ‘মোস্তাদরাক’ গ্রন্থের ২টি জায়গায় এর উল্লেখ করেন; 
২.আরও উল্লেখ করেন ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) নিজ ‘জামেউ তিরমিযী’ পুস্তকের এক জায়গায়, 
৩.ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله) তাঁর ‘জামেউল আহাদীস ওয়াল মারাসীল’ গ্রন্থের পাঁচ স্থানে, 
৪‘কানযুল উম্মাল’ কেতাবের চার জায়গায় এবং
৫.ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) নিজ ‘ফাযাইলে সাহাবা’ পুস্তকের এক স্থানে।

হযরত শায়খুল ইসলাম ইমাম মোহাম্মদ আনওয়ারুল্লাহ ফারূকী (رحمة الله) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লেখেন: ফেরেশতাকুলের মধ্যে জিবরীল (عليه السلام) ও মিকাইলের মতো দু’জন উজির আসমানে, আর দু’জন উজির জমিনে থাকলে এই বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে যে মহানবী (ﷺ) আসমানী জগত ও পার্থিব জগতের (অবিসংবাদিত) সুলতান তথা সম্রাট? 

মহানবী (ﷺ)-এর শিক্ষক আল্লাহতা’লা, কোনোভাবেই জিবরীল (عليه السلام) নন

বিশ্বনবী (ﷺ) হলেন সৃষ্টিকুলের মাঝে (আল্লাহতা’লার) সর্বপ্রথম সৃষ্টি। বিশ্বজগতের স্রষ্টা যা ঘটে গিয়েছে এবং যা ঘটবে, এসব বিষয় সম্পর্কে সমস্ত জ্ঞান তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাঁকে সমগ্র বিশ্বজগতের শিক্ষক বানিয়েছেন। মহানবী (ﷺ) এই জগতের কারো কাছ থেকে কখনোই কোনো কিছু শেখেননি। স্বয়ং আল্লাহতা’লা-ই তাঁকে সর্বপ্রকারের জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। 

❏ আয়াত ৪ :

আল্লাহতা’লা কুরআন মজীদের সূরা আর-রহমানের মধ্যে এরশাদ ফরমান:
“পরম দয়ালু (আল্লাহ), যিনি আপন মাহবূব (ﷺ)-কে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানবতার প্রাণ মোহাম্মদ (ﷺ)-কে সৃষ্টি করেছেন; যা সৃষ্ট হয়েছে এবং যা সৃষ্টি করা হবে সব কিছুর (মা কানা ওয়া মা এয়াকূনু) সুস্পষ্ট বিবরণ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন।” [৫৫:১-৪]

বিশ্বনবী (ﷺ)-এর শিক্ষক হলেন খোদ খোদাতা’লা-ই। হযরত জিবরীল আমীন (عليه السلام) আল্লাহর যে সমস্ত বাণী হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর দরবারে নিয়ে এসেছিলেন, তা তিনি একজন সেবক ও প্রতিনিধি হিসেবেই এনেছিলেন। জিবরীল (عليه السلام)-এর কাজ ছিল আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়া। কিন্তু এর অর্থ, অন্তর্নিহিত মর্ম এবং গুরুত্ব ও তাৎপর্য স্বয়ং আল্লাহ পাক-ই মহানবী (ﷺ)-কে শিখিয়েছিলেন। অতএব, জিবরীল (عليه السلام)-এর প্রতি ‘শিক্ষা’ শব্দটি যেখানে আরোপ করা হয়েছে, সেখানে এর মানে এই নয় যে তিনি মহানবী (ﷺ)-কে শিক্ষা দিয়েছেন, বরং এর মানে তিনি আল্লাহর কালাম (বাণী) পৌঁছে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে, এর আক্ষরিক অর্থে যদি একে বিশ্বাস করা হয়, তাহলে জিবরীল (عليه السلام)-কেই ’প্রকৃত শিক্ষক’ বলে স্বীকার করে নিতে হবে; কিন্তু স্রষ্টা ও সৃষ্টি উভয় তো একই সময়ে প্রকৃত শিক্ষক হতে পারেন না। আল্লাহ পাক (ওপরোক্ত আয়াতে করীমায়) প্রকৃত শিক্ষক হওয়ার বিষয়টি নিজের প্রতি আরোপ করে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত ফয়সালা দিয়েছেন। 

❏ আয়াত ৫ :
তিনি আরও এরশাদ করেন:
“নিশ্চয় সেটি (কুরআন মজীদ) সংরক্ষিত করা (আপনার পবিত্র বক্ষে) এবং পাঠ করা (আপনার পবিত্র জিহ্বায়) আমারই দায়িত্বে।” [সূরা কেয়ামাহ, ১৭ আয়াত]

❏ আয়াত ৬ :
একই (কেয়ামাহ) সূরায় আরও এরশাদ হয়েছে, “অতঃপর নিশ্চয় এর সূক্ষ্ম বিষয়াদি আপনার কাছে প্রকাশ করা আমার দায়িত্ব।” [৭৫:১৯]

❏ আয়াত ৭ :
সূরা আল-আ’লায় আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান, “হে হাবীব (ﷺ), এক্ষণে আমি আপনাকে পড়াবো (শেখাবো এমন পন্থায়), যার ফলে আপনি (কখনো) ভুলবেন না।” [৮৭:০৬]

❏ হাদিস ৪ :
রাসূলে কারীম (ﷺ) এই শিক্ষার দিকে ইঙ্গিত করে হাদীস শরীফে এরশাদ ফরমান: “নিশ্চয় আল্লাহতা’লা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং গড়ে তুলেছেন এবং তা তিনি সর্বোত্তম পন্থায়-ই করেছেন।” [আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া, ৫ম খণ্ড, ২৯৭ পৃষ্ঠা] 

❏ তফসীর :

তাফসীরে রূহুল বয়ানে বলা হয়, “একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে জিবরীল (عليه السلام) যখন সূরা মরিয়মের ‘কা....ফ, হা..., ইয়া..., আঈ...ন, সোয়া...দ’ আয়াতটি (১৯:০১) নিয়ে আসেন এবং তেলাওয়াত করেন, তখন হুযূর পূর নূর (ﷺ) বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ জিবরীল (عليه السلام) বলেন, ‘কা..ফ’; এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ জিবরীল (عليه السلام) বলেন, ‘হা..’, আর নবীয়্যে মকবূল (ﷺ) বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ জিবরীল (عليه السلام) আবার বলেন, ‘ইয়া...’, এবারও বিশ্বনবী (ﷺ) বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ অতঃপর জিবরীল(عليه السلام) বলেন, ‘আঈ..ন’, মহানবী (ﷺ) জবাব দেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ জিবরীল (عليه السلام) এরপর বলেন, ‘সোয়া..দ’, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’

“জিবরীল আমীন (عليه السلام) আরয করেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! এই কী মহিমা আপনার! আমি নিজেই এর অর্থ জানি না, অথচ আপনি তা জানেন’!” [তাফসীরে রূহুল বয়ান, সূরা মরিয়ম, ০১ আয়াতের ব্যখ্যায়]

ওপরের উদ্ধৃতিতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে জিবরীল আমীন (عليه السلام) কোনোভাবেই মহানবী (ﷺ)-এর শিক্ষক ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন ওহী (ঐশী বাণী)-এর বাহক ও (খোদাতা’লার) প্রতিনিধি এবং বিশ্বনবী (ﷺ)-এর  সেবক ও উজির।

মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে জিবরীল (عليه السلام) ৪২০০০০ বার হাজিরা দেন  

ইমাম মোহাম্মদ ফাসী (رحمة الله) নিজ ‘মাতালি’উল মাসসাররাত’ পুস্তকের ৩২২ পৃষ্ঠায় শায়খ আবূ আব্দুল্লাহ রচিত ‘লাফযুদ্ দুররি বি-আমলিল কাফফ’ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন: “এর মানে হচ্ছে হযরত জিবরীল আমীন (عليه السلام) ৪২০,০০০ বার বিশ্বনবী (ﷺ)-এর দরবারে হাজিরা দিয়েছেন। প্রতিবারই তিনি যথাযথ আদবের সাথে হাজির হন এবং হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর খেদমতে অবস্থান করেন।”

মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে হাজিরার জন্যে তাঁর কাছে জিবরীল (عليه السلام)-এর অনুমতি প্রার্থনা 

জিবরীল আমীন (عليه السلام) মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে যতোবার হাজির হয়েছেন, তিনি রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শনের মূর্ত প্রতীক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। সম্মানার্থে তিনি কখনো হঠাৎ করে হুযূর পাক (ﷺ)-এর কাছে আসতেন না, বরং তিনি বারবার তাঁর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করতেন। মহানবী (ﷺ) অনুমতি দিলেই কেবল তিনি তাঁর কাছে এসে হাঁটুর সামনে হাঁটু রেখে সমান্তরালভাবে বসতেন।

বস্তুতঃ এই ধরনের বর্ণনাসম্বলিত অনেক হাদীস ‘সিহাহ’, ‘সুনান’ জাতীয় বিভিন্ন হাদীসগ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। নমুনাস্বরূপ এ ধরনের একখানা হাদীস নিচে উদ্ধৃত হলো:

❏ হাদিস ৫ :

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এর সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, একবার আমরা মহানবী (ﷺ)-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ তাঁর দরবারে সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট, সুগন্ধিময় দেহসৌষ্ঠবসম্পন্ন ও পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধানরত এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। তিনি এসে আরয করেন, আস্ সালামু আলাইকুম, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি কি কাছে আসতে পারি? হুযূর পাক (ﷺ) বলেন, কাছে আসুন। ওই ব্যক্তি কিছুটা কাছে আসেন। এভাবে তিনি বারংবার কাছে আসার অনুমতি চাইতে থাকেন এবং মহানবী (ﷺ)-এর আরও কাছে এসে বসেন।

❏ হাদিস ৬ :
’মুসনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল’ গ্রন্থে এই হাদীসটির শব্দচয়নে সামান্য রদবদল আছে:

জিবরীল (عليه السلام) বলেন, আস্ সালামু আলাইকুম, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! হুযূর পূর নূর (ﷺ) জবাব দেন, ওয়া আলাইকুম আস্ সালাম। অতঃপর জিবরীল (عليه السلام) আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ), আমি কি কাছে আসতে পারি? নবী পাক (ﷺ) বলেন, কাছে আসুন।

❏ হাদিস ৭ :
’কানযুল উম্মাল’ গ্রন্থে কথাগুলো এভাবে লেখা হয়েছে:

জিবরীল (عليه السلام) আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ), আমি কি কাছে আসতে পারি? বিশ্বনবী (ﷺ) বলেন, আমার কাছে আসুন।

❏ হাদিস ৮ :
‘সুনানে নাসাঈ’ কেতাবে বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে এভাবে:

জিবরীল (عليه السلام) মেঝের ওপর বিছানো ফরাশের প্রান্তসীমায় এসে আরয করেন, হে সকল প্রশংসার যোগ্য অধিকারী (অর্থাৎ, তাঁর নাম মোবারককেও প্রশংসার আকারে উল্লেখ করা হয়েছে এখানে)! আস্ সালামু আলাইকুম। মহানবী (ﷺ) এই সালামের প্রত্যুত্তর দিলে জিবরীল (عليه السلام) বলেন, এয়া মোহাম্মদ (ﷺ), আমি কি আপনার কাছে আসতে পারি? হুযূর পাক (ﷺ) বলেন, কাছে আসুন। জিবরীল (عليه السلام) বারংবার কাছে আসার অনুরোধ করতে থাকেন, আর মহানবী (ﷺ)-ও তা বারংবার মঞ্জুর করতে থাকেন।

❏ হাদিস ৯ :
’মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল’ ও ’সুনানে বায়হাকী’ গ্রন্থগুলোতে তা বর্ণিত হয়েছে এভাবে:
হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি কি আপনার দরবারে প্রবেশ করতে পারি?

’মুসনদে ইমাম আদহাম’ গ্রন্থের ভাষ্যকার এটি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে:

জিবরীল অামীন (عليه السلام) মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যে এ উপায়ে অনুমতি চেয়েছেন, কেননা তিনি শংকিত ছিলেন যে হঠাৎ কাছে এলে তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি বেআদবি হতে পারে।

মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে জিবরীল (عليه السلام) কীভাবে শ্রদ্ধা ও সম্মান সহকারে হাজিরা দিতেন, তা এই ঘটনায় আমরা দেখতে পাই। একইভাবে হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর দরবার ত্যাগের আগে জিবরীল (عليه السلام) যাতে তাঁর অনুমতি নেন, অনুমতি ও সম্মতি না নিয়ে যেন চলে না আসেন, সে ব্যাপারেও আল্লাহতা’লা ফেরেশতাকে নির্দেশ দিতেন।

‘হাবীব (ﷺ) অনুমতি না দিলে ফেরত এসো না’   

সর্ব-হযরত ইবনে সাঅাদ ও আবূ শায়খ হতে হযরত কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী নকশবন্দী (رحمة الله) একখানা হাদীস বর্ণনা করেন, যা’তে বিবৃত হয়:

❏ হাদিস ১০ :

নবী করীম (ﷺ) বদরের জ্বেহাদ শেষ করলে পরে জিবরীল আমীন (عليه السلام) একটি লাল ঘোড়ায় চড়ে বর্শা হাতে এবং বর্ম পরিহিত অবস্থায় তাঁর দরবারে আসেন; তিনি আরয করেন: হে মহা প্রশংসিত জন! এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আল্লাহ পাক আপনার দরবারে আমাকে পাঠিয়েছেন এবং অাদেশ করেছেন আপনি রাজি না হওয়া পর্যন্ত আমি যেন আর (খোদার কাছে) ফেরত না যাই। প্রিয়নবী (ﷺ) কি আমার প্রতি রাজি আছেন? মহানবী (ﷺ) জবাবে বলেন, হ্যাঁ, আমি আপনার প্রতি খুশি আছি। অতঃপর জিবরীল (عليه السلام) [আল্লাহর কাছে] ফিরে যান।

বিশ্বনবী (ﷺ)-এর দরবারে জিবরীল (عليه السلام)-এর খেদমত

হযরত জিবরীল (عليه السلام) হলেন মহানবী (ﷺ)-এর বিশেষ একজন খাদেম ও দ্বাররক্ষী। তিনি হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর সওয়ারের লাগাম ধরতেন, যেমনটিঃ

❏ হাদিস ১১ :

ইমাম তাবারানী (رحمة الله) নিজ ‘মুসনদ-এ-শামিয়্যীন’ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ৬০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন:

হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, কোনো এক যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে ছিলাম। ওই সময় একটি উপত্যকার দিকে এগিয়ে চলেছিলাম আমরা। (উপত্যকার পাহাড়ে) আরোহণ আরম্ভ করার সময় হুযূর পূর নূর (ﷺ) ‘তাকবীর’ (আল্লাহু আকবর) বলেন এবং আমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হাসেন, অতঃপর অগ্রসর হতে থাকেন। উপত্যকার মাঝামাঝি পৌঁছুলে পরে মহানবী (ﷺ) আবারও ‘তাকবীর’ বলেন এবং আমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হাসেন, অতঃপর আবারও অগ্রসর হতে থাকেন। আমরা গোটা উপত্যকা যখন পার হয়ে যাই, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পুনরায় তাকবীর বলেন, আমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হাসেন এবং থেমে যান। আমরা তাঁর চারপাশে জড়ো হলে তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করেন, আমি কেন তাকবীর বলেছি এবং তোমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হেসেছি, তা কি তোমরা জানো? আমরা আরয করি, আল্লাহতা’লা ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-ই আমাদের চেয়ে ভাল জানেন।

মহানবী (ﷺ) এমতাবস্থায় এরশাদ ফরমান, আমরা যখন উপত্যকায় আরোহণ করছিলাম, তখন জিবরীল (عليه السلام) আমার ঘোড়ার লাগাম তাঁর হাতে ধরে রেখেছিলেন। তিনি আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনি আপনার উম্মতকে এই খোশ-খবরী দিন, কেউ যদি সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বূদ বা উপাস্য নেই এবং মোহাম্মদ (ﷺ) তাঁর হাবীব ও রাসূল, আর এই সাক্ষ্যের ওপরই যদি তার ইন্তেকাল হয়, তবে আল্লাহতা’লা তাকে অবশ্যই জান্নাত দান করবেন। আমি (এ কথা শুনে) তাকবীর বলি এবং তোমাদের দিকে ফিরে (স্মিত) হাসি। জিবরীল (عليه السلام) লাগাম হাতে নিয়ে হাঁটতে থাকেন। কিছু সময় পরে জিবরীল (عليه السلام) আবার আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! অনুগ্রহ করে এই খোশ-খবরী গ্রহণ করুন এবং আপনার উম্মতকে জানান, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ভিন্ন কোনো মা’বূদ বা উপাস্য নেই এবং মোহাম্মদ (ﷺ) হলেন তাঁর প্রেরিত রাসূল, তবে আল্লাহতা’লা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। আমি (একথা শুনে) তাকবীর বলি এবং তোমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হাসি। জিবরীল (عليه السلام) ওই সময় হাঁটতে থাকেন। আমরা গোটা উপত্যকা পার হয়ে সমতল ভূমিতে এসে পড়লে তিনি আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! অনুগ্রহ করে এই খোশ-খবরী গ্রহণ করুন এবং আপনার উম্মতকে জানান, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বূদ বা উপাস্য নেই এবং হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) হলেন তাঁর প্রেরিত রাসূল, আর এই সাক্ষ্যের ওপরই যদি তার ইন্তেকাল হয়, তবে আল্লাহ পাক তার জন্যে জাহান্নাম নিষিদ্ধ করে দেবেন।

আল্লাহতা’লা মহানবী (ﷺ)-এর কাছে জিবরীল (عليه السلام)-কে প্রেরণ করেন তাঁকে সম্মান করার উদ্দেশ্যে   

প্রিয়নবী (ﷺ)-এর বেসাল তথা আল্লাহর সাথে পরলোকে মিলিত হওয়ার কিছুদিন আগে হযরত জিবরীল (عليه السلام) হুযূর পাক (ﷺ)-এর দরবারে হাজির হন। 

❏ হাদিস ১২ :

আত্ তাবারানী (رحمة الله) ও আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া গ্রন্থগুলোতে এতদসংক্রান্ত বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে, যা নিম্নরূপ:

হযরত আলী ইবনে হুসাইন (رحمة الله)-এর সূত্রে বর্ণিত; তিনি তাঁর পিতা হতে শুনেছেন যে মহানবী (ﷺ)-এর বেসালের তিনদিন আগে জিবরীল আমীন (عليه السلام) তাঁর দরবারে হাজির হয়ে আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আল্লাহ পাক আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে এবং আপনারই খেদমত করতে আমাকে বিশেষভাবে পাঠিয়েছেন। এ কথা বলার পর জিবরীল (عليه السلام) রাসূল (ﷺ)-এর অসুখের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। আজরাইল ফেরেশতা হুযূর পাক (দ;)-এর দরবারে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেন। এ সময় হযরত জিবরীল (عليه السلام) বলেন, ইনি আজরাঈল ফেরেশতা, জান কবজকারী; আপনার সামনে হাজির হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করছেন। ইতিপূর্বে তিনি কোনো নবী (عليه السلام)-এর কাছে এই অনুমতি প্রার্থনা করেননি, আর ভবিষ্যতেও তিনি কোনো মানবের কাছে এ রকম অনুমতি চাইবেন না। এ কথা শুনে মহানবী (ﷺ) বলেন, তাঁকে অনুমতি দিন।

আজরাঈল ফেরেশতা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে প্রবেশ করে পরম শ্রদ্ধাভরে দণ্ডায়মান হন এবং আরয করেন, নিশ্চয় আল্লাহ পাক আমাকে আপনার কাছে প্রেরণ করেছেন এবং আপনার যে কোনো হুকুম তা’মিল করার জন্যে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি যদি আপনার পবিত্র রূহ মোবারককে গ্রহণ করার জন্যে আমায় আদেশ করেন, আমি তা করবো। আর যদি তা করতে আপনি আমায় বারণ করেন, তাহলে তা করা থেকে আমি বিরত হবো।

এমতাবস্থায় জিবরীল আমীন (عليه السلام) বলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! নিশ্চয় আল্লাহতা’লা আপনার সাক্ষাৎ চান। অতঃপর মহানবী (ﷺ) বলেন, ওহে জান কবজকারী ফেরেশতা! তোমাকে যে কাজ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, তা সম্পন্ন করো। জিবরীল (عليه السلام) ওই সময় বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এই বারই পৃথিবীতে আপনার কাছে আমার শেষবার ওহী নিয়ে আসা। এই পৃথিবীতে আপনি-ই শুধু আমার ....... এবং ......। [মো’জাম কবীর তাবারানী; হাদীস নং ২৮২১; আল-মাতালিব-উল-আ’লিয়্যা লি ইবনে হাজর আসকালানী, হাদীস নং ৪৪৪৯] {অনুবাদকের জ্ঞাতব্য: ওপরের উদ্ধৃতিতে বাক্য মিসিং আছে। পাওয়া গেলে শূন্যস্থানে বসানো হবে। }

জিবরীল (عليه السلام) কর্তৃক মহানবী (ﷺ)-এর হাত মোবারক চুম্বন 

❏ হাদিস ১৩ :

যোবদাতুল মোহাদ্দেসীন হযরত আবূল হাসানা’ত সাঈদ আবদুল্লাহ শাহ সাহেব নকশবন্দী মোজাদ্দেদী কাদেরী (رحمة الله) নিজ ‘মীলাদনামা’ পুস্তকের ১৬২ পৃষ্ঠায় একখানা হাদীস উদ্ধৃত করেন:

একবার হযরত জিবরীল আমীন (عليه السلام) খুব উৎফুল্ল ছিলেন। তিনি মহানবী (ﷺ)-এর দু’হাত মোবারক চুম্বন করছিলেন; আর তাঁর জুব্বা মোবারকের (আস্তিনে) মুখ ঘষছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ওহে জিবরীল, এটি কী? তিনি জবাবে বলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! অনুগ্রহ করে মিকাঈল ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করুন। এমতাবস্থায় মিকাঈল (عليه السلام) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার দরবারে হাজিরা দেয়ার আদেশ যখন আমাদের দেয়া না হয়, তখন আমরা অস্থির হয়ে যাই। আজ আমরা আল্লাহর কাছে হাজার হাজার বার প্রার্থনা করি (হাজিরার অনুমতি চেয়ে)। আমাদের এই বিনীত প্রার্থনা দেখে অন্যান্য ফেরেশতারা আমাদের প্রশ্ন করেন, ওহে জিবরীল ও মিকাঈল, কেন এই অস্থিরতা? আমরা জবাবে বলি, মহানবী (ﷺ)-এর সৌন্দর্যমণ্ডিত চেহারা মোবারক না দেখলে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। আমরা কী করতে পারি? যেহেতু আজ আমরা সহস্র সহস্র আরজি পেশ করার পর আপনার দরবারে হাজিরা দেয়ার অনুমতি পেয়েছি, সেহেতু আমাদের এই উৎফুল্ল চিত্ত।

জিবরীল (عليه السلام) কর্তৃক মহানবী (ﷺ)-এর পায়ের গোড়ালি চুম্বন 

প্রিয়নবী (ﷺ)-এর প্রতি পেশকৃত হযরত জিবরীল আমীন (عليه السلام)-এর ভক্তিশ্রদ্ধার সেরা নিদর্শন আমরা মে’রাজ রাতে ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণের সময় দেখতে পাই।

❏ হাদিস ১৪ :
মোল্লা মোহাম্মদ মুঈন কাশফী হারাভী (رحمة الله) মে’রাজ সম্পর্কে একটি হাদীস শরীফ বর্ণনা করেন:

দ্বিতীয় বিবরণটি জিবরীল (عليه السلام) হতে; তিনি বলেন, আল্লাহতা’লার ওহী থেকে আমি জানতে পেরেছিলাম যে আমার দেহ জান্নাতের কর্পূর হতে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু আমি এর কারণ জানতাম না। মে’রাজ রাতেই (এর কারণ) আমি উপলব্ধি করতে সক্ষম হই। আমার নির্মলতা ও সূক্ষ্মতা সত্ত্বেও আমি মহানবী (ﷺ)-কে ঘুম থেকে জাগাতে ইতস্ততঃ করছিলাম; কীভাবে জাগাবো তা নিয়ে আমি ছিলাম উদ্বিগ্ন। হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর মোবারক পা ‍যুগলের গোড়ালিতে আমার মুখ ঘষতে আমায় অাদেশ করা হয়। আমি তা করলে কর্পূরের শীতল পরশ (রাসূল (ﷺ)-এর কদম মোবারকের) উষ্ণতার সাথে মিশে এবং তিনি সহজে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। ওই সময়-ই আমি অনুধাবন করতে পারি কেন আমাকে কর্পূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল। 
(মা’আরিজুন্ নুবুওয়াহ, ৬০১ পৃষ্ঠা)

মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে জিবরীল (عليه السلام) ২১০০০০ ফেরেশতাসহ হাজির হন 

মে’রাজ রাতে জিবরীল (عليه السلام) মহানবী (ﷺ)-এর খেদমত করার সৌভাগ্য লাভ করেন। 

❏ হাদিস ১৫ :
এ বিষয়ে তাফসীরে রূহুল বয়ান পুস্তকের ৫ম খণ্ড, ১০৯ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ আছে:

মে’রাজ রাতে জিবরীল (عليه السلام), মিকাঈল, ইসরাফিল ও আজরাঈল ফেরেশতা হুযূর পাক (দ;)-এর দরবারে হাজির হন। তাঁদের প্রত্যেকের সাথে ছিলেন ৭০০০০ ফেরেশতা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বোরাকে আরোহণ করলে জিবরীল (عليه السلام) লাগাম হাতে ধরেন, মিকাঈল ধরেন রেকাব, আর ইসরাফিল ধরেন জিন।

ফেরেশতাবৃন্দ নিজেদের এবাদতের বদলে মহানবী (ﷺ)-এর খেদমতের সুযোগ পান

❏ হাদিস ১৬ :
যোবদাতুল মোহাদ্দেসীন হযরত আবূল হাসানাত শাহ নকশবন্দী কাদেরী (رحمة الله) তাঁর ’মীলাদনামা’ পুস্তকে লেখেন:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান, আমি তাঁদের (ফেরেশতাদের) সেবায় বিব্রত বোধ করছিলাম, তাই তা বন্ধ করে দেই। ফেরেশতামণ্ডলী অারয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমরা এই খেদমতের দায়িত্ব নিয়েছি হাজার হাজার বছেরের এবাদত-বন্দেগীর বদলে। একদিন আল্লাহতা’লা আমাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা এই এবাদত-বন্দেগীর পুরস্কার হিসেবে কী পেতে চাও? আমরা আরয করি, আরশে আপনার পবিত্র নামের পাশে যাঁর নাম মোবারক লেখা আছে, তাঁর খেদমত করার তৌফিক দিন। আল্লাহতা’লা এরপর এরশাদ ফরমান, তিনি (হুযূর পাক) ধরাধামে শুভাগমন করলে আমি তাঁকে মক্কা মোয়াযযমা থেকে বায়তুল মোকাদ্দেস পর্যন্ত নিয়ে যাবো। ওই ভ্রমণের সময় তোমাদেরকে তাঁর খেদমত করার অনুমতি দেবো আমি। ফেরেশতাকুল বলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ), আমরা এভাবেই এ খেদমতের সৌভাগ্য অর্জন করেছি। 

মহানবী (ﷺ) হলেন জিবরীল (عليه السلام)-এর জন্যে ‘ওয়াসতায়ে উযমা’ 

জিবরীল (عليه السلام) সবসময়ই কীভাবে মহানবী (ﷺ)-কে সন্তুষ্ট করবেন, তা নিয়ে চিন্তা করতেন। এই সূত্রেই শেষ বিচার দিবসে তিনি পুল-সিরাতের ওপর তাঁর ডানা বিছিয়ে দেয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তাঁর এই ইচ্ছা তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে পেশ করেন।

মে’রাজ রাতে ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণকালে প্রিয়নবী (ﷺ) বলেন, কোনো বন্ধু কি তাঁর বন্ধুকে এ রকম এক জায়গায় পরিত্যাগ করতে পারেন? জিবরীল (عليه السلام) জবাবে বলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি যদি আরেক কদম সামনে অগ্রসর হই, তবে আল্লাহতা’লার নূরের তাজাল্লীতে ভস্মিভূত হবো। অপর এক হাদীস শরীফে তা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, যদি আমি এক আঙ্গুলের তালু পরিমাণ জায়গা অগ্রসর হই, তাহলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো। এমতাবস্থায় মহানবী (ﷺ) বলেন, আপনার কি কোনো প্রার্থনা আছে যা আপনি আল্লাহর কাছে পেশ করতে ইচ্ছুক? জিবরীল (عليه السلام) উত্তর দেন, হে আল্লাহর নবী (ﷺ)! আপনি আল্লাহর কাছে আমার এই আরজি পেশ করুন যে পুল-সিরাতে আমি যেন আমার ডানা বিছিয়ে দেয়ার অনুমতি পাই, যাতে আপনার উম্মত সহজে তা পার হতে পারেন।

হযরত ইবরাহিম খলীলউল্লাহ (عليه السلام)-এর প্রতি খেদমতের পুরস্কার মহানবী (ﷺ) করলেন দান

❏ হাদিস ১৭ :
ইমাম যুরকানী মালেকী (رحمة الله) নিজ ‘শরহে মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’ পুস্তকে একটি অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক হাদীস বর্ণনা করেছেন যা নিম্নরূপ:

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো (এবং শেখো), আমি তোমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবার আগেই। আমাকে জিজ্ঞেস করো সেই জ্ঞান সম্পর্কে যার খবর না জিবরীল (عليه السلام)-এর কাছে আছে, না মিকাঈলের। আল্লাহতা’লা মে’রাজ রাতে মহানবী (ﷺ)-কে যে সব জ্ঞান শিখিয়েছিলেন, তা থেকে হুযূর পূর নূর (ﷺ) আমাকে শিখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমার প্রভু খোদাতা’লা আমাকে বিভিন্ন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) অতঃপর বলেন, প্রিয়নবী (ﷺ) আমাকে এ কথা জানান এবং তিনি আরও বলেন, আমি ছিলাম হযরত ইবরাহিম (عليه السلام)-এর মোবারক দেহের পিঠে অবস্থিত এক নূর (জ্যোতি)। নমরুদ যখন তাঁকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলার উপক্রম, ঠিক তখন-ই জিবরীল (عليه السلام) তাঁর কাছে আসেন এবং বলেন, ওহে খলীলউল্লাহ (আল্লাহর বন্ধু), আপনার কি কোনো (সাহায্যের) প্রয়োজন আছে? তিনি উত্তর দেন, ওহে জিবরীল (عليه السلام), আপনার কোনো প্রয়োজন নেই আমার। জিবরীল (عليه السلام) দ্বিতীয়বার আবার আসেন। এবার তাঁর সাথে মিকাঈল-ও ছিলেন। ইবরাহিম (عليه السلام) বলেন, আপনার বা মিকাঈলের কারোরই প্রয়োজন নেই আমার। জিবরীল (عليه السلام) তৃতীয়বার আবার এসে বলেন, আপনার প্রভু খোদাতা’লার কাছে কি আপনার কোনো গুজারিশ আছে? ইবরাহীম (عليه السلام) বলেন, ভাই জিবরীল (عليه السلام), বন্ধুর নিদর্শন হচ্ছে তাঁর বন্ধুর ইচ্ছা অমান্য না করা। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক আমার (মহানবী (ﷺ)-এর) জবান (মোবারক) খুলে দেন এবং আমি বলি, আমি যখন ধরাধামে আবির্ভূত হবো, আর আল্লাহ পাক আমাকে রেসালাতের উচ্চমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন, আর সকল আম্বিয়া (عليه السلام)-এর ওপর আমাকে মহা সম্মানিত করবেন, তখন আমি আমার পিতা (পূর্বপুরুষ) ইবরাহীম (عليه السلام)-এর প্রতি খেদমতের প্রতিদানস্বরূপ জিবরীল (عليه السلام)-কে পুরস্কৃত করবো। অতঃপর আমাকে আল্লাহতা’লা দুনিয়াতে পয়গম্বর হিসেবে প্রেরণের পর মে’রাজ রাত এলো। জিবরীল (عليه السلام) অামার দরবারে হাজির হলেন এবং আমার সাথে অবস্থান করলেন, যতোক্ষণ না এক বিশেষ স্থানে আমরা পৌঁছুলাম। সেখানেই তিনি থেমে গেলেন। আমি জিবরীল (عليه السلام)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ রকম জায়গায় কি কোনো বন্ধু তাঁর বন্ধুকে পরিত্যাগ করেন? জিবরীল (عليه السلام) উত্তরে বল্লেন, আমি যদি এ জায়গা হতে আরও অগ্রসর হই, তবে আল্লাহতা’লার নূরের তাজাল্লী আমাকে পুড়িয়ে খাক করে দেবে। অতঃপর মহানবী (ﷺ) বল্লেন, ওহে জিবরীল (عليه السلام), আল্লাহতা’লার কাছে আপনার কি কোনো আবেদন আছে পৌঁছে দেয়ার? জিবরীল (عليه السلام) জবাব দিলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! অনুগ্রহ করে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করুন যেন আমি আখেরাতে পুল-সিরাতের ওপর আমার ডানা মেলে ধরতে পারি, যাতে আপনার উম্মত সহজেই তা পার হয়ে যেতে পারেন।

মহানবী (ﷺ)-এর আশীর্বাদপ্রার্থী জিবরীল (عليه السلام)   

হযরত জিবরীল (عليه السلام) যেভাবে মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে হাজিরা দেয়ার সময় আদব বজায় রাখার বিষয়টি (সবসময়) বিবেচনা করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর ‘সিদরাতুল মোনতাহা’য় অধিষ্ঠানকেও তিনি তাঁর নিজের জন্যে অাশীর্বাদ লাভের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন।

❏ হাদিস ১৮ :
মোল্লা মুঈন কাশফী হারাভী (رحمة الله) তাঁর কৃত ‘মা’আরিজ-উন্-নবুওয়াহ’ পুস্তকে (এতদসংক্রান্ত) একটি হাদীসের উল্লেখ করেন:

হযরত জিবরীল (عليه السلام) বলেন, হে রাসূলে খোদা (ﷺ)! আমার একটি অারজি আছে। মহানবী (ﷺ) বলেন, আমায় বলুন তা কী। জিবরীল (عليه السلام) বলেন, আমার (একান্ত) অনুরোধ, আপনি এখানে দু’রাক’আত নামায পড়ুন, যাতে আমার আবাসস্থল আপনার পবিত্র পায়ের ধুলো দ্বারা আশীর্বাদধন্য হয়। (মা’আরিজ-উন্-নবুওয়াহ, ৯৩১ পৃষ্ঠা)

মহানবী (ﷺ)-এর কাছে সুরক্ষা চাইতে জিবরীল (عليه السلام) আদিষ্ট   

❏ হাদিস ১৯ :
নুযহাতুল মাজালিস গ্রন্থে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা নিম্নরূপ:

আল্লাহতা’লা জিবরীল (عليه السلام)-কে আদেশ করেন, ওহে জিবরীল (عليه السلام)! হেদায়াতের নিশান তথা পতাকা, কল্যাণের বোররাক, মহাসম্মানের পোশাক, নবুওয়্যতের আলখেল্লা ও (অাধ্যাত্মিক) রাজসিকতার পাগড়ী (এমামা) নিয়ে ৭০০০০ ফেরেশতার মিছিলসহ মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে হাজির হও! তাঁর দ্বারে দাঁড়িয়ে তাঁরই সুরক্ষা প্রার্থনা করো। এ রাতে তোমাকে তাঁর ঘোড়ার লাগাম ধরতে হবে। ওহে মিকাঈল! তুমি (খোদায়ী) রেযামন্দির ঝাণ্ডা নিয়ে ৭০০০০ ফেরেশতার মিছিলসহ মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে হাজির হও! ওহে ইসরাফিল ও আজরাঈল! তোমরা দু’জন-ও প্রিয়নবী (ﷺ)-এর প্রতি একই রকম খেদমত পেশ করো। 
[ইমাম সাফুরী (رحمة الله) নুযহাতুল মাজালিস]

❏ হাদিস ২০ :

ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله)-এর প্রণীত ‘খাসাইসুল্ কুবরা’ গ্রন্থে এবং ইমাম তাবারানী (رحمة الله)-এর কৃত ‘মো’জাম-এ-আওসাত’ ও ‘মজমাউয্ যাওয়াইদ’ পুস্তকগুলোতে একখানা হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে যা বিবৃত করে:

উম্মুল মো’মেনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) জিবরীল (عليه السلام)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন, আমি পূর্বদিক হতে পশ্চিমদিক পর্যন্ত চষে বেরিয়েছি, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মতো এতো বড় (সেরা) মহাত্মা কাউকেই খুঁজে পাইনি। 
[ইমাম তাবারানী রচিত মো’জাম আল-কবীর, হাদীস নং ৬৪৬৮; মজমাউয্ যাওয়াইদ, ৮ম খণ্ড, ২১৭ পৃষ্ঠা; ইমাম সৈয়ুতী লিখিত ‘খাসাইসুল্ কুবরা’, ১ম খণ্ড, ৩১৮ পৃষ্ঠা]

’ফাহামাযানী বি কাদামিহী’ বাক্যটি সম্পর্কে গবেষণা 

মে’রাজ রাতে জিবরীল আমীন (عليه السلام)-এর আসমান থেকে অবতরণ করে মহানবী (ﷺ)-এর কাছে আসা পর্যন্ত এবং পুরো ভ্রমণকাল যাবত তিনি ছিলেন হুযূর পাক (ﷺ)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মূর্ত প্রতীক। তিনি হুযূর (ﷺ)-এর ঘোড়ার লাগাম ধরে রাখেন। শ্রদ্ধা প্রদর্শনে সামান্যতম গাফিলতি-ও তাঁর তরফ থেকে হয়নি।

মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে জিবরীল (عليه السلام) আসেন আলতোভাবে পা ফেলে এবং তিনি হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর পবিত্র পায়ের গোড়ালিতে নিজ গণ্ড (গাল) ঘর্ষণ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে ’সীরাতে ইবনে হিশামের’ মতো কিছু সীরাহ (জীবনী) পুস্তকে ’ফাহামাযানী বি কাদামিহী’ বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিছু লোক এটিকে অনুবাদ করেছে এভাবে - ‘জিবরীল (عليه السلام) আমাকে (ঘুম থেকে) জাগাতে আমাকে লাথি মেরেছিলেন।’ (নাউযুবিল্লাহ মিন জালিক) এই অনুবাদ সম্পূর্ণ ভুল এবং যুক্তিপরিপন্থী; আর আমাদের কাছে যা নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা বর্ণিত হয়েছে তারও পরিপন্থী এটি। কোনো মুসলমান-ই এভাবে চিন্তা করতে পারেন না। কেননা, এটি মহানবী (ﷺ)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একদম খেলাফ। আর এটি জিবরীল (عليه السلام)-এর মতো মহান ফেরেশতার প্রতি মিথ্যা অপবাদ-ও বটে। এ কারণেই এই বাক্যের ভাষাতত্ত্বগত গবেষণার অবতারণা করা হলো নিচে।

প্রথমে যে বিষয়টি জানা দরকার তা হলো, আম্বিয়ায়ে কেরাম (عليه السلام)-দেরকে এমন-ই আধ্যাত্মিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যা দ্বারা জিবরীল (عليه السلام) যখন ’সিদরাহ’ থেকে অবতরণের প্রস্তুতি নেন, তখন এই দুনিয়াতে থেকেই তাঁরা তাঁর গন্ধ শুঁকতে পান এবং বুঝতে পারেন যে জিবরীল (عليه السلام) অবতরণ করতে যাচ্ছেন। আল্লামা শেহাবউদ্দীন খাফফাজী নিজ ‘নাসীম আল-রিয়ায’ পুস্তকে লেখেন:

সার কথা হলো, আম্বিয়া কেরাম (عليه السلام)-বৃন্দের অন্তর (আধ্যাত্মিকতা) ও তাঁদের বোধশক্তি ফেরেশতাসদৃশ। এ কারণেই তাঁরা দুনিয়ার শেষ সময় পর্যন্ত যা যা ঘটবে তা তা (দিব্যদৃষ্টিতে) দেখতে পান, আসমানের ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ শুনতে পান এবং জিবরীল (عليه السلام) আসমান থেকে অবতরণের সিদ্ধান্ত নিলে তাঁরা তাঁর গন্ধ শুঁকতে পান।  [‘নাসীম আল-রেয়ায’, ৩য় খণ্ড, ৫৪৫ পৃষ্ঠা]

একই পুস্তকে কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াত, হাদীস শরীফ এবং ইমামবৃন্দের ও সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-মণ্ডলীর বাণী ও শরয়ী সিদ্ধান্ত দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা হয়েছে যে জিবরীল (عليه السلام) মহানবী (ﷺ)-এর পছন্দকৃত একজন সেবক। তাঁকে আল্লাহ পাক-ই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খেদমতে নিয়োগ করেছেন। তিনি এক চুল পরিমাণ-ও হুযূর পাক (ﷺ)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হতে বিচ্যুত হন না। অতএব, রাসূলে করীম (ﷺ)-কে ঘুম থেকে জাগাতে এ রকম অশিষ্ট আচরণ তিনি করতে পারেন বলে কি কখনো ধারণাও করা যায়? ইসলাম হলো এমন এক ধর্ম, যেটি সভ্যতা-ভব্যতা শিক্ষা দেয়। একজন সাধারণ মুসলমানকেও এভাবে ঘুম থেকে জাগানো ইসলামী শিষ্টাচারের খেলাফ।

আলোচ্য বাক্যটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ 

আরবী ‘হামাযা’ শব্দটির একাধিক অর্থ আছে। সেগুলোর মধ্যে ‘হিমস্’ একটি, যার মানে হলো মৃদু বা আলতো পায়ে হাঁটা, হালকা কদম ফেলে এগোনো, ধীরে ধীরে কথা বলা, অন্তরে উদ্রেক হওয়া, কোনো কিছু অপসারণ করা, চাপ দেয়া, কারো আড়ালে গিয়ে তার সমালোচনা করা ইত্যাদি।

আল্লামা ইবনে মনযূর কর্তৃক বর্ণিত উক্ত শব্দের এতোগুলো অর্থের মধ্যে হাল্কা বা মৃদু পায়ে হাঁটা একটি।  [‘লিসানুল আরব’, হারফুয যা, হা মীম যা]

এই শব্দটির ব্যাপারে আরবী ভাষাতত্ত্ব বিষয়ক ইমাম আল্লামা যোহরী নিজ ‘সিহাহ’ পুস্তকে, আল্লামা ইবনে ফারাস তাঁর ‘মাকায়ীস-উল-লোগাত’ বইতে লিখেছেন এবং ’মোখতার আস্ সিহাহ লিল্ রাযী’ গ্রন্থেও লেখা আছে যে এর অর্থ মৃদু পায়ে হাঁটা। ‘আল-মোনজিদ’, ’মো’জাম আল-ওয়াসীত’ বইগুলোও একই কথা লিখেছে।

সবগুলো অভিধান যেখানে ওই শব্দটিকে মৃদু পায়ে হাঁটা হিসেবে বর্ণনা করেছে, সেখানে সমস্ত তথ্যকে অবজ্ঞা করে তাকে ‘লাথি’ হিসেবে অনুবাদ করা কতো-ই না বড় ভুল কাজ! এটি ভাষা-সাহিত্যের পাশাপাশি শরীয়ত হতেও বিচ্যুতি বৈ কী! বস্তুতঃ হাদীসে ব্যবহৃত শব্দাবলী সব সময়-ই মহানবী (ﷺ)-এর প্রাপ্য সম্মান ও শোভনতা-শালীনতা বজায় রেখে বুঝতে হবে এবং সেভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। তাই ‘ফাহামাযানী বি-কাদামিহী’ বাক্যটির অর্থ হচ্ছে ‘জিবরীল (عليه السلام) আমার কাছে আসেন মৃদু পায়ে হেঁটে।’

এই শব্দের আরেকটি মানে হলো অন্তরে উদ্রেক হওয়া। ফলে রূপকার্থে এর অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমি তাঁর আগমন নিজ অন্তরে অনুভব করেছিলাম।’

কোনো সেবক তার মনিবের দরবারে পরম শ্রদ্ধা ছাড়া অার অন্য কোনোভাবে হাজির হন না। কাউকে লাথি মারা কোনো জাতি কিংবা সমাজেই গৃহীত বা গ্রহণযোগ্য নয়; আর এটি বেআদবি বা অসম্মানসূচক আচরণ হিসেবেই বিবেচিত।

মহানবী (ﷺ)-এর ক্ষেত্রে সৎ উদ্দেশ্যে হলেও দ্ব্যর্থবোধক শব্দের ব্যবহার পরিহার্য   

কুরআন মজীদে একটি আয়াতে করীমা আছে, যার ব্যাখ্যায় শায়খুল ইসলাম ইমাম মোহাম্মদ আনওয়ারউল্লাহ ফারূকী লেখেন:

সার কথা হলো, সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه) এই শব্দটি (’রায়িনা’) মহানবী (ﷺ)-এর ক্ষেত্রে অত্যন্ত নেক উদ্দেশ্য নিয়ে ও যথাযথ ভক্তি সহকারে উচ্চারণ করতেন, কিন্তু তা আরেক ভাষায় শ্লেষাত্মক হওয়ার কারণে আল্লাহতা’লা তার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। সবাই এখানে বুঝতে সক্ষম, যে শব্দটি কোনো রকম অসম্মানের ইঙ্গিত-ও বহন করেনি, অন্য আরেকটি ভাষায় হেয়করণে ব্যবহৃত হওয়ায় তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় যে সব শব্দের উদ্দেশ্য অসম্মানসূচক, সেগুলোকে কীভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া যায়? কেউ যদি বলে, ওই নিষেধাজ্ঞা শুধু ইহুদীদের প্রতি আরোপিত হয়েছিল এই মর্মে যে তারা তা ব্যবহার করতে পারবে না, তাহলে আমি বলবো, হয়তো তা হতে পারে; কিন্তু এ-ও তো অস্বীকার করার জো নেই যে ওই নিষেধাজ্ঞা মুসলমানদের প্রতি-ও ছিল, যাঁরা শব্দটিকে সম্মানার্থে ব্যবহার করতেন। এখানে (আয়াতে) ইহুদী ও তাদের ভাষার কোনো উল্লেখ-ই নেই। যদি তা-ই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে ইহুদীদের অন্যান্য বদমাইশির মতো এটিরও উল্লেখ থাকতো। মুসলমানদেরকে সম্বোধন করায় বোঝা যায় যে সৎ উদ্দেশ্যেও এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের অনুমতি নেই। [আনওয়ার-এ-আহমদী, ২২২ পৃষ্ঠা]

পবিত্র কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে মহানবী (ﷺ)-এর প্রতি সামান্যতম অসম্মান প্রদর্শন বা অশ্রদ্ধা জ্ঞাপনও কারো ঈমান ধ্বংস করতে পারে; আর ওই ব্যক্তি তা বুঝতেও পারবে না। এরশাদ হয়েছে -

হে ঈমানদার মুসলমান! নিজেদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করো না ওই অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী)-এর কণ্ঠস্বরের ওপর এবং তাঁর সামনে চিৎকার করে কথা বলো না, যেভাবে তোমরা একে অপরের সামনে করে থাকো, যেন কখনো তোমাদের কর্মসমূহ নিষ্ফল না হয়ে যায়, আর (এতে) তোমাদের খবরও থাকবে না। [সূরা হুজুরা-ত, ২য় আয়াত; মুফতী আহমদ এয়ার খান কৃত ‘নূরুল এরফান’]

এই আয়াতে মহানবী (ﷺ)-এর শানে পূর্ণ শ্রদ্ধাজ্ঞাপক শুধুমাত্র যে সব বাক্য ব্যবহার করা যাবে, সেগুলোর ব্যাপারেই আল্লাহ পাক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আরও এরশাদ ফরমান:

(ওহে মুসলমান)! রাসূল (ﷺ)-এর আহ্বানকে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তেমনি স্থির করো না, যেমনটি তোমরা একে অপরকে ডেকে থাকো। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপে চুপে বের হয়ে যায়, কোনো কিছুর আড়াল গ্রহণ করে। সুতরাং যারা রাসূল (ﷺ)-এর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন ভয় করে (এই মর্মে) যে কোনো বিপর্যয় তাদেরকে পেয়ে বসবে, অথবা তাদের প্রতি (আখেরাতে) বেদনাদায়ক শাস্তি পতিত হবে। [সূরা নূর, ৬৩ আয়াত; মুফতী আহমদ এয়ার খান কৃত ‘নূরুল এরফান’]

যদি মহানবী (ﷺ)-কে আহ্বান করা আমাদের পরস্পরের মাঝে ডাকাডাকি তথা সম্বোধনের মতো না হয়, তাহলে তাঁর ব্যক্তিত্ব কীভাবে আমাদের, অর্থাৎ, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিত্বের মতো হতে পারে? তাঁর সামনে সামান্য একটু উচ্চস্বরে কথা বল্লেও ঈমানহারা ও আমল বরবাদ হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতেও স্পষ্ট হয় যে হযরত জিবরীল আমীন (عليه السلام) প্রিয়নবী (ﷺ)-এর একজন অনুসারী, সেবক ও উজির ছিলেন। এই কারণেই তিনি হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর দরবারে হাজিরা দেয়ার সময় হয়েছিলেন শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মূর্ত প্রতীক। তিনি (সর্বদা) দরুদ-সালাম প্রেরণ করে তাঁর দরবারে প্রবেশের অনুমতি চাইতেন। বোখারী ও মুসলিম শরীফে এতদসংক্রান্ত একখানি সর্বসম্মত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যা’তে বিবৃত হয়:

একবার হযরত জিবরীল (عليه السلام) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে হাজির হন; তিনি মহানবী (ﷺ)-এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তাঁর হাত দুটো নিজ পায়ের উপরিভাগে স্থাপন করেন। অতঃপর তিনি হুযূর পাক (ﷺ)-কে ঈমান, ইসলাম, এহসান, কেয়ামত ও কেয়ামতের নিদর্শন সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। রাসূলে খোদা (ﷺ) তাঁকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দ্বারা পুরস্কৃত করেন। তিনি চলে যাওয়ার পর মহানবী (ﷺ) সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-কে বলেন, ইনি জিবরীল (عليه السلام)। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের ধর্ম শেখাতে এসেছিলেন।

মহানবী (ﷺ) বলেছেন জিবরীল (عليه السلام) আমাদেরকে আমাদের ধর্ম শেখাতে এসেছিলেন। প্রশ্ন হলো, এখানে ধর্ম তথা দ্বীন শিক্ষা দেয়ার কথা বলে কী বোঝানো হয়েছে? জিবরীল (عليه السلام) তো সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-কে ইসলাম ধর্মের বিধিনিষেধ কোনো কিছুই শেখাননি। খোদ মহানবী (ﷺ)-ই এগুলো জিজ্ঞাসিত হওয়ার পর নিজে নিজে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাহলে জিবরীল আমিন (عليه السلام) কী শেখালেন? এর উত্তর পরিষ্কার। জিবরীল (عليه السلام) মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে পরম ভক্তিভরে হাজিরা দিয়েছেন এবং নিজের আরজি তাঁর বরাবরে পেশ করেছেন। তিনি গোটা উম্মতে মোহাম্মদীকে শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে হাজিরা দিতে হয় এবং কীভাবে তাঁর কাছে ফরিয়াদ করতে হয়। এই সম্মান প্রদর্শন ও আদবশীলতাকেই মহানবী (ﷺ) ‘দ্বীন’ বা ধর্ম হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং তাঁর সাহাবা (رضي الله عنه)-কে বলেছেন: ইনি জিবরীল (عليه السلام)। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের ধর্ম শেখাতে এসেছিলেন।

আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয়নবী (ﷺ)-এর অসীলায় মুসলমান সমাজকে হুযূর পাক (ﷺ)-এর প্রতি তা’যিম তথা সম্মান প্রদর্শনের দিকনির্দেশনা দিন এবং ইসলামী বিধিবিধান মানারও তৌফিক দিন, আমীন।

                                                             *সমাপ্ত*    

  


 
Top