মূল: https://salafiaqeedah.blogspot.com
বঙ্গানুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসাইন

[Bengali translation of 'Tala'al Badru 'Alayna - The Full Moon Rose Over Us]

তালা'য়াল বাদরু আ'লাইনা - পূর্ণচন্দ্র আমাদের ভাগ্যাকাশে উদিত হাদিসটি বিশ্লেষণ
তালা'য়াল বাদরু আ'লাইনা - পূর্ণচন্দ্র আমাদের ভাগ্যাকাশে উদিত হাদিসটি বিশ্লেষণ 

❏ শায়খ আলবানী তাঁর লেখা ‘আল-দা’ঈফাহ’ পুস্তকে উল্লেখ করেন:

“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মদীনা মোনাওয়ারায় (হিজরতস্বরূপ) আগমন করেন, তখন সেখানকার নারী ও শিশুরা গান ধরেছিলো:

طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا ــ مِنْ ثَنِيَاتِ الْوِدَاعِ

হেদায়াতের পূর্ণচন্দ্র মোদের ভাগ্যাকাশে ‘আল-ওয়াদা’আ উপত্যকা হতে হয়েছেন উদিত,

وَجَبَ الشُّكْرُ عَلَيْنَا ــ مَا دَعَا لِلَّهِ دَاعِ

যতোদিন আল্লাহর কোনো এবাদতকারী আছেন আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে হবো বাধিত।


সিদ্ধান্ত: এটা দয়ীফ/দুর্বল।


❏  এই বর্ণনাটি ফাদাল ইবনে হিবা’ব হতে উদ্ধৃত করেন আবূল হাসান আল-খুলাঈ নিজ ‘আল-ফাওয়া’য়েদ’ গ্রন্থে (২:৫৯) এবং আল-বায়হাক্বী তাঁর ‘দালা’য়েল আল-নুবুওয়াহ’ পুস্তকে (২:২৩৩)। হিবা’ব বলেন:

আমি শুনেছি উবায়দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ‘আয়েশাহ’কে বলতে..এবং তিনি হাদীসটি উল্লেখ করেন। 

উদ্ধৃতি:

“এই রওয়ায়াত/বর্ণনার এসনাদ দুর্বল; রাবী তথা বর্ণনাকারীবৃন্দ সিক্বা (আস্থাভাজন), কিন্তু এর এসনাদ তথা  পরম্পরায় তিন কিংবা ততোধিক বর্ণনাকারীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এটাকে ‘মু’দাল’ বিবেচনা করা হয়।”

“[অনুবাদকের নোট: ইবনে আয়েশাহ ২২৮ হিজরী সালে ইন্তেক্বাল করেন; আর তাই তিনি ছিলেন হিজরতের ঘটনা হতে অন্ততঃ ১২০ বছর পরের সময়কার, যা একদম স্পষ্ট প্রতীয়মান করে বর্ণনাকারী ও বর্ণনার মধ্যকার বিচ্ছিন্ন পরম্পরাকে]।”

“ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) এবং অন্যান্যরা এই বিবরণটি একটি বিচ্ছিন্ন এসনাদ-সহ লিপিবদ্ধ করেন, যেমনটি আল্লামাহ ‘এরাক্বী ও হাফেয ইবনে হাজর (রহমতুল্লাহে আলাইহিম) উল্লেখ করেন। 

১.বায়হাকীঃ দালা’য়েলুন্ নুবুওয়াহ, ৫ম খণ্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা; 
২.আল-খুলাঈ কৃত ‘আল-ফাওয়া’য়েদ’, হাদীস নং ১১৯৪। 
৩.‘আল-মুগনী ‘আন হামলিল্ আসফার’, হাদীস নং ২১৯১; 
৪.ইবনে হাজার আস্কালানীঃ 'ফাতহুল বারী’, হাদীস নং ৩৯২৫, ৭ম খণ্ড, ২৬১ পৃষ্ঠা।

লক্ষ্য করুন: ইবনে আয়েশাহ হলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ও ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله)’এর শুয়ূখদের একজন; আর তিনি এই বিবরণটি ইরসা’ল (মানে তাঁর শায়েখবৃন্দের নাম উল্লেখ ছাড়াই) বর্ণনা করেন। বস্তুতঃ এ কথাই হাফেয এরাক্বী নিজ ‘আল-এহইয়া’র পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন (২:২৪৪)।



উদ্ধৃতি:


“কিন্তু ইবনে আল-ক্বাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যা এটা (মানে আল-বায়হাক্বীর বক্তব্যকে) খণ্ডন করেন নিজ ‘আল-যা’দ আল-মা’আদ’ (৩:১৩) গ্রন্থে এ কথা বলে:

“এটা নেহাত এক কল্পনা; কেননা ’সানিয়্যাতুল ওয়াদাআ’ (উপত্যকাটি) শা’ম অঞ্চলের দিকে (মানে মদীনা মোনাওয়ারার উত্তরে) অবস্থিত; মক্কা মোয়াযযমা হতে মদীনা মোনায়ারায় আগমনকারী মানুষেরা এমন কী এটা দেখতেও পান না, আর শা’ম অঞ্চলের দিকে গমনকারী (এবং সেখান থেকে আগমনকারী) মানুষেরা ছাড়া কেউই সেটা অতিক্রম করেন না।” [শায়খ আলবানী কৃত ‘আল-দাঈফাহ’, ২:৬৩ পুস্তকের উদ্ধৃতি সমাপ্ত]


 
হাফেয ইবনে হাজর (رحمة الله)-ও এই বিবরণকে ‘মু’দাল’ হিসেবে শ্রেণিকরণ করেন (এসনাদে পরপর দুই বা তিন জন বর্ণনাকারী সংযুক্ত না থাকার দরুন দুর্বল সাব্যস্ত)। [ফাতহুল বারী, ৭:২৬১]

লক্ষ্য করুন: তিনি (ইবনে হাজর) আরো বলেন, “হয়তো এটা ঘটেছিলো মহানবী (ﷺ) যখন তাবূকের গযওয়া/যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন তখনই।”  
[ফাতহুল বারী, ৭:২৬২]

ইমাম আল-বায়হাক্বী (رحمة الله) এটা ‘দালায়েল আল-নুবুওয়াহ’পুস্তকে ব্যক্ত করেন এবং তাঁর কাছ থেকে ইবনে কাসীর নিজ ‘আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া’ পুস্তকে উদ্ধৃত করেন এ মর্মে যে, ইমাম বায়হাক্বী বলেন: “আমাদের উলামাবৃন্দ এভাবেই এর বিবরণ দিয়েছেন যে, (মদীনাবাসী জনগণ) এটা আবৃত্তি করেছিলেন তখন, যখন-ই প্রিয়নবী (ﷺ) মক্কা হতে (মদীনায়) এসেছিলেন; আর এটা তখন নয়, যখন তিনি তাবূক (জ্বিহাদ) শেষে ওয়াদাআ উপত্যকা দিয়ে মদীনায় এসেছিলেন।” 

আরো লক্ষ্য করুন: কতিপয় ইতিহাসবিদের মতে, সানিয়াতুল ওয়াদা’আ দুটো, এর মধ্যে নিশ্চিত হচ্ছে উত্তরে শা’ম রাজ্যের দিকে অবস্থিত যেটা। কিন্তু মক্কার দিকে অবস্থিত যেটা, সেটাকে নিয়ে মতপার্থক্য বিরাজমান।



দিক বা উপত্যকা যেখানেই হোক, মদীনাবাসী জনগণ প্রিয়নবী (ﷺ)’এর (যাহেরী জীবদ্দশার) সময়কালেই (ঘটনাটি) উদযাপন করে গান ধরেছিলেন: ‘তোয়ালা’আল্ বাদরু ’আলাইনা’! 

❏ সাইয়্যেদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন:

 فَقِيلَ فِي الْمَدِينَةِ جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏.‏ فَأَشْرَفُوا يَنْظُرُونَ وَيَقُولُونَ جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ‏.‏ فَأَقْبَلَ يَسِيرُ حَتَّى نَزَلَ جَانِبَ دَارِ أَبِي أَيُّوبَ

অর্থ:...রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে মদীনায় তাশরীফ এনেছেন, সে খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। মানুষেরা বেরিয়ে আসেন এবং ঔৎসুক্য নিয়ে তাকিয়ে বলতে থাকেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এসেছেন! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এসেছেন!” এমতাবস্থায় তিনি এগোতে থাকেন, যতোক্ষণ না হযরত আবূ আউয়ূব আল-আনসারী (رضي الله عنه)’র গৃহের কাছে গিয়ে (উট হতে) নামেন....(একটি দীর্ঘতর হাদীসের অংশবিশেষ)। [সহীহ বুখারী, ৫ম খণ্ড, বই নং ৫৮, হাদীস নং ২৫০]

❏ হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) আরো বর্ণনা করেন:

আমি ছেলেদের মাঝে হাঁটছিলাম, যারা বলছিলো, ‘মুহাম্মদ (ﷺ) এসেছেন।’ আমি দৌড়ে যাই (তাঁকে দেখতে), কিন্তু কিছুই দেখতে পাই নি। তারা এরপর আবার বলে, ‘মুহাম্মদ (ﷺ) এসেছেন।’ আমি দৌড়ে যাই (তাঁকে দেখতে), কিন্তু কিছুই দেখতে পাইনি...যতোক্ষণ না মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর সাহাবী/সাথী আবূ বকর (رضي الله عنه)’কে সাথে নিয়ে আগমন করেন। আমরা তখন মদীনার পাথুরে উপকণ্ঠ এলাকায় ছিলাম। অতঃপর মদীনাবাসী এক ব্যক্তি আমাদেরকে প্রিয়নবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবী (رضي الله عنه)’এর আগমনের খবর আনসারবৃন্দের (رضي الله عنه) মাঝে ঘোষণা করার জন্যে প্রেরণ করেন। প্রায় ৫০০ জন আনসার সাহাবা (رضي الله عنه) তাঁদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষারত ছিলেন।

فقالت الأنصار انطلقا آمنين مطاعين، فأقبل رسول الله صلي الله عليه و سلم و صاحبه بين أظهرهم حتي أن العواتق لفوق البيوت يتراءينه يقلن : أيهم هو؟ أيهم هو؟ قال رأينا منظرا شبيها به يومئذ قال أنس : فلقد رأيت يوم دخل علينا و يوم قبض، فلم أر يومين شبيها بهما

আনসার (رضي الله عنه)’বৃন্দ তাঁদের (দু জনকে) বলেন, ‘আপনারা নিরাপদ ও মান্যকৃত।’ এমতাবস্থায় মহানবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবী (رضي الله عنه) মানুষের মাঝে আসেন; আর মদীনাবাসী জনগণ বেরিয়ে আসেন এমনভাবে যে, কুমারী নারীরা তাঁদেরকে দেখার জন্যে বাড়ির ছাদগুলোতে ওঠেন এবং বলাবলি করেন, ‘তিনি কোন্ জন? কোন্ জন তিনি?’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিপূর্বে এমন কোনো দৃশ্য অবলোকন করিনি।’ হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বলেন, ’আমি তাঁকে দেখেছিলাম, যেদিন তিনি (মদীনায়) এসেছিলেন এবং সেদিনও যেদিন তিনি বেসালপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁর আগমন দিবসে মানুষ যে রকম খুশি হয়েছিলেন, সে রকম কখনোই দেখিনি; আর তাঁর বেসাল দিবসে তাঁরা যতোখানি দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়েছিলেন, সে রকমও কখনোই দেখিনি। [আল-বুখারী কৃত ‘আত্ তারীখুস্ সগীর’ ও আল-বায়হাক্বী প্রণীত ‘দালায়েলুন্ নুবুওয়াহ’]

❏ সাইয়্যেদুনা আল-বারা’য়া ইবনে আযিব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত:

 أَوَّلُ مَنْ قَدِمَ عَلَيْنَا مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، وَكَانَا يُقْرِئَانِ النَّاسَ، فَقَدِمَ بِلاَلٌ وَسَعْدٌ وَعَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ، ثُمَّ قَدِمَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ فِي عِشْرِينَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ " قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم، فَمَا رَأَيْتُ أَهْلَ المَدِينَةِ فَرِحُوا بِشَيْءٍ فَرَحَهُمْ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، حَتَّى جَعَلَ الإِمَاءُ يَقُلْنَ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، فَمَا قَدِمَ حَتَّى قَرَأْتُ: {سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى} [الأعلى: 1] فِي سُوَرٍ مِنَ المُفَصَّلِ" ([2]).

আমাদের কাছে (মদীনায়) প্রথমে যে ব্যক্তিবৃন্দ আগমন করেন, তাঁরা হলেন সর্ব-হযরত মুসা’আব ইবনে উমর ও ইবনে উম্মে মাকতুম (رضي الله عنه); তাঁরা মানুষের মাঝে ক্বুরআন মজীদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। অতঃপর আসেন সর্ব-হযরত বিলাল, সা’আদ ও আম্মার ইবনে এয়াসির (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)। এরপর বিশ জন সাহাবা (رضي الله عنه)-সহ আসেন হযরতে উমর ইবনে আল-খাত্তাব (رضي الله عنه)। পরবর্তী পর্যায়ে প্রিয়নবী (ﷺ) স্বয়ং (মদীনায়) আগমন করেন এবং আমি মদীনাবাসীদেরকে কখনোই এতো আনন্দিত হতে দেখিনি, যেমনটি তাঁরা হয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’এর (ওই) আগমনে; কেননা এমন কী জারিয়া দাসীরাও বলছিলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এসেছেন!” আর তাঁর আগমনের আগেই আমি আল-আ’লা সূরার সূচনাকারী - سَبِّحِ ٱسْمَ رَبِّكَ ٱلأَعْلَىٰ - ‘আপন রব্বের নামের পবিত্রতা বর্ণনা করো’ আয়াতটি আল-মুফাসসিলের অন্যান্য সূরার সাথে পাঠ করেছিলাম। [সহীহ বুখারী, ৫ম খণ্ড, বই নং ৫৮, হাদীস নং ২৬২] 

❏ সাইয়্যেদুনা আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন:

حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ لَعِبَتِ الْحَبَشَةُ لِقُدُومِهِ فَرَحًا بِذَلِكَ لَعِبُوا بِحِرَابِهِمْ ‏

অর্থ: মহানবী (ﷺ) মদীনায় শুভাগমন করলে আবিসিনীয় লোকেরা খুশিতে বর্শা নিয়ে খেলায় মাতেন। [সুনানে আবী দাউদ, বই নং ৪১, হাদীস নং ৪৯০৫]



মদীনা শরীফে উৎসবমুখর এক পরিবেশ বিরাজমান ছিলো, যার নমুনা ইতিপূর্বে কখনোই দেখা যায়নি। প্রিয়নবী (ﷺ)’এর শুভাগমনকে স্বাগত জানাতে মানুষেরা রাস্তার দু পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন; নারী-পুরুষ ও শিশুরা উৎফুল্লচিত্তে প্রিয়নবী(ﷺ)’কে সাদর সম্ভাষণ জানাচ্ছিলেন। আর সারাক্ষণ দফ-বাদ্য/খঞ্জনি বাজানো হচ্ছিলো এবং গাওয়া হচ্ছিলো এই গানটি:

طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا ــ مِنْ ثَنِيَاتِ الْوِدَاعِ

وَجَبَ الشُّكْرُ عَلَيْنَا ــ مَا دَعَا لِلَّهِ دَاعِ

হেদায়াতের পূর্ণচন্দ্র মোদের ভাগ্যাকাশে ‘আল-ওয়াদা’আ উপত্যকা হতে হয়েছেন উদিত,

যতোদিন আল্লাহর কোনো এবাদতকারী আছেন আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে হবো বাধিত।

❏ উদ্ধৃতি: Islam Q&A ওয়েবসাইট ব্যক্ত করে:


অর্থ: তাঁরা বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) মদীনায় আগমন করলে বনী নাজ্জার বংশের কন্যারা দফ/খঞ্জনিসহ বেরিয়ে আসেন এবং ‘তোয়ালা’আল্ বাদরু ’আলাইনা মিন সানিয়্যাতিল্ ওয়াদা’আ’ গানটি পরিবেশন করেন। আর নবী করীম (ﷺ) তাঁদেরকে বলেন, “তোমাদের খঞ্জনি বাজাও, আল্লাহ তোমাদেরকে আশীর্বাদ করুন।”

উদ্ধৃতিটিতে লক্ষ্য করুন: “খুশির ক্ষণগুলোতে মহিলাদের দফ/খঞ্জনি বাজানো সহীহ, আর এটা প্রিয়নবী (ﷺ)’এর সময়ে করা হতো; কিন্তু তিনি ‘দফ বাজাও’ বলেছিলেন কি না তা জানা যায় না।” [https://islamqa.info/en/14017]

   

❏ বনূ নাজ্জার গোত্রের তরুণীরা খুশি প্রকাশক ও আল্লাহর প্রশংসাসূচক গান দফ-বাদ্যসহকারে তাঁদের বাড়ির ছাদের ওপর থেকে গেয়েছিলেন। তাঁদের গানের চরণ ছিলো:

طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا ــ مِنْ ثَنِيَاتِ الْوِدَاعِ

وَجَبَ الشُّكْرُ عَلَيْنَا ــ مَا دَعَا لِلَّهِ دَاعِ

হেদায়াতের পূর্ণচন্দ্র মোদের ভাগ্যাকাশে ‘আল-ওয়াদা’আ উপত্যকা হতে হয়েছেন উদিত,

যতোদিন আল্লাহর কোনো এবাদতকারী থাকবেন আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে হবো বাধিত।

أَيُّهَا المَبْعُوثُ فِيْنَا

جِئْتَ بِالْأَمْرِ الْمُطَاع

جِئْتَ شَرَّفْتَ الْمدِينَة

مَرَحَبًا يَا خَيْرَ الدَّاع

হে রাসূল, আপনি আমাদের মাঝেই হয়েছেন (খোদা কর্তৃক) লালিত-পালিত,

এসেছেন নিয়ে এক কর্তব্য, যা হতে হবে মান্যকৃত, 

আপনি এনেছেন এ নগরীর জন্যে মাহাত্ম্য, 

তাই স্বাগতম, আল্লাহর রাস্তার দিকে সেরা (ওই) আহ্বান, উদাত্ত।

আরেক কথায়, মদীনাবাসী জনগণ তাঁদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করেছিলেন এই গান গেয়ে যে, (হেদায়াতের) পূর্ণচন্দ্র আল-ওয়াদা’আ উপত্যকা হতে উদিত হয়েছেন এবং আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বাধিত থাকবো, যতোদিন আল্লাহর কোনো এবাদতকারী থাকবেন; আর আমরা আমাদের পূর্ণ আনুগত্য ওই রাসূল (ﷺ)’এর প্রতি ব্যক্ত করি, যাঁকে আল্লাহতা’লা আমাদের মাঝে প্রেরণ করেছেন।

ওপরোক্ত প্রশংসাস্তুতি ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) তাঁর রচিত ‘দালায়েলুন্ নুবুওয়্যাহ’ পুস্তকে বর্ণনা করেছেন; আর এ ক্বসীদা-কাব্য মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের উদ্দেশ্যে আধ্যাত্মিক মজলিশগুলোতে পাঠকারী মুসলমানদের অন্তর ও মস্তিষ্কে গভীরভাবে গাঁথা রয়েছে।

ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) তাঁর ‘এহইয়া’ গ্রন্থে এবং ইমাম ইঊসুফ নাবহানী নিজ ‘আনওয়ারুল মুহাম্মদীয়া’ পুস্তকেও এই বৃত্তান্তটি বর্ণনা করেন।



                                                 *সমাপ্ত* 



[কৃতজ্ঞতা স্বীকার: তিনটি সহীহ হাদীসের আরবী এবারত/উদ্ধৃতি দ্বীনীভাই ও ফেইসবুক বন্ধু মওলানা রুবাইয়াৎ বিন মূসা সরবরাহ করেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই এবং আল্লাহর দরবারে তাঁর মঙ্গল কামনা করি, আমীন।]

 
Top