Latest News

অন্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মকতুমের ঘটনা


আল্লাহ তায়ালার এরশাদ, তিনি বিরক্ত বোধ করেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন এজন্য যে, তাঁর কাছে একজন অন্ধ এসেছে। আয়াতে কারীমার প্রকাশ্য অর্থ থেকে এ ধারণার সৃষ্টি হয় যে, যে সময় অন্ধ সাহাবী হজরত আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম (رضي الله عنه) সত্য অনুসন্ধানের মানসে হুজুর পাক (ﷺ) এর কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন, সে সময় হুজুর পাক (ﷺ) তাঁর প্রতি বিরক্ত হয়েছেন এবং বিমুখ হয়েছেন। অপরপক্ষে যারা বদলায়, কাফের তার সামনে উপবিষ্ট ছিলেন, তিনি তাদের প্রতি মনোযোগী ছিলেন, তাদের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। হুজুর পাক (ﷺ) এর এই আচরণ অপরাধ বলে প্রমাণিত হয়। তাই হক তায়ালা তার নিন্দা করে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আয়াত নাযিল করলেন। তাফসীরের কিতাব সমূহ এই সূরার শানে নুযুল এরকমই বর্ণনা করা হয়েছে।


এখন দেখা যাক, এদ্বারা বাস্তবিকই হুজুর পাক (ﷺ) অপরাধী সাব্যস্ত হন কিনা। এখানে অপরাধ হওয়াটা ধারণা মাত্র। তবে বাহ্যিকভাবে তরকে আউলা (উত্তম অবস্থা বর্জন) বলা যেতে পারে। তদুপরি উপস্থিত ব্যক্তিদ্বয় অবস্থা সম্পর্কে যদি তার জানা থাকতো তবে হয়তো অন্ধ সাহাবী কে সামনে এনে বসাতে। কাফেরদের প্রতি তিনি যে গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন, সেটা প্রকৃত আনুগত্য, শরীয়তের নির্দেশ প্রচার, তালীফে কুলুব (অন্তর জয় করা), ইমান প্রতিষ্ঠার আকাংখা ও পথ প্রদর্শনের উদগ্র বাসনা বহিঃপ্রকাশ ছিলে। কেননা তার নবুয়তের মূল উদ্দেশ্য তাে এ-ই ছিলাে। গােনাহ্ ও দ্বীনের কাজের বিরুদ্ধাচরণ উদ্দেশ্য ছিলাে না।


হক সুবহানাহু তায়ালা যা কিছু বর্ণনা করেছেন এবং তার হাবীব (ﷺ) এর প্রতি যে একটুখানি পছন্দনীয় প্রকাশ করেছেন, তার উদ্দেশ্য ছিল নসীহত প্রদান করা। এবং এদ্বারা এটাই ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে, দ্বীনের প্রতি আহ্বান ও দ্বীন প্রচারের ব্যাপারে আপনার সুগভীর মনােযােগিতা যেননা ঐ পর্যায়ে না পৌছে যায় যার ফলে কোনাে মুসলমান আপনার মনোেযােগিতা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। সংবাদ পৌছানো এবং হুঁশিয়ার করাই এ মুহূর্তের জন্য যথেষ্ট। রাসূলের দায়িত্ব তার পৌছে দেয়া। এক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে হজরত ইবনে মাকতুম ধমক আদবের যোগ্য। কি না যদিও তিনি অন্ধত্বের কারণে দেখতে পাচ্ছিলেন না, তথাপিও কাফেরদের সঙ্গে হুজুর (ﷺ) এর যে কথােপকথন চলছিলাে, তাতে তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন। আর এটাও তাঁর খুব ভালোভাবে জানা ছিলো যে দাওয়াত ও দ্বীনের প্রচারের প্রতি হুজুর আকরাম (ﷺ) কতটুকু গুরুত্ব প্রদান করে থাকে এবং কাজে তিনি কতটুকু নিমজ্জিত হয়ে থাকেন। কথার উপর কথা বলার কারণে হুজুর পাক (ﷺ) এর কোথায় ছেদ পড়েছিল এবং মজলিসে এক ধরনের কোলাহলের সৃষ্টি হয়েছিলাে। এ অবস্থা হুজুর পাক (ﷺ) কে যন্ত্রণা দিয়েছিলাে। আর হুজুর (ﷺ) কে যন্ত্রণা দেয়াটাতাে বহুত বড় গােনাহ।


অতএব বুঝা গেল যে, এই আয়াতে কারীমা নাজিলের মাধ্যমে হযরত ইবন মাকতুমকেই প্রকৃতপক্ষে ধমক দেয়া হয়েছে। যেমন আয়াত নাযিল হয়েছে হুজুর পাক (ﷺ) এর হুজরা শরীফে পিছন সজোরে ডাকাডাকি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এখানে তাদেরকে আয়াত নাযিলের মাধ্যমে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে শাসানাে হয়েছে। তবে হজরত উম্মে মাকতুমের বেলায় অন্ধত্বের কারণে তাকে 'অক্ষম' হিসাবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে। নম্রতা ও মেহেরবাণী প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়াল্লাহু আলাম।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 


© | সেনানী এপ্স |

Top