সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক রাসূল (ﷺ)-রক্ত মুবারক পান করার ঘটনা।

সংকলক ও অনুবাদকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

(ব্লগার, ইসলামী বিশ্বকোষ)


❏ প্রবাহিত রক্ত পান করা হারাম-(সূরা-আনআম-১৪৫) 


বিপরীতমুখী আয়াত ও হাদিসের সমাধানঃ

রক্ত অপবিত্র ​​হওয়ার বিষয়ে যা বলা হয়েছে এবং সাহাবীগণ কর্তৃক নবী করীম (ﷺ) এর রক্ত ​​পান করার বিষয়ে যে ধারণা রয়েছে তার মধ্যে পূর্ববর্তী আলেমগণ কিভাবে মিলবন্ধন এনেছেন?


তারা বলেন, এটি এমন একটি বিষয় যা কেবলমাত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্যই প্রযোজ্য, যেখানে এ রায় কেবল তাঁর জন্যই প্রয়োগ করা হয়, তাঁর উম্মতের বাকী উম্মতের জন্য নয়।  এমন অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যা কেবলমাত্র তাঁর জন্যই প্রযোজ্য, যা ইমাম আল সুয়ূতীর গ্রন্থ আল-খাসায়েসুল-কুবরায় সংকলিত হয়েছে। কিছু আলেম বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রক্ত মুবারক পবিত্র (খাঁটি) ছিলেন, যা ‘আবদুল্লাহ ইবনে আল-জুবায়েরের কাহিনী অবলম্বনে রয়েছে।


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম কাজী আয়াজঃ আল-শিফা (১/৫৫), 

২.মুগনিঃ আল মুহতাজ (১/২৩৩);  

৩.তাবায়ুন আল-হকাইক (4/51)।  


আমরা জানি রক্ত নাপাক কিন্তু রাসূল (ﷺ)-রক্ত মুবারক পাক-পবিত্র। এর প্রমাণ মিলে যখন সাহাবীগণ তাঁর রক্ত মুবারক পান করেন তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা হারাম বলেন নি বরং তাঁদেরকে সুসংবাদ দিয়েছেন। এর থেকে এটাও প্রমাণ হয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মত মানুষ নন। তিনি বেমিসাল মাখলুক, নুরুল বাশার, তাঁর সাথে অন্যান্য মানুষের কোন তুলনাই হয় না।



এ রক্তপান সম্পর্কিত ঘটনা কতিপয় হাদিসে ভিন্ন ভিন্ন সনদ, ইসনদ ও মতনে বিভিন্ন ঘটনার আলোকে বর্ণিত। 



সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল যুবায়ের (رضي الله عنه) এর ঘটনাঃ


❏ হাদিস ১:


সনদঃ হুনায়েদ ইবনুল কাসিম (رحمة الله) ➠ তাঁর বাবার কাছ থেকে ➠ তিনি ‘আমির ইবনে’ আবদুল্লাহ ইবনুল যুবায়ের (رحمة الله) নিকট বর্ণনা করেন ➠ আবদুল্লাহ ইবনুল যুবায়ের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, 


তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন শিঙ্গা লাগাচ্ছিলেন তখন তিনি তাঁর নিকট এসেছিলেন। যখন তিনি শেষ করেছেন তিনি  তিনি বললেন: “হে আবদুল্লাহ, এ রক্ত ​​নিয়ে ঢেলে ফেলে দাও যাতে কেউ তা দেখতে না পায়।” তিনি যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে চলে গেলেন তখন তিনি গিয়ে রক্ত মুবারক ​​পান করে ফেললেন। 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: “হে‘ আবদুল্লাহ, তুমি কি করেছ? 

তিনি বললেন: "আমি একে সবচেয়ে গোপন জায়গায় রেখেছি, যেখানে আমি ভাবলাম তা লোকদের থেকে সবচেয়ে গোপন থাকবে।" রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: "সম্ভবত তুমি এটি পান করেছিলে।" তিনি বললেন, হ্যাঁ!


তথ্যসূত্রঃ


১.ইবনে আবী ‘আছিম আল-আহাদ ওয়াল-মাথানীতে (1/414)  

২.আল-বাজ্জারঃ মুসনাদে বাজ্জার (6/169);  

৩.আল-হাকিমঃ মুস্তাদরাক আল হাকিম (3/638);  

৪.আল-বায়হাকীঃ সুনান আল-কুবরায় (67) 

৫.ইবনে ‘আসাকিরঃ তারেখ দামিস্ক (২৮/১৬৩)


সনদ পর্যালোচনাঃ


১.হুনায়েদ ইবনে আল-কাসিমের জীবনী আল-তারিখ আল-কাবীর (8/249) ও আল-জারহ ওয়া'ত-তা’দিল (9/121) এ উল্লেখ করা হয়েছে, তবে তারা তার সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেনি।  

২.ইবনে হিব্বানঃ আস-সীকাত (৫/৫১৫) এ উল্লেখ করেছেন। 

৩.আল-হাফিজ ইবনে হাজারঃ আল-তাখিজ আল-হাবিরে (১/৩০) বলেছেন:

"এর ইসনাদে আল-হুনাইদ ইবনুল কাসিম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং তাকে নিয়ে কোন সমস্যা নেই।

৪.আল-যাহাবিঃ সিয়ার আ'লাম আল-নুবালা ’(3/366) এ বলেছেন:

"হুনায়েদ ইবনুল কাসিমের (বর্ণনাকারী) কোন ভুলের কথা আমি জানি না।"


❏ হাদিস ২:


সনদঃ মুহাম্মদ ইবনে হুমায়দ থেকে বর্ণিত,➠ তিনি আলী ইবনে মুজাহিদ থেকে,➠ তিনি রাবাহ আল নবী আবু মুহাম্মাদ থেকে, (তিনি ছিলেন আল-যুবায়ের পরিবারের মুক্ত দাস) ➠তিনি আসমা 'বিনতে আবী বকর (رضي الله عنه)'র কাছ থেকে,➠ আল-হাজ্জাজের সামনে➠ তিনি তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে আল-জুবায়ের (رضي الله عنه) এর ঘটনাটি শুনিয়েছিলেন যে, 


আবদুল্লাহ ইবনে আল-জুবায়ের (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রক্ত মুবারক পান করেছিলেন এবং নবী (ﷺ) বলেছেন: "আগুন তোমাকে কখনও স্পর্শ করবে না।"


তথ্যসূত্রঃ 

১.ইমাম হাকিমঃ মুস্তাদরাকে হাকেম-৩/৫৫৩

২.ইমাম বায়হাকীঃ সুনানুল কুবরা লিল বায়াহাকী- ৭/৬৭

৩.ইমাম যাহাবীঃ সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/৩৬৬ ৪.ইমাম ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউজ যাওয়াদ- ৮/২৭০

৫.ইবনে আসাকিরঃ তারিখ দামেষ্ক (১৮/১৬২)।

৬.ইমাম সুয়ূতীঃ আল খাসায়েলুল কুবরা, ২/২৫২

৭.ইবনে হাজার আস্কালানীঃ আল-ইসাবাহ-২/৩১০

৮.ইমাম ইবনে হাজার তাওখিজ আল-হাবিয়া (১/৩১)

৯.ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানীঃ হিলয়াতুল আওলিয়া-১/৩৩০

১০.দারাকুতনীঃ আস সুনান (১/২২৮),

১১.ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল-১৩/৪৬৯

১২.ফাযায়েলে আমালের উর্দু এডিশনের ১৮৮ নং পৃ:

১৩.জিয়াউল্লাহ আল-কাদেরীঃ আহলে সুন্নাত কারা? সাকলাইন প্রকাশনী, মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর।


❏ হাদিস ৩:


সনদঃ আবু খলিফা আল-ফাদল ইবনুল-হাব্বাব (رحمة الله) থেকে বর্ণিত ➠তিনি বলেন, 'আব্দুর রাহমান ইবনুল-মুবারক (رحمة الله) আমাদের বলেছেন ➠ সা'দ আবু' আসিম (رحمة الله) [সুলায়মান ইবনে আলীর মুক্ত দাস], তিনি➠ কায়সান থেকে [আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه)-এর মুক্ত দাস] যিনি আমাদের বলেছিলেনঃ➠ হযরত সালমান আল-ফারসি (رضي الله عنه) আমাকে বলেছেন… এবং তিনি আবদুল্লাহ ইবনুল যুবায়ের (رضي الله عنه)-কে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণী সহ উক্ত ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন: “শপথ পূর্ণ করা ব্যতীত (জাহান্নামের) আগুন তোমাকে কখনও স্পর্শ করবে না।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম হাকিমঃ মুস্তাদরাকে হাকেম-৩/৫৫৩

২.ইমাম বায়হাকীঃ সুনানুল কুবরা লিল বায়াহাকী- ৭/৬৭

৩.ইমাম যাহাবীঃ সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/৩৬৬ ৪.ইমাম ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউজ যাওয়াদ- ৮/২৭০

৫.ইবনে আসাকিরঃ তারিখ দামেষ্ক (১৮/১৬২)।

৬.ইমাম সুয়ূতীঃ আল খাসায়েলুল কুবরা, ২/২৫২

৭.ইবনে হাজার আস্কালানীঃ আল-ইসাবাহ-২/৩১০

৮.ইমাম ইবনে হাজার তাওখিজ আল-হাবিয়া (১/৩১)

৯.ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানীঃ হিলয়াতুল আওলিয়া-১/৩৩০

১০.দারাকুতনীঃ আস সুনান (১/২২৮),

১১.ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল-১৩/৪৬৯

১২.ফাযায়েলে আমালের উর্দু এডিশনের ১৮৮ নং পৃ:

১৩.জিয়াউল্লাহ আল-কাদেরীঃ আহলে সুন্নাত কারা? সাকলাইন প্রকাশনী, মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর।


এ হাদিস ও এর রাবী সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনদের মন্তব্যঃ


১. হাফেজ নূরুদ্দীন হায়সামী (رحمة الله) এ ঘটনাকে রাসূল (ﷺ) এঁর বৈশিষ্টের অধ্যায়ে বর্ণনা করে বলেনঃ এটি তাবারানী ও বাজ্জারের বর্ণনা। আর মুসনাদে বাজ্জারের সমস্ত বর্ণনাকারী সহীহ এর রাবী। হুনাইদ বিন কাসেম (رحمة الله) ছাড়া, তবে সেও সেকা তথা গ্রহণযোগ্য রাবী।

✧ [মাযমাউজ জাওয়েদ-৮/২৭০]


২. ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেনঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর (رضي الله عنه) কর্তৃক রাসূল (ﷺ) এঁর রক্ত পান করার ঘটনাটি হযরত আসমা বিনতে আবী বকর (رضي الله عنه) এবং হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) থেকেও একাধিক সনদে বর্ণিত। 

✧ [সুনানুল কুবরালিল বায়হাকী-৭/৬৭]


৩. হাফেজ শামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) বলেনঃ এ বর্ণনাটিকে ইমাম আবী ইয়ালা স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন, এবং লিখেছেন যে, হুনাইদ (رحمة الله) বর্ণনাকারীর উপর কেউ জরাহ করেছেন বলে আমার জানা নেই। 

✧ [ইমাম যাহাবীঃ সিয়ারু আলামিন নুবালা-২/৩৬৬]


৪. আল্লামা আলী মুত্তাকী হানাফী (رحمة الله) এ ঘটনা বর্ণনা করে বলেনঃ এ বর্ণনার সকল রাবী সেকা তথা গ্রহণযোগ্য। 

✧ [ইমাম মুত্তাকী আল-হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল-১৩/৪৬৯]


❏ হাদিস ৪ :


ইমাম সুলতান মােল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) শেফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, 

হযরত জুবাইর (رضي الله عنه) যখন রাসূল (ﷺ)' এর রক্ত মুবারক পান করেন, তখন কেউ একজন তাকে উক্ত রক্ত মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, তা কেমন ছিল, উত্তরে তিনি বলেন,“তা ছিল মধু থেকেও মিষ্টি এবং মিশকের চেয়েও অতি সুগন্ধ।” 

✧ [আল্লামা মােলা আলী ক্বারী হানাফী, শরহে শিফা, ১ / ১৭০ পৃ .]



আবু সাঈ’দ আল খুদরী (رضي الله عنه) এর পিতা মালিক ইবনে সিনান (رضي الله عنه) 



তিনি হলেন সাইয়্যিদিনা মালিক ইবনে সিনান ইবনে ‘উবাইদ ইবনে থাক’লাবা ইবনে আবজার (رضي الله عنه)।  আল আবজার হলেন খিদারাহ ইবনে ‘আওফ ইবনুল হারিস ইবনুল খাজরাহ। সাইয়্যিদিনা মালিক হলেন সাইয়্যিদিনা আবু সা’ইদ আল আনসারী (رضي الله عنه)'র পিতা।  উহুদের যুদ্ধে তিনি ‘ইরাব ইবনে সুফিয়ান আল কিনানী কর্তৃক শহীদ হয়েছিলেন। তিনি তাঁর পুত্রকে নবী (ﷺ)'র কাছে নিয়ে এসে ১৩ বছর বয়সে যুদ্ধের লড়াইয়ে যোগ অংশগ্রহণ করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। তবে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাতে সম্মতি দেননি। 


তথ্যসূত্রঃ

১.আল ইসতিয়াব, খণ্ড  ১, পৃ ৪২০;  

২.উসদ আল গাবাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৬০।

৩.আল ইসাবাহ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৭২৭।

৪.আল তুফাহ আল লতিফাহ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৯।


তাঁর জান্নাতে প্রবেশের গ্যারান্টি কিছু কিছু হাদিসে এসেছে, যা একে অপরকে শক্তিশালী করে।


❏ হাদিস ৫ :


সাঈদ ইবনে মনসুর (رحمة الله) তাঁর সুনানে ও ইমাম বায়হাকী তাঁর দালা'ইলুন নবুওয়াতে ➠ হযরত উমর ইবনুল সা'য়িব (رضي الله عنه)'র থেকে বর্ণনা করেন,


فقد روى سعيد بن منصور في سننه و البيهقي في الدلائل عن عمر ابن السائب أنه بلغه أن مالكا أبا أبي سعيد الخدري لما جرح النبي صلى الله عليه و سلم يوم أحد مص جرحه حتى أنقاه و لاح أبيض فقيل له مجه فقال لا والله لا أمجه أبدا ثم أدبر يقاتل فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أراد أن ينظر إلى رجل من أهل الجنة فلينظر إلى هذا الشهيد


তিনি বলেছিলেন যে তিনি যখন শুনেছেন যে রাসূল (ﷺ) আহত হয়েছিলেন, আবু সা'ঈদ আল খুদরি (رضي الله عنه)'র পিতা মালিক ইবনে সিনান (رضي الله عنه) ক্ষত স্থানটি চুষণ করলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না রক্ত মুবারক ​​পরিষ্কার হয় এবং তাঁর (ﷺ) ত্বকের সাদাভাব প্রকাশিত হয়। তাকে বলা হলঃ ইহা (রক্ত মুবারক) ফেলে দাও। তিনি বললেনঃ না, আল্লাহর কসম, আমি ইহাকে কখনই ফেলব না। অতঃপর তিনি গিয়ে যুদ্ধ করলেন এবং নবী করীম (ﷺ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি জান্নাতবাসীদের মধ্যে একজনকে দেখতে চায় সে যেন তাঁর দিকে তাকায়।” অতঃপর তিনি শহীদ হন।  


তথ্যসূত্রঃ

১.সুনানে সাই’দ ইবনে মনসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭০।

২.বায়হাকীঃ আল দালা'ইলুন নবুওয়াত, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬৬।


ইমাম হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানী (رحمة الله) এটিকে মুরসাল হিসেবে চিহ্নিত করেন। [আল তালখিস আল হাবির, খন্ড ১, পৃ. ১৭০]


❏ হাদিস ৬ :


ওহুদ যুদ্ধের দিন হযরত আবু সাইদ (رضي الله عنه) এর সম্মানিত পিতা হযরত মালেক বিন সিনান (رضي الله عنه) ক্ষতস্থান মুখে চুষে পরিষ্কার করেন। একটু সাদা পরিলক্ষিত হলে সবাই বললেন, রক্তগুলো ফেলে দিতে। তিনি আল্লাহর শপথ করে বললেন, মুখ থেকে এই রক্ত মুবারক আমি কখনো ফেলব না। অতঃপর তিনি রক্ত মুবারক পান করে ফেলেন। রাসূলে কারিম (ﷺ) তখন ইরশাদ করেন, "কেউ জান্নাতী লোক দেখতে চাইলে সে যেন উনার দিকে তাকায়।" 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম কাযি আয়্যাজ, শিফা শরীফ, ৪১ পৃষ্ঠা।

২.ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৩ /২৬৬ পৃ। 

৩.ইমাম সাঈদ বিন মানসুর, আস - সুনান।

৪.শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়াত (ফার্সী),প্রথম খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা। 

৫.ইমাম কাস্তালানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনিয়া, ২ / ৯২ পৃ .।

৬.শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ২১৬ পৃষ্ঠা। 

৭.ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫ / ৫৪৬ পৃ .

৮.সফিকুর রহমান মােবারকপুরী, আর - রাহিকুল মাখতুম, ২৪৭ পৃ .

৯.ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ২ / ৩১৯ পৃ .

১০.ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৪ / ২৪১ পৃ .।

১১.ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১ / ৩৬১ পৃ .

১২.ইমাম ইবনে হাজার আস্কালানীঃ আল ইসাবাহ -৩/৩২৫, মিশর থেকে প্রকাশিত।


❏ হাদিস ৭ :


সনদঃ ইমাম তাবারানী (رحمة الله), ইমাম হাকিম (رحمة الله), ইমাম ইবনে আবী অসীম (رحمة الله) এবং ইমাম আবু কাসিম আল বাগবী (رحمة الله) তাঁরা সবাই মুসা ইবনে মুহাম্মদ (رحمة الله) এর সনদে ➠ তিনি তাঁর মাতা থেকে ➠ তিনি উম্মু আবদুর রহমান ইবনে সাইদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ তিনি আবু সা'দ (رضي الله عنه) থেকে নিম্নোক্ত শব্দযোগে বর্ণনা করেছেন।

 

أصيب وجه رسول الله صلى الله عليه و سلم يوم أحد فاستقبله مالك بن سنان فمص جرح رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم من سره أن ينظر إلى من خالط دمه دمي فلينظر إلى مالك بن سنان


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মুখ মুবারক উহুদের যুদ্ধে আহত হয়েছিল। মালিক ইবনে সিনান (رضي الله عنه) এগিয়ে আসলেন এবং রসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ক্ষতস্থান (এর রক্ত) মুবারক চুষণ করলেন। এর পরে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ঘোষণা করেছিলেন,“যে ব্যক্তি এমন লোককে দেখতে চায় যার রক্ত আমার রক্ত মুবারকে মিশ্রিত হয়েছে, সে যেন মালিক ইবনে সিনান (رضي الله عنه)'র দিকে তাকায়।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম তাবারানীঃ আল মু'জামুল কবির, খণ্ড ৬, পৃ ৩৪।

২.ইমাম হাকিমঃ আল মুস্তাদরাক, খণ্ড ৩, পৃ. ৬৫১।

৩.আল আহাদ ওয়া আল মাথানী, খণ্ড ৩, পৃ. ৫৯৮।

৪.শামসুদ্দীন আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে সালিহীঃ সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, খন্ড ১০, পৃ. ৩৯।


❏ হাদিস ৮ :


সনদঃ

সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদেও একই রকম বর্ণনা পাওয়া যায়,

মুসআব ইবনুল আসকা (رحمة الله)'র সনদে ➠ তিনি 'রবিহ ইবনে' আবদুল রহমান ইবনে ইসমাইল (رحمة الله) থেকে ➠ তিনি আবু সাই'দ (رضي الله عنه) থেকে অনুরূপ শব্দ সহ, রসুলুল্লাহ (ﷺ)'র সাথে মিলিত হওয়ার ঘোষণা:


من خالط دمي دمه لا يضره الله


"যার রক্ত আমার (রক্ত মুবারকের) সাথে মিশ্রিত হয়েছে, আল্লাহ তাঁর ক্ষতি করবেন না।"


তথ্যসূত্রঃ

[শামসুদ্দীন আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে সালিহীঃ সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩৯।]


রাবী পর্যালোচনাঃ 

রবিহ ইবনে আবদুর রহমান (رحمة الله)


● ইমাম আহমদ (رحمة الله) মন্তব্য করেছেন, "তিনি অপরিচিত।"

[কামিল ইবনে আদি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৭৪]


● আল তিরমিযী (رحمة الله) তাঁর কাছ থেকে উদ্ধৃত করেছেন, আল ‘ইলাল আল কবির।

● ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে আল স্বিকাতে (নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী) হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন।

[ইমাম ইবনে হিব্বানঃ আল স্বীকাত, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩০৯]


● ইবনে ‘আদি (رحمة الله) তাঁর জীবনীটি শেষ করেছেন এই বলে যে, “আমি আশা করি তার সাথে কোনও সমস্যা নেই।”

[কামিল ইবনে আদি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৭৪]


● হাফিজ ইমাম ইবনে হাজার আস্কালানী (رحمة الله) তার সম্পর্কে আল তাহযিব আল তাকরীবে^1 মন্তব্য করেছেন, “তিনি গ্রহণযোগ্য”।


নোটঃ আল তাহযিব আল তাকরীব হল হাফিজ ইমাম ইবনে হাজার আস্কালানী (رحمة الله) লিখিত কিতাব যা [ইমাম আব্দুল গণি আল মাকদিসী (رحمة الله) {৫৪১-৬০০ হিঃ} লিখিত তাহযিব আল তাহযিব কিতাবের সংক্ষিপ্তরূপ]


হযরত মালিক বিন সিনান (رضي الله عنه) কর্তৃক রাসূল (ﷺ) এঁর রক্ত পানের ঘটনা নিম্নবর্ণিত কিতাবে বর্নিত।


❏ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী শাফেয়ী (رحمة الله) এ ঘটনাটি ইবনে আবী আসেম, বাগবী, সহীহ ইবনুস সুকুন এবং সুনানে সাঈদ বিন মানসুরের হাওয়ালায় নকল করেন। 

✧ [আল ইসাবাহ-৩/৩২৫, মিশর থেকে প্রকাশিত]


উপসংহারঃ এই সমস্ত সনদের সমন্বয়ের সাথে এই হাদীসটিকে হাসান লি গাইরিহি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।


হযরত সাফিনাহ (رضي الله عنه), রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আযাদকৃত দাস এর ঘটনাঃ


❏ হাদিস ৯ :


বুরাহ ইবনে ‘উমর ইবনে সাফিনাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, ➠ তাঁর দাদা (رضي الله عنه) বলেছেন: 

নবী করীম (ﷺ)কে শিঙ্গা দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিল, তখন তিনি আমাকে বললেন: “এই রক্ত ​​নিয়ে যাও এবং যেখানে পশু-পাখি পৌঁছাতে পারে না সেখানে দাফন করো”, অথবা তিনি বলেছিলেন: “মানুষ ও প্রাণী।”  

তিনি বললেনঃ সুতরাং আমি তা সরিয়ে নিয়ে গেলাম এবং পান করেছিলাম। তিনি (رضي الله عنه) বললেনঃ অতঃপর তিনি [রাসূলুল্লাহ (ﷺ)] আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন এবং আমি তাঁকে বললাম যে, আমি তা পান করেছিলাম। এতে তিনি (ﷺ) হাসলেন।


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম বুখারীঃ আল-তারিখ আল-কাবীর (৪/২০৯)   

২.ইবনে ‘আদিঃ আল-কামিল (২/৬৪);  

৩.আল-বায়হাকী আল-সুনান আল-কুবরা (7/67); 

৪.আল-তাবারানী আল-মু’জাম আল-কবির (7/81)।

৫.ইবনে কাছিরঃ আল-ফুসুল ফিল-সিলাহ (300)

৬.আল-আকিলিঃ আল-দু'ফা ’(২৮২)

৭.আল-আলবানীঃ আল-সিলসিলাহ আল-দইফা (১০৭৪)

৮.আল-আকিলি (৬১) 

৯.ইবনে আদীঃ আল-কামিল (২/৬৪)


সনদঃ

রেফারেন্স এ উল্লেখিত ইমামগণ সকলেই এটি বর্ণনা করেছেন, ইবনে আবী ফুদায়েক (رحمة الله) এর মাধ্যমে ➠ বুরাহ ইবনে ‘উমর ইবনে সাফেনাহ’র কাছ থেকে ➠তিনি তাঁর পিতামহ থেকে।


রাবী পর্যালোচনাঃ


(i) ‘উমর ইবনে সাফেনাহ’।  

● আল-যাহাবি আল-মিজানে বলেছেন: তিনি অপরিচিত।  

● আবু জুর’আ বলেছেন: তিনি সাদুক (সত্যবাদী)।  


(ii) 

● তাঁর পুত্র বুরাহ, তার আসল নাম ইব্রাহিম।  

● ইবনে আদীঃ আল-কামিল (২/৬৪) তে বলেছেন: 

"হাদিসটির শক্তিশালী বর্ণনা নেই তবে আমি আশা করি যে তার সাথে কোন ভুলও নেই।"


(iii) 

● আল-আহকামে ‘আব্দুল হক্ক আল-ইশবেলি’ দ্বইফ বলেছেন।  

● আল-হাফিজ ইবনে হাজারঃ আল-তালকিসে তিনি নীরবতা পালন করেন।  



হযরত সালিম আবু হিন্দ আল-হাজজাম (رضي الله عنه) এর ঘটনাঃ



❏ হাদিস ১০ :


ইমাম হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানী (رحمة الله), তিনি ➠ ইমাম আবু নুয়াই’ম (رحمة الله) থেকে, তিনি ➠ হযরত সালিম আবু হিন্দ আল-হাজজাম (رضي الله عنه) সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। হযরত সালিম আবু হিন্দ আল-হাজজাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,

আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)কে শিঙ্গা দিয়ে চিকিৎসা করেছি এবং শেষ করে আমি তা (রক্ত মুবারক) পান করেছি।  আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি তা (রক্ত মুবারক) পান করেছি। তিনি বলেছিলেন: “আফসোস হে সালিম, তুমি কি জান না যে রক্ত ​​হারাম? এটা আর করোনা।"


[এর ইসনাদে আবু'ল-হাজজাফ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার বিষয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে]


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানীঃ আল-তাখিজ আল-হাবির (১/৩০)

২.ইমাম আবু নুয়াই’মঃ মা‘রিফাত আল সাহাবাত।



এক হাজ্জাম রাসূল কারিম (ﷺ) কে শিঙ্গা লাগিয়ে সে রক্ত মুবারক পান করেনঃ



❏ হাদিস ১১ : 


ইমাম আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) মাদারেজুন নবুয়াতে বলেন, এক হাজ্জাম (যে শিঙ্গা লাগায়) রাসূল কারিম (ﷺ) কে শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করে তা পান করেন। রাসূল (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, রক্তগুলাে কই? তখন তিনি বলেন, আমি বাইরে লুকিয়ে রাখার জন্য নিয়ে গেছি কিন্তু আমি তা জমিনের কোথাও পুথিত না করে আমার নিজের মধ্যেই তা গোপন করেছি (আমি তা পান করেছি)। তখন রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, “তুমি একটি উপমা সৃষ্টি করেছ এবং সকল রােগ থেকে নিজেকে হেফাজত করেছ।” 

✧ [শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত শরীফ, ফার্সী, প্রথম খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা] 



কুরাইশের একজন দাস কর্তৃক রসূলুল্লাহ (ﷺ)'র রক্ত মুবারক পানঃ



❏ হাদিস ১২ : 


ইমাম নাফি (رحمة الله) ➠’আবু হরমুজ (رحمة الله) থেকে‘➠ তিনি আতা (رحمة الله) থেকে➠তিনি ইবনে‘ আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন,

রসূলুল্লাহ (ﷺ)কে শিঙ্গা দ্বারা কুরাইশের একজন দাস কর্তৃক চিকিৎসা করা হয়েছিল। তিনি শিঙ্গা লাগানো শেষ করার পর, রক্ত মুবারক নিলেন এবং একটি প্রাচীরের পিছনে গেলেন, অতঃপর তিনি তার ডান এবং বাম দিকে তাকালেন। যখন কাউকে দেখতে পেলেন না, সমস্ত রক্ত মুবারক ​​শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেই রক্ত ​​মুবারক পান করলেন। তারপর সে ফিরে এল। নবী করীম (ﷺ) তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন: “হায় আফসোস, রক্ত ​​দিয়ে তুমি কী করেছ?” আমি বললাম: আমি তা প্রাচীরের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিলাম।  তিনি বললেন: “তুমি কোথায় লুকিয়ে রেখেছ?” আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আপনার রক্ত মুবারক অত্যন্ত মূল্যবান আর তা মাটিতে ঝরে পড়বে! এটা আমার পেটে আছে। তিনি (ﷺ) বললেন: "যাও, তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছ।"


তথ্যসূত্রঃ

[ইমাম ইবনে হিব্বানঃ আল-মাজরূহীন (3/59)]




আল্লাহ ভাল জানেন।

 
Top