পানির অপচয় থেকে বাঁচার ৭টি উপায়


 (১) কতিপয় লোক অঞ্জলি বা হাতের কোষে এমনিভাবে পানি ঢালে যাতে উপচে পড়ে। অথচ যে পানি পড়ে গেলো তা অনর্থক নষ্ট হয়ে গেলো। তাই পানি ঢালার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। 


 (২) প্রত্যেকবার অঞ্জলি পূর্ণ পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই। বরং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নেয়া উচিত। যেমন-নাকে পানি দেয়ার জন্য অঞ্জলি পূর্ণ পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই। অর্ধাঞ্জলিই যথেষ্ট। এমনকি কুলি করার জন্যও অঞ্জলিপূর্ণ পানি প্রয়োজন নেই। 


 (৩) লোটার (বদনা) নল মধ্যম ধরণের হওয়া উচিত। পানি দেরীতে পড়ে এরূপ সংকীর্ণও নয়, আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পড়ে এরূপ প্রশস্থও নয়। নল সংকীর্ণ ও প্রশস্থ হওয়ার মাঝে তারতম্য এভাবে নির্ণয় করা যায় যেমন পাত্রে পানি নিয়ে অযু করলে যেরূপ বেশি পানির প্রয়োজন হয়। প্রশস্থ নল বিশিষ্ট লোটা দ্বারা অযু করলেও যদি সেরূপ বেশি পানির প্রয়োজন হয়, তাহলে এটা প্রশস্থ নল হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রশস্থ নল বিশিষ্ট লোটা (বদনা) ছাড়া অন্য কোন লোটা (বদনা) যদি পাওয়া না যায়, তাহলে সাবধানতার সাথে অযু করতে হবে এবং পানির ধারা প্রবল বেগে প্রবাহিত না করে হালকাভাবে প্রবাহিত করতে হবে। পাইপের পানি দ্বারা অযু করার সময় নল চালু করার ক্ষেত্রেও অনুরূপ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 


 (৪) অযুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহ ধৌত করার পূর্বে এতে ভিজা হাত বুলিয়ে দিবেন যাতে পানি তাড়াতাড়ি সঞ্চালিত হয় এবং অল্প পানি অধিক পানির কাজ দেয়। বিশেষ করে শীতকালে মানুষের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পানি ঢালার পরও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহের মাঝখানে কিছু কিছু জায়গা শুষ্ক থেকে যায়। যা প্রতি নিয়ত আমাদের চোখে ধরা পড়ছে।


 (৫) হাতের কব্জিতে লোম থাকলে তা মুন্ডন করে নেবেন। কেননা, লোমের কারণে বেশি পানির প্রয়োজন হয়ে থাকে। লোম ছাটলে তা শক্ত হয়ে যায়। তাই মুন্ডন করাই ভাল। তবে মেশিন দ্বারা মুন্ডন করবেন যাতে ভালভাবে পরিস্কার হয়ে যায়। আর সর্বোত্তম হলো, “নওরা” তথা লোমনাশক ঔষধ ব্যবহার করা। কেননা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গে নওরা ব্যবহার করা সুন্নাত দ্বারা সাব্যস্ত। যেমন উম্মুল মুমিনীন সায়্যিদাতুনা উম্মে সালমা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহ্র রাসূল صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন নওরা ব্যবহার করতেন, তিনি আপন পবিত্র হাত দ্বারা তাঁর পবিত্র সতরে নওরা লাগাতেন এবং শরীরে অন্যান্য অঙ্গ সমূহে তাঁর পূত পবিত্র রমনীদের দ্বারা লাগাতেন। (ইবনে মাযাহ, ৪র্থ খন্ড, ২২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৭৫১) আর শরীরের লোম মুন্ডন না করলে ধৌত করার পূর্বে পানি দ্বারা তা ভালভাবে ভিজিয়ে নিবেন যাতে লোম সমূহ খাড়া হয়ে না থাকে। অন্যথা খাঁড়া লোমের গোঁড়ায় পানি পৌঁছার পর সূঁচ পরিমাণ জায়গা শুষ্ক থাকলেও অযু হবে না। 


 (৬) হাত ও পায়ে পানি ঢালার সময় হাতের নখ হতে কনুই পর্যন্ত এবং পায়ের নখ হতে গোড়ালীর উপরিভাগ পর্যন্ত লাগাতার পানি ঢালতে থাকবেন, যাতে একবারে হাত-পায়ের প্রতিটি স্থানে একবারই পানি পতিত হয়। পানি ঢালার সময় হাত পরিচালনাতে দেরী করলে এক স্থানে বারবার পানি পড়তে থাকবে। ফলে পানির অপচয় হবে। 


 (৭) অনেক লোক হাতের নখ হতে কনুই পর্যন্ত এবং পায়ের নখ হতে গোড়ালী পর্যন্ত প্রথমে একবার পানি ঢেলে ধৌত করে থাকে। এরপর পানির প্রবাহ চালু রেখে দ্বিতীয়বার ও তৃতীয়বার ধৌত করার জন্য লোটার (বদনা) নল নখের দিকে নিয়ে যায়, এরূপ করা উচিত নয়। কেননা, এতে তিনবারের পরিবর্তে পাঁচবার ধৌত করা হয়ে যাবে। বরং প্রত্যেকবার নখ হতে কনুই বা গোড়ালী পর্যন্ত লোটার নল নিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিতে হবে এবং বন্ধ অবস্থায় পুনরায় নখের দিকে নিয়ে দ্বিতীয়বার ও তৃতীয়বার ধৌত করতে হবে। আর হাত পা ধৌত করার সময় হাতের নখ হতে কনুই পর্যন্ত এবং পায়ের নখ হতে গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করাই সুন্নাত। বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ কনুই বা গোড়ালী হতে শুরু করে নখ পর্যন্ত ধৌত করা সুন্নাত নয়। সারকথা হলো; কৌশলের সাথে কাজ করবেন। ইমাম শাফেয়ী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ  সুন্দরই বলেছেন: “কৌশলে কাজ করলে অল্পেই যথেষ্ট হয়। অকৌশলে করলে প্রচুরেও সংকুলান হয় না।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ১ম খন্ড, ৭৬৫-৭৭০ পৃষ্ঠা) 

 
Top