তন্দ্রা দ্বারা অযু ভঙ্গ হওয়া ও না হওয়ার বর্ণনা

=============

তন্দ্রা দ্বারা অযু ভঙ্গ হওয়ার দু’টি শর্ত: (১) তন্দ্রার সময় উভয় নিতম্ব ভালভাবে সংযুক্ত না থাকা। (২) অচেতন অবস্থায় তন্দ্রার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা না হওয়া। দুটি শর্ত এক সাথে পাওয়া গেলে অর্থাৎ তন্দ্রার সময় উভয় নিতম্ব ভালভাবে সংযুক্ত না থাকলে এবং অচেতন অবস্থায় তন্দ্রার দ্বারা অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর একটি শর্ত পাওয়া গেলে এবং অপরটি পাওয়া না গেলে তন্দ্রা দ্বারা অযু ভঙ্গ হবে না। 


নিম্নোক্ত দশ ধরণের তন্দ্রাতে অযু ভঙ্গ হয় না: (১) উভয় নিতম্ব জমিনের সাথে সংযুক্ত রেখে এবং উভয় পা এক দিকে প্রসারিত করে বসা অবস্থায় তন্দ্রা পেলে। চেয়ার, বাস ও রেল গাড়ির আসনে বসা অবস্থায় তন্দ্রারও একই হুকুম। (২) উভয় নিতম্ব জমিনের সাথে সংযুক্ত রেখে এবং উভয় হাত দ্বারা উভয় পায়ের গোছাকে বেষ্টন করে বসা অবস্থায় তন্দ্রা পেলে চাই হাত জমিনের উপর রাখুক বা মাথা হাঁটুর উপর রাখুক। (৩) জমিন, পালঙ্ক, চতুষ্পদ জন্তু ইত্যাদিতে চারজানু হয়ে বসা অবস্থায় তন্দ্রা পেলে। (৪) দু’জানু করে সোজা হয়ে বসা অবস্থায় তন্দ্রা পেলে। (৫) ঘোড়া বা খচ্চরের জিন সজ্জিত পৃষ্ঠে আরোহণ অবস্থায় তন্দ্রা পেলে। (৬) জীবজন্তু উঁচু ভূমিতে আরোহণের সময় বা সমতল ভূমিতে চলার সময় এদের জিনশূন্য পৃষ্ঠে সাওয়ার অবস্থায় তন্দ্রা পেলে। (৭) উভয় নিতম্ব সংযুক্ত রেখে বালিশ বা অন্য কোন কিছুতে হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তন্দ্রা পেলে। যদিও তা সরিয়ে ফেলা হলে সে পড়ে যাবে। (৮) দন্ডায়মান অবস্থায় তন্দ্রা। (৯) রুকু অবস্থায় তন্দ্রা পেলে। (১০) পেট উরুর সাথে এবং বাহু পার্শ্বের সাথে না লাগিয়ে পুরুষেরা যেরূপ সুন্নাত মোতাবেক সিজদা করে থাকে, সেরূপ সিজদারত অবস্থায় তন্দ্রা গেলে। 


তন্দ্রার উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো চাই নামাযরত অবস্থায় পাওয়া যাক বা নামাযের বাহিরে পাওয়া যাক সর্বাবস্থায় অযু ভঙ্গ হবে না এবং নামাযরত অবস্থায় পাওয়া গেলে নামাযও ভঙ্গ হবে না, যদিও ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুমিয়ে থাকুক না কেন। অবশ্য নামাযের যে সমস্ত রুকন তন্দ্রাবস্থায় আদায় করা হয়েছে তা পুনরায় আদায় করে দিতে হবে। আর যদি জাগ্রত অবস্থায় নামায বা নামাযের কোন রুকন শুরু করে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তাহলে নামাযের যে অংশ জাগ্রত অবস্থায় আদায় করা হয়েছে তা আদায় হয়ে যাবে আর তন্দ্রাবস্থায় যা আদায় করা হয়েছে তা পুনরায় আদায় করে দিতে হবে। 


নিম্নোক্ত দশ ধরণের তন্দ্রাতে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়: (১) পয়ের উপর ভর দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসা অবস্থায় তন্দ্রা গেলে। (২) চিৎ হয়ে শয়ন করা অবস্থায় তন্দ্রা গেলে, (৩) উপুড় হয়ে শয়ন করা অবস্থায় তন্দ্রা গেলে, (৪) ডান কাতে বা বাম কাতে শয়ন করা অবস্থায় তন্দ্রা গেলে, (৫) এক কনুইতে ঠেস দিয়ে বা এক হাতের উপর ভর দিয়ে তন্দ্রা গেলে (৬) বসে তন্দ্রার সময় এক দিকে ঝুঁকে পড়লে এবং এক অথবা উভয় নিতম্ব উঠে গেলে। (৭) জীবজন্তু নিচু ভূমিতে নামার সময় এদের জিনশূন্য পৃষ্ঠে সাওয়ার অবস্থায় তন্দ্রা গেলে, (৮) পেট উরুর উপর রেখে দু’জানু হয়ে বসে তন্দ্রার সময় উভয় নিতম্ব সংযুক্ত না থাকলে, (৯) মাথা উরু ও পায়ের গোছার উপর রেখে চার জানু হয়ে বসাবস্থায় তন্দ্রা গেলে। (১০) পেট উরুর সাথে এবং বাহু পার্শ্বের সাথে লাগিয়ে এবং উভয় হাত মাটিতে বিছিয়ে মহিলারা যেরূপ সিজদা করে থাকে, সেরূপ সিজদারত অবস্থায় তন্দ্রা গেলে। তন্দ্রার উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো নামাযরত অবস্থায় পাওয়া যাক বা নামাযের বাইরে পাওয়া যাক, সর্বাবস্থায় অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। অতঃপর যদি উক্ত পদ্ধতিতে ইচ্ছাকৃত তন্দ্রা যায় তখন নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর অনিচ্ছাকৃতভাবে তন্দ্রা গেলে নামায ভঙ্গ হবে না তবে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। পুনরায় নতুনভাবে অযু করে অবশিষ্ট নামায যেখানেই তন্দ্রা এসেছিল সেখান থেকেই নির্দিষ্ট শর্তাবলী পালন সহ আদায় করে দিতে হবে, যেখানে তন্দ্রা এসেছিলো । আর শর্ত জানা না থাকলে নতুনভাবে সম্পূর্ণ নামায পুনরায় আদায় করে দিন। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ১ম খন্ড, ৩৬৫, ৩৬৭ পৃষ্ঠা) 


আম্বীয়ায়ে কিরাম عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوۃُ  وَ السَّلَام এর অযু এবং ঘুম মোবারক

==============

আম্বীয়ায়ে কিরামদের عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوۃُ  وَ السَّلَام অযু ঘুমানোর দ্বারা ভঙ্গ হয় না। ফায়েদা: আম্বীয়ায়ে কিরামদের عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوۃُ  وَ السَّلَام চক্ষু ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না, ❁ কতিপয় অযু ভঙ্গ করা জিনিস আম্বীয়ায়ে কিরাম عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوۃُ  وَ السَّلَام এর জন্য এই ভাবে অযু ভঙ্গের কারণ নয়। তাদের থেকে সেগুলো প্রকাশ হওয়া অসম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ- পাগল হওয়া বা নামাযের মধ্যে অট্টহাসি। ❁বেহুশ হওয়াটা আম্বীয়ায়ে কিরামদের عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوۃُ  وَ السَّلَام শরীরের উপর প্রকাশ হতে পারে। কিন্তু অন্তর ঐ অবস্থায়ও সজাগ ও জাগ্রত থাকে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ৪র্থ খন্ড, ৭৪০ পৃষ্ঠা) 

 
Top