অপচয় থেকে বাঁচার ১৪টি মাদানী ফুল


 (১) আজ পর্যন্ত যতধরণের অবৈধ অপচয় করেছেন তা থেকে তাওবা করে ভবিষ্যতে আর কখনও কোন ধরণের অপচয় না করার প্রতিজ্ঞা করে নিন। 


 (২) অযু গোসলও যাতে সুন্নাত মোতাবেক হয় এবং পানিও যাতে কম খরচ হয় সেরূপ নিয়ম নীতি গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করুন এবং কিয়ামতের দিন প্রতিটি অণু ও বিন্দুরই যে হিসাব নিকাশ হবে তা ভয় করুন। আল্লাহ্ তাআলা পারা ৩০ সূরা যিলযালের ৭ ও ৮ নং আয়াতের মধ্যে ইরশাদ করেন:


فَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ خَیۡرًا یَّرَہٗ ؕ﴿۷﴾

وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ  شَرًّا یَّرَہٗ﴿۸﴾


কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সুতরাং যে অনু পরিমাণ সৎকাজ করবে সে তা দেখতে পাবে এবং যে অনু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে, সে তাও দেখতে পাবে।


 (৩) অযু করার সময় সাবধানতার সাথে পানির নল চালু করুন। অযুকালীন সময়ে সম্ভব হলে এক হাত নলের ছিপিতে রাখুন এবং প্রয়োজন সেরে বারবার নল বন্ধ করতে থাকুন। 


 (৪) নলের পরিবর্তে লোটা (বদনা) দ্বারা অযু করলে অপেক্ষাকৃত পানি কম খরচ হয়। তাই যাদের জন্য লোটা (বদনা) দ্বারা অযু করা সম্ভব তারা লোটা (বদনা) দ্বারাই অযু করুন। আর যদি নলে অযু করা ছাড়া উপায় না থাকে তাহলে যে সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ লোটা দ্বারা ধৌত করা সহজ তা লোটা (বদনা) দ্বারা ধৌত করে অপরাপর অঙ্গ নল দ্বারা ধৌত করুন। যাতে অপচয় হতে কোনরূপ বাঁচা যায়।


 (৫) মিসওয়াক, কুলি, গরগরা, নাক পরিস্কার, দাঁড়ি ও হাত পায়ের আঙ্গুল খিলাল, মাথা মাসেহ ইত্যাদি করার সময় পানির নল ভালভাবে বন্ধ রাখুন, যাতে এক ফোঁটা পানিও অযথা নষ্ট না হয়। এভাবে ভালভাবে নল বন্ধ করার অভ্যাস গড়ুন।


 (৬) বিশেষ করে শীতকালে অযু গোসল করার জন্য, বাসনকোসন, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি ধোয়ার জন্য গরম পানি লাভের আশায় পাইপের জমা ঠান্ডা পানি অনর্থক ছেড়ে না দিয়ে কোন পাত্রে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 


 (৭) সাবান দ্বারা হাত-মুখ ধোয়ার জন্য হাতের তালুতে সাবান ফেনায়িত করার সময়ও সাবধানতার সাথে সামান্য পানি নিয়ে তারপর সেখানে সাবান রেখে সাবান ফেনায়িত করুন। যদি প্রথম থেকেই হাতে সাবান রেখে পানি ঢালতে থাকেন, তাহলে পানি বেশি খরচ হবে। 


 (৮) ব্যবহারের পর পানি নাই এমন দানিতেই সাবান রাখুন। জেনে শুনে পানি বিশিষ্ট দানিতে সাবান রাখলে তা গলে নষ্ট হয়ে যাবে। হাত ধোয়ার বেসিনের কিনারাতে সাবান রাখলেও তা তাড়াতাড়ি পানিতে গলে যাবে। 


 (৯) পান করার পর গ্লাসের অবশিষ্ট পানি এবং আহার করার পর জগের অবশিষ্ট পানি ফেলে না দিয়ে অন্যকে পান করিয়ে দিন, অন্য কোন কিছুতে ব্যবহার করুন। 


 (১০) ফল-মূল, তরি-তরকারি, কাপড়-চোপড়, বাসন-কোসন, বিছানাপত্র ইত্যাদি ধোয়ার সময় এমনকি একটি চায়ের কাপ বা চামচ ধোয়ার সময়ও বর্তমানে যে ব্যাপক হারে পানির অপচয় করতে দেখা যায় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহারের ছড়াছড়ি দেখা যায় তা কোন বিবেকবান সুহৃদয় পুরুষের সহ্য হওয়ার মত নয়। হায়! যদি তাদের অন্তরে আমার কথাগুলো গেঁতে যেত। 


 (১১) অধিকাংশ মসজিদ, ঘর, অফিস, দোকান ইত্যাদিতে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা অনর্থক বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলতে থাকে এবং অনর্থক বাতি A.C, বৈদ্যুতিক পাখা চলতে থাকে। তাই প্রয়োজন সেরে ঘরের বাতি, পাখা এবং A.C ও কম্পিউটার ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আমাদের সকলকে পরকালীন হিসাব নিকাশকে ভয় করা এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে অপচয় রোধ করা উচিত। 


 (১২) ইস্তিঞ্জাখানাতে লোটা ব্যবহার করুন। ফোয়ারা দ্বারা শৌচ কর্ম করলে পানিও অপচয় হয় এবং পাও প্রায় নাপাক হয়ে যায়। প্রত্যেকের উচিত প্রতিবার প্রস্রাব করার পর এক লোটা (বদনা) পানি নিয়ে ড.ঈ এর কিনারাতে কিছু পানি এবং ছিটা না পড়ে মত সামান্য উপর থেকে কমোডে অবশিষ্ট পানি ঢেলে দেয়া। اِنۡ شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ এতে দুর্গন্ধ ও জীবানু উভয়ই হ্রাস পাবে। ফ্ল্যাশ ট্যাংক দ্বারা কমোড পরিস্কার করতে গেলে প্রচুর পানি খরচ হয়ে থাকে। 


 (১৩) নল হতে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়তে দেখলে তাড়াতাড়ি তা মেরামত করে নিন। অন্যথা পানি নষ্ট হতে থাকবে। মাঝেমধ্যে মসজিদ মাদ্রাসার পাইপের নল দিয়েও এরূপ ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়তে দেখা যায়। কিন্তু তা দেখাশুনা করার কেউ থাকে না এবং এর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব মসজিদ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিরই মনে করে থাকে। তাই এরূপ পানি পড়তে দেখলে নিজ দায়িত্ব মনে করে তাড়াতাড়ি তা মেরামত করে নিয়ে নিজের পরকালীন কল্যাণের পথ সুগম করুন। 


 (১৪) আহার করার সময় অন্য কোন পানীয় পান করার সময়, ফলমূল কাটার সময় কোন দানা, খাদ্যকনা ও পানীয়ের ফোঁটা যাতে নষ্ট ও অব্যবহৃত না হয়, সেটার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখবেন। 

 
Top