নামাযের ৩২টি মাকরূহে তাহরীমা


 (১) নামাযরত অবস্থায় দাঁড়ি, শরীর কিংবা কাপড় ইত্যাদি নিয়ে খেলা করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা) 


 (২) কাপড় গুটিয়ে নেয়া (যেমন-আজকাল কিছু কিছু লোক সিজদাতে যাওয়ার সময় পায়জামা ইত্যাদি সামনে অথবা পিছনের দিকে উঠিয়ে নেয়। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৭ পৃষ্ঠা) হ্যাঁ! যদি কাপড় শরীরের সাথে লেগে যায় তবে এক হাতে ছাড়িয়ে নিলে কোন ক্ষতি নেই।


কাঁধের উপর চাদর ঝুলানো


 (৩) সাদল অর্থাৎ কাপড় ঝুলানো। যেমন- মাথা অথবা কাঁধে এমনভাবে চাদর বা রুমাল ইত্যাদি রাখা যে উভয় পার্শ্ব ঝুলতে থাকে। অবশ্য যদি এক পার্শ্বকে অপর কাঁধের উপর তুলে দেয় এবং অপরটি ঝুলতে থাকে, তবে ক্ষতি নেই। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৮৮ পৃষ্ঠা) (৪) আজকাল কিছু সংখ্যক লোক এক কাঁধের উপর এভাবে রুমাল রাখে যে, তার এক প্রান্ত পেটের উপর অপর প্রান্ত পিঠের উপর ঝুলতে থাকে এভাবে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ১৬৫ পৃষ্ঠা) (৫) উভয় আস্তীন হতে একটি আস্তীনও যদি অর্ধ কব্জি অপেক্ষা বেশি উঠে থাকে তবে নামায মাকরূহে তাহরীমী হবে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠা) 


প্রাকৃতিক হাজতের তীব্রতা


 (৬) প্রস্রাব, পায়খানা অথবা বাতাস তীব্রভাবে আসা। যদি নামায শুরু করার পূর্বেই এ প্রয়োজন তীব্র হয়, তাহলে সময় বেশি থাকা অবস্থায় নামায শুরু করা গুনাহ। হ্যাঁ! যদি অবস্থা এমনি হয় যে, প্রয়োজন সেরে অযু করতে করতে নামাযের সময় শেষ হয়ে যাবে, তাহলে নামায আদায় করে নিন। আর যদি নামাযের মধ্যখানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং সময়ের অবকাশ থাকে তবে নামায ভঙ্গ করে দেয়া ওয়াজীব। যদি এইভাবে আদায় করে নেওয়া হয়, গুনাহগার হবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৯২ পৃষ্ঠা) 


নামাযে কঙ্কর ইত্যাদি সরানো


 (৭) নামাযের সময় কঙ্কর ইত্যাদি সরানো মাকরূহে তাহরীমী। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৮ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা জাবির رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ বলেন: আমি নামাযের ভিতর পাথর ইত্যাদি স্পর্শ করার ব্যাপারে বারিগাহে রিসালাতে صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আরয করলাম, ইরশাদ হলো: “একবার, আর যদি তুমি এটা থেকে বেঁচে থাকো তবে কালো চোখ বিশিষ্ট একশত উটনী থেকে উত্তম।” (সহীহ ইবনে খুযাইমা, ২য় খন্ড, ৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৮৯৭) হ্যাঁ! যদি সুন্নাত অনুযায়ী সিজদা করা সম্ভব না হয় তবে একবার সরানোর অনুমতি রয়েছে। আর যদি সরানো ছাড়া ওয়াজীব আদায় করা সম্ভব না হয়, তবে সরানোই ওয়াজীব, চাই একাধিকবার সরানোর প্রয়োজন হয়।


আঙ্গুল মটকানো


 (৮) নামাযে আঙ্গুল মটকানো। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৩ পৃষ্ঠা) খাতিমুল মুহাক্কিকীন হযরত আল্লামা আবেদীন শামী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “ইবনে মাজাহ শরীফের বর্ণনা মতে, সুলতানে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “নামাযে নিজের আঙ্গুল মটকাবে না।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, ৫১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৬৫) “মুজতাবা”র বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন: “রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নামাযের জন্য অপেক্ষাকালীন সময়েও আঙ্গুল মটকাতে নিষেধ করেছেন।”আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে; “নামাযের জন্য যেতে যেতে আঙ্গুল মটকাতে নিষেধ করেছেন।”এই হাদীস সমূহ থেকে এ তিনটি বিধান প্রমাণিত হয় যে, (ক) নামায আদায়কালীন ও নামাযের আনুসাঙ্গিক বিষয় যেমন নামাযের জন্য গমন, নামাযের জন্য অপেক্ষাকালীন সময়ে আঙ্গুল মটকানো মাকরূহে তাহরীমী। (খ) নামাযের বাইরে (অর্থাৎ নামাযের আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো ছাড়া) বিনা প্রয়োজনে আঙ্গুল মটকানো মাকরূহে তানযিহী। (গ) নামাযের বাইরে (অন্য যে কোন সময়) প্রয়োজনবশত যেমন: আঙ্গুলগুলোকে আরাম দেয়ার জন্য আঙ্গুল মটকানো মুবাহ (অর্থাৎ মাকরূহবিহীন জায়েয) (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা) (৯) তাশবীক করা (অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলগুলোর মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়া) । (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৮ পৃষ্ঠা) প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যদি মসজিদের নিয়্যতে কেউ (ঘর থেকে) বের হয় সে যেন তাশবীক্ব অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ না করায়, নিশ্চয়ই সেটা নামাযের (হুকুমের) মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৮১২৬) নামাযের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ও নামাযের জন্য অপেক্ষাকালীন সময়েও এ দু’টি বিষয় অর্থাৎ আঙ্গুল মটকানো ও তাশবীক করা মাকরূহে তাহরীমী। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩৪৬ পৃষ্ঠা) 


কোমরে হাত রাখা


 (১০) কোমরের উপর হাত রাখা। (প্রাগুক্ত, ৩৪৭ পৃষ্ঠা) নামায ছাড়াও (বিনা কারণে) কোমরের উপর (অর্থাৎ উভয় পার্শ্বের মাঝখানে) হাত রাখা উচিত নয়। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৪ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্র মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “কোমরে হাত রাখা জাহান্নামীদের প্রশান্তি (অভ্যাস) ।” (আস্সুনানুল কুবরা, ২য় খন্ড, ৪০৮ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৫৬৬) অর্থাৎ এটা ইহুদীদের কাজ। কেননা, তারা তো জাহান্নামী, অন্যথায় জাহান্নামীদের জন্য জাহান্নামে অপর কী প্রশান্তি রয়েছে! (বাহারে শরীয়াতের পাদটিকা, ৩য় অংশ, ১১৫ পৃষ্ঠা) 


আসমানের দিকে দেখা


 (১১) আসমানের দিকে দৃষ্টি দেয়া। (আল বাহরুর রাইক, ২য় খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা) আল্লাহর মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “কী অবস্থা হবে ঐসব লোকদের? যারা নামাযের মধ্যে আসমানের দিকে দৃষ্টি উঠায়, এটা থেকে বিরত থাকো। তা না হলে তাদের দৃষ্টি শক্তি ছিনিয়ে নেয়া হবে। (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা) 


 (১২) এদিক সেদিক মুখ ফিরিয়ে দেখা। চাই সম্পূর্ণ মুখ ফিরিয়ে দেখুক বা সামান্য। মুখ ফিরানো ব্যতীত শুধু চোখ ফিরিয়ে এদিক সেদিক বিনা কারণে দেখা মাকরূহে তানযীহী। আর যদি কোন প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে হয় তবে ক্ষতি নেই। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ১৯৪ পৃষ্ঠা) নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি নামাযে রত থাকে, আল্লাহ্ তাআলার বিশেষ রহমত তার প্রতি বর্ষণ হতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে এদিক সেদিক না দেখে। যখন সে আপন মুখ ফেরায় তখন তার রহমতও ফিরে যায়।” (আবূ দাউদ, ১ম খন্ড, ৩৩৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-৯০৯) (১৩) পুরুষের সিজদারত অবস্থায় হাত দু’টি বিছিয়ে দেয়া। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠা) 


নামাযীর দিকে দেখা


 (১৪) কারো মুখের সামনে (মুখোমুখী হয়ে) নামায আদায় করা। অন্যের জন্যও নামাযীর মুখোমুখী দাঁড়ানো নাজায়েজ ও গুনাহ্। কেউ প্রথম থেকেই মুখ করে বসে আছে আর এখন কেউ যদি তার চেহারার দিকে মুখ করে নামায আরম্ভ করে দেয়, তাহলে নামায আরম্ভকারী গুনাহ্গার হবে এবং ঐ নামাযীর জন্য মাকরূহ হবে। নামাযীর দিকে মুখ করে বসা ব্যক্তির কোন গুনাহ হবে না এবং তা মাকরূহও হবে না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠা) যে ব্যক্তি জামাআতের সালাম ফেরানোর পর নিজের ঠিক পিছনে নামায আদায়কারীর দিকে মুখ করে তাকে দেখে বা পিছনে যাওয়ার জন্য তার দিকে মুখ করে এই জন্য দাঁড়িয়ে থাকে যে, সালাম ফেরানোর পর বের হয়ে যাবে কিংবা নামাযীর ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে এলান করে, দরস দেয়, বয়ান করে তাদের সকলের তাওবা করে নেয়া উচিত। (১৫) নামাযের মধ্যে নাক ও মুখ ঢেকে নেয়া। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা) (১৬) বিনা প্রয়োজনে কফ ইত্যাদি বের করা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৯ পৃষ্ঠা) (১৭) ইচ্ছাকৃত ভাবে হাই তোলা। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ৩৫৪ পৃষ্ঠা) (যদি এমনিতেই এসে যায় তবে অসুবিধা নেই, কিন্তু থামিয়ে দেয়া মুস্তাহাব) । রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে আকরাম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন কারো নামাযে হাই আসে তখন সে যেন যতটুকু সম্ভব তা থামিয়ে রাখে। কেননা, তখন শয়তান মুখে প্রবেশ করে।” (সহীহ মুসলিম, ৪১৩ পৃষ্ঠা) (১৮) কুরআন মাজীদকে উল্টো দিক থেকে পাঠ করা। (যেমন প্রথম রাকাতে “সূরাহ লাহাব” পড়ল ও দ্বিতীয় রাকাতে “সূরা নসর”পাঠ করা) (১৯) কোন ওয়াজীব বাদ দেয়া। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩৪৫ পৃষ্ঠা) (যেমন- কওমা ও জালসাতে পিঠ সোজা হওয়ার পূর্বেই রুকূ বা দ্বিতীয় সিজদাতে চলে যাওয়া) (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৭) এ গুনাহের মধ্যে বহু সংখ্যক মুসলমানদেরকে লিপ্ত হতে দেখা যায়। স্মরণ রাখবেন! যত নামাযই এভাবে আদায় করা হয়েছে সবগুলো নামাযকে পুনরায় আদায় করে দেয়া ওয়াজীব। (২০) ‘কিয়াম’ ব্যতীত অন্য কোন অবস্থায় (রুকন তথা রুকূ, সিজদা, বৈঠক ইত্যাদিতে) কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ৩৫১ পৃষ্ঠা) (২১) কিরাত রুকূতে গিয়ে শেষ করা। (প্রাগুক্ত) (২২) ইমামের আগে মুকতাদী রুকূ সিজদা ইত্যাদিতে চলে যাওয়া কিংবা তিনি উঠার পূর্বেই মাথা উঠিয়ে নেয়া। (রদ্দুল মুহতার খন্ড ২য়, ৫১৩পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মালিক رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণনা করেন; হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় ও ঝুঁকায় তার কপালের চুল শয়তানের হাতে।” (মুওয়াত্তায়ে ইমাম মালিক, ১ম খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা, হাদীস-১২) হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরায়রা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُথেকে বর্ণিত;আল্লাহ মাহবুব, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় সে কি এটাকে ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথা করে দেবেন!” (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা)


গাধার মতো চেহারা


হযরত সায়্যিদুনা ইমাম নাওয়াবী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ হাদীস সংগ্রহ করার জন্য দামেশকে একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নিকট গেলেন। তিনি পর্দার আড়ালে থেকে পড়াতেন। দীর্ঘদিন যাবত তার নিকট অনেক কিছু পড়লেন কিন্তু তাকে দেখার কোন সুযোগ হলো না। এভাবে যখন দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলো এবং ঐ মুহাদ্দিস সাহিবও দেখলেন যে, এ ব্যক্তির (অর্থাৎ ইমাম নাওয়াবীর) ইলমে হাদীসের প্রতি খুব আগ্রহী তখন তিনি একদিন পর্দা সরিয়ে দিলেন। কি দেখলেন? দেখলেন যে, তার চেহারা গাধার মতোই!! মুহাদ্দিস সাহিব তখন ইমাম নাওয়াবীকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন:সাহিবজাদা! জামাআত আদায়কালীন সময়ে ইমামের অগ্রগামী হওয়া থেকে ভয় করো, কেননা, এ হাদীস যখন আমার নিকট পৌঁছল আমি এটাকে মুসতাবায়াদ (অর্থাৎ কিছু বর্ণনাকারী বিশুদ্ধ না হওয়ার কারণে কিয়াস বহির্ভূত) মনে করেছি এবং আমি ইমামের উপর ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্রগামী হয়েছি। তখন থেকে আমার মুখ এমন হয়ে গেছে যেমন তুমি এখন দেখছো। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৯৫ পৃষ্ঠা) (২৩) অন্য কাপড় থাকা সত্ত্বেও শুধু পায়জামা অথবা লুঙ্গি পরে নামায আদায় করা, (২৪) কোন পরিচিত ব্যক্তির আগমনের কারণে ইমামের নামাযে দীর্ঘায়িত করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৭ পৃষ্ঠা) যদি তার নামাযে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে এক দু’বার তাসবীহ বৃদ্ধি করে তবে তাতে অসুবিধা নেই। (প্রাগুক্ত) (২৫) জবর দখলকৃত জমিন কিংবা (২৬) পরের ক্ষেত যাতে ফসল রয়েছে। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ২৫৮ পৃষ্ঠা। রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫২ পৃষ্ঠা) বা (২৭) চাষকৃত ক্ষেতে (প্রাগুক্ত) বা (২৮) কবরের সামনে, যখন নামাযী ও কবরের মধ্যভাগে কোন অন্তরায় না থাকে, এসব জায়গায় নামায আদায় করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৭পৃষ্ঠা) (২৯) কাফিরদের উপসানালয়ে নামায আদায় করা বরং সেগুলোতে যাওয়া নিষেধ। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৫৩ পৃষ্ঠা) (৩০) জামা ইত্যাদির বোতাম খোলা রাখা যাতে বুক দেখা যায়। এরূপ করাটা মাকরূহে তাহরীমী। হ্যাঁ! যদি ভিতরে অন্য কোন কাপড় থাকে, যা দ্বারা বুক ঢাকা থাকে, তাহলে মাকরূহে তানযীহী। 


নামায ও ছবি


 (৩১) প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট পোষাক পরিধান করে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী। নামাযের বাইরেও এমন কাপড় পরিধান করা নাজায়েয। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫০২ পৃষ্ঠা) (৩২) নামাযীর মাথার উপরে অর্থাৎ ছাদের উপর বা সিজদার জায়গায় বা সামনে, ডানে, বামে প্রাণীর ছবি টাঙ্গানো থাকা মাকরূহে তাহরীমী।পিছনে থাকাও মাকরূহ।তবে গুরুত্বের দিক দিয়ে উপরোল্লেখিত অবস্থাদী অপেক্ষা কম। ছবি যদি মেঝেতে থাকে এবং সেটার উপর সিজদা করা না হয়, তাহলে মাকরূহ নয়। আর ছবি যদি জড় পদার্থের হয়, যেমন সাগর, পাহাড় ইত্যাদি তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। যদি ছবি এতই ছোট হয় যে, যা মাটিতে রেখে দাঁড়িয়ে দেখলে অঙ্গ স্পষ্টভাবে দেখা যায় না, (যেমন সাধারণত কা’বার তাওয়াফের দৃশ্যের ছবি খুবই ক্ষুদ্র হয়, এসব ছবি) তবে তা নামায মাকরূহ হওয়ার কারণ হবে না। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৪৭ পৃষ্ঠা। রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫০৩ পৃষ্ঠা) হ্যাঁ! যদি তাওয়াফের ভীড়ে একটি চেহারাও স্পষ্ট দেখা যায় তবে তার জন্যও নিষিদ্ধতা বহাল থাকবে। চেহারা ব্যতীত যেমন হাত, পা, পিঠ, মুখমন্ডলের পিছনের অংশ অথবা এমন মুখমন্ডল যার চোখ, নাক, ওষ্ঠ ইত্যাদি সকল অঙ্গ মুছা বা ঢাকা রয়েছে, এমন ছবিতে কোন অসুবিধা নেই।

 
Top