মানুষ চাঁদে


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অযু ও বিজ্ঞানের আলোচনা চলছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। বরং এই সমাজে এমন কিছু লোকও দেখা যায় যারা ইংরেজ গবেষক ও বৈজ্ঞানিকদের প্রতি যথেষ্ট দূর্বল। তাদের খিদমতে আরয: অনেক বাস্তব বিষয় এমন রয়েছে যেগুলোর সন্ধানে বৈজ্ঞানিকগণ বর্তমানে মাথা ঠুকছে অথচ আমার প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সেগুলো অনেক পূর্বেই বর্ণনা করে দিয়েছেন। দেখুন, তাদের দাবী অনুযায়ী বৈজ্ঞানিকগণ এখন চাঁদে পৌঁছেছে। অথচ আমার প্রাণ প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আজ থেকে প্রায় ১৪৩৮ বছর পূর্বে মিরাজ ভ্রমন হতেও অনেক উর্ধ্বে  তাশরীফ নিয়ে যান।


আমার  আক্বা আ’লা হযরত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর ওরশ শরীফ উপলক্ষ্যে দারুল উলুম আমজাদিয়া, আলমগীর রোড, বাবুল মদীনা করাচীতে অনুষ্ঠিত এক মুশায়েরা মাহফিলে অংশ গ্রহণের সুযোগ হয়েছে, যার মধ্যে হাদায়েক্বে বখশিশ শরীফের এই পংক্তি শিরোনাম রাখা হয়েছিল।


সর ওয়েহী সর জু তেরে কদমো পে কুরবান গেয়া।


সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, বাহারে শরীয়াতের লিখক, খলীফায়ে আ’লা হযরত, হযরত মওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর শাহজাদা মুফাসসিরে কুরআন হযরত আল্লামা আবদুল মুস্তফা আযহারী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এই মুশায়েরায় তাঁর যে কালাম পেশ করেছিলেন তার একটি শের (পংক্তি) লক্ষ্য করুন।


কেহতে হে সাতাহ পর চান্দ কি ইনসান গেয়া, 

আরশে আজম সে ওয়ারা তৈয়্যবা কা সুলতান গেয়া।


অর্থাৎ- কেবল বলা হচ্ছে যে, এখন মানুষ চাঁদে পৌঁছে গেছে! সত্যিই চাঁদ তো অতি নিকটে আমার প্রিয়তম, মদীনার সুলতান, পৃথিবী ও আকাশমন্ডলের শাহানশাহ, বিশ্বকুলের রহমত, সরদারে দোজাহান صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم মিরাজের রজনীতে চাঁদকে পিছনে রেখে আরশে আযমেরও অনেক উপরে তাশরীফ নিয়ে যান।


আরশ কি আকল দাঙ্গ হে র্চাখ মে আসমান হে, 

জানে মুরাদ আব কিদর হায়ে তেরা মকান হে।


নূরের খেলনা


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চাঁদ যেখানে পৌঁছে যাওয়ার দাবী করছে এখন বৈজ্ঞানিকগণ, ওই চাঁদতো আমার প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর হুকুমের অনুগত। যেমন-“দালায়িলুন নবুয়ত”এ বর্ণিত রয়েছে: সুলতানে দোজাহান صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর চাচাজান হযরত সায়্যিদুনা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا বলেন: আমি বারগাহে রিসালাতে আরয করলাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমি আপনার মধ্যে (মোবারক শৈশবে) এমন একটি বিষয় দেখেছি যা আপনার নবুওয়াতের প্রমাণ বহন করতো এবং আমার ঈমান আনয়নের কারণ সমূহের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। অতঃপর আমি দেখলাম যে, আপনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم দোলনায় শায়িত অবস্থায় চাঁদের সাথে কথা বলছিলেন এবং যেদিকে আপনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করতেন চাঁদ সেদিকে ঝুঁকে যেতো।” হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “আমি (চাঁদের) সাথে কথা বলতাম এবং চাঁদ আমার সাথে কথা বলতো এবং আমাকে কান্না থেকে ভুলিয়ে রাখতো। আমি তার পতিত হওয়ার আওয়াজ শুনতাম যখন আরশে ইলাহীর নিচে সিজদায় পড়তো।” (দালায়িলুন নবুয়ত, ২য় খন্ড, ৪১ পৃষ্ঠা) 


আ’লা হযরত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন:


চাঁদ ঝুক জা-তা জিধর উঙ্গুলি উঠাতে মাহদ মে, 

কিয়াহি চলতা থা ইশারু পর খেলুনা নূর কা।


এক নবী প্রেমিক বলেছেন:


খেলতে থে চাঁদ ছে বাছপনমে আক্বা ইছলিয়ে, 

ইয়ে সারা-পা নূর থে, উও থা খেলুনা নূর কা।


চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার মুজিযা


বুখারী শরীফের মধ্যে রয়েছে: মক্কার কাফিরগণ রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর খিদমতে উপস্থিত হয় এবং মুজিযা দেখার জন্য আবেদন করে। হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাদেরকে চাঁদ দ্বিখন্ডিত করে দেখান। (বুখারী, ২য় খন্ড, ৫৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৮৬৮) আল্লাহ তাআলা পারা-২৭, সূরা-ক্বমরের প্রথম ও দ্বিতীয় আয়াতে ইরশাদ করেন:


بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ. - اِقۡتَرَبَتِ السَّاعَۃُ  وَ انۡشَقَّ الۡقَمَرُ ﴿۱﴾ وَ اِنۡ یَّرَوۡا اٰیَۃً یُّعۡرِضُوۡا وَ یَقُوۡلُوۡا سِحۡرٌ مُّسۡتَمِرٌّ ﴿۲﴾


﴾কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহর নামে আরম্ভ যিনি পরম করুণাময় দয়ালু। (১) নিকটে এসেছে কিয়ামত এবং দ্বিখন্ডিত হয়েছে চাঁদ। (২) এবং যদি দেখে কোন নিদর্শন, তবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর বলে; এতো যাদু, যা (শাশ্বতরূপে) চলে আসছে। (পারা- ২৭, সূরা-ক্বমর, আয়াত-১ও২) 


প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন  رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ আয়াতের এই অংশ (وَ انْشَقَّ الْقَمَرُ কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং দ্বিখন্ডিত হয়েছে চাঁদ) এই আয়াতের মধ্যে হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর এক বড় মুজিযা চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার আলোচনা হয়েছে। (নূরুল ইরফান, ৮৪৩ পৃষ্ঠা) 


ইশারে ছে চান্দ ছিড় দিয়া, ছুপে হুয়ে খুর কো ফের লিয়া, 

গেয়ে হুয়ে দিন কো আছর কিয়া, ইয়ে তাব ও তুয়া তোমারে লিয়ে।


শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অযুর ডাক্তারী উপকারীতা শুনে হয়তো আপনি আনন্দিত হয়ে গেছেন। কিন্তু আমি আরয করব চিকিৎসা শাস্ত্রের পুরোটাই ধারণা নির্ভর। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণও চুড়ান্ত হয় না, পরিবর্তন হতে থাকে। হ্যাঁ! আল্লাহ তাআলার ও রাসূল صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর বিধানাবলী অটল, তা পরিবর্তন হবে না। সুন্নাত সমূহের উপর আমাদের আমল ডাক্তারী উপকারীতা লাভের জন্য নয় বরং শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। অতএব এই জন্য অযু করা যে, আমার রক্তচাপ যেন স্বাভাবিক হয়ে যায় অথবা আমি স্বাস্থ্যবান হয়ে যাই কিংবা খাবার নিয়ন্ত্রণের জন্য রোযা রাখা যেন ক্ষুধার উপকারীতা পাওয়া যায়। মদীনা সফর এই উদ্দেশ্যে করা যে, আবহাওয়াও পরিবর্তন হবে এবং ঘর-বাড়ী ও কাজ কর্মের ঝামেলা থেকেও কিছুদিন শান্তি পাওয়া যাবে। অথবা ধর্মীয় কিতাব এই জন্য পড়া যেন সময় অতিবাহিত হয়। এই ধরণের নিয়্যতে আমলকারীগণ সাওয়াব কিভাবে পাবে?যদি আমরা আল্লাহ্ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমল করি তাহলে সাওয়াবও পাওয়া যাবে এবং সাথে সাথে এর উপকারীতাও অর্জন হবে। অতএব যাহেরী ও বাতেনী নিয়মাবলীর প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদেরকে অযুও আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। 


তাসাউফের (আধ্যাত্মিকতার) মহান মাদানী ব্যবস্থাপত্র


হুজ্জাতুল ইসলাম  হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: অযু করার পর আপনি যখন নামাযের দিকে মনোযোগী হবেন, তখন কল্পনা করুন যেসব প্রকাশ্য অঙ্গের উপর লোকজনের দৃষ্টি পড়ে, সেগুলো তো বাহ্যতঃ পবিত্র হয়েছে। কিন্তু অন্তরকে পবিত্র করা ব্যতীত আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মুনাজাত করা লজ্জার পরিপন্থী। কেননা, আল্লাহ্ তাআলা অন্তরগুলোকেও দেখে রয়েছেন।


 (তিনি) আরও বলেন: প্রকাশ্য ভাবে অযু করার পর এই কথা মনে রাখা উচিত, অন্তরের পবিত্রতা তাওবা করা, গুনাহ ছেড়ে দেওয়া এবং উত্তম চরিত্র অবলম্বন করার মাধ্যমে অর্জিত হয়। যে ব্যক্তি অন্তরকে গুনাহ্রে অপবিত্রতা থেকে পবিত্র না করে বরং প্রকাশ্য পবিত্রতা, সাজ-সজ্জাকে যথেষ্ট মনে করে তার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত যে বাদশাহকে দাওয়াত দিয়ে নিজের ঘরের বাইরে খুব সাজসজ্জা করা, রং ও আলোকিত করা, কিন্তু ঘরের ভিতরের অংশে পরিস্কার করার প্রতি কোন দৃষ্টি দেয়না। অতএব, যখন বাদশাহ তার ঘরের ভিতর এসে ময়লা-আবর্জনা দেখবেন, তখন তিনি অসন্তুষ্ট হবেন না সন্তুষ্ট হবেন, তা প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তিই বুঝতে পারেন। (ইহ্ইয়াউল উলূম, ১ম খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা) 


সুন্নাত বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মুখাপেক্ষী নয়


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! স্মরণ রাখবেন! আমার আক্বা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সুন্নাত বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মুখাপেক্ষী নয় এবং আমাদের উদ্দেশ্য বিজ্ঞানের অনুসরণ নয় বরং সুন্নাতের অনুসরণ। আমাকে বলতে দিন, যখন ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞগণ বছরের পর বছর তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলাফলে দরজা উন্মুক্ত করে তখন তাদের সম্মুখে হাস্যোজ্জ্বল দীপ্তিমান সুন্নাতে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ই নজরে পড়ে। দুনিয়ার মধ্যে আপনি লাখো ভ্রমণ বিনোদন করেন, যতই আনন্দ উল্লাস করেন না কেন; আপনার অন্তরে প্রকৃত শান্তি আসবে না। অন্তরের প্রশান্তি শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলার স্মরণেই পাওয়া যাবে। অন্তরে স্বস্তি ছারওয়ারে কাউনাইন, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রেমেই পাওয়া যাবে। দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম, টিভি, ভিসিআর ও ইন্টারনেটে নয় বরং সুন্নাতের অনুসরণেই পাওয়া যাবে।


যদি আপনি বাস্তবিকই উভয় জগতের কল্যাণ চান তাহলে নামায ও সুন্নাত সমূহকে দৃঢ়ভাবে আকঁড়ে ধরুন এবং এগুলো শিখার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর করাকে আপনার দৈনন্দিন আমলে পরিণত করে নিন। প্রত্যেক ইসলামী ভাই যেন নিয়্যত করে যে, আমি জীবনে কমপক্ষে একবার ১২ মাস, প্রত্যেক ১২ মাসে ৩০ দিন এবং প্রতি মাসে ৩ দিন সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় সফর করব اِنْ شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ।


তেরে সুন্নাতো পে চলকর মেরে রূহ জব নিকাল কর, 

চলে তুম গলে লাগানা মাদানী মদীনে ওয়ালে।


চাশত নামাযের ফযীলত


হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত; হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি চাশতের দুই রাকাত নামায নিয়মিতভাবে আদায় করে তার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয় যদিও সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৩৮২)

 
Top