নামাযের প্রায় ৩০টি ওয়াজীব


 (১) তাকবীরে তাহরীমার মধ্যে ‘اَللهُ اَكْبَرُ’বলা, (২) ফরয নামাযের ৩য় ও ৪র্থ রাকাত ব্যতীত অবশিষ্ট সকল নামাযের প্রত্যেক রাকাতে ‘আলহামদু’ শরীফ পাঠ করা ও সূরা মিলানো (অর্থাৎ কুরআনে পাকের একটি বড় আয়াত যা ছোট তিন আয়াতের সমান হয় কিংবা তিনটি ছোট আয়াত পাঠ করা।) (৩) আলহামদু শরীফ সূরার পূর্বে পাঠ করা (৪) আলহামদু শরীফ ও সূরার মাঝখানে ‘আমীন’ ও بِسْمِ الله ব্যতীত আর কিছু না পড়া, (৫) কিরাতের পরপরই রুকূ করা, (৬) এক সিজদার পর নিয়মানুযায়ী দ্বিতীয় সিজদা করা, (৭) তা’দীলে আরকান অনুসরণ করা, (অর্থাৎ রুকূ, সিজদা, কওমা ও জালসাতে কমপক্ষে একবার‘سُبْحٰنَ الله’ বলার সময় পরিমাণ স্থির থাকা) (৮) কওমা অর্থাৎ রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো। (অনেক লোক কোমর সোজা করে না, এভাবে তার একটি ওয়াজীব হাত ছাড়া হয়ে গেলো, (৯) জালসা অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা (অনেকেই তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে সোজা হয়ে বসার পূর্বেই দ্বিতীয় সিজদার মধ্যে চলে যায়। এভাবে তার ওয়াজীব কাজগুলো ছুটে যায়। যত তাড়াতাড়িই হোক না কেন সোজা হয়ে বসা আবশ্যক নতুবা নামায মাকরূহে তাহরীমী হবে এবং পুনরায় আদায় করা ওয়াজীব হয়ে যাবে। (১০) কা’দায়ে উলা ওয়াজীব যদিও নফল নামায হয়। (মূলতঃ নফল নামাযের প্রত্যেক দুই রাকাতের পরের কাদা, কাদায়ে আখিরাহ। আর তা করা ফরয) । যদি কেউ কা’দা করলো না এবং ভুল করে দাঁড়িয়ে গেলো তবে যতক্ষণ পর্যন্ত সিজদা না করে স্মরণ আসা মাত্র বসে যাবে এবং সিজদায়ে সাহু করে নেবে। (এতে তার নামায হয়ে যাবে।) (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ অংশ, ৫২ পৃষ্ঠা) যদি কেউ নফলের তৃতীয় রাকাতের সিজদা করে নেয় তবে চার রাকাত পূর্ণ করে সিজদায়ে সাহু করে নেবে। সিজদায়ে সাহু এখানে এজন্য ওয়াজীব যে, যদিও নফল নামায প্রত্যেক দু’রাকাতের পর কা’দা ফরয, কিন্তু তৃতীয় অথবা পঞ্চম (এ নিয়মে যত রাকাত হয়) রাকাতের সিজদা করার পর কা’দায়ে উলা ফরযের পরিবর্তে ওয়াজীব হয়ে গেছে। (তাহতাবী শরীফ, ৪৬৬ পৃষ্ঠা) (১১) ফরয, বিতর ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার মধ্যে তাশাহহুদ (অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাত) এর পর কিছু না পড়া, (১২) উভয় কা’দা বা বৈঠকে ‘তাশাহহুদ’পরিপূর্ণভাবে পাঠ করা, যদি একটি শব্দও ছুটে যায় তবে ওয়াজীব তরক হয়ে যাবে, সিজদায়ে সাহু ওয়াজীব হয়ে যাবে, (১৩) ফরয, বিতর ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার নামাযে কা’দায়ে উলা বা প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর যদি কেউ অন্য মনস্ক হয়ে ভুলে اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّد অথবা اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا বলে ফেলে তবে তার জন্য সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজীব হয়ে যাবে। আর যদি ইচ্ছাকৃত বলে ফেলে তবে তার উপর নামায পুনরায় আদায় করা ওয়াজীব হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২৬৯ পৃষ্ঠা) (১৪) উভয়দিকে সালাম ফিরানোর সময় اَلسَّلَامُ শব্দটি উভয়বার বলা ওয়াজীব। عَلَيْكُمْ শব্দটি বলা ওয়াজীব নয় বরং সুন্নাত। (১৫) বিতিরের নামাযে কুনূতের তাকবীর বলা (১৬) বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করা, (১৭) দুই ঈদের নামাযে ছয়টি তাকবীর বলা, (১৮) দুই ঈদের নামাযে দ্বিতীয় রাকাতের রুকূর তাকবীর এবং এই (ঈদের) তাকবীরের জন্য ‘اَللهُ اَكْبَرُ’বলা। (১৯) জাহেরী (প্রকাশ্য) নামাযে ইমাম উচ্চস্বরে কিরাত পড়া। যেমন মাগরিব ও ইশার নামাযের প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে আর ফজর, জুমা, দুই ঈদ, তারাবীহ ও রমযান শরীফের বিতরের প্রত্যেক রাকাতে ইমাম সাহেব এত উঁচু আওয়াজ সহকারে কিরাত পড়বেন যেন কমপক্ষে তিনজন লোক শুনতে পায়) (২০) নীরবে কিরাতের নামাযে (যেমন যোহর, আসরে) নীরবে কিরাত পাঠ করা। (২১) প্রত্যেক ফরয ও ওয়াজীবকে নিজ নিজ স্থানে আদায় করা। (২২) প্রত্যেক রাকাতে শুধু একবার রুকূ করা, (২৩) প্রত্যেক রাকাতে দুইবার সিজদা করা, (২৪) দ্বিতীয় রাকাতের পূর্বে কা’দা (বৈঠক) না করা, (২৫) চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে তৃতীয় রাকাতে কা’দা বা বৈঠক না করা, (২৬) সিজদার আয়াত পাঠ করলে তিলাওয়াতে সিজদা করা, (২৭) সিজদায়ে সাহুও ওয়াজীব হলে শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু আদায় করা, (২৮) নামাযের ভিতর দু’টি ফরয অথবা দু’টি ওয়াজীব কিংবা ফরয ও ওয়াজিবের মাঝখানে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় (অর্থাৎ তিনবার سُبْحٰنَ الله, বলার সমপরিমাণ) দেরী না করা, (২৯) ইমাম যখন কিরাত পড়েন চাই উচ্চস্বরে হোক বা নিম্নস্বরে সর্বাবস্থায় মুকতাদীর চুপ থাকা, (৩০) কিরাত ব্যতীত সকল ওয়াজীব কাজ সমূহে ইমামের অনুসরণ করা। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭১ পৃষ্ঠা)


 
Top