গোসল ফরয হওয়ার পাঁচটি কারণ


(১) যৌন উত্তেজনার ফলে বীর্য স্বস্থান থেকে পুরুষাঙ্গ বা যোনিপথ দিয়ে বের হলে। 

(২) স্বপ্নদোষ হলে অর্থাৎ ঘুমন্ত অবস্থায় বীর্যপাত হলে। (৩) মহিলার যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ তথা কর্তিত অংশ প্রবেশ করালে। কামোত্তেজনা বশত হোক বা না হোক এবং বীর্যপাত হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় উভয়ের উপর গোসল ফরয। 

(৪) হায়েজ তথা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর, 

(৫) নিফাস তথা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে রক্ত বের হয় তা বন্ধ হওয়ার পর। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২১-৩২৪ পৃষ্ঠা) 


নিফাসের প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা


অধিকাংশ মহিলাদের মধ্যে এটা প্রসিদ্ধ যে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মহিলারা চল্লিশ দিন পর্যন্ত আবশ্যিকভাবে অপবিত্র থাকে। এটা সম্পূর্ণ ভুল, বিস্তারিত ব্যাখ্যা লক্ষ্য করুন: সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মহিলাদের যে রক্ত বের হয় তাকে নিফাস বলে। এর সর্বোচ্চ সময়সীমা চল্লিশ দিন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার চল্লিশ দিন পরও যদি ঐ রক্ত দেখা যায় তাহলে তা রোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। সুতরাং চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই মহিলাদেরকে গোসল করে পাক পবিত্র হতে হবে। আর যদি চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই ঐ রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, চাই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার এক মিনিট পরেই বন্ধ হোক না কেন, বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই গোসল করে নিতে হবে এবং নামায রোযা যথারীতি পালন করতে হবে। আর যদি চল্লিশ দিনের ভিতরে রক্ত একবার বন্ধ হয়ে পুনরায় আবার দেখা যায়, তাহলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে শেষ রক্ত বন্ধ হওয়ার সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ সময়ই নিফাসের সময়সীমাতে গণ্য হবে। যেমন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দুই মিনিট পর্যন্ত রক্ত দেখা গিয়েছিল তারপর বন্ধ হয়ে গেলো এবং সন্তানের মা গোসল করে পবিত্র হয়ে নামায-রোযা ইত্যাদি যথারীতি পালন করতে লাগলো। চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার মাত্র দুই মিনিট বাকী ছিলো পুনরায় আবার রক্ত দেখা গেলো, তাহলে পূর্ণ চল্লিশ দিনই নিফাসের সময়সীমাতে গণ্য হবে এবং চল্লিশ দিন যাবৎ যে নামায রোযা পালন করা হয়েছিল তা সবই বৃথা যাবে। সে সময়ের মধ্যে উক্ত মহিলা কোন ফরয বা ওয়াজীব নামায বা রোযা কাযা দিয়ে থাকলে তা পুনরায় আদায় করে দিতে হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া হতে সংকলিত, ৪র্থ খন্ড, ৩৫৪-৩৫৬ পৃষ্ঠা) 


পাঁচটি প্রয়োজনীয় মাসয়ালা


(১) যৌন উত্তেজনার কারণে বীর্য স্বস্থান ত্যাগ করে বের হয়নি বরং ভারী বোঝা উঠানোর কারণে বা উঁচু স্থান থেকে নামার কারণে বা মলত্যাগের জন্য জোর দেয়ার কারণে বীর্য বের হলো, গোসল ফরয হবে না কিন্তু অযু ভেঙ্গে যাবে। 

(২) যদি যৌন উত্তেজনা ব্যতীত এমনিতেই বীর্যের ফোঁটা পড়ে যায় এবং প্রস্রাবের সময় বা যে কোন সময় উত্তেজনা ব্যতীত এমনিতেই তার বীর্যের ফোঁটা বের হয়ে থাকে, তাহলে গোসল ফরয হবে না কিন্তু অযু ভেঙ্গে যাবে। 

(৩) যদি স্বপ্ন দোষ হওয়ার কথা মনে আছে কিন্তু এর কোন চিহ্ন কাপড় ইত্যাদিতে দেখা গেলো না, গোসল ফরয হবে না। 

(৪) নামাযের মধ্যে যৌন উত্তেজনার কারণে বীর্য স্বস্থান ত্যাগ করতে অনুভব হলো কিন্তু বের হওয়ার পূর্বেই নামায শেষ করে ফেলল, নামায শেষ করার পর বীর্য বের হলো। নামায হয়ে যাবে কিন্তু তার উপর গোসল ফরয হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২১-৩২২ পৃষ্ঠা) 

(৫) হস্ত মৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটালে গোসল ফরয হয়। হস্তমৈথুন করা একটি গুনাহের কাজ। হাদীস শরীফে হস্ত মৈথুনকারীকে মালাঊন (অভিশপ্ত) আখ্যায়িত করা হয়েছে। (আমালী ইবনে বুশরান, ২য় খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা, নম্বর- ৪৭৭। হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ, ৯৬ পৃষ্ঠা) হস্ত মৈথুনের দ্বারা পুরুষত্ব দূর্বল হয়ে পড়ে, ফলে মানুষ বিবাহের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে এবং বিবাহ করতে ভয় পায়। 


হস্ত মৈথুনের শাস্তি


আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর খেদমতে আরয করা হলো: এক ব্যক্তি হস্ত মৈথুন করে, সে এই খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকে না। প্রত্যেকবার তাকে বুঝানো হয়েছে, এখন আপনি বলুন, তার হাশর কিরূপ হবে এবং তাকে সে অভ্যাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য কি দোয়া পড়তে হবে?


আ’লা হযরতের জবাব: সে গুনাহগার ও অপরাধী। সে কাজ বারবার করার কারণে কবীরা গুনাহকারী এবং ফাসিক সাব্যস্ত হবে। হাশরের ময়দানে হস্ত মৈথুনকারীরা গর্ভিত হাত নিয়ে উঠবে। ফলে বিশাল জনসম্মুখে তাদের অপদস্ত হতে হবে। যদি তারা এ কাজ থেকে তাওবা না করে, আর আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা শাস্তিও দিতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমাও করে দিতে পারেন। এ অভ্যাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য হস্ত মৈথুনকারী ব্যক্তিদের সর্বদা لَا حَوْل শরীফ পাঠ করা উচিত। যখন শয়তান তাদের এ খারাপ কাজের প্রতি প্ররোচিত করবে, তখন সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার প্রতি ধ্যানমগ্ন হয়ে অধিকহারে لَا حَوْل শরীফ পাঠ করবে। সর্বদা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। ফযরের নামাযের পর নিয়মিত সূরায়ে ইখলাস পাঠ করবে। وَ اللهُ تَعَالٰی اَعْلَمُ (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা) 


শাজরায়ে আত্তারীয়্যার ২১ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ আছে: যে ব্যক্তি প্রতিদিন ফযরের নামাযের পর এগারবার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, শয়তান তার সৈন্য সামন্ত দ্বারা গুনাহ করানোর শত চেষ্টা করলেও তার দ্বারা গুনাহ করাতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজ ইচ্ছায় গুনাহ না করে।

 
Top