যাদের অযু থাকে না, তাদের জন্য ৬টি বিধান


 (১) প্রস্রাবের ফোঁটা ঝরলে, বায়ু নির্গত হলে, ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বা পূঁজ বের হয়ে গঁড়িয়ে পড়লে, চোখের অসুখের কারণে চক্ষু হতে অশ্রু প্রবাহিত হলে, নাক, কান ও স্তন দিয়ে পানি বের হলে ফোঁড়া বা ক্ষত ইত্যাদি হতে তরল পদার্থ প্রবাহিত হলে, ডায়রিয়া হলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। যদি কেউ এরূপ দুরারোগ্য রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এবং সর্বদা তার সাথে সে রোগ ব্যাধি লাগা থাকার কারণে সে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নামাযের সম্পূর্ণ সময়সীমাতে অযু করে ফরয নামায আদায় করতে না পারে, তাহলে সে শরীয়াতের দৃষ্টিতে (মাযুর) অক্ষম হিসেবে গণ্য হবে। তাই সে এক অযু দ্বারা সে ওয়াক্তের মধ্যে ফরয, নফল যত নামাযই আদায় করতে চায় আদায় করতে পারবে। উল্লেখিত রোগের কারণে তার অযু ভঙ্গ হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৫৫৩ পৃষ্ঠা) এই মাসয়ালাটি আরো সহজ ভাষায় বুঝানোর চেষ্টা করছি; এ ধরণের রোগী নারী পুরুষ তাদের অক্ষমতা শরয়ী হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে এভাবেই পরীক্ষা করুন, যে কোন দুই ফরয নামাযের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে চেষ্টা করবে যে, অযু করে পবিত্রতার সাথে কমপক্ষে ফরয নামায আদায় করা যায় কিনা। সম্পূর্ণ সময়ের ভিতর বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও যদি এতটুকু সুযোগ না পায়। সে এ ধরণের যে, কখনো তো অযু করার সময়ই অক্ষমতা হয়ে যায় এবং শেষ সময় এসে গেছে তবে তখন তার জন্য অনুমতি রয়েছে যে, অযু করে নামায আদায় করলে নামায হয়ে যাবে। এখন যদিও নামায আদায়ের সময় অসুস্থতার কারণে নাপাকী শরীর থেকে বের হোক বা না হোক। ফোকাহায়ে কিরামগণ رَحِمَہُمُ اللہُ السَّلَام বলেন: কারো নাকের ফোঁড়া ফেঠে গেলো বা সেটার ক্ষত বের হলো, তবে সে শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে যদি রক্ত বের না হয়, বরং যদি ধারাবাহিক ভাবে থেমে থেমে প্রবাহিত হয়, তখন সময় বের হওয়ার আগেই অযু করে নাময আদায় করবে। (আল বাহরুর রায়েক, ১ম খন্ড, ৩৭৩-৩৭৪ পৃষ্ঠা) 


 (২) ফরয নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথেই (মাযুরের) অক্ষমের অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। এ কথার অর্থ হলো, যেমন-কেউ আসরের সময় অযু করলো। তাহলে সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথেই তার অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর কেউ সূর্যোদয়ের পর অযু করলো। তাহলে যোহরের ওয়াক্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার অযু ভঙ্গ হবে না। কেননা, যোহরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে কোন ফরয নামাযের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়া পাওয়া যায়নি। তাই যোহরের নামাযের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত অক্ষমের অযু বহাল থাকবে। ফরয নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথেই অক্ষমের অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। সে এক ওয়াক্তের অযু দ্বারা অন্য ওয়াক্তে ফরয, নফল কোন নামায আদায় করতে পারবে না। অন্য ওয়াক্তে নামায আদায় করার জন্য তাকে পুনরায় নতুনভাবে অযু করতে হবে। তবে অযু ভঙ্গ হওয়ার এ হুকুম তখনই প্রযোজ্য হবে যখন (মাযুরের) অক্ষমের সে রোগ তার অযুকালীন সময়ে বা অযুর পর দেখা দেয়। আর এরূপ না হলে এবং অযু ভঙ্গের অন্য কোন কারণও পাওয়া না গেলে ফরয নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শরয়ী মাযুরের অযু ভঙ্গ হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৮৬ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৫৫৫ পৃষ্ঠা) 


 (৩) অক্ষমতা প্রমাণিত হওয়ার পর একটি নামাযের সম্পূর্ণ সময়সীমার মধ্যে একবারও সে রোগ পুনরায় দেখা দিলে সে (মাযুর) অক্ষম হিসেবে থেকে যাবে। যেমন-কারো নামাযের সম্পূর্ণ সময়ই ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়তে থাকে এবং অযু করে পবিত্র অবস্থায় ফরয আদায় করার সুযোগটুকুও সে পায় না। তাহলে সে (মাযুর) অক্ষম প্রমাণিত হলো। এখন অন্য নামাযের সম্পূর্ণ সময় সীমাতে যদি তার অনবরত ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব না পড়ে, বরং মাঝে মধ্যে দু-একবার পড়ে থাকে এবং সে অযু করে পবিত্র অবস্থায় নামায আদায়ের সুযোগ পায় তবুও সে (মাযুর) অক্ষম হিসেবে গণ্য হবে। তবে একটি নামাযের সম্পূর্ণ সময়সীমার মধ্যে একবারও যদি তার ফোঁটা ফোঁটা প্র¯্রাব না পড়ে এবং গোটা সময়ই সে সুস্থ তথা প্রস্রাববিহীন অবস্থায় অতিবাহিত করে তাহলে সে আর (মাযুর) অক্ষম থাকবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পূর্বাববস্থায় ফিরে না আসে। অর্থাৎ সে পুনরায় (মাযুর) অক্ষম হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য একটি নামাযের সম্পূর্ণ সময়ই তার ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়তে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠা) 


 (৪) যে রোগের কারণে (মাযুর) অক্ষম সাব্যস্ত হয়েছে সে রোগ দ্বারা (মাযুরের) অক্ষমের অযু ভঙ্গ হবে না। তবে অযু ভঙ্গ হওয়ার অন্য কোন কারণ যদি তার মধ্যে পাওয়া যায়, তাহলে তা দ্বারা তার অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন কারো অনবরত বায়ু নির্গত হওয়ার রোগ আছে, তাহলে বায়ু নির্গত হওয়ার কারণে তার অযু ভঙ্গ না হলেও তার থেকে প্রস্রাবের ফোঁটা পড়লে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। অনুরূপ কারো অনবরত ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাবের পড়ার রোগ আছে। তাহলে প্রস্রাবের কারণে তার অযু ভঙ্গ না হলেও তার থেকে বায়ু নির্গত হলে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। (প্রাগুক্ত, ৫৮৬ পৃষ্ঠা) 


 (৫) যে রোগের কারণে অক্ষম সাব্যস্ত হয়েছে তা ব্যতীত অযু ভঙ্গ হওয়ার অন্য কোন কারণ পাওয়া যাওয়ার কারণে (মাযুর) অক্ষম অযু করলো, অযু করার সময় তার সে রোগও দেখা গেলো না, যার কারণে সে অক্ষম হয়েছিল, কিন্তু অযু করার পর তার মধ্যে ঐ রোগ দেখা গেলো, তাহলে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। (তবে এ হুকুম তখনই প্রযোজ্য হবে যদি (মাযুর) অক্ষম নিজের রোগ ব্যতীত অযু ভঙ্গ হওয়ার অন্য কোন কারণ পাওয়া যাওয়ার কারণে অযু করে থাকে। আর যদি নিজের রোগের কারণে অযু করে থাকে, তাহলে অযু করার সময় সে রোগ দেখা না গিয়ে অযু করার পর দেখা গেলেও অযু ভঙ্গ হবে না।) যেমন- কারো ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়তো, তার বায়ূ বের হলো এবং সে অযু করলো, এখন অযু করার সময় তার ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়া বন্ধ ছিলো এবং অযু করার পর তার ফোঁট ফোঁটা প্রস্রাব পড়ল, তবে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে অযু করা কালীন সময়ে পড়লে অযু ভঙ্গ হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৮৭ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার রদ্দুল মুহতার, ৫৫৭ পৃষ্ঠা) 


 (৬) (শরয়ী মাযুরের) অক্ষমের এমন রোগ আছে, যাদ্বারা তার কাপড় সর্বদা নাপাক হয়ে যায়। যদি তার কাপড় এক দিরহামের বেশি নাপাক হয়ে থাকে এবং সে যদি মনে করে কাপড় ধৌত করে পাক করে তা দ্বারা নামায আদায় করা সম্ভবপর হবে, তাহলে তা পাক করেই নামায আদায় করা তার উপর ফরয। আর যদি মনে করে তা পাক করে নামায আদায় করতে গেলে নামায শেষ করার আগেই পুনরায় তা নাপাক হয়ে যাবে, তাহলে তা ধৌত করা আবশ্যক নয়, ধৌত না করেই তা দ্বারা নামায আদায় করা যাবে। এর দ্বারা জায়নামায বা নামাযের স্থান অপবিত্র হয়ে গেলেও তার নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৮৭ পৃষ্ঠা) 


 (অক্ষমের (মাযুরের) অযুর বিস্তারিত মাসয়ালা বাহারে শরীয়াত ১ম খন্ডের ৩৮৫-৩৮৭ পৃষ্ঠা, ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) ৪র্থ খন্ড ৩৬৭-৩৭৫ পৃষ্ঠা থেকে জেনে নিন) 

 
Top