বিয়ের খোৎবা শুনা ওয়াজীব


জুমার খোৎবা ছাড়াও অন্যান্য খোৎবা ও শ্রবণ করা ওয়াজীব। যেমন-দুই ঈদের খোৎবা ও বিয়ের খোৎবা ইত্যাদি। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা) 


প্রথম আযানের সাথে সাথেই কাজ কর্মও নাজায়িয হয়ে যায়


প্রথম আযান হওয়ার সাথে সাথেই জুমার নামাযে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা ওয়াজীব। ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদি যা জুমায় যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তা পরিত্যাগ করা ওয়াজীব। এমন কি জুমার নামাযের জন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ও ক্রয়-বিক্রয় করা জায়িয নেই। আর মসজিদে ক্রয় বিক্রয় করা জঘন্যতম গুনাহ। খাবার গ্রহণ করার সময় যদি জুমার আযান শুনা যায় এবং খাবার শেষ করতে গেলে যদি জুমার নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে খাবার শেষ না করেই জুমার নামাযের জন্য চলে যেতে হবে। ধীর-স্থির ও শান্তভাবে জুমার নামাযের জন্য যাবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৫ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪২ পৃষ্ঠা) বর্তমানে ইলমে দ্বীন থেকে দূরত্বের সময় মানুষ অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় খোৎবা শুনার মতো এক মহান ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতেও বিভিন্ন ধরণের ভুল-ভ্রান্তিু করে অনেক গুনাহে লিপ্ত হচ্ছে। তাই খতিব সাহিবের প্রতি আমার মাদানী অনুরোধ তিনি যেন অসংখ্য নেকী অর্জনের জন্য প্রত্যেক জুমাতে খোৎবার আযানের পূর্বে মিম্বরে উঠার আগে এ ঘোষণা দেন। 


খোৎবার ৭টি মাদানী ফুল


❁হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি জুমার দিন মানুষের গর্দান টপকিয়ে টপকিয়ে সামনে যায়, সে যেন জাহান্নামের দিকে পুল তৈরী করল।” (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা, হাদীস-৫১৩) জাহান্নামের দিকে পুল তৈরী করার অর্থ হলো, তার উপর আরোহণ করে মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৬১-৭৬২ পৃষ্ঠা) ❁ খতিবের দিকে মুখ করে বসা সাহাবীদের সুন্নাত। (মিশকাত শরীফ হতে সংকলিত, ১২৩ পৃষ্ঠা) ❁বুজুর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی বলেন: দু’জানু হয়ে বসে খোৎবা শ্রবণ করুন। প্রথম খোৎবায় (নামাযের মত) হাত বেঁধে এবং দ্বিতীয় খোৎবায় উরুর উপর হাত রেখে খোৎবা শুনলে اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلَّ দুই রাকাআত নামাযের সাওয়াব পাওয়া যাবে। (মিরাতুল মানাজীহ, ২য় খন্ড, ৩৩৮ পৃষ্ঠা) ❁আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “খোৎবার মধ্যে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নাম মোবারক শুনলে মনে মনে দরূদ শরীফ পড়তে হবে।কেননা, খোৎবা পাঠের সময় চুপ থাকা ফরয।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৮ম খন্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা) ❁ “দুররে মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে; খোৎবার সময় পানাহার করা, কথা বলা যদিও سُبۡحٰنَ اللہ বলুক না কেন, সালাম ও সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের কথা বলা ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে হারাম। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা) 


❁আ’লা হযরত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ  বলেন: খোৎবা পাঠের সময় মসজিদে হাটাহাটি করা হারাম। ওলামায়ে কিরামগণ رَحِمَہُمُ اللہُ السَّلَامবলেন:খোৎবা চলাকালীন সময়ে কেউ মসজিদে আসলে মসজিদের যে পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে সেখানেই বসে যাবে, সামনে অগ্রসর হবে না। অগ্রসর হলেই তা কাজে পরিগণিত হবে। আর খোৎবা চলাকালীন সময়ে কোন কাজ বৈধ নয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৮ম খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা) ❁আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ আরো বর্ণনা করেন, “খোৎবা পাঠের সময় কোন দিকে ঘাঁড় ফিরিয়ে দেখাও হারাম।” (প্রাগুক্ত, ৩৩৪ পৃষ্ঠা) 


জুমার ইমামতির গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা


একটি অতীব জরুরী বিষয়, যার প্রতি সাধারণ মানুষের মোটেও মনযোগ নেই। আর তা হলো, তারা জুমার নামাযকে অন্যান্য নামাযের মতো মনে করে। যার ইচ্ছা সে জুমা কায়েম করে ফেলে, আর যার ইচ্ছা সে জুমার নামায পড়িয়ে দেয়। অথচ এটা নাজায়েয। কেননা, জুমা কায়েম করা ইসলামী সাম্রাজ্যের বাদশা অথবা তাঁর প্রতিনিধিরই কাজ। যেখানে ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত নেই সেখানে সবচেয়ে বড় ফকীহ্ই সুন্নী আলিম বিশুদ্ধ আকীদা পোষণকারী শরীয়াতের বিধি বিধান বাস্তবায়নে মুসলিম বাদশাহের স্থলাভিষিক্ত হবেন এবং তিনিই জুমা কায়েম করবেন। তাঁর অনুমতি ব্যতীত জুমা অনুষ্ঠিত হতে পারে না। আর এরূপ ফকীহ না থাকলে সাধারণ মানুষ যাকে ইমাম নিযুক্ত করবেন তিনিই জুমা কায়েম করতে পারবেন। আর আলিম বিদ্যমান থাকা অবস্থায় সাধারণ জনগণ কাউকে নিজেদের ইচ্ছামত ইমাম নিযুক্ত করতে পারবে না। 


এটাও হতে পারে না যে, দু’চারজন লোক মিলে কাউকে ইমাম নিযুক্ত করলো এ ধরণের জুমার কোথাও প্রমাণ নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৬৪ পৃষ্ঠা) 


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                     صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


 
Top